প্রাক্তন

প্রাক্তন 2 !! Part- 18

মনে হয় স্পর্শ। রাখেন তো ফোন টা!
__কল কনফারেন্স করো!
কিহ? (বেশ জোরে)
__বললাম কল কনফারেন্স করো।
কেনো?
__আমি বলেছি তাই।
না। কোনো করবো?
__এই রাতে তোমার বাসায় হানা দেওয়া টা ঠিক হবে কিনা বলো তো?
করছি কনফারেন্স!!
কল কনফারেন্স করলাম ওই পাশ থেকে স্পর্শ বলছে,

রাত বাজে একটা ত্রিশ। এত রাতেও কল ওয়েটিং?
__স্যরি?(আমি)
কিছু না।আচ্ছা শুনো না একটা কথা কাল দেখা করবে?
__নাহ।
কেনো?
__কাল একটা পার্টি আছে।
কোথায়?
__রিলেটিভ এর বাসায়!
যেতেই হবে?
__হুম।
তো কার বাসায়?
__জারিফদের বাসায়।
জারিফ টা আবার কে?
__সুবহার বর।

অহহ তাইলে তো আমিও যেতে পারবো তাই না?
__নাহ পারবেন না!
কেনো? আমিও তো ওই বাড়ির হবু জামাই বলে কথা!

সমুদ্র হয়তো কিছু বলতে যাচ্ছিলো।মনে হচ্ছে সে প্রচুর রেগে গেছে!আমি সমুদ্র কে থামানোর জন্য বললাম,

__সমুদ্র!!(আমি)

আমার কথায় আর সমুদ্র কোনো কথা বললো না।
কে সমুদ্র?আমি তো স্পর্শ! (স্পর্শ)
__হ্যা জানি আপনি স্পর্শ! আসলে সমুদ্র সাহেব হয়তো এলাও করবেন না।
সমুদ্র টা আমার কে?
__জারিফের বড় ভাই!
অহহ আচ্ছা সমস্যা নেই আমি ম্যানেজ করে নিবো!
__মানে টা কি?
মানে টা খুবই সোজা আমিও আপনার সাথে কাল যাচ্ছি।তো কাপল ড্রেসিং করে যাই?
__ জ্বী না আপনি যাচ্ছেন না।
আচ্ছা দেখা যাবে।
__মানে?
মানে এখন ঘুমান।আমার না ঘুম পেয়েছে।আচ্ছা রাখছি।আর শোনো কাল আমি পিক করে নিবো তোমায়।

বলেই সে ফোন টা কেটে দিলো।কি এক ঝামেলায় পরেছি খোদা!প্রায় ২০ সেকেন্ড পর আমি বললাম,

আছেন?(আমি)
__হুম আছি।(সমুদ্র)

তার পর দুজনেই চুপ। কারো মুখে কোনো কথা নেই।আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।সে ও হয়তো আমার ই মত কথা শূন্যতায় ভুগছে।এমন নিরবতায় কেটে গেলো ৫ মিনিটের মত।

__রাখছি।(সমুদ্র)
আচ্ছা।

সে খট করে কেটে দিলো। আমার খারাপ লাগা উচিৎ না তাও কেনো জানি খারাপ লাগলো!আমি জানালা ছেড়ে বিছানায় গিয়ে বসলাম।মাথা টাও একটু ধরেছে।শুয়ে পরলাম আবার ঘুমিয়েও গেলাম।ঘুম ভাঙল স্পর্শ এর কল এ,

হ্যালো!(আমি)
__শুভ সকাল! “সকাল”(স্পর্শ)
হুম।
__এখনো ঘুমোচ্ছো যে?
ঘুম ভাঙে নি তাই!
__অলে বাচ্চা টা মনে হয়ে রেগে গেছে!
কোন বাচ্চা?
__যেই সকাল বাচ্চা টার সাথে কথা বলতেছি।
কে সকাল?
__তুমি গো তুমি!
কিহ?
__হুম যাও উঠো ফ্রেশ হয়ে নাও।

বলেই ফোন টা কেটে দিলো।
আজব তো।এর মাথার কি সব তার ছিঁড়া? না মানে মনে হয় তার তুর কিছুই নাই।আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়েই এক তিব্র ধাক্কা খেলাম আমার বোকাসোকা নিউরনে।আব্বু আর স্পর্শ আমাদের খাবার টেবিলে আম্মু আর খালামনির খাবার ইঞ্জয় করতেছে।মানে টা কি?

এই নিরু?দেখ কে এসেছে!(খালামনি)
__হুম দেখেছি!(আমি)
আয় খেতে আয়?
__আপনি এখানে কেনো?(স্পর্শ কে প্রশ্ন টা করলাম)
এই গুলো কি ধরনের কথা নীরা!(মা)
__এই গুলোই কথা মা।
আজব বেয়াদবি কেনো করছিস?
__এই আপনার খাওয়া হয়েছে?
হ্যা আমাকে বলছেন?(স্পর্শ আমার দিকে ইনোসেন্ট একটা লুক দিয়ে)
__জ্বী আপনাকে ই বলছি।খাওয়া হয়েছে?
না এখনো হয় নি।আপনি খেতে পারবেন এখনো অনেক গুলো খাবার আছে তো।আমি তো আপনার ভাগের টা খাই নি।

কথা টা শুনে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার।ভালোই পাগলের পাল্লায় পরেছি।আমি রেগে গার্ডেন এ চলে আসলাম।এসেই নিসান কে ফোন করলাম!
হ্যালো?(নিসান)
__কই তুই?(আমি)
এই তো বাইরে আছি।
__যেই জাহাম্মানেই থাক বাসায় আয়।এক্ষনি!
আচ্ছা আসতেছি কিন্তু হইছে টা কি?
__বাসায় আয় এলেই বুঝবি।
আচ্ছা আসছি।দ্বারা!

আমি বাগানে পাইচারি করছি।নিসান গাড়ি নিয়ে ঢুকলো!গাড়ি পার্ক করেই সে চলে এলো,

কি হয়েছে বলতো?(নিসান)
__ওই স্পর্শ এর কোনো খবর পেয়েছিস?
নাহ তেমন কিছু পাই নি।আসলে ফোন টা তো কাল নষ্ট হয়ে গেছিলো আজ ঠিক করালাম।এখন পাবো।কিন্তু তুই এতো রেগে আছিস কেনো?কি হয়েছে?
__ওই হালা সকালে বাসায় চলে আসছে।
হ্যা তো?
__তো মানে?
তো মানে আসতেই পারে। এভাবে তোর ক্ষেপে যাওয়া টা সবার কাছে অস্বাভাবিক মনে হবে।এতে যদি ওই স্পর্শ কিছু লুকায় ও আমাদের কাছ থেকে ও এলার্ট হয়ে যাবে।তখন ইনফরমেশন ম্যানেজ করা টা কিন্তু সহজ হবে না নীরু।
__কথায় পয়েন্ট আছে!
হুম নরমাল বিহ্যাভ কর।চল বাসায় ঢুকি!
__হুম চল(নিসানের মাথায় একটা গাট্টা মেরে দৌড় মারলাম)

নিসান আমাকে মারার জন্য পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে আমি দৌড়ে রুমে গিয়ে খালুর পিছে লুকালাম।এখন নিসান খালুর কাছে গালি খাবে। আহ এক পৈশাচিক শান্তি!যা ভাবেছিলাম তাই ই। নিসান রাম প্যাঁদানি খাচ্ছে।আহাহ কি শান্তি।আল্লাহ এখন অশান্তু আম্মু চলে আসছে এই বার আমি গালি খাবো।এই এক সমস্যা প্রতি বার ই নিসান রে আম্মু বাচায় নেয় মাথা।আমাকে খালু আব্বা বাঁচাচ্ছে আর নিসান কে আম্মু।এর মধ্যেই আব্বু এসে বললো,

নীরা?
__জ্বী বাবা!
শোন আজ তোদের পার্টিতে স্পর্শ ও যাবে।
__কিহ?(বেশ অবাক আর রাগ মিশ্রিত রিয়েক্ট করে)

না বলিস না আমি ওকে কথা দিয়েছি।

কিছু বলতে যাচ্ছিলাম নিসান আমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বললো,

আচ্ছা খালু আব্বু সমস্যা নেই।
__নিস?(আমি চোখ বড় বড় করে)
আরেহ আসুক না।চিনা জানার সুযোগ পাবো।

তার মানে নিসান মনে মনে কিছু প্লান করছে।আব্বু আর খালু আব্বা চলে গেলো আম্মু ও বেশ খুশি হয়ে চলে গেলো।নিসানের মুখে এক গাল হাসি।তবে সাধারণ হাসি না।সে কিছু একটা ভাবছে।

নিস কি প্লান?(আমি)
__আপাতত কোনো প্লান নাই এখন ড্রেস চুস করবো
টাটা।

বলেই চলে গেলো নিসান। আমি সালা ক্যাবলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

সন্ধ্যা তে আমি রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখি স্পর্শ ব্লাক শার্ট এ দাঁড়িয়ে আছে।আমিও পরেছি ব্লাক। শিট!!!!

চলো ওঠো?(স্পর্শ)
__কোথায়?
গাড়িতে আর কোথায়?
__আমি একাই যেতে পারবো।
জানি তো।আমি পারবো না।তাই বলছি চলো আমার সাথে।
__মোটেও না।
হ্যা মোটেও হ্যা।
__নীরু যাহ না। আপনারা পিছনে আছি তো।(নিসান)
নিশ?(এই টা শুনোর জন্য প্রস্তুত না থাকলে যেমন রিয়েকশন হয় আর কি)
__যা।

ও ই আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো।হঠাৎ করেই নিজেকে বলির পাঠা মনে হতে লাগলো।লাইফে এমন বাজে সিচুয়েশনে পরি নি।আল্লাহ্‌ বাচা মোরে!

পুরো রাস্তা স্পর্শ বকর বকর করেছে।প্রচুর রাগ উঠেছে নিসান যদি আমাকে এই মেসেজ টা না করতো আমি নির্ঘাত ওর মাথায় ডুকলা বাজাইতাম।

“রাগ হবি না।রাগ কন্ট্রোল করবি আর ওকে অবজারভ করবি।প্রতি টা কথা।”

স্পর্শ ওর সব কথা স্বাভাবিক। কিছুই অস্বাভাবিক পাচ্ছি না।এই সব কিছু স্বাভাবিক পাওয়া টাই আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগছে।লোক টা কিছু লুকাচ্ছে।ভাবতে ভাবতেই চলে এলাম।নামলাম।ওয়েল্কাম করার জন্য জারিফ আর সমুদ্র বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।আমাকে আর স্পর্শ কে একি গাড়িতে দেখে সমুদ্র খুব রেগে গেছে বুঝাই যাচ্ছে! আল্লাহ্‌ মালুক কপালে কি আছে।

পার্টি পার্টির মতোই চলছে।হুট করেই সমুদ্র বলে উঠলো,

নীরা একটা ডান্স হয়ে যাক কি বলেন?(সমুদ্র হাত বাড়িয়ে দিলো)
কি করবো বুঝতে পারছি না।আর অন্য দিকে দুই গাধা আপ্পি আপ্পি আর নীরু নীরু করে চিল্লাচ্ছে। জ্বী একদম ঠিক ভেবেছেন জারিফ আর সুবহা।সমুদ্র এক প্রকার টেনেই নিয়ে এলো।টাইন্স প্রায় নিভু নিভু।খুব একটা আলো নেই।গান বাজতেছে।

নীরা বাড়াবাড়ি করে ফেললে নে আজ?
__আমি জানতাম না উনি আসবেন!
তাই নাকি?(খুব কাছে এসে)
__জ্বী হ্যা তাই।সকালে আব্বু কে পোটিয়েছে।(আমার কথা আটকে আটকে যাচ্ছে)

স্পর্শ এক প্রকার আমাকে সমুদ্রর কাছ থেকে ছিনিয়েই নিলো।

মিস নীরা সামনে হবু বর কে রেখে প্রাক্তন এর এত টা কাছে যাওয়া টা কি ঠিক।হবু বর এর তো সমস্যা থাকতে পারে।
আমি কথা টা শুনে থ মেরে গেলাম।তার মানে এই লোক টা আমার বিষয়ে ইনফরমেশন কালেক্ট করেছে।আমি নিসানের দিকে তাকালাম।নিসান আমায় স্পর্শর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিলো ঠিক সে ভাবে যে ভাবে সে সমুদ্রর কাছে থেকে আমাকে নিয়েছিলো।

খাওয়া দাওয়া শেষ হলো!আমি বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়েছি।হঠাৎ করেই গলায় কি পোকা জানি কামড় দিলো।আমি দেখার জন্য মিরর এর সামনে গেলাম।দেখি লালা হয়ে গেছে।পানি দিতেই খুব জ্বলছে।
স্পর্শ আমাকে দেখে তার দিকে ঘুরিয়ে বললো,

দেখি কি হয়েছে?
__কিছু হয় নি!
আরেহ লাল হয়ে গেছেতো(গলায় হাত দিতে হাত বাড়িয়ে)
__কিছু হয় নি বলছিতো।(আমি সামান্য পিছিয়ে গিয়ে)
আরেহ বাবা দেখতে দাও।
__জ্বী আপনাকে দেখতে হবে না।

বলে ই ওখান থেকে চলে এসে।পুরোনো আড্ডায় যেতে চাচ্ছিলাম কে জানি পিছন থেকে আমাকে টেনে নিলো।চ্যেচানোর উপায় নেই মুখ টা ধরে রেখেছে।টেনে এনে গার্ডেন এর ধাক্কা মারলো।ভাগ্য ভালো সামনে নিয়েছে!

চলবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *