ভালোবাসার প্রতারণা ! সিজন 2 ! Part- 16
তারাকে কেউ একজন ধাক্কা মারায় সে পড়ে যেতে নেয় ওমনি কেউ তাকে ধরে ফেলে। তারা ভয়ে চোখ মুছ খিঁচে ফেলে। আজ বোধ হয় ওর প্রাণটায় যাবে সেই ভয়ে। না ও তো পড়েনি তারমানে বেঁচে আছে বাঁচালো কে! তারা পেছন ফিরে দেখলো আকাশ তারার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আর ইলিয়ানা একটা মেয়ের হাত শক্ত করে চেপে রেখেছে। তারা তো অবাক এসব হচ্ছে কি! আকাশ ইলিয়ানায় বা এখানে কিভাবে?
—তুমি ঠিক আছো তো তারা! (উদ্ববিগ্ন হয়ে)
—হুম।
তারাকে সোজা করে দাড় করিয়ে আকাশ এবার তৃধার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হ্যাঁ তৃধায় তারাকে ধাক্কা দিয়ে পাহাড় থেকে ফেলে মারতে চেয়েছিল। আকাশ ঠাস করে একটা থাপ্পর মারে তৃধার গালে। যদিও সে কখনো কোনো মেয়ের গায়ে হাত তোলেনা কিন্তু এখন যা ঘটতে চলেছিল তা দেখে আকাশ নিজেকে আটকে রাখতে পারেনি।
—-এসবের মানে কি তৃধা ! তারাকে ধাক্কা দিয়ে মারতে চেয়েছিলে কেন বলো!
—-আমি আসলে
—-বলো কেন মারতে চেয়েছিলে? তুমি না ভাইয়ের বন্ধু তাহলে তুমি তার স্ত্রীকে হত্যা করতে চাইছো কেন? তুমি জানো ভাই জানতে পারলে তোমাকে মেরে ফেলবে।
—-কি করবে! ওই ধোকাবাজটা কি করবে! আরে ও নিজেই তো তারাকে মারার জন্য এখানে নিয়ে এসেছিল।
—-মানে!
তৃধা তারপর সব খুলে বলে ওদের রিলেশন সম্পর্কে আর তারার সাথে প্রভাতের মিথ্যা প্রেমের অভিনয় করে তারাকে মেরে ফেলার প্ল্যানের কথাটাও। তারা সব শুনে থমকে যায়। বিশ্বাস করতে পারছেনা প্রভাত এমনটা করবে।
—-এই আপনার কাছে কি প্রমাণ আছে যে প্রভাত আমাকে মেরে ফেলতে চায় আমার সাথে প্রতারণা করেছে।
—-প্রমাণের দোকান আছে আমার কাছে।
তৃধা ওর আর প্রভাতের অন্তঃরঙ্গ কিছু ছবি দেখালো যা দেখে তারার পুরো দুনিয়া ঘুরে যায়। তারপর ওদের কল রেকোর্ডস গুলোও শুনায়। এবার আর তারা দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা। চোখ বন্ধ হয়ে যায় চারিদিকে সব অন্ধকার হয়ে যায়।
তারার জ্ঞান ফিরলে নিজেকে একটা রুমে আবিষ্কার করে। পাশে তাঁকাতেই দেখে আকাশ আর ইলিয়ানা বসে আছে। আকাশ তারার কাছে গিয়ে বলে
—-তুমি ঠিক আছো তো! এখন কেমন লাগছে?
—-ভালো।
—-যাক তুমি বেবি দুজনেই ভালো আছো এতেই অনেক।( ইলিয়ানা বলে ওঠে)
বেবির কথা শুনেই তারা কান্না করে দেয়। আকাশ আর ইলিয়ানা বুঝতে পারে তারা কেন কান্না করছে। আকাশ বলে
—-কান্না করোনা তারা। ঐ তৃধাকে আমরা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি ওনারা সেখান থেকে ওকে ঢাকা জেলে পাঠাবে। আর ওর বিচারও সেখানেই(ঢাকা) হবে।
—-প্রভাত!
—-আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা ভাই এতোটা নিচে নামতে পারে! তুমিষকোনো চিন্তা করোনা এর জন্য ভাইকেও শাস্তি পেতে হবে।
—-পেতে তো হবেই আর তা আমি দিব আমার মতো করে।
—-কিভাবে?
—-আগে চলো আমরা ঢাকা ফিরে যাই। আর ঐ প্রভাত চৌধূরীকেও বলবে যেন সঠিক সভয়ের মধ্যে ঢাকা চলে আসে।
—-তারা তুমি কি করতে চাইছো?
—-আকাশ আমি এখন এই ব্যাপারে কিছু বলতে চাইনা। যা বলার আর করার সবার সামনে করবো।
—-ঠিক আছে।
(এবার বলি আকাশ আর ইলিয়ানা এখানে কি করে এলো! আসলে আকাশ আর ইলিয়ানা ঘুরতে এসেছে সাথে তাদের আরো ফ্রেন্ড ছিল। আকাশ আর ইলিয়ানা পাহাড়ে ঘুরতে আসলে তারাকে দেখে তারার সাথে কথা বলার জন্য যখন যায় তখন দেখে একটা মেয়ে তারার পেছনে যাচ্ছে দু হাত মেলে। তা দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় যে মেয়েটি তারাকে ধাক্কা মারতে চায়। তখন ওরা দৌড়ে সেদিকে যায়। তারাকে ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথে প্রভাত তারার হাতটা ধরে ফেলে আর ইলিয়ানা তৃধার হাত চেপে ধরে যাতে পালাতে না পারে। আকাশ সামনে থাকা মেয়েটাকে দেখে অবাক হয়ে যায় কারণ ও তৃধা প্রভাতের বন্ধু আকাশ খুব ভালো করেই চিনে।)
ঢাকা ফিরে আসলে তারা প্রভাতের বাড়িতেই যায়। আসার আগে আকাশ প্রভাতকে কল করে বলে আসতে কিন্তু সব খুলে বলেনা। তাও প্রভাত কিছুটা আঁচ করতে পারে। তাই দেরি না করে তাড়াতাড়ি চলে আসে।
♢
♢
♢
♢
♢
সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে থমথমে পরিবেশ। তারা সামনে হাটু গেরে বসে আছে প্রভাত তারা পাথরের মূর্তির মতো আকার ধারণ করেছে। কোনো নড়াচড়া নেই। শুধু একদৃষ্টিতে প্রভাতকে দেখছে। প্রভাত তারার কাছে হাত জোর করে বলছে
—তারা আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। যখন আমি বুঝতে পেরেছি মিথ্যে অভিনয় করতে করতে আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি তখন আমি এই নিকৃষ্ট কাজ করা থেকে সরে এসেছি। তৃধার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে তোমার কাছে আর আমাদের সন্তানের কাছে ফিরে এসেছি। প্লিজ তারা আমায় একটা সুযোগ দাও ক্ষমা করে দাও।
—-ভাবলেন কি করে যে আপনি ক্ষমা চাইলেই আমি ক্ষমা করবো! এতো সহজে মি. চৌধূরী! আপনার একবারো মনে হয়নি যে কতোটা জঘন্য খেলায় নেমেছেন আপনি! কিভাবে পারলেন এতোটা নিষ্ঠুর হতে!
—-আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।
—-বড্ড দেরিতে।
—-আমি তোমাকে ভালোবাসি তারা আমাদের অনাগত সন্তানকেও অনেক ভালোবাসি। প্লিজ আকে ফিরিয়ে দিয় না।
—-আপনাকে ফিরিয়ে দিব না! আপনার মতো মানুষের ছায়া আমি আমার সন্তানের উপর পড়তে দেব না।
—-তুমি কি বলতে চাইছো তারা! আমার সন্তান থেকে আমাকে দূর করে ফেলবে?
—-হ্যাঁ তাই।(চিৎকার করে) আপনিই তো এই সন্তানকে চান নি মেরে ফেলতে চেয়েছেন। আমাকে ভালোবাসেন তাই না? আর কতো নাটক করবেন আপনি! আপনাকে আমি জেলের ভাত খাওয়াতাম কিন্তু আমি তা করিনাই কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসি। আর তাই আমি আপনাকে অন্য রকম শাস্তি দিব।
—-তুমি যেই শাস্তি দাও না কেন আমি মাথা পেতে তা গ্রহণ করবো। আমার সন্তানের থেকে আমাকে দূর করোনা।
—-যা বলছি তাই করবেন? প্রমিজ!
—–হুম। প্রমিজ করলাম।
—-আকাশ (হাত বাড়িয়ে)
আকাশ তারার হাতে একটা কাগজের খাম দিয়ে যায়। তারা খুশি মনে তা খুলে একটা পেন হাতে নিয়ে সই করে দেয়। তারপর প্রভাতের দিকে এগিয়ে দিলেই প্রভাত বলে
—-এটা কি?
—ডিভোর্স পেপার(মুচকি হেঁসে)
—-আর ইউ মেড তারা! আমি পারবোনা।
—-আপনি ওয়াদা করেছেন কিন্তু।
—–আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা তারা।
—-আপনি যদি এখুনি সাইন না করেন তাহলে আমি সুসাইড করতে বাধ্য হবো।
—-নাআআআআ!(চিৎকার করে) আমি করবো তুমি এমন কোনো পদক্ষেপ উঠাবেনা আমার সন্তান যে তোমার গর্ভে আমি তাকেও হারাতে পারবোনা তোমাকেও হারাতে পারবোনা।
প্রভাত সাইন করে দেয়। সাথে সাথে তার পেপারটা নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে
—-আমার আমেরিকার জবটা হয়ে গেছে বাবা। তোমার বোঝা হয়ে থাকবোনা তুমি চিন্তা করোনা। আজকেই আমি চলে যাবো এদেশ ছেড়ে তোমাদের সবাইকে ছেড়ে।
তারার বাবার যে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আজ তার জন্যই তার মেয়েটার এই অবস্থা তারা অভিমান করে বসেছে তার উপর। বাবা হয়ে মেয়ের জীবনটা যে ধ্বংস করে ফেললো কায়েস সাহেব। মেয়েকে অনেক বারণ করে কিন্তু মেয়ে শুনেনা। তারা সবাইকে উপেক্ষা করে চলে যায় প্রভাত দৌড়ে এসে তারার সামনে হাটু গেড়ে বসে
—-তারা প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেয় না আমি কি করে বাঁচবো তোমাদের ছাড়া!
—-আমাকে মারার পড়ে যেভাবে থাকার প্ল্যান করেছিলেন সেভাবেই থাকবেন।(মুখ শক্ত করে)
প্রভাতের বুকটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কান্না শিক্ত নয়নে তারাকে অনুরোধ করছে কিন্তু তারা শুনলোনা চলে গেল। প্রভাতের আর্তনাদ শুনে পৈশাচিক আনন্দ অনুভুব করতে পারছেনা তারা কিন্তু ফিরেও তাকাচ্ছেনা। তারা চলে যায় প্রভাত সেইখানে বসেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। চিৎকার করে বলছে
—-আমাকে ছেড়ে যেয় না আমি বাঁচবোনা। এই কঠিন শাস্তি আভাকে দিয় না ফিলে আসো তারা।PLEASE COME BACK TARA.
এয়ারপোর্টে বসে আছে তারা আকাশ আর ইলিয়ানাও এসেছে ওকে বিদায় জানাতে। সবাইকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলে রওনা দেয় বিমানের উদ্দেশ্যে। প্রভাত তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করছে যে করেই হোক তারার যাওয়া আটকাতে হবে। এয়ারপোর্টের সামনে গাড়ি থামাতেই বিমান উড়ে যাওয়ার শব্দে বুক ছ্যাৎ করে উঠে ওর। দৌঁড়ে ভিতরে যায় আকাশকে দেখে এগিয়ে যায়।
—-তারা কোথায় রে?
—-চলে গেছে। এইমাত্র আমেরিকার ফ্লাইট ছেড়ে দিয়েছে।
—-না তারা আকে ছেড়ে যেতে পারেনা।
—-তুই যা করেছিস তার জন্য এটাই তোর যোগ্য শাস্তি। চলো আসো ইলিয়ানা।
আকাশ ইলিয়ানা চলে যায় আর প্রভাত মাটিতে বসে পড়ে। চিৎকার করে তারাকে ডাকছে আর কান্না করছে এরকম ভাবে প্রভাতকে কান্না করতে দেখে সবাই জোড়ো হয়ে যায়। প্রভাতও ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। তারপর ভেজা নয়নেই এয়ারপোর্ট ত্যাগ করে।