ভালোবেসে তারে

ভালোবেসে তারে !! Part- 14

“প্লিজ রাফিত আমি এই জগন্য কাজটা করতে পরবোনা।আমার দ্বারা এটা পসিবল না।প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন।(কান্না করতে করতে)”

রাফিত বলল,

“তোমাকেই করতে হবে সোনা।ইউ হেভ নো এ্যনাদার অপশান।সো হারি আপ।(শান্ত গলায়)”

দুই হাত এক করে গান নিয়ে সামনের দিকে তাক করে দাড়িয়ে আছি আমি।নিজের থেকে নয়।রফিত জোর করে ধরিয়ে দিয়েছে।আর আমার সামনের চেয়ারে এক লোককে মুখে কালো কাপড় পরিহিত অবস্থায় চেয়ারে বেধে রাখা হয়েছে।লোকটার মুখটাও হয়তো বাধা।গোঙ্গানোর শব্দ পাচ্ছি।হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছে আর ক্রমাগত ছোটার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

রাফিত একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে হাতে একটা পাজেল নিয়ে ওটাকে মিলানোর ট্রাই করছে ও সেদিকে তাকিয়েই আমাকে শান্ত গলায় অনেকবার ট্রিগার প্রেস করার জন্য বলছে।কিন্তুু আমি এটা কিছুতেই করতে পারবোনা।যে মেয়ের ব্লাড দেখলে মাথা থেকে পা অবধি পুরো শরীর থরথর করে কাপতে থাকে সে আর যাই হোক মার্ডার করতে পারবেনা।আমি কিভাবে একটা মানুষের প্রাণ নিতে পারি।লোকটাকেতো আমি চিনি পর্যন্ত না।তাহলে কেনো মারবো আমি তাকে?আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে।দুই হাতে গান ধরে রাখায় হাতদুটোও কাপছে।সে আবারও আমার দিকে না তাকিয়েই পাজেলটা নিয়ে খেলতে খেলতে বলল,

“ওহ কামঅন দিশা।কি শুরু করলে বলোতো।জাস্ট একটা ট্রিগারইতো প্রেস করবে নাকি।খামোখা আমার টাইম ওয়েস্ট করছো তুমি।শুট করো।”

তার কথা শুনে মনে হচ্ছে সে আমাকে মানুষ খুন করতে নয় কোনো পেয়াজ-রসুন কাটতে বলছে।আমি তাকে অনুনয়ের সুরে কাদতে কাদতে বললাম,

“প্লিজ রাফিত আপনি দরকার হলে আমাকে মেরে ফেলুন।তাও আমি কারো খুন করতে পারবোনা।”

সে এবার চোখে-মুখে বিরক্তি ও রাগের ছাপ নিয়ে আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো।তারপর হাতের পাজেলটা পাশের একটা টেবিলে এমনভাবে রাখলো যার শব্দে ও ভয়ে আমি কেপে উঠলাম।রাফিত আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,

“ওফফ দিশা তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?ওয়েট আমি তোমাকে হেল্প করছি।(কথাটা বলে সে আমার পিছনে এসে দাড়ালো ও আমার কাধে তার দুই হাত রাখলো)লুক এট মি।আমার চোখের দিকে তাকাও।”

আমি আমার ঘাড়টা পেছনে ঘুরিয়ে তার দিকে তকানোর সাথে সাথে সে পেছন থেকে আমার ঠোঁটে তার ঠোঁট দুটো মিলিয়ে দিলো।আকস্মিক ঘটনায় আমি আমার চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলি।আমার হাতদুটো এখনো গানটা সামনের দিকে তাক করে আছে।একটুপর খেয়াল করলাম কিস করা অবস্থাতেই তার এক হাত আমার কাধ ছাড়িয়ে আস্তে আস্তে আমার হাতের মধ্যে বিচরণ করছে।সে আমার হাতের উপরে তার হাত রেখে ট্রিগারে আমার আঙ্গুলের উপর তার এক আঙ্গুল রাখলো।

তার উদ্দেশ্য কি তা বুঝতে পেরে আমি চট করে আমার চোখ দুটো খুলে ফেলি।আমি যেইনা তার থেকে নিজেকে ছাড়াতে যাবো সে এক হাতে আমার চুলের মুঠি শক্ত করে চেপে ধরে।আমার মুখ দিয়ে শুধু “উমমম”শব্দ ছাড়া আর কিছু বের হচ্ছেনা।আমি চোখে তাকে ইশারা করছি ও মাথা নাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছি।যার অর্থ হলো,”রাফিত শুট করবেননা।”

কিন্তুু আমার চেষ্টার ফল জিরো।তখনই খুব জোরে একটা শব্দ হলো।হ্যা গুলির শব্দ।শুট করার সাথে সাথে রাফিত আমাকে ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দাড়ালো।আর আমি ধপাস করে মাটিতে বসে পরি।আমার জন্য কারো প্রাণ চলে গেলো।ভাবতেই ভেতরটা চুরমার হয়ে যাচ্ছে।

রাফিত আমার সামনে হাটু গেরে বসে আমার গালে তার দুই হাত রেখে বলল,

“ওমা একি তুমি কাদছো।সো সেড।কাদেনা সোনা আমার।আচ্ছা তুমি যাকে মারলে তাকে একবার দেখবেনা।চলো তোমাকে দেখাই।কাম।”

বলেই সে আমার এক হাত ধরে উঠিয়ে আমাকে টেনে লোকটার সামনে নিয়ে গেলো।আমি যেনো কথা বলার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছি।সে লোকটার মুখ থেকে কাপড়টা সরালো।লোকটাকে দেখার পর আমি আতকে উঠলাম।আরে এতো ঐ ছেলেটা যাকে আমি তাহিয়ার সাথে লাস্ট টাইম দেখেছিলাম।চেহারাটা হালকা মনে ছিলো আমার।এখন দেখার পর পুরোপুরিভাবে খেয়াল হলো।আমি লোকটার রক্তাক্ত শরীরটা দেখে চিৎকার করে কেদে দিলাম ও রাফিতকে ঝাপটে ধরে বলে উঠলাম,

“প্লিজ রাফিত আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন।আমি এই দৃশ্য আর দেখতে পারবোনা।প্লিজ নিয়ে চলুন।”

কি অদ্ভুত যার জন্য আমার এই অবস্থা তার কাছেই আমি সাহায্যের কথা বলছি।ব্যাপারটা সত্যিই হাস্যকর।
,
,
,
,
,
,
একটা রুমের বেডে বসে আছি।রাফিত তখন আমাকে এখানে এনে রেখে যায়।আমাদের লাগেজগুলো আগে থেকেই এখানে ছিলো।কে রেখে গেছে জানিনা।ওখান থেকে কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হলাম মাত্র।সে কোথায় গেছে জানিনা।এসব ভাবতে ভাবতেই বেলকনিতে চলে এলাম।বেলকনিটা পুরোই খোলা।কোনো গ্রিল নেই।একটা মিনি ছাদও বলা যায়।বেশ বড়সড়।রেলিং এ হাত রেখে দাড়িয়ে ৪ ঘন্টা আগের কথা ভাবতে লাগলাম।

৪ ঘন্টা আগে,,,,,,,,,,

গাড়িতে চোখ বন্ধ করে বসে আছি।তখনই গাড়ি ব্রেক করায় চোখ খুলে দেখি গাড়িটা একটা বাড়ির সামনে এসে থেমেছে।চারপাশ দেখে লাগছে এটা কোনো গ্রাম।আশেপাশে তেমন কোনো বাড়িঘর নেই।ভালো করে খেয়াল করলে হয়তো দূরে কয়টা টিনের কিংবা মাটির ঘর পাওয়া যাবে।রাফিত গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে আমাকে বলল,

“নামো।”

আমিও কিছু না বলে নেমে যাই।আমরা যেই বাড়িটার সামনে আছি ওটা দু- তলা একটা বাড়ি।কম জায়গা নিয়ে তৈরি হলেও বাড়িটা খুব সুন্দর।এর সৌন্দর্য আরও হাজারগুন বেশি বাড়িয়ে তুলেছে আশেপাশে লাগানো ফল ও ফুলের গাছগুলো।মনে হয় কেউ দেখাশুনা করে।বাড়ির সীমানাটুকু বাশের ছালি দিয়ে বেড়া দেওয়া।গেটটাও টিনের তৈরি।গ্রামের এইরকম বাড়িকে বাগান বাড়িও বলা হয়।

আমি যখন চারপাশ দেখতে ব্যস্ত তখন রাফিত আমার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ির ভেতরের নিয়ে একটা রুমে এনে হাত ধরেই সামনের দিকে ধাক্কা দিলো।আমি পরে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেই।এটা মনে হয় স্টোর রুম।আমি বললাম,

“এখানে কেনো এনেছেন আমাকে।জাপানের কথা বলে এখানে এনে কি বোঝাতে চাইছেন আপনি?”

“সেটা তো এক্ষুনি বোঝে যাবে।”

কথাটা বলে সে আমার হাতে একটা গান ধরিয়ে দিয়ে বাকা হেসে বলল,

“পিছনে তকাও।”

আমি পিছনে তকাতেই পুরো থমকে গেলাম।কাউকে চেয়ারে বেধে রাখা হয়েছে।

“এসব কি রাফিত।কে এটা?আর এভাবে বেধে রেখেছেন কেনো লোকটাকে?”

“সে যেই হোক তোমাকে এখন তোমার হাতের গানটা দিয়ে একে শুট করতে হবে।”

আমি চিৎকার করে বললাম,

“ইম্পসিবল।আমি কাউকে মারতে পারবোনা।”

সে আমার হাত ধরে গানটা সামনের দিকে তাক করিয়ে দিয়ে বলল,

“না করলে তোমার কপালে আজ কি আছে তা আমি নিজেও জানিনা।”

বলেই সে গিয়ে কিছুদূরে থাকা একটা বসে পড়লো।আর আমি এদিকে কান্না করে দিলাম।
,
,
,
,
,
,
এখন,,,,,,,,,,,,

সত্যি বলতে লোকটার চেহারা দেখার পর তার মৃত্যুর জন্য তেমন আফসোস হচ্ছেনা।তবে মাথার ভিতর একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে রাফিততো এটা ঢাকা থেকেও করতে পারতো।তাহলে এখানে এলো কেনো?সবকিছুই এখন আমার কাছে ধোয়াশা।এইসব প্রশ্নের একমাত্র উত্তর রাফিত।তাকে বোঝে ওঠা সত্যিই খুব দুষ্কর। ভেবই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।

চারপাশের পরিবেশটা খুব সুন্দর লাগছে।বাতাসে হালকা মিষ্টি গন্ধ।চারিদিকে নানান রকমের গাছপালা।এমন পরিবেশে মনটাও একটু ভালো লাগছে।আসলে গ্রামের পরিবেশটাই অন্যরকম এক সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে।
হঠাৎ কারো ডাকে আমার ধ্যান ভাঙ্গে।…………………….

to be continued……………….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *