ভালোবাসার প্রতারণা

ভালোবাসার প্রতারণা ! সিজন 2 ! Part- 06

তারার মাথা ঘুরছে এ কি দেখছে ও! শেষমেষ কিনা এই লোকটার হাতে ওর বাবা ওকে তুলে দিচ্ছে। রাগে আর ক্ষোভে তারা নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলছে। এই বিয়েটা তো ও কোনো ভাবেই করবেনা। এত বড় ধোকা! না এখন কিছু একটা করতে হবে। রাগের বসে কান্নায় করে দিল তারা। দ্রুত গতিতে তার বাবার কাছে গেল আর তাকে জিজ্ঞেস করল

—-বাবা এই লোকটা !

—-কোন লোকটা?

—-ঐ যে (হাতের ইশারায়)

—-ওহ। ওর নাম হলো এহসান ওর সাথেই তোর বিয়ে ঠিক করেছি আমরা। ঐদিন যে পার্টিতে গিয়েছিলি ওটা তো ওদের কোম্পানি থেকেই ওরগানাইজ করা হয়েছিল। খুব ভালো ছেলে আর সফল বিজনেসম্যান। আচ্ছা এখন স্টেজে যা কিছুক্ষণ পরেই অনুষ্ঠান শুরু হবে।

—-সরি বাবা। আমি স্টেজে যাচ্ছিনা এই বিয়ে আমার পক্ষে করা অসম্ভব।

—-তারা! (রেগে গিয়ে)

—- তোমার কথা মত আমি বিয়েতে তো রাজি হলাম। কিন্তু এই এহসান চৌধূরীকে বিয়ে করে আমি পারবোনা। তুমি অন্য কোনো ছেলে দেখো। আমি তাকেই বিয়ে করে নিব।

—-এহসানকে বিয়ে করতে তোমার আপত্তি কিসে?

—-বাবা ঐ লোকটা (তারা বলতে গিয়েও বলেনা কারণ কি বলবে সে তার বাবাকে আর কোন মুখেই বা বলবে এতে তো তাকেই ভুল বুঝবে। তার চেয়ে বরং না বলাই ভালো।)

—-কি বল !

—-আমি বিয়ে করবো না ব্যাস।

—-যদি তুমি কোনো যুক্তিসহ কারণ দেখাতে তাহলে আমি বিয়েটা হতে দিতাম না। আজ এখানেই ভেঙ্গে ফেলতাম। আসল কথা তুমি বিয়েটা করতেই চাও না। আমি মরে যাই সেটাই তো তুমি চাইছো।

—-না বাবা। তুমি ভুল বুঝছো আমাকে।

—-এখানে ভুল বোঝাবুঝির প্রশ্ন আসছেনা। তুমি যদি আমাকে সুস্থ দেখতে চাও তাহলে এই বিয়েতে রাজি হয়ে যাও। তুমি যদি আজ বিয়ে ভাঙ্গার মতো কিছু কর তাহলে সমাজে আমার মুখ দেখানোর জায়গা থাকবেনা। আশা করি নিজের বাবাকে ছোট করবেনা তুমি।

—-ঠিক আছে বাবা তুমি যা বলবে তাই হবে। আজ না হয় তোমাদের কথা ভেবে নিজের জীবনে অনেক বড় একটা সেক্রিফাইস করলাম। (হাফ ছেড়ে সাথে দু ফোটা চোখের পানি ফেললো)

সবাই নিজেদের মতো ইন্জয় করছে। তারা মুখ ভার করে বসে আছে তখন কেউ একজন এসে বলে

—-কি ম্যাডাম বিয়ে করছেন আর আমাকে বললেন না ?

—-আকাশ তুমি!

—-হুম আমি।

—-তুমি এখানে কি করছো? তোমাকে কে বলল!

—-তুমি তো বলবে না তা আমি জানি। ভাইয়ের এংগেজমেন্ট সেই কারণে আসা আর এসে দেখি ভাবি যে আমাদের তারা।😃

—-আকাশ তুমি এহসানের ভাই?

—-হুম। কেন তুমি জানো না!

—-তুমি কখনো বলনি তো।

—-আমি বলতে যাবো কেন? আর তাছাড়া তুমিও তো জিজ্ঞেস কর নি।

—-আকাশ তোমার সাথে তোমার ভাইয়ের কোনো মিল নেই।

—-থাকবে কি করে ও তো একটা ভিন গ্রহের প্রাণী। সারাক্ষণ মুখ ভার করে রাখে আর ওর তো পুরো শরীর রাগে ভরা। ভালোবাসা বলতে যে কিছু আছে তা কখনো বুঝতামই না। যদিনা তুমি ওর লাইফে আসতে।

—-মানে?

—-মানে আর কি! ভাই তোমাকে ভালোবাসে। তাই তো তোমার সাথে আজ ওর এংগেজমেন্ট হচ্ছে। ও যে ছেলে কখনো বিয়ে করবে কিনা তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ ছিল। আর ইলিয়ানাকে তো আমি এখনো ঘরে উঠাতে পারলাম না এই বজ্জাতের জন্য।

—-কেন?

—–আরে বড় ভাইয়ের বিয়ে না হয়ে ছোট ভাইয়ের বিয়ে হলে এটা কেমন দেখায় না আর তাছাড়া ড্যাড বলে দিয়েছে যে আগে ভাইয়ের বিয়ে হবে তারপর আমার আর টুনির।

—-টুনি কে?

—-আমাদের ছোট বোন অদ্রিজা। আদর করে আমরা টুনি বলি আমরা বলতে আমিই বলি ভাই ওকে অদ্রি বলেই ডাকে।

—-তোমার ভাই কি বলে ডাকে আমি তা জানতে চাইনি।

—-জানতে চাওনি তো পরে বলবে তুমি বলোনি কেন আকাশ!(বলেই হেসে উঠল তারাও কেন জানি নিজের হাসি থামাতে পারলোনা। দুজনেই হাসা হাসি করছে।)

ওদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে প্রভাত। তারাকে আকাশের সাথে হাসতে দেখে ও রেগে আগুন হয়ে গেছে। আকাশ জানে এখন তারা ওর ভাবি হতে চলেছে তারপর ও গা ঘেষা ঘেষি করছে কেন? তাহলে কি ওদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে ওরা কি একে অপরকে ভালোবাসে? যদি তা হয় প্রভাত তাদের কখনো এক হতে দিবেনা। তারা শুধুই প্রভাতের।

(আপনাদের তো বলা হলো না প্রভাতকে এহসান বলা হলো কেন? আসলে প্রভাতের পুরো নাম এহসানুল চৌধূরী প্রভাত। পরিচয় পত্রে প্রভাত চৌধূরী দেওয়া। প্রভাত সবাইকে মানা করেছে যাতে তারা না জানে যে ওর নাম প্রভাত। ওর কাছে যেন এহসান নামটাই বলা হয়। সবাই অনেকবার বলার পরও প্রভাত কিছু বলল না শুধু বলেছে “যা বলতে বলেছি তাই বলবে এর বাহিরে কিছুই না।”

কেউ আর প্রভাতের মুখের উপর কথা বলেনা।)

প্রভাত তারা আর আকাশের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। প্রভাতকে দেখে আকাশ সরে প্রভাতকে বসতে বলে। প্রভাত তারার পাশে বসতেই তারা বুক কাপে ওর ভয় করতে থাকে। যখনিই প্রভাত ওর সাভনে আসে তখনিই এমন হয়।

—-কি ম্যাডাম এখন বুঝতে পারছেন কেন আপনাকে আমি ওয়ার্ন করি।

—-আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান কেন সত্যি করে বলুন। আপনি কি আমার সাথে শত্রুতা বজায় রাখার জন্য এমন করছেন? দেখুন আমার এই বিয়েতে কোন মত নেই আমার পক্ষে এই বিয়ে করা সম্ভব না।

—তুমি এই বিয়ে করতে বাধ্য।

—-হুম তা তো আপনি ভালো করেই জানেন কিন্তু কখন কি হয়ে যায় তা আপনি বুঝতেও পারবেন না।

—-ওহ রিয়েলি?

—-ইয়েস।

—হুম। তাহলে এটার সাহায্য নিতে হবে। (মোবাইলে থাকা একটা ভিডিও অন করে যেখানে ঐদিন তারা আর প্রভাতের লিপ কিস টা ফুটে উঠে। তারা তো সেটা দেখে অবাক হয়ে যায়।)

—-আপনি এত নিচ?

—-হুম। যদি বিয়েতে কোনো ভেজাল হয় এটা ভাইরাল হতে সময় লাগবেনা তখন সমাজে মুখ দেখাতে পারবে?

তারা কিছু বলছেনা চোখ থেকে পানি পড়ছে এই সমাজের জন্যই আজ অনেক মানুষ তাদের প্রাপ্য ন্যায় পায়না। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী। এখন যদি তারা বেশি কিছু করতে যায় তাহলে সত্যি খুব খারাপ কিছু ঘটে যাবে ওর সাথে। প্রভাতকে ও খুব ভালো করেই চিনে এই ভিডিওটা ও সত্যি ভাইরাল করে দিতে পারে।

—-নিরবতা সম্মতির লক্ষণ।

—-আপনি এমন করছেন কেন?

—-যদি বলি ভালোবাসি!

কথাটা শুনেই বুকটা ধুক করে উঠল তারার এই তো সেই ফোনের ওপাশে থাকা প্রভাত চৌধূরী নামক ব্যক্তিটির মতো করে বলেছে। তাদের কথাটা পুরোই এক ভয়েস টার কিছুটা মিল আছে তাও ঐটা তো ফোনেই ছিল। তবে প্রভাতের বলা শেষ কথাটা যতটা না ওকে অবাক করেছে তার থেকেও বেশি ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তিকে মনে করিয়েছে।

চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *