আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 15
দিপ্ত এই কথা বলতেই হলরুমে উপস্থিত সবাই এক দফা হেসে উঠলো বিধান ছাড়া। সে চোখ বড় বড় করে এই ঘটনা দেখছে। বিধানের মনে হচ্ছে ও কোনো স্বপ্ন দেখছে তাই হাতে একটা চিমটি কাটলো। চিমটির ব্যথাই প্রমাণ করে দিলো সামনে ঘটমান ঘটনাটির সত্যতা।
মিসেস চৌধুরীঃ কিরে সালাম কর শ্বশুর শাশুড়ি কে! আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন এদিকে আস!
বিধান তার মার কথায় আরেক দফা অবাক হলো। মনে হচ্ছে এবার ৭০০ ভোল্টেজের শক খেলো।
,
,
,
বিধানঃ শ্বশুর শাশুড়ি! ( অবাক হয়ে )
মিসে চৌধুরীঃ ওহ তোকে তো বলা হয়নি এনারা বিথীর আরেক পরিবার। বিথী আর দিপ্তের জন্ম এক দিনেই হয়েছিলো। হাসপাতালে নার্সের ভুল বশত বাচ্চা এক্সচেঞ্জ হয়ে যায়। পরে অবশ্য সব জানাজানি হয় কারণ বিথীর মা বাবা জানতো তাদের মেয়ে হবে যদিও মিস্টার এন্ড মিসেস রহমান জানতো না উনাদের ছেলে না মেয়ে হবে। তাই সেই ভুলের জন্য বিথীকে উনারা নিজেদের সন্তানের মতো তিন মাস পালে। ওই যে বলে না প্রথম সন্তান সবচেয়ে বিশেষ আর মিসেস রহমানের কোল তো প্রথমে বিথীই আলোকিত করেছিল তাই উনারাও বিথীকে নিজের মেয়ে মনে করে আর দিপ্ত বাবার তো একমাত্র কলিজার টুকরা বোন বিথী। জানিস ছেলেটা কি কাঁদাই না কেঁদেছিল। বারবার বলছিলো আমার বোনটার খেয়াল রাখবেন প্লিজ।
,
,
,
বিধান এবার অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছে।
বিধানঃ মানে কি! বিথী দিপ্ত ভাইবোন আর আমি কিনা! ড্যাম ইট! ( মনে মনে )
বিথীঃ আরে মামনি ও তো এমনই ক্রাইবেবি! আমি তো বুঝিই না এই গাধাটা কি করে আম্মি আব্বির ছেলে হয়। আম্মি আব্বি কতো স্ট্রং আর এই গাধা কিনা……
বিথীর কথা শুনে হলরুমের সবাই হু হা করে হেসে দিলো দিপ্ত বাদে।
মিস্টার রহমানঃ হ্যাঁরে মা এই বিষয়ে আমারও সন্দেহ আছে। ( হাসতে হাসতে )
দিপ্তঃ দেখছো জিজু তোমার বউটা কত কুটনি! ( বিথীর দিকে তাঁকিয়ে ভেঙচি কেটে )
দিপ্ত বিধানকে প্রথমে তেমন পছন্দ না করলেও বিথীর স্বপ্ন পূরণে বিধান বা এ বাড়ির কেউ কোনো বাধা দেয় না বলে দিপ্তও এখন বিধানকে পছন্দ করে। এর অন্য কারণও অবশ্য আছে। তা হলো বিথী। দিপ্ত বিথীর বেস্টফ্রেন্ড হওয়ার পর বিধানের বিথীর সাথে করা মিসবিহেভের কথা কখনোই বলে না।
বিধানঃ তা তো বিয়ের আগে থেকেই জানি! আমার উপর কতো অত্যাচার করে!
বিথীঃ কিহ আমি! ( অবাক হয়ে )
বিধানঃ হ্যাঁ আপনি। আমার তো অন্য বউ নেই!
,
,
,
বিঃদ্রঃ মেয়ে মানুষের ক্ষেত্রে কিন্তু বাংলা সিনেমার একটা ডায়লগ সত্যই। মেয়েদের বুক কষ্টের চৌচির হয়ে গেলেও মুখটা খোলে না। বিথীকে বিধান এতো কষ্ট দেয় হয়তো গায়ে হাত তুলে না কিন্তু মানসিক অত্যাচার বলেও তো একটা কথা আছে। বিথী তো চাইলেই মিস্টার এন্ড মিসেস রহমানের সাহায্য নিতে পারে। দিপ্তকে বলতে পারে। কিন্তু সে তা করে না কারণ বাঙালি নারীরা সব সহ্য করে যায় শুধু নিজের সম্পর্কের সম্মান ও মর্যাদা ধরে রাখতে। এমন হাজারো নারী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বাংলাদেশে যারা শারীরিক অত্যাচারিত হওয়ার পরও সংসার করে যাচ্ছে সামান্য সুখের আশায়।
,
,
,
এরপর বিধান, বিথী, দিপ্ত, মিস্টার এন্ড মিসেস রহমান ও মিসেস চৌধুরী অনেক গল্প করলো। মিসেস রহমান সকলের জন্য আনা গিফট তাদের হাতে তুলে দিলো। কিছুক্ষণ পর ইফতিকা নিচে নামলো ব্রেকফাস্ট করতে। ইফতিকা তো মিস্টার এন্ড মিসেস রহমানকে এতো সকালে চৌধুরী নিবাসে দেখে অবাক পরে ভাবলো বিজনেস ডিলের জন্য।
ইফতিকাঃ মিস্টার এন্ড মিসেস রহমান এখানে কি করে! হয়তো বিজনেস ডিলের জন্য তাহলে বিথী এখানে……. ( মনে মনে )
ঠিক তখনই মিসেস চৌধুরী মিস্টার এন্ড মিসেস রহমানের সাথে পরিচয় করানোর জন্য ইফতিকাকে ডাক দেয়।
মিসেস চৌধুরীঃ ইফতিকা! এখানে আসো!
ইফতিকাঃ হ্যাঁ ফুপি বলো!
মিসেস চৌধুরীঃ মিট মিস্টার এন্ড মিসেস রহমান! বিথীর আব্বি আম্মি!
ইফতিকারও এবার চক্ষু চড়ক গাছ কারণ ওর জানা মতে বিথী তো একটা মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে। বিথীর মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও এতো সচ্ছল ভাবে জীবনযাপন করা ও ব্রান্ডেড জিনিসপত্র ব্যবহার ইফতিকাকে এমনিতেও ভাবাতো।
ইফতিকাঃ কিহ! বিথবীর মা বাবা তো…..
মিস্টার এন্ড মিসেস চৌধুরীঃ আসলে…….. ( তারপর মিস্টার এন্ড মিসেস চৌধুরী সকল ঘটনা খুলে বলল )
,
,
,
বিধানঃ আব্বি আম্মি আপনারা বিয়েতে আসেননি কেনো?
মিসেস চৌধুরীঃ তোর জন্য!
বিধানঃ আমার জন্য! ( অবাক হয়ে )
দিপ্তঃ হ্যাঁ জিজু! আম্মু আব্বু তোমাদের বিয়ের কয়েক মাস আগেই ইউকে গিয়েছিলো আম্মুর একটা মাইনোর সার্জারির জন্য। এর মধ্যেই তুমি তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করে নিয়ে আসলো আর আম্মুরও চিকিৎসা কার্যক্রম তখনো বাকি ছিলো তাই আসতে পারেনি।
মিসেস রহমানঃ হুমম বাবা! আমার কতো ইচ্ছে ছিলো আমার মেয়েটার জন্য একটা রাজকুমার আনবো! ( বিথীর কপালে চুমু খেয়ে )
মিস্টার রহমানঃ আমাদের সখটা আর পূরণ হলো না। ( মন খারাপ করে )
বিথী সকলের এমন ভালোবাসা পেতে দেখে ইফতিকা মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।
ইফতিকাঃ ধুরর! এই আদিখ্যেতা আর ভালো লাগছে না!
মনে মনে কথাটি বলেই উঠে চলে গেলো সেখান থেকে।
,
,
,
ঘন্টা খানেক পর-
মিস্টার রহমানঃ আচ্ছা চললাম আমরা এখন!
মিসেস চৌধুরীঃ এতো তাড়াতাড়ি! আজ থেকে যান!
মিস্টার রহমানঃ না না তা হবে না! আর আপনারা আগামীকাল আমাদের বাসায় যাবেন! শুনেছি বৌভাতের পরের অনুষ্ঠান মানে মেয়ের বাড়ি যাওয়ার অনুষ্ঠান নাকি হয়নি তা আমাদের বাড়িতেই হোক। আমি শান্তা আপার সাথেও কথা বলে রেখেছি তিনিও রাজি।
বিধানঃ অবশ্যই!
মিসেস রহমানঃ বিথী তোর মামা শ্বশুরকে তো পেলাম না! তার গিফটগুলো মনে করে দিস!
বিথীঃ আচ্ছা আম্মি!
এরপর দিপ্তরা নিজেদের বাড়ি ফিরে যায়।
,
,
,
ক্ষণিক পরেই সবাই ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে। মিসেস চৌধুরী, বিথী ও বিধান অতিথি আপ্যায়ন করলেও তাদের সাথে নাস্তা করেনি। বিধানের মামা ইফতেখার টেবিলে আসতেই বিথী তাকে মিস্টার এন্ড মিসেস রহমানের আনা ব্রান্ডেড পোশাকের ব্যাগ ও এক্সপেন্সিভ ঘড়ির ব্যাগটা হাতে দেয়।
বিথীঃ মামা আব্বি আম্মি এসেছিল সকালে তারা আপনার জন্য এই গিফট গুলো এনেছে।
মামা ভেবেছে বিথীর আপন মা বাবা। তাই এগুলোকে কমদামি ভেবেছে।
ইফতেখারঃ আমি তোমাদের মতো মিডেল ক্লাস না এরকম চিপ প্রডাক্টে আমি ইউস করি না! তোমার আম্মি আব্বি তো ব্রান্ডই চিনো না! ( তাচ্ছিল্য করে )
বিথীঃ মামা এটা ব্রান্ডেড প্রডাক্ট! ইউকে থেকে আনা! ব্রান্ড তাহলে কে চিনে না আপনি নাকি আমার আম্মি আব্বি! ( বিথী রেগে বলল )
চলবে,,,
অনেকে জিজ্ঞেস করেছেন কোন ক্লাসে পড়ি সবাইকে আলাদা আলাদা বলার চেয়ে ভাবলাম একসাথে বলে দেয়াই বেটার। টেনে পড়ি।
আর আমি ”বিঃদ্রঃ” মধ্যে বলা কথাগুলো দ্বারা গল্পের কাহিনিকে, বিভিন্ন চরিত্র এবং তাদের কর্মকাণ্ডকে জাস্টিফাই করার ট্রাই করি ও কিছু সোশিয়াল ম্যাসেজ দেয়ার চেষ্টা করি।
যেমন বিথীর ধাক্কাটা অনেকের পছন্দ হয়নি তা আমি এক্সপ্লেইন করেছিলাম। হিজাবি না কি মনে পড়ছে না আপনার যদি এটা ভালো না লাগে আই’ম রিকোয়েস্টিং ইউ ডু নট রিড দিস। কজ সবার লিখার একটা স্টাইল থাকে এটা আমার।