আড়ালে ভালোবাসার সংসার

আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 13

রাতের বারোটা বেজে গেছে কিন্তু বিধান এখনো বাড়ি ফিরেনি। বিথী খাবার নিয়ে বিধানের জন্য অপেক্ষা করছে বেডরুমে বসে আর ভাবছে সরি কি করে বলবে। বিধান ফিরলো রাতের একটায় এসে দেখলো সারা বাড়ি অন্ধকার। অন্যান্য দিন বিধান দেরি করে বাড়ি ফিরলে রূপ ও মিসেস চৌধুরী বিধানের অপেক্ষায় হলরুমে বসে থেকে তবে আজ হলরুমে কেউ নেই।
,
,
বিধান ভাবলো সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে। কিন্তু বেডরুমে ঢুকতেই অবাক। কারণ বিথী খাবারের দিকে তাকিয়ে কি জানি ভেবেই চলেছে। কিন্তু বিধান সেসব নিয়ে না ভেবে ব্লেজারটা বিছানায় ফেলে ওয়াসরুমে ঢুকে যায় ফ্রেশ হতে এবং বিথীরও ঘোর দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজে। তাই বিথী অপেক্ষা করতে থাকে বিথীর। আর বিধান ওয়াসরুমে ঝর্ণার নিচে বসে বিথীর দুপুরের কর্মকাণ্ডের কথা ভাবতে থাকে যার ফলে ক্ষোভটা আবার জেগে যায়।
,
,
,
বিঃদ্রঃ আমরা মানুষেরা বড়ই অদ্ভুত তাই না! গতকালে বিথী একটা ধাক্কা কি দিলো বিথীর দোষ হয়ে গেলো বিধানের কাছে। ঐ যে আমাদের শিখা পুরুষ ভিত্তিক সমাজের আইন কানুন। আমাদের নবি করিম ( সাঃ ) আয়েশা ( রাঃ ) কে বিয়ে করার অনেক বছর দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। কাউকে একরাতের মধ্যে শরীরের উপর অধিকার দেওয়া যায় না, দেওয়া হলেও তা শুধু কেবলই একটা বৈধতার ছাপ লাগানো শারীরিক চাহিদার পূরণ যেটাতে বিন্দুমাত্র ভালোবাসা ও পবিত্র অনুভূতি খুজে পাওয়া দুষ্কর। হুম বিধানের মনে ভালোবাসা ছিল কিন্তু বিথীর মনেও তো তা থাকা লাগবে। বিধান এই পর্যন্ত কিছু করেনি বিথীকে আপন অনুভব করানোর মতো এটা একবারো বিধানের মাথায় আসলো না। তারপরও বিয়ের বন্ধন তাই কিছুটা অনুভূতি তো আছেই বিথীর মনে তাই তো ঘোরে চলে যায় বিধানের ছোঁয়ায় কিন্তু তাইই তো যথেষ্ট নয়। দোষ কিছুটা বিধানের কিছুটা বিথীর। কারণ রাগ ইগো সবারই আছে কারো কম কারো বেশি। তবে মূলত অপরাধি পরিস্থিতি।
,
,
,
বিধান ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে না দেখার ভান করে বেডে শুয়ে পড়ে। বিথী বিধানের এরূপ ব্যবহারে অনেক অবাক হয় কারণ ও ভেবেছিলো বিধান আজকে ওর বারোটা চৌদ্দটা বাজাবে কারণ বিধানের যেই রাগ। বিথী অনেক ভেবে দ্বিধা ও জড়তা নিয়ে বিধানের কাছে যায়।
বিথীঃ শ-শুনছেন? আ-আপনি খাবেন না? ( ধীর কণ্ঠে আমতা আমতা করে )
বিধানঃ নিশ্চুপ।
বিথী হঠাৎ খেয়াল করলো বিধান নিজের কাটা হাত এখনো ব্যান্ডেজ করেনি এবং রক্ত শুকিয়ে লেগে আছে। তাই বিথী তাড়াতাড়ি করে আলমারির উপর থেকে ফার্স্ট এইড বক্স নামাতে যেয়ে শাড়ির উপর পা লেগে ধপাস করে পড়ে গেলো। বিধান কারো পড়ার আওয়াজে চমকে উঠে পিছনে তাকাতেই বিথী চিৎপটাং। বিধান দৌড়ে বিথীর কাছে যেয়ে কোলে তুলে নেয়।
বিথীঃ আহহহহ!
বিধানঃ কি করতে গিয়েছিলে ওদিকে! বাচ্চাদের মতো সারাদিন লাফালাফি করো সারাদিন! ( রেগে ধমক দিয়ে )
বিথীঃ আমিতো…….
বিধানঃ আমিতো কি! চুপচাপ এখানে বসো আমি আসছি! ( বলে বিথীকে বেডে বসিয়ে চলে গেলো )
,
,
,
বিধান আলমারির উপর থেকে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে বেডে আসলো। তারপর সেখান থেকে ব্যথার অয়েনমেন্ট নামালো।
বিথীঃ এখন কি উনি এটা দিয়ে দিবেন আমার কোমরে? ( মনে মনে এসব বলে বিধানের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে )
বিধানঃ কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন! যাই হোক উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ো। ( গম্ভীর কণ্ঠে )
বিথীঃ আমি পারবো লাগাতে! ( জোরপূর্বক হেসে )
বিধানঃ পারবে তাই না? লাগাও এখন আমার সামনে! আমিও দেখি কতটুকু পারো।
বিথী অয়েনমেন্ট কোমরে লাগানোর চেষ্টা করলো কিন্তু একে তো হাত যাচ্ছে না তার সাথে কোমরের ব্যথা।
বিথীঃ ধুররর!
বিধানঃ হয়েছে পেরে দুনিয়া শুদ্ধ করে ফেলছেন এখন কষ্ট করে ভালো ভাবে শুয়ে পড়েন! ( বিথীর হাত থেকে অয়েনমেন্ট নিয়ে )
বিথী আর কি করবে উল্টো হয়ে শুয়ে পড়লো আর বিধান কোমরে আলতো হাতে অয়েনমেন্ট লাগিয়ে দিতে লাগলো। বিথীর বিধানের ছোঁয়ায় অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিলো।
বিথীঃ উনার ছোঁয়ায় কি কোনো জাদু আছে? এমন কেনো লাগে এই ছোঁয়ায়! মনে হয় ঘোরে চলে যাচ্ছি! ( মনে মনে )
বিধানঃ নিন শেষ!
বিথী আস্ত করে উঠে বসে ফার্স্ট এইড বক্স হাতে নেয় তারপর বিধানের কাটা হাত পায়ের উপর রাখে। বিধান বিথীর কাণ্ডে অবাকের চরম পর্যায় চলে যাচ্ছে। তবে ঐ যে রাগ ক্ষোভ ইগোর জন্য উঠে চলে যেতে নেয়। কিন্তু বিথী হাত টান দেয়। বিধানও তা উপেক্ষা করতে পারে না। বিধান বিথীর হাত স্যাভলন দিয়ে ক্লিন করে সুন্দর করে ব্যান্ডেজ করে দেয়।
,
,
,
বিথী উঠে ধীরে ধীরে ওয়াসরুমে যাওয়ার চলে গেলো কিন্তু ব্যথার জন্য যেতে পারছিলো না। আবার পড়ে যেতে নিলে বিধান কিছু না বলে বিথীকে নিয়ে গেলো। বিথী হাত ধুয়ে নিলে বিধান বিথীকে আবার কোলে নিয়ে বেডে বসিয়ে দেয়। বিথী বেড সাইড টেবিল থেকে প্লেট নিয়ে ভাত মাখিয়ে বিধানের মুখের সামনে ধরে বিধানও ভালোবাসার ঘোরে ছিলো তাই কোনো ঝামেলা ছাড়াই খেয়ে নেয়। বিথীও একই সাথে খেয়ে নেয়। বিথী প্লেট গুছিয়ে উঠতে নেয়।
বিধানঃ উঠার দরকার নেই হাত প্লেটেই ধুয়ে নেও! আমি রেখে আসছি!
বিথীঃ আচ্ছা!

চলবে,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *