ডেড বডি ! Part- 06
– রহিম এতগুলো খুন কিভাবে করলে?
-বিশ্বাস করেন স্যার। আমি খুন করি নাই।
-তাহলে খুন গুলোর খবর তুমি আগে কিভাবে পাও।
– স্যার সত্যি বলতে আমি প্রায় প্রতিদিন এই বাড়ি থেকে বাহির হতাম আর খোঁজ পেতাম। আমাকে মানুষ ফোন দিয়ে বলতো। সেখানে আমার কি দোষ স্যার?
-তাই বলে প্রতিটা লাশের খবর তুমি কেন আগে পেতে? আর তোমার এই মাদক ব্যবসা কত দিনের?
-স্যার প্রায় ২ বছর থেকেই এই কাজে জড়িত। কিন্তু এখন পযন্ত কোন মানুষকে খুন করি নাই স্যার। বিশ্বাস করেন স্যার!
-তাহলে কাল রাতে লোকটিকে তো চাপাতী দিয়ে মেরেই দিতে আমি থাকলে।
-না স্যার। আমি শুধু ভয় দেখানোর জন্য এমন করছি।
-আচ্ছা শোন। লুকিয়ে লাভ নেই আমি তোমার সব কিছু শুনেছি। তো তুমি ভদ্র ছেলের মত সব বলো খুন গুলোর কথা।
-স্যার বিশ্বাস করেন। আমি কোন খুনি করি নাই। আর আমি এগুলার সাথে জড়িত নাই স্যার। স্যার খোদার কসম আমি খুনের সাথে জড়িত নাই। আর যদি সত্যি জড়িত থাকি স্যার তাহলে আল্লাহ আমাকে আজকেই মৃত্যু দিবে।
রহিম এর কথা গুলো শুনে মনে হচ্ছে সত্যি সে খুন করে নাই। তাহলে খুন গুলো করলো কে? আমি তো সিউর ছিলাম রহিম জড়িত আছে তার থেকে সব শোনা যাবে। কিন্তু রহিম তো জড়িত নেই। তবুও রহিমের মাদক ব্যবসার জন্য তাকে জেলে যেতেই হবে। যাই হোক রহিম জড়িত নেই জেনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। তাই বাসার দিকে রওনা দেই। বাসায় যেতে যেতে হঠাৎ দেখলাম রাস্তার পাশে অনেক গুলো মানুষকে জড়ো হয়ে আছে। মনে কৌতুহল জাগে তাই আমি গাড়ি থেকে নেমে কাছে যাই কি হয়েছে দেখতে। কাছে যেয়ে আমি অবাক হয়ে যাই! সেখানে একটি মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় উপূর হয়ে কাতরাচ্ছে আর সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। আমি তাড়াতাড়ি করে মেয়েটাকে উল্টিয়ে মেয়েটার মুখ দেখেই মাথাটা ঘুরে যায়। হাতে যেন শক্তি পাচ্ছিলাম না। মেয়েটা ডাক্তার অজয় এর মেয়ে। আমি চিৎকার দিয়ে বললাম, আরে রিমু তুমি? কি হয়েছে তোমার? সে আমাকে একটি চিরকুট হাতে দিয়ে কি যেন ইশারা করছিলো । আমি চিরকুটটা পকেটে রেখে রিমুকে তাড়াতাড়ি করে নিয়ে যাই হাসপাতালে। রিমুকে আই.সি.ইউ রুমে নিয়ে গিয়ে ডাক্তার অজয়কে একটা ফোন দেই।
-হ্যা। নিলয় বলো?
-ডাক্তার অজয় আপনার মেয়ে রিমু খুবই অসুস্থ। এক্সিডেন্ট করেছে। তাড়াতাড়ি গাইবান্ধার সদর হাসপাতলে আসেন।
-আচ্ছা আসছি।
ফোনটা কেটে দিয়ে ডাক্তার কিছু ওষুধ দেয়। সেগুলো কিনে আনি। ওষুধ গুলো দেওয়ার পর রিমুর ছটফটানিটা একটু কমে যায়। প্রায় ২ ঘন্টা হচ্ছে হাসপাতলে আছি কিন্তু ডাক্তার অজয় আসছে না কেন! ডাক্তার অজয় এর বাড়ি থেকে হাসপাতাল তো মাত্র ২০ মিনিট এর রাস্তা। যাই হোক আমি ডাক্তারের অপেক্ষা করছি। প্রায় ৩ ঘন্টা পরে আসেন ডাক্তার অজয়। এসে বলে,
-রিমু কোথায়?
-আই সি ইউ রুমে আছে।
-ওহ আচ্ছা।
এই কথা বলে উনি সরাসরি ICU রুমে ঢুকে যায়।
আমি বাহিরে বসে ভাবতে থাকি ডাক্তারের মেয়ে অসুস্থ কিন্তু তাকে দেখে মনেই হয় না। আমার নিজেরই যতটা খারাপ লাগছে কিন্তু ডাক্তারের এমন লাগছে না কেন! এগুলা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ICU রুমের দরজার কাচ দিয়ে তাকিয়ে দেখি রিমুর ছটফটানি বেড়ে গেছে আবার। তাড়াতাড়ি করে রুমে ঢুকে রিমুর কাছে যাই।তার নিঃশ্বাসটা যেন আরো দ্রুত নেওয়া শুরু করেছে। ডাক্তার অজয় পাশেই দাড়িয়ে। রিমুর এমন অবস্থা দেখে আমি নিজেই কেঁদে দিয়েছি। কিন্তু তার জন্মদাতা পিতার চোখে পানি তো দুরে থাক একটু কষ্ট ও লাগছে নাহ। কিছুক্ষন এমন থাকতে থাকতে ডাক্তার অজয় রিমুর মুখের অক্সিজেন মাক্সটা খুলে দিয়ে বলে,
-মিথ্যে চেষ্টা করে লাভ নেই। রিমুকে বাঁচানো সম্ভব না। শুধু শুধু কষ্ট না দেওয়াই ভালো।
ডাক্তারের এমন কান্ড দেখে ভাবি, মানুষ তার আত্নীয়কে বাঁচাতে শেষ নিঃশ্বাসটা পযন্ত চেষ্টা করে যায়। কিন্তু ডাক্তার! হুহ বুঝেছি তিনি সব সময় লাশ নিয়েই থাকে তো তাই মনে হয় নিজের মানুষের লাশের প্রতিও আর কষ্ট লাগে না। আস্তে আস্তে রিমুর নিঃশ্বাস নেওয়াটা থেমে যায়। আর সে চলে যায় এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে।
সেখান থেকে চলে আসি বাড়িতে। এদিকে রিমুর লাশটি ফরেনসিক রিপোর্ট করার জন্য ডাক্তার অজয় এর কাছেই দিয়েছি। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বসে আছি। মনটা খারাপ। রিমুর সাথে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক ছিলো। মেয়েটা আমাকে আঙ্কেল বলেই ডাকতো। যাই হোক আজকে আর বাড়ি থেকে বাহির হয়নি। মনটা ভালো নেই। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি। প্রায় রাত ১০ টার দিকে মোবাইলটা বেজে উঠে। ফোনে তাকিয়ে দেখি থানা থেকে কল দিয়েছে।ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে,
-স্যার রহিম সাহেব প্রচুর অসুস্থ।
-কি হয়েছে?
-কি যে বুক ধরে চিৎকার করছে।
-আচ্ছা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাও।
এইটা বলে ফোনটা কেটে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে উঠে রহিমকে দেখতে যাওয়ার জন্য বাহির হলাম। রাস্তায় হঠাৎ ডাক্তার অজয় কল দেয় দিয়ে বলে,
-নিলয় রিমুর ফরেনসিক রিপোর্ট টা নিয়ে যাও এখুনি।
-আচ্ছা।
গাড়িটা ঘুড়িয়ে নিয়ে গেলাম ডাক্তারের কাছে। গিয়ে রিপোর্ট টা নিলাম। এটি একটি এক্সিডেন্ট কেস। তাই সিম্পল রিপোর্ট দিয়েছে ডাক্তার অজয়। রিপোর্টটা নিয়ে রহিমের কাছে যাওয়ার জন্য গাড়িতে আসি তাতেই থানার এক স্টাফ কল দিয়ে বলে,
-স্যার রহিম মারা গেছে।
-কিহ! কি বলো এগুলা! দাড়াও যাচ্ছি।
আমি তাড়াতাড়ি করে চলে গেলাম হাসপাতালে। গিয়ে দেখি সত্যি রহিম আর এই পৃথিবীতে নেই। আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। হার্ট এ্যাটাক করেছে। আচ্ছা কালকে রহিম বলেছিলো, যদি আমি খুনি হয়ে থাকি তাহলে আল্লাহ আমাকে আজকেই মেরে ফেলবে। সে সত্যি আজকেই মারা গেল। তাহলে কি সত্যি সে খুনি। এইটা তো আকস্মিক হয়ে গেল। সত্যি খারাপ লাগছে এখন। রিমুকে নিয়ে একটা টেনশনে ছিলাম। এখন আবার রহিম সাহেব। অনেক দিন একসাথেই কাজ করেছি। এভাবে তাকে হারাতে হবে বুঝি নি। আর খুনের সাথে জড়িত কি না তাও জানি না। মাথাটা ঘুরে যায়। তাই একটি চেয়ারে বসে পড়ি পকেটে হাত দিয়ে। হঠাৎ দেখি পকেটে একটি কাগজের টুকরো। তারপর মনে পড়ে এইটা তো রিমু দিয়েছিলো। ব্যস্ততায় দেখা হয়নি কি লেখা ছিলো। চিরকুটটা মোড়ানো ছিলো সেটা খুললাম দেখার জন্য। চিরকুটটা দেখে আমি অবাক হয়ে বলি, ওহ মাই গড।
আসলে চিরকুটে লেখা ছিলো…
.
চলবে