ভালোবেসে তারে

ভালোবেসে তারে !! Part- 11

আমি ভয়ে চোখ বড়বড় করে ক্রমাগত মাথা নেড়ে ইশারায় তাকে না করো চলেছি।কিন্তুু সে আমার না শুনলেতো।সে আমার হাতের মাঝ বরাবর শিরা থেকে অনেকটা দূরে ছুরি দিয়ে এক টান মারলো।সাথে সাথেই সেখান থেকে অনর্গল রক্ত ঝড়তে লাগলো।আমি ব্যাথায় চোখের জল ফেলা ও ছটফট করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছিনা।কিভাবে করবো আমার মুখ,এক হাত,পা যে বাধা।

রাফিত ফাস্টএইড বক্সটা খুলে ওটা থেকে তুলোতে ঔষধ লাগিয়ে আমার কাটা অংশে লাগাতে লাগাতে বলল,

“ইসস খুব লেগেছে তাইনা।লাগবেই তো দেখতো কতখানি কেটে গেছে।চিন্তা করোনা আমি ঔষধ লাগাচ্ছিতো।এক্ষুনি সেরে যাবে।”

সে আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে আমার হাতটা ছেড়ে দিলো।সে হাত ছেড়ে দেওয়ার পর আমি তৎক্ষনাৎ আমার মুখের বাধনটা খুলে হাফাতে হাফাতে কান্নাজড়িত কন্ঠে তাকে বললাম,

“আপনি কি পাগল।কি করেছেন এটা।নিজে কেটে আবার নিজেই ঔষধ লাগাচ্ছেন।”

আমার কথার কোনো রিয়াকশন না দিয়ে সে আবারও আমার ঐ হাতটা টেনে ধরলো।আমার অন্যহাত বাধা থাকায় কিছু করতেও পারছিনা।সে বলল,

“তুমি কি চাও আমি আবারও তোমার এই সুন্দর হাতটা কেটে ক্ষতবিক্ষত করি?যদি না চাও তাহলে আর একটা কথাও যেনো মুখ দিয়ে না বের হয়।মাইন্ড ইট।”

বলেই সে আমার হাতটা ঝারি দিয়ে ফেলে রুম থেকে চলে গেলো।সে চলে যাওয়ার পর আমি খুব কষ্টে আমার কাটা হাত নিয়েই অন্য হাতের বাধনটা খুললাম।তারপর পায়েরটা।হাতের কাটা জায়গাটা খুব ব্যাথা করছে।না আমি তাকে আর কিছু বলার চেষ্টা করবোনা আর না বোঝানোর।সে যেহেতু কিছু শুনবেইনা তাহলে আমি বলবো কেনো?আপনি চাননাতো আমি কিছু বলি ঠিক আছে বলবোনা আর না নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবো আপনার কাছে।
,
,
,
,
,
পরেরদিন,,,,,,,

ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে টিভিতে কার্টুন দেখছি ও পপকর্ন খাচ্ছি।আমার মন ভালো করার জন্য এটা বেস্ট ওয়ে।আজকে রাফিতের অফ ডে।তাই সে বাসায় আছে।রুমে বসে ল্যাপটপে কি যেনো কাজ করছে।এর কি অফ ডেতেও কাজ করা লাগে নাকি।যা খুশি করুকগে😤।আমার কি।আমি সকাল থেকে একবারও রাফিতের সাথে কথা বলিনি।সে যা বলেছে চুপ করে তা করে গিয়েছি।কেনো বলবো কথা তার সাথে।সে তো আমাকে ঘৃণা করে।আর গতকাল যা করলো সে…….।

এমন সময় উপর থেকে খাটাস মার্কা পাষানটা জোরে জোরে ডাকতে লাগলো,

“দিশা এই দিশা।”

না যাবোনা আমি।ডাকুকগে।আই ডোন্ট কেয়ার হাহহ।সে আবারও ডেকে উঠে,

“কি হলো শুনতে পাচ্ছোনা।এখন আমি নিচে আসলে কিন্তুু আবার স্পেশাল ডোজ দিবো।”

একথা শুনার পর আমি তরিগরি করে উঠে কোনোমতে উপরে চলে গেলাম।এই খচ্চরের স্পেশাল ডোজ মানেই আমার উপর বোমা ফাটা।

রুমের ভেতরে ঢুকে রাফিতের সামনে দাড়িয়ে আছি।কিন্তুু ব্যাটা খাটাস মার্কায় কিছু বলাতো দূর আমার দিকে তাকাচ্ছেনা পর্যন্ত।একমনে কাজ করছে।যেনো মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে এটা না করলে সে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে।আমিও তো তার সাথে কথা বলিনা।ডেকে এনে এভাবে দাড় করিয়ে রাখার কোনো মানে হয় কি।যত্তসব ব্যাটা গন্ডার,রামছাগল কোথাকার।এবার সে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কাজ করতে করতে বলল,

“আলমারির ড্রয়ার থেকে নীল রঙের ফাইলটা বের করে দাও।”

তার কথা শুনে এবার আমার প্রচুর রাগ হলো।এই কাজটাতো সে নিজেও করতে পারতো।না তা করবে কেনো।করলে আমাকে জ্বালাবে কি করে। আমিও আর কিছু বললাম না।বাম হাতে ফাইলটা বের করে তার সামনে রেখে নিচে চলে আসলাম।ডান হাতটা নাড়াতেও কষ্ট হয় আমার।হবেই না বা কেনো।কতখানি কেটেছে পাষানটা।শত্রুর সাথেও মনে হয় মানুষ এমন করেনা।
,
,
,
,
এভাবেই কেটে গেলো তিনদিন।এই তিনদিনেও আমি তার সাথে কোনো কথা বলিনি।সেও দরকার ছাড়া কোনো কথা বলেনা আমার সাথে।তার কেমন লাগে আমার জানা নেই।তবে আমার খুব কষ্ট হয়।নিজেকে একটা জীবন্ত লাশের মতো লাগে আমার।রোবটের মতো যা বলে তাই করি।

ছাদের এক কোনে রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছি।রাফিত বাসায় নেই।সন্ধা হতে আর কিছুক্ষন বাকি মাত্র।প্রকৃতিতে সূর্যের লাল আভা বইছে ও বাতাসেও কেমন একটা মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ।আমার কাছে এই পরিবেশটা খুব পছন্দের।হাজারও কষ্ট যেনো মুহূর্তের মাঝেই প্রকৃতিতে বিলীন করে দেওয়া যায়।

হঠাৎই কেউ আমাকে পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে মুখ ডোবালো।প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও তার শরীরের পারফিউমের গন্ধে বোঝতে বাকি নেই যে এটা কে।আমি তার এভাবে ধরায় কোনো রিয়াকশন দিলাম না।যেভাবে ছিলাম সেভাবেই দাড়িয়ে আছি।যেনো কোনো মূর্তি।

কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম আমার ঘাড়ে তরল জাতীয় গরম কিছু পরছে।তাহলে কি রাফিত কান্না করছে।কিন্তুু কেনো?আমার খুব ইচ্ছে করছে তাকে একবার জিজ্ঞেস করতে।তাও ইচ্ছেটাকে মনের ভিতরেই দমিয়ে এক কোণে রেখে দিলাম।সে বলল,

“আই এম সরি দিশা।”

তার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম।সে আমাকে সরি বলছে।ভাবা যায়।সত্যিই অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার।তার কন্ঠটাও কেমন যেনো শুনা যাচ্ছে।হয়তো কান্নার ফলে।কিন্তুু হঠাৎ আমাকে সরি বলার কারণটা কি?আমাকে আঘাত করার জন্য নাকি অন্য কোনো কারণ।আমি তাও তার সাথে কোনো কথা বলছিনা।সে আবারও বলল,

“কথা বলবেনা আমার সাথে?”

নিরবতা………………

“প্লিজ দিশা চুপ করে থেকোনা।কিছুতো বলো।”

নিরবতা………………

“আমাকে কি ক্ষমা করা যায়না দিশা”

আমি তাও চুপ করে আছি।বোঝতে পারছিনা সে কিসের জন্য আমার কাছে ক্ষমা চাইছে।আমার মনে কষ্ট দেওয়ার জন্য,আমাকে প্রতিনিয়ত টর্চার করার জন্য নাকি আমাকে ভুল বোঝার জন্য।আমি তার কোনো কথার জবাব দিলামনা।অপরাধতো সে আমার সাথে অনেক করেছে।কয়টার জন্য কয়টা সরি বলবে সে।সে কি তাহলে সব সত্যি জানতে পেরেছে।আর শুধুমাত্র সরি বললেই কি সাত খুন মাফ হয়ে যায়।

“প্লিজ দিশা কথা বলো।তোমার এই চুপ থাকাটা যে আমার কলিজায় গিয়ে বিধছে।তোমার কন্ঠটা শুনতে খুব ইচ্ছে করছে।কিছুতো বলো।”

আমি আর কান্না না করে থাকতে পারলামনা।ফুপিয়ে কেদে দিলাম এবার।……………..

to be continued………………………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *