সে কি জানে

সে কি জানে ! Part- 16

গাড়িতে বাসার সামনে রেয়ান আর আমি বসে আছি প্রায় অনেক্ষন।।কারও মুখে কোনো কথা নেই।।চুপচাপ বসে আছি দু’জনেই।।আশেপাশে পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে।।বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব!!কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আছে চারপাশটা।।সেদিকেই তাকিয়ে আছি আমি।।অবশেষে নিরবতা ভেঙ্গে রেয়ান বলে উঠেন…..
—” এভাবে আর কতদিন মিরা?? আমাকে বিয়ে করলে তোমার সমস্যাটা কোথায়?? ”
—” কোনো-ই সমস্যা নেই।। ”
—” তাহলে?? ”
—” এটা আমার জীবন হলেও আমার লাইফের সব ডিসিসন আমার একার নয়।।এতে আমার মা আর রিহানেরও মত লাগবে।।আমি জানি,,রিহান আপনার জন্য পাগল।।আপনাকে বাবার অধিকার দিতে ও এক পায়ে রাজি।।কিন্তু মা!! তিনি আপনাকে পছন্দ করেন না,,তার মতামতই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমার জীবনে।।তাছাড়া আমারও মনে হতে হবে,,,যে হ্যাঁ!! এখন আমি আপনাকে বিয়ে করব।।আপনাকে বিশ্বাস করতে পারব।। ”
—” তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না?? ”
—” করি।।কিন্তু কোথায় যেন একটা বাঁধা কাজ করে।। ”
আমার কথাশুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রেয়ান।।তারপর শান্ত সরে বললেন…..
—” অনেক দেড়ি হয়ে গেছে।। তোমার এখন যাওয়া উচিত!! ”
—” হুম ”
বলেই বের হয়ে গেলাম গাড়ি থেকে।।রেয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে চলে যেতে লাগলাম বাসার দিকে।।হঠাৎ রেয়ান আবার বলে উঠলেন……
—” মিরা শুনো!! ”
—” জ্বী ”
—” কালকে রেডি থেকো।। আমার বোনকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।।আমি চাই তুমি আর রিহানও যাও আমার সাথে।। তাছাড়া মা আর আমার বোনের সাথে তোমাকে পরিচয়ও করে দিবো।। ”
—” আচ্ছা ”
—” আর আরেকটা কথা।।তোমার মনকে বলবা আমাকে যেন সে বিশ্বাস করে।।আর রইল তোমার মার কথা।।উনাকে কালকের মধ্যেই ইম্প্রেস করে ফেলবো আমি।।বি রেডি ফর দেট বেইব।। ”
কথাটা বলেই বাঁকা হাসলেন তিনি।।আমিও একটা মুচকি হেসে বললাম…..
—” খোদা হাফেজ ”
—” হুম।।খোদা হাফেজ।। ”
.
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই দেখি রিহান আমার পাশে নেই।।হয়তো মার সাথে নিচে খেলছে।।তাই একেবারে ফ্রেস হয়েই নিচে গেলাম আমি।।সেখানে যেতেই দেখি মা আর রিহান একা না,, তাদের সাথে রেয়ানও আছে।।রেয়ানকে দেখে কিছুটা চমকে যাই আমি।।সাদা শার্টের কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা।।আর শার্টের প্রথম ২টি বোতাম খোলা।।ফলে রেয়ানের সাদা বুকের বেশখানিক-টা দেখা যাচ্ছে।। আর তার সাথে রয়েছে রেয়ানের নিজস্ব এটেটিউট।।সব মিলিয়ে সুন্দর লাগছে রেয়ানকে।। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো,,, মা রেয়ানের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।।কিন্তু কেন?? তাহলে কি রেয়ান মাকে ইম্প্রেস করে ফেলেছে??হয়তো!! ভাবতেই মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে আমার।। আমাকে দেখতেই রেয়ানও মুচকি হাসেন।।তারপর বলে উঠেন…..
—” তাড়াতাড়ি রেডি হও।।শাশুমার থেকে পারমিশেন নিয়ে নিয়েছি আমি।। ”
—“কিভাবে??মা তো…. ”
আমি আর কিছু বলতে যাবো তখনই মা বলে উঠেন…….
—” মিরা!! রিহানকে নিয়ে রুমে আয় তো।।তোর সাথে কিছু কথা আছে।।তুই রেডি হতে হতে আমার কথাটুকু শুনে নিস।। ”
আমি আর কিছু বললাম।।বুঝতে পারছি মা রেয়ানকে নিয়েই কিছু বলবেন আমাকে।।তাই রেয়ানকে অপেক্ষা করতে বলে আমি,,মা আর রিহান রুমে চলে আসি।।রুমে ডুকতেই মাকে জিজ্ঞেস করি……….
—-” তুমি রেয়ানকে মেনে নিয়েছো মা?? ”
—” হয়তো!!জানিস মিরা ছেলেটা যখন আমার কোলে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে তোকে আমার কাছে চায়,,,তখন কেন যেন মনে হয়,,,ছেলেটা তোকে সুখে রাখবে।। কষ্ট দিবে না।।এখন বাকি-টা তুই যা বুঝে নিস।। ”
বলেই মা চলে যান।।মার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি আমি।।ভাবছি,,আসলেই রেয়ান অনেক অদ্ভুদ।।সবাইকে আপন করে নিতে পারেন তিনি।।আর তার এই জিনিসটাই আমার সবথেকে পছন্দের।।
.
প্রায় কিছুক্ষন পর আমি আর রিহান রেডি হয়ে নিচে আসি।।তারপর মাকে বিদায় জানিয়ে বাইরের দিকে যেতে থাকি।।ঠিক তখনই রেয়ান আমার পেছনে এসে কানে কানে বলেন…….
—” মাই লেডি!!ইউর লুকিং সো বিউটিফুল।। লাইক আ স্টবেরি আইস্ক্রিম।। ”
বলেই চোখ টিপ মারলেন উনি।।সাথে সাথে আমি বলে উঠলাম…..
—” অসভ্য ”
এভাবেই দুষ্টু-মিষ্টি ঝগড়া করতে করতে আমরা পৌঁছে যাই রেয়ানদের বাড়ি।।কিন্তু এ বাড়িটা অন্য রকম।।আগেরটার মতো না।।কিন্তু আগেরটার থেকেও দ্বিগুণ সুন্দর।।তারওপর খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে বাড়িটা!!বাড়িতে ঢুকতেই প্রথমে রেয়ানের মার সাথে দেখা হয় আমার।।উনি অনেক খাতিরদারি করেন আমার আর রিহানের।।তারপর দেখা হয় রেয়ানের বোনের সাথে।।রেয়ানের মতো তার বোনও অনেক সুন্দর।। উনার বোনের নাম দিধা।।দিধা আমাকে দেখতেই জড়িয়ে ধরে।।তারপর বলে উঠে……

—” কেমন আছো ভাবি?? ”
ভাবি কথাটা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে গেল আমার।।পরক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়ে রেয়ানের দিকে তাকালাম।।সে আমার দিকেই তাকিয়ে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছেন।।উনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আবার দিধার দিকে তাকালাম আমি।।তারপর বললাম…..
—” আলহামদুলিল্লাহ!! তুমি কেমন আছো?? ”
—” আমিও আছি ভালো।।জানো ভাবি!! রেয়ান ভাইকে কতবার বলেছি যেন তোমাকে আমাদের সাথে দেখা করায়।।কিন্তু একবারও আনে নি।।কেমন দেখছ।। ”
—” হুম,,,অনেক পঁচা।। ”
—” ঠিক বলেছো।।আচ্ছা এটা তোমার ছেলে রিহান না।।আমার ভাতিজা।। ”
দিধার কথা শুনে অবাক হলাম আমি।।তাহলে রেয়ান আগে থেকেই আমার সম্পর্কে সব বলেছেন তার পরিবারকে।।অবশ্যক বলারই কথা।।নিউজের মাধ্যমে তো তাদের এমনেও জানার কথা।।কিন্তু তারা মেনেও নিয়েছেন আমাকে।।ব্যপারটা কেমন যেন।।আচ্ছা রেয়ানের পরিবারের সবাই এত ভালো কেন??আমাকে নিয়ে কোনো কি আপত্তি নেই তাদের মাঝে??

.
পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছে দিধা।।দিধার সামনেই বসে আছে তুরান।।তুরানই দেখতে এসেছে দিধাকে।।যতটুকু বুঝেছি তুরানের দিধাকে পছন্দ হয়েছে।।দিধারও তাই।।এখন গুরুজনরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন।।হঠাৎ খেয়াল করি তুরানের ভাই নির্ঝর আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।আমি তার দিকে তাকাতেই মাথা নিচু করে ফেলে সে।।তারপর তুরানের বাবার কানে কি যেন বলে।।সাথে সাথে তিনি নির্ঝরের দিকে চোখ বড় করে তাকান।।পরক্ষনে রেয়ানের বাবা মিস্টার আজিজ সাহেবকে কিছু বলার চেষ্টা করতে শুরু করেন।।কিন্তু কেন যেন পারছেন না বলতে।।প্রায় অনেক্ষন পর সাহস করে বলেন…….
—-” আসলে বেয়াইন।।ওই যে মেয়েটা গোলাপি শাড়ি পড়া।।ওকে আমার ছোট ছেলে নির্ঝরের পছন্দ হয়েছে।।যদি চান,,, তাহলে তুরানের দিধার সাথে বিয়ে হওয়ার পরপরই নির্ঝরের এই মেয়ের সাথে বিয়ে করিয়ে দিবো।। ”

কথাটা শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না।।কারন গোলাপি শাড়ি পড়া মেয়েটা আমি।।আচ্ছা,, তুরানের বাবার মাথা-টাথা কি গেছে নাকি।।তাছাড়া রেয়ান আর আমার ব্যপারে তো অনেক নিউজ হয়েছে।।সেগুলো কি দেখে নি এই লোক।।দেখলে তো এভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার কথা না।।তাও আবার রেয়ানের সামনে!!রিতিমতো হাত-পা কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গেছে আমার।।আজকে মনে হয় একটা মার্ডার হয়েই যাবে।।ভাবতেই রেয়ানের দিকে তাকালাম আমি।।মাথা নিচু করে শান্ত ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন উনি।।তার এই শান্ত রুপ দেখে মনে হচ্ছে,, এটা ঝড়ের পূর্বাভাস!!
.
.
.
#চলবে🍁🍁