ভালোবাসার প্রতারণা ! সিজন 2 ! Part- 17 (শেষ)
চার বছর পর♡♡♡
আমেরিকা,,,,
—-আকাশ তুমিও না! এসব কি বলছো? তোমার বিয়ে আর আমি যাবোনা!
—- এই চারবছরে তো একবারের জন্যও এলেনা। আমিই তো গিয়েছিলাম বাবুদের দেখতে।(ফোনের ওপাশ থেকে আকাশ বলল)
—- হুম। চিন্তা করোনা আজ রাতের ফ্লাইটেই আমি আসবো।
—-বাবুরা কেমন আছে?
—-ভালোই আছে। খুব দুষ্ট হয়ে গেছে আমি তো খুব চিন্তায় আছি দুটোকে কিভাবে সামলে বাংলাদেশ পর্যন্ত নিয়ে যাবো।
—-এতো বছর একা সামলেছো এখনও ঠিকই পারবে।
—-উপহাস করে বলছো?
—-তারা আমি কখনো এভাবে বলতে পারি!
—-থাক বাদ দাও। একটা হোটেল বুক করে রেখো তো।
—-কেন? তুমি কি হোটেলে থাকার প্ল্যান করছো নাকি! দেখো তারা যদি এমন কিছু ভেবে থাকো তাহলে সেটা ভুলে যাও। আমি তোমাকে হোটেলে থাকতে দিব না। আমার প্রভা আর তূর্য কোনো হোটেলে থাকবেই না। আমাদের বাড়িতেই থাকবে চৌধূরী বাড়ির বংশ ধররা নিজেদের বাড়িতে না উঠে হোটেলে উঠবে! নো ওয়ে।
—- আমি ঐ বাড়িতে কিভাবে থাকবো! যেখানে প্রভাত চৌধূরী আছে!
—-এটা একলা প্রভাত চৌধূরীর বাড়ি নয় আমারও বাড়ি আর প্রভা ও তূর্যরও বাড়ি। সো এই ব্যাপারে আর কোনো কথা বলবে না তুমি। ড্যাড মম কতো এক্সাইটেড হয়ে আছে ওদের দেখার জন্য প্লিজ এমন কিছু করোনা যাতে ওনারা কষ্ট পায়।
—-হুম।
—-আমি তোমাদের পিক করতে এয়ারপোর্ট যাবো।
—ওকে।
তারায টুইন বেবি হয়েছে। এক ছেলে এক মেয়ে ওরাই এখন তারা দুনিয়া তারার সবকিছু। কিন্তু ভেতর থেকে সবসময় একটা হাহাকার থাকেই ভালোবাসার মানুষটির জন্য। প্রভাতকে চারটা বছর চোখের দেখাও দেখেনি। যতোই হোক সে তো ওর স্বামী। সেদিন এয়ারপোর্টে গিয়ে ডিভোর্স পেপারটা ছিড়ে ফেলে। তারা তো একটা প্ল্যান করেছিল প্রভাতকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার। এখনো দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ আছে। তারার জানামতে প্রভাত জানেনা যে ওদের কোনো ডিভোর্স হয়নি। কিন্তু প্রভাত সবটাই জানে সেদিন এয়ারপোর্ট থেকে আসার সময় কাগছের দুই অংশ প্রভাত পায় যেখানে স্পষ্ট দেখা যায় প্রভাতের নাম পুরোটা দেখেই বুঝে যায় এটা ওদের ডিভোর্স পেপার। মুখে এক চিলতি হাঁসি ফুটে ওঠে ওর। তারার অজান্তেই আমেরিকা যায় নিজের বাচ্চা হওয়ার কথাটা শুনার পর। দু তিনবার যায় দূর থেকে দেখে চলে আসে। তারাকে দেখলে বুকটা হুহ করে ওঠে। আগের মতো সৌন্দর্য থাকলেও চেহারায় মলিনতা স্পষ্ট থাকে। তারার যেই হসপিটালে ডেলিভারী হয় এবং যে ডক্টর করায় সে প্রভাতের খুব কাছের ফ্রেন্ড নিরা। নিরার থেকেই প্রভাত তারার সব ইনফর্মেশন নেয়। যখন বাচ্চাদের চেক আপ করাতে আসে তখন ভিডিও কলে ওদের দেখাতো প্রভাত নিরবে তার জান পাখি গুলোকে দেখতো। তারা এই সব ব্যাপারে কিছুই জানেনা। প্রভাত এখন আর আগের মতো নেয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে এলকোহল থেকে বিরত থাকে। পুরোই অন্যরকম হয়ে গেছে। তবে আগের মতোই সুদর্শন আছে। বিয়ের জন্য অনেক মেয়েই প্রপোজ করেছে কিন্তু ফিরেও তাঁকায়নি। একজন বিবাহিত পুরুষ যার কিনা বাচ্চা আছে সে আবার বিয়ে করতে যাবে কোন দুঃখে? তাছাড়া তার মন প্রাণ জুড়ে যে শুধুই তারা।
■
■
■
এয়ারপোর্ট থেকে আকাশ তারাকে পিক করে সোজা বাড়ি নিয়ে আসে। আকাশ ব্যাগ বের করে ভেতরে দিয়ে আসে। তারা ধীর পায়ে প্রভা আর তূর্যকে নিয়ে ভেতরে যায়। তাদের দেখে অদ্রিজা আর প্রভাতের ভা দৌড়ে এসে। তারাকে জড়িয়ে ধরে তাড়াতাড়ি বাচ্চাদের কোলে নিয়ে আদর করতে থাকে। বাড়িতে মুহূর্তেই যেন একটা হাসি খুশির ধুম পড়ে যায়। ছোট ছোট বাচ্চা সারা বাড়ি ঘুরছে তা দেখে প্রভাতের বাবা মায়ের সে কি যে খুশি। তারাকে বসিয়ে প্রভাতের মা আগের মতোই নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে। প্রভাত অফিসের কাজে ব্যস্ত তাই আসতে রাত হবে। প্রভাত জানেনা যে তারা আসবে। আকাশ আর অদ্রিজা কিছু বলেনি কাউকে কিছু বলতেও দেয় নি। এটা যে তাদের প্ল্যান ছিল। নিজের ভাইয়ের কষ্ট আর সহ্য করতে পারেনা ওরা। তারাও যে কতোটা কষ্টে আছে সেটাও আকাশের অজানা নয়। ওরা যে একজন আরেকজনের পরিপূরক। এভাবে তাদের দেখে যে ওরা নিজেরাও কষ্ট পাচ্ছে এটাই একটা সুযোগ ওদের এক করার। তাদের জন্য বাচ্চা গুলোও যে খুব কষ্ট পাচ্ছে। বাবা থাকা সত্বেও বাবার আদর পাচ্ছেনা। এটা যে অন্যায় ওরা দুটো তো কোনো দোষ করেনাই তাহলে ওরা কেন কষ্ট পাচ্ছে!
রাতে প্রভাত ফিরে এসে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। বাচ্চাদেরকে খিল খিল করে হাঁসতে দেখে তাদের চারিপাশে ছোট ছোট পায়ে হাঁটতে দেখে প্রভাতের চোখে পানি টলমল করে। তার সন্তানদের যে আজ এতো নিকট থেকে দেখছে। কি যে আনন্দ হচ্ছে ওর। আর এক মিনিটও দেরি না করে দৌড়ে গিয়ে দুটোকে কোলে নিয়ে আদর করা শুরু করলো। বাবুরাও হাঁসছে তো হাঁসছে কোনো থামাথামি নেই দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব খুশি। তিন বছরের বাচ্চা একটু একটু কথা বলতে পারে। দুজনেই পা,,পা করে উঠল ওরা কি বুঝে পাপা বলল তা প্রঢাত বুঝলো না। শুধু নিজের বাচ্চাদের মুখ থেকে পাপা শুনে কেঁদেই দিল। তারা সব দেখছে উপরে দাঁড়িয়ে আর চোখের জল ফেলছে।
তারা আর প্রভাত পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। আকাশ আর অদ্রিজা ইচ্ছা করে ওদের রুমের মধ্যে লক করে দিয়ে চলে যায়। তারা কিছু বলছেনা চোখের পানি ফেলছে। প্রভাতকে দেখে ইচ্ছা করছে জড়িয়ে ধরতে আর ইচ্ছামতো কান্না করতে। কিন্তু পারছেনা। নিরবতা ভেঙ্গে প্রভাত বলল
—-কেমন আছো?
—-যেমন আপনি আমাকে রাখতে চেয়েছিলেন।(অন্যদিকে ফিরে)
—-তারা আমাকে একটা সুযোগ দেওয়া যায় না! নিজের ভালোবাসার মানুষের থেকে এতো দূরে থেকেছি সন্তানদের থেকে এতো দূরে থেকেছি আর কতো? মৃত্যুর চেয়ে যন্ত্রনাদায়ক মনে হচ্ছে এটা আমার কাছে। আমি এবার বোধ হয় মরেই
আর কিছু বলার আগে তারা ওর মুখ চেপে ধরে। প্রভাত ভ্রু কুঁচকিয়ে তারার দিকে তাঁকালে সে ছেড়ে দেয়।
—-আমাকে এখনো ভালোবাসো তাই না!
—-না।(অভিমানি সুর করে।)
—-ওহ আচ্ছা।
প্রভাত রুমে চলে যায়। আর কয়েকটা স্লিপিং পিল খেয়ে শুয়ে পড়ে তারা অনেক চিৎকার চেঁচামেঁচি করলে আকাশ এসে দরজা খুলে দেয়। প্রভাত ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল পাড় ভয়ে এখন দুপুর হয়ে গেল প্রভাত এখনো ওঠেনি। তারার মন আনচান করছে। কিছু হয়ে গেল না তো! কাউকে কিছু বলতেও পারছেনা কারণ একটা দ্বিধা কাজ করছে। ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর অদ্রিজাকে বললে ও মিটিমিটি হাসে কিন্তু তারাকে সিরিয়াস মুডে দেখে ও দৌড়ে উপরে যায়। প্রভাতের রুমে এসে দেখে ও বেঘোরে ঘুমাচ্ছে অনেকবার ডাকার পরেও ওর কোনো হেলদুল নেই। এবার ও ভয় পেয়ে গেল। এক চিৎকার দেয় সাথে সাথে তারা দৌড়ে উপড়ে চলে আসে সাথে বাড়ির সবাই। তারা অবাক হয়ে প্রভাতের দিকে তাঁকিয়ে আছে কিছু বলতে পারছেন। কি বলবে আকাশ যখন বলল ভাই স্লিপিং পিল খেয়েছে তখনিই ব্যাস তারা বোবা হয়ে গেল।
হাসপাতালে এসে প্রভাতকে তাড়াতাড়ি ওটিতে নিয়ে যায়। তারা তো কান্না করতে করতে শেষ। ডাক্তার বলে আরেকটু দেরি করলে তো বাঁচানোই যেত না কারণ মাত্রাতিরক্ত পিল খাওয়ার ফলে ওর অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়।
তারা একটা কেবিনে বসে আছে প্রভাতের পাশে। অনবরত কান্না করছে কোনো থামা থামি নেই। প্রভাত অপলক চেয়ে আছে তারার দিকে।
—আপনি এমন করলেন কেন? একবারো কি আমার কথা আমাদের কারো কথা ভাবা যেত না! আপনি এতো বড় পদক্ষেপ ওঠালেন কেন?
—-তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারছিনা অনেক তো হয়েছে আর কতো?
—-কে বলেছে আভাকে ছাড়া বাঁচতে! অনেক হয়েছে আর না আমি আপনাকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনার মরণ কামন করিনি। ভালোবাসি আপনাকে আপনি বুঝেন না কেন?
—-আমিও যে বড্ড ভালোবাসি তোমাকে।
তখনিই আকাশ ইলিয়ানা অদ্রিজা বাড়ির সবাই তারার বাড়ির সবাইও আস। বাচ্চাদের কোলে নিয়ে আসে আকাশ প্রভাত ইশারায় ওদের দিতে বলে আকাশ ওদের দিলে প্রভাত তার পাশে রেখে ওদের আদর করে দেয়।
সবাই খুব খুশি ওদের একসাথে দেখে। আকাশের বিয়ে হয়ে যায় এর দুদিন পরে খুব ধুমধাম করে। এই দুদিনে তারা আর প্রভাতের সম্পর্কটাও স্বাভাবিক হয়ে যায়।
প্রভাকে প্রভাত কলো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তূর্যকে তারা। দুজনেই একমনে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে আছে। প্রভাত অনুতপ্ততার দৃষ্টি নিয়ে তারার দিকে তাঁকায়।
—তারা আমাকে ক্ষমা করে দাও।
—-আপনার কি মনে হয় আমি আপনাকে এখনো ক্ষমা করিনি? এতো অবিশ্বাস! বেশি করলে আরিয়ানের কাছে চলে যাবো।
প্রভাত রাগী চোখে তারার দিকে তাঁকায়।
—-জানেন উনি আমাকে বিয়ের অফার দিয়েছিল। তো কি বলেন করে ফেলি ওনাকে বিয়ে!
তারার কথা শেষ হতে না হতেই প্রভাত তারা তূর্য দুজনকেই জাপটে ধরে বলে
—তুমি শুধু আমার আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা মাথায় আনবেনা তাহলে যে আমি মরে যাবো।
—যাবোনা কখনোই না।
দুটো মনের পুনরায় মিলন হয়। অনেক দূরত্ব ছিল। যার অবসান ঘটেছে এখন। একটা ভুলের জন্য দুটো সম্পর্কে যে ফাটল ধরেছে তা যেন দ্বিতীয়বার না ধরে।
———-♡সমাপ্ত♡———-
(আপনাদের জন্যই শেষটা মিলিয়ে দিলাম। অনেকের মনে হচ্ছে যে তারার সাথে অন্যায় হলো কিন্তু আমার তা মনে হয় না। তারার সাথে প্রভাত ছলনা করে ঠিকই কিন্তু ওকে খুন করার মতো জঘন্য কাজ করেনা। মানুষ ভুল করে অনুতপ্ত হলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়াটাই মহৎ কাজ। একজন মানুষ চার বছর নিজের ভালোবাসার মানুষের থেকে দূরে থেকেছে নিজের সন্তানদের থেকে দূরে থেকেছে। তার যন্ত্রণাটা যে যেকোনো শাস্তিকেই হার মানায়। তারপর আত্নহত্যা করতে গিয়েছে তাতেই বুঝা যায় সে কতোটা অনুতপ্ত তাহলে সেই ব্যক্তিকে যদি ক্ষমা না করা হয় তাহলে আসল দোষী তো অন্যজন হয়ে যায়। ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন আর এতোদিন পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।)