ধ্রুবতারা !! Part- 11
পরেরদিন ঃ
ধ্রুব অফিসে এসেই তারাকে খুজতে লাগলো। কিন্তু ওকে পাচ্ছে না।
ধ্রুবঃ তারা তুমি কোথায়? তোমাকে সবকিছু না বলা পর্যন্ত আমার মনে শান্তি আসবেনা। তোমার কাছে আমার ক্ষমা চাইতেই হবে।
ধ্রুবঃ প্রিয়া তারা কোথায় এখনো আসেনি?
প্রিয়াঃ না স্যার তারা আসে নাই। কোথায় গেছে কি জানি।
ধ্রুবঃ ওহহহ।আচ্ছা তারা যদি আসে তাহলে আমার কেবিনে আসতে বলবে।
প্রিয়াঃ ওকে স্যার।
ধ্রুব কেবিনে বসে ভাবছে তারাকে কি করে সরি বলবে।আর কে এমন করতে পারে তারার বিরুদ্ধে।
ধ্রুব এসব ভাবছিলো এমন সময় ফোন আসলো।
ধ্রুবঃ হ্যালো?
প্রিয়াঃ স্যর আপনার সাথে একজন দেখা করতে আসছে। তারা ওকে পাঠিয়েছে।
ধ্রুবঃ তারা???
আচ্ছা ওনাকে আমার কেবিনে পাঠিয়ে দাও।
নিলয় কেবিনে আসলো।
নিলয়ঃআসতে পারি?
ধ্রুবঃজ্বি আসুন।
নিলয় কেবিনে ঢুকলো।
ধ্রুবঃবসুন।
নিলয় ঃআমি বসার জন্য আসেনি। শুধু আপনাকে একটা জিনিস দিতে এসেছি।
ধ্রুব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে দেখলো।
নিলয় টেবিলে একটা খাম রাখলো। আর বললো-এটা তারা দিয়েছে। আপনাকে দিতে। আমি এটা দিতেই এসেছি।
ধ্রুব ঃএটা???
নিলয়ঃআমি জানি না কি লেখা আছে তবে বলতে পারি আপনি যা করেছেন তারই জবাব হয়তো দিয়েছে তারা।
ধ্রুবঃ তুমি কি করে জানলে?
নিলয়ঃ তা জেনে আপনার কাজ নেই। বাই বলে নিলয় চলে গেলো।
ধ্রুব ঃ নিলয় কি বোঝাতে চাইলো?
ধ্রুব দেরী না করে খামটা খুললো।
দুইটা কাগজ। একটা রেজিগনেশন লেটার আরেকটা চিঠি।
ধ্রুব চিঠিটা খুললো-
“মি. ধ্রুব,
কাল আপনি আমাকে অনেক কিছুই বলেছেন। আমার ক্যারেক্টার নিয়ে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তার জন্য আপনাকে আমার কিছু বলার নেই।কিইবা বলবো?আপনি তো বস। যখন ইচ্ছা যাকে ইচ্ছা অপমান করতে পারেন। কিন্তু আমি আর এই অপমান সইতে পারলাম না বিধায় আজ আর আসলাম না। কারণ আপনি শুধু আমাকে অপমান করেননি আমার বাবা মা আর তাদের শিক্ষাকে অপমান করেছেন। আপনি কিছু ছবি দেখে কি করে বলতে পারলেন আমি চরিত্রহীনা।কি করে?অনেক হয়েছে? এতোদিন আপনি আমাকে বকেছেন। আমাকে সবার সামনে চিৎকার করে কথা বলেছেন আমি কিছু বলিনি।বিকজ আপনি আমার বস। কাজের জন্য বকবেন কিন্তু আপনার কোনো অধিকার নেই আমার পারসোনাল লাইফে ইন্টেফেয়ার করার।
একটা সত্যি কথা বলি?সেদিন আমি হারিয়ে যাওয়ার পর আপনি যখন আমাকে পাগলের মতো খুজচ্ছিলেন, আমাকে পেয়ে যখন জরিয়ে ধরেছিলেন। কেনো যেনো অন্য এক রকম অনুভূতি হয়েছিলো। নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছিলো কারণ বাবা মায়ের পর কেউ আমাকে নিয়ে ভাবতে পারে তা ভাবতেই অবাক লাগছিলো। জানেন নিজের মনের কোনো এক কোণায় আপনাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলাম। প্রথম আপনাকে নিয়ে আবেগময় একটা অনুভূতি তৈরী হয়েছিলো। হ্যা এটাই সত্যি আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম কিন্তু ভাববেন না আপনার টাকার জন্য আপনাকে চেয়েছিলাম। আপনাকে চেয়েছিলাম কারণ আমার প্রতি আপনার কেয়ার দেখে। কিন্তু তখনও জানা ছিলো না আপনার এই কেয়ার করা আসলে তো একটা ছলনা।
আমি তো নির্দোষ ছিলাম তাহলে কেনো এতো অপমান সইতে হলো?প্রমানের কি খুবই প্রয়োজন ছিলো?আমার চোখ আপনাকে আমার কথার সত্যতা বলেনি? বলেছে অবশ্যই বলেছে কিন্তু আপনি দেখতে চাননি।তাই আমার সাথে এমন করলেন। আমার কাছে আমার সেল্ফ রিসপেক্টটা অনেক বড়।যা আমাকে কখনো কারো সামনে মাথা নত করতে শিখাইনি।
লোকে ঠিকই বলে বেশি কিছু আশা করা ঠিক নয় যখন এই আশা পূরণ হয় না অনেক ব্যাথা লাগে। যা সহ্য করা যায় না। কিন্তু এক ভুল আমি আর করবো না। আপনি হয়তো ভাবছেন কেনো আপনাকে চিঠি লিখছি। কেনো জানেন?শুধু একটা কথা বলার জন্য “আই জাস্ট হেইট ইউ।” আপনার মুখ আমি কখনোই দেখবো না। আমার মনে আপনাকে নিয়ে যতো আবেগ অনুভূতি ছিলো আজ সব কিছুর মাটি চাপা দিলাম। আপনি আমার কাছে মৃত। আমার লাইফে না কোনো ধ্রুব ছিলো, না আছে এবং না থাকবে। আমি আপনাকে ঘৃণা করি, আপনার উপস্থিতি ঘৃণা করি। আপনার সবকিছু ঘৃণা করি। কখনো আপনার মুখ আমার সামনে দেখাবেন না। “
ধ্রুব চিঠিটা পড়ে কিছুটা সময় নিঃশ্চুপ রইলো। কিছু বলতে পারছেনা ধ্রুব। কেমন যেনো ঘোলাটে লাগছে চারপাশ। খুব অশান্তি লাগছে ধ্রুবর।
হটাৎ ধ্রুব কিছু একটা ভেবে চেয়ার থেকে উঠে পড়লো। আর কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো।
ধ্রুব গাড়ি চালাচ্ছে। এসি থাকা সত্ত্বেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা জমেছে।
ধ্রুব এখন তারার বাড়ির দিকে যাচ্ছে। যে করেই হোক তারাকে সব বলতে হবে। কিছুতেই তারাকে হারাতে পারবো না। কোনোভাবেই না।
ধ্রুব তারার বাড়ির সামনে এসেই গাড়ি থামালো। গাড়ি থেকে চটজলদি নেমে গেলো ধ্রুব।
ধ্রুব তারার বাড়ির কাছে আসতেই দেখলো তারার বাড়ির দরজায় তালা দেওয়া।
ধ্রুব বাড়ির দরজা থেকে ফিরে এলো৷ আশেপাশের মানুষদেরও জিজ্ঞেসা করলো কিন্তু কেউ কিছু জানে না।ধ্রুব তারাকে অনেক জায়গায়,খুজলো কিন্তু পেলো না।
রাতেঃ
ধ্রুব বাগানে বসে ভাবছে। নিজেকে আজ বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। নিজেকে শেষ করে দিতে মন চাইছে।কেনো করলো এমন তারার সাথে। কেনো ওর চোখের জল এর কথা বুঝতে পারলো না।
ধ্রুবঃ তারা তুমি কোথায়? প্লিজ তারা আমাকে এমন শাস্তি দিওনা। এতো বড় শাস্তি আমি নিতে পারবো না। একটাবার ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দাও তারা। তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন। তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না আমি তারা প্লিজ ফিরে এসো। প্লিজ (কান্না করতে করতে)
ফরিদ সাহেব পিছন থেকে এসে বললেন-এতো সহজে হেরে যাবি?
ধ্রুবঃ বাবা?
ফরিদ সাহেবঃহুমম আমি।
ধ্রুবঃ বাবা তারা আমাকে….
ফরিদ সাহেবঃ আমি সব জানি। সকালে তোর কেবিনে গিয়ে দেখি তুই নেই কিন্তু তারার চিঠিটা পেলাম। আর বুঝতে পারলাম তোর সাথে কি হয়েছে।
ধ্রুবঃবাবা আমি কি করবো?
ফরিদ সাহেবঃ কি করবি? তারা মাকে খুজে আনবি?যেখান থেকে পারিস। তুই এতো সহজে হেরে যাবি?যাকে ভালোবাসিস তাকে নিজের কাছেও নিয়ে আস।
ধ্রুবঃকিন্তু বাবা ওতো চলে গেছে আমি কি করে…
…এটা তুই জানস আমার ভাবার বিষয় না কিন্তু তুই তারাকে আনবি আর আমার বৌ মা করে। এটাই লাস্ট ডিসিশন।
এটা বলেই ফরিদ সাহেব উঠে গেলেন।
ধ্রুব একা বসে রইলো।বাবা কি বলে বুঝার চেষ্টা করছে।
কিছুক্ষন পর ধ্রুব মুচকি হেসে বললো-তারা তোমাকে আমি ছাড়ছিনা। তোমাকে তো আমার কাছে আনবোই আর আমার স্ত্রী করেই আনবো।😏😏😏
চলবে………