শালুক ফুলের লাজ নাই !! Part- 08
নিস্তব্ধ রাত,আফিফা ফুপিয়ে কেঁদে চলেছে। আকাশে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে একটু পর পর।আফিফার কলিজা ছিড়ে যাবার মতো ব্যথা হচ্ছে। একে-তো সে জহিরকে ভীষণ ভালোবাসে,তার উপর আজকে দেখতে আসা পাত্রকে আফিফার একটুও পছন্দ হয় নি। কেমন কেমন যেনো লেগেছে লোকটাকে।শেয়ালের মতো ধূর্ত যেনো।
এতো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে কি একটা নতুন জীবন শুরু করা যায়?
আফিফা তো এরকম চায় নি।জহির ভাইয়ের মতো শান্তশিষ্ট, নরম মনের একজন মানুষকে চেয়েছে সে।যেই জহির ভাই ছোট বেলায় খেলার সময় মারামারি হলে চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকতো। সবাই যখন খেলতো জহির ভাই তখনও চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতো এক কোণে।ধ্রুব ভাই সবসময় তাকে টেনে খেলতে নিয়ে যেতো। সেই মুহুর্তে জহির ভাই লাজুক ভঙ্গিতে হাসতো।খাবার টেবিলে সবার হাজার আবদারের ভীড়ে জহির ভাই থাকতো নিরব।যাই দেওয়া হতো বিনা বাক্যব্যয়ে খেয়ে উঠে যেতো। আফিফার মনে পড়ে আজ অবদি কোনোদিন জহির ভাই মুখ ফুটে কিছু খেতে চায় নি।
হয়তো লজ্জা পেতো ভীষণ, মামাদের বাসায় থাকছে এই চক্ষুলজ্জায় জহির ভাই কখনো কারো দিকে তাকিয়ে কথা বলে নি।আদনান ভাই সবসময় ধ্রুব ভাই, জহির ভাইয়ের সাথে লেগে যেতো ঝগড়া।
সবসময় আফিফা দেখেছে ধ্রুব ভাইকে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে জহির ভাইয়ের পাশে।মুখচোরা জহির ভাই কেমন বিনীত ভঙ্গিতে চুপ হয়ে থাকতো।
আফিফার কিশোরী মন তো জহির ভাইয়ের এই লাজুকলতা, নিরবতা,মুচকি হাসি এসব দেখেই দ্রবীভূত হয়ে গেছে সেই কবে!ভালোবাসা কি অতো হিসেবনিকেশ করে হয় না-কি?
আফিফার রুমের দরজায় টোকা পড়লো। চোখ মুছে দরজা খুলতেই দেখে তার মা আদিবা বেগম দাঁড়িয়ে আছে। আফিফা জিজ্ঞেস করার আগেই তিনি বললেন,”আজকে তোর সাথে ঘুমাবো।বিয়ে হয়ে গেলে তো মা মেয়ে আর একসাথে শুয়ে গল্প করার সুযোগ পাবো না।তাই চলে এলাম তোর রুমে।”
আফিফা হেসে উঠলো। আফফা জানে মায়ের ভয় আফিফা ভুলভাল কোনো কান্ড করে বসে কি-না তা নিয়ে।এজন্য পাহারা দিতে এসেছেন তিনি আফিফাকে।
আদিবা বেগম মেয়ের হাত ধরতেই আফিফা কেঁদে উঠলো। মেয়ের এই বুক ভাঙ্গা কান্না দেখে আদিবা বেগমের ও বুক কেঁপে উঠলো। ভুল করছেন না তো তিনি!
মেয়েকে একটা সুখী জীবন দিতেই তো এই সম্বন্ধে রাজি হয়েছেন।ছেলের অনেক টাকা পয়সা আছে। সব তো ঠিক আছে। তবে মেয়ের এই কান্না কিসের?
কি করবেন কিছু বুঝতে পারছেন না।একবার কি জহির কে বলে দেখবেন?
জহির ছেলেটা তো খারাপ নয়।সবদিক দিয়েই ভালো। নিজেদের হাতের উপর বড় হওয়া ছেলে।
পরমুহূর্তে মনে পড়লো নিজের কৃতকর্মের কথা।
লিলি কি আফিফাকে ছেলের বউ করতে রাজি হবে?তিনি তো রাজি হন নি।আদনান বিদেশ যেতেই তিনি ও তো মত বদলে ফেলেছেন।
আদিবা বেগমের মাথা কাজ করছে না।মেয়েকে নিয়ে শুয়ে পড়লেন।ঘুমাতে ঘুমাতে টের পেলেন মেয়ে অন্যদিকে ফিরে কান্না করছে।বোবা কান্নার ফলে কেঁপে উঠছে সারা শরীর তার।
জহির বসে আছে তার রুমের বারান্দায়। নিচতলায় মায়ের রুমের পরের রুমটাই জহিরের।বাহিরে শুক্লপক্ষের চাঁদ উঠেছে। রুপোলী আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারদিক। জহিরের ভীষণ মন খারাপ লাগছে।
এরকম চাঁদনি রাত হলেই জহিরের মন খারাপ হয়ে থাকে।জহিরের বাবা নাজিমুদ্দিন এরকম এক চাঁদনি রাতেই ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন পরকালে।
স্পষ্ট মনে আছে সব জহিরের।জহিরের তখন ১২ বছর বয়স,নয়নার ১০ আর জাবির ৭ বছরের।
জহির সেদিন ও জানালার পাশে বসে পড়ছিলো। বিজ্ঞান বই নিয়ে পড়তে বসেছে জহির।সেই সময় শুনতে পেলো বাবা নয়নাকে ব্যাকুল হয়ে ডাকছে।জহির ও ছুটে গেলো। তিনদিন ধরেই তার জ্বর ছিলো।নয়নার দুই হাত বুকে চেপে ধরে রেখেছিলেন বাবা।জহির আর জাবির যেতেই জহিরকে বললেন,”ভাই বোইনেরে দেইখা রাইখো বাবা।আমার যদি কিছু হইয়া যায় মনে রাইখো তুমি সবার মাথায় ছাতা হইয়া থাকন লাগবো।তুমি রোইদে পুড়বা,বৃষ্টিতে ভিজবা।তবে মা আর ভাই বোইনেরে যেনো রোইদ বৃষ্টি ছুঁইতে না পারে।তাগো যেনো কষ্ট না হয়। আমার নয়না মা’র মাথার উপরে তোমার বটগাছের লাহান থাকন লাগবো বাবা।মরনের সময় পর্যন্ত মনে রাইখো আমার জীবনের সবচেয়ে আপন,আমার আদরের দুলালি,আমার কলিজার টুকরা তোমার বোইন আছিলো,তারে খুশি রাখতে পারলে মরনের পরেও আমার কোনো কষ্ট থাকবো না।”
নিজের অজান্তেই জহিরের দুই চোখ ভিজে গেলো। কই,সে তো পারলো না বাবার কথা রাখতে।নিজের বোনের আহাজারি জহির নিজ কানে শুনেছে,পাগলের মতো হয়ে যেতে দেখেছে বোনকে।তবুও বড় মামীর মনের পাথর গলে নি।
অথচ সবাই জানতো আদনান আর নয়নার ভালোবাসার কথা। এবং ওদের বিয়ে হবে এটা ও বড়রা সবাই ভেবে রেখেছিলো। আদিবা বেগম নিজেও তো এসব নিয়ে কতো হাসি-তামাশা করতেন নয়নার সাথে।সব ভুলে গেলেন তিনি আদনান বিদেশের মাটিতে পা দেওয়ার সাথে সাথে।
আজও জহিরের ভীষণ ব্যর্থ মনে হয় নিজেকে এই কথা মনে পড়লেই।
রুমের খোলা দরজা দিয়ে কারো প্রবেশ হয়েছে টের পেতেই জহির বারান্দা থেকে রুমে এলো।
আফিফা দাড়িয়ে আছে রুমের মাঝখানে। আফিফাকে দেখে জহির কিছুটা অবাক হলো। সেসব বুঝতে না দিয়ে হেসে বললো, “কিরে,এতো রাতে তুই?কিছু লাগবে?কোনো সমস্যা হয়েছে কারো?”
আফিফা ছুটে এসে জহিরকে জড়িয়ে ধরলো। জহিরের বুকে মাথা গুঁজে কেঁদে উঠলো।
এক ঝটকায় জহির নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আফিফার থেকে দূরে সরে দাড়ালো। তারপর বললো, “মাঝরাতে আমার রুমে এসে এসব কি করছিস তুই?পাগল হয়েছিস?বের হ আমার রুম থেকে।”
আফিফা ফ্লোরে বসে পড়ে বললো, “কেনো জহির ভাই,কেনো তাড়িয়ে দিচ্ছো আমাকে?আমার কি দোষ বলো?একবার আমাকে ভালোবাসলে কি ক্ষতি হয় তোমার? আমি ভিখারির মতো তোমার কাছে একটু ভালোবাসা ভিক্ষা চাই জহির ভাই। ”
জহির কঠোর স্বরে বললো, “দেখ আফিফা,আমার এই ব্যাপারে কখনো কোনো আগ্রহ ছিলো না।তোকে আমি কখনো সেভাবে দেখি নি।তাছাড়া আমার ও তো মন আছে।আমার মন ও তো তোকে চাইতে হবে।আমার মন এরকম কিছু চায় না।তুই আমার মামাতো বোন আছিস,সেটাই থাক।আমার ব্যাপারটা একবার বুঝতে চেষ্টা কর,আমার মনের বিরুদ্ধে তো আমি তোকে ভালোবাসতে পারি না।”
আফিফা এগিয়ে যেতে নিলো জহিরের দিকে।জহির আরো দুই পা পিছিয়ে গিয়ে বললো, “খবরদার আফিফা,কাছে আসবি না।এসব নিয়ে যদি এতো বাড়াবাড়ি করিস তোরা,তবে ভালো হবে না।তোর প্রতি আমার এক ফোঁটা ইন্টারেস্ট ও নেই।আমি আমার এক ফ্রেন্ডকে ভালোবাসি। আশা করি, এর পর তোর আর বলার কিছু থাকবে না।যা আমার রুম থেকে।কেউ দেখলে ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে।”
আফিফা কেঁদে বললো, “যাবো না।আমি এখানেই থাকবো।এই ফ্লোরে মাথা ঠুকে মরে যাবো। ”
রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আদিবা বেগম সব শুনলেন।মেয়েকে বিছানা ছাড়তে দেখে তিনি পিছু নিয়েছেন। মেয়েকে বাঁধা দেন নি তিনি।
রুমে এসে আফিফার হাত ধরে ফ্লোর থেকে তুললেন।বিনাবাক্য ব্যয়ে আফিফা মায়ের সাথে চলে গেলো।
ব্যাগ গুছিয়ে নিলো জহির সেই মুহুর্তেই।বাড়িতে থাকলে আফিফা কখন কোন পাগলামি করে বসে কে জানে!
এরচেয়ে ভালো চলে যাবে হোস্টেলে।ফজরের নামাজের পরেই জহির মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
যাবার আগে নয়না একবার বললো, “একবার ভেবে দেখ আফিফাকে নিয়ে ভাই।”
জহির হেসে বললো, “মনের থেকে তো একটা ফিলিংস থাকতে হবে নয়না।সেটা আমার নেই আফিফার জন্য।বড় মামীর উপর রাগ হচ্ছে পরের ব্যাপার। জোর করে কি কিছু হয়।”
সকাল বেলা শালুক মুখ অন্ধকার করে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো স্কুলে যাওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ মা বাবার সাথে ঘ্যানঘ্যান করেছে আফিফার শ্বশুর বাড়ি দেখতে যাবার জন্য সবার সাথে। বাবা যেই একটু নরম হলো,সম্মতি দিতে যাবেন সেই মুহুর্তে যমের মতো হাজির হলো ধ্রুব ভাই।
কড়া গলায় শালুককে জিজ্ঞেস করলো, “লাস্ট কবে স্কুলে গিয়েছিস?”
শালুক জবাব দিতে পারলো না। স্কুলে টানা কয়েকদিন ধরে যাওয়া হয় না।
ফয়েজ আহমেদ সেই কথা শুনতেই বললেন,”না না,তোর এক্সাম সামনে। এখন স্কুলে যেতে হবে।তোর ওখানে যাওয়া চলবে না।বিয়ে হলে যাওয়ার অনেক সুযোগ হবে।এখন তুই স্কুলে যা।”
সেই থেকে শালুকের মন খারাপ। শালুক স্কুলে যাবার সময় দেখলো আশা একটা হিজাব পরে নিচে এসেছে। ধবধবে ফর্সা আশার গায়ের রঙ।বাবা আমেরিকান হওয়ায় আশা বাবার গায়ের রঙ পেয়েছে। তেমনই লাল চুল।দেখলেই বুঝা যায় তাকে খাঁটি বিদেশিনী।
আশাকে দেখে মুখ বাঁকিয়ে শালুক চলে গেলো।
একটা জাম কালার হিজাবে আশাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে।আদনান আশাকে দেখে অবাক হলো। আশার এই লুকটা আদনানের অজানা।
আশা হাসতে হাসতে বললো, “জানো,ধ্রুব কাল রাতে আমাদের সবার জন্য গিফট এনেছে। আমার তো খুবই ভালো লেগেছে। ফার্স্ট টাইম আমি এই হিজাব ট্রাই করেছি।শাপলা আমাকে পরিয়ে দিয়েছে।সুন্দর লাগছে না?”
আদনান মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। তারপর বললো, “তোমাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে আশা।”
আশা মুচকি হেসে বললো, “তুমি তো কখনো আমাকে কিছুই গিফট দাও না।আমেরিকা থাকতে ও দাও নি কখনো, দেশেও দাও নি অথচ ধ্রুব কি সুন্দর সবার সাথে আমার জন্য ও মনে করে গিফট এনেছে। থ্যাংক ইউ ধ্রুব।”
ধ্রুব বসে বসে পাউরুটিতে জেলী মাখিয়ে খাচ্ছিলো। আশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওয়েলকাম বলে আবার ও খাবারে মনোযোগ দিলো।আদনানের মুড অফ হয়ে গেলো হঠাৎ করেই।
আশা কি ধ্রুবর প্রতি ইমপ্রেস হচ্ছে?
ধ্রুব কি আশাকে ইমপ্রেস করার একটা সুক্ষ্ম চাল চালছে না-কি!
সোনার হরিন হাতছাড়া হয়ে যাবে না তো ধ্রুবর জন্য?
তিক্ততায় ভরে গেলো আদনানের মন।আশার সামনে বারবার নিজের ইমেজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কিছু একটা করতেই হবে আদনানকে। ভেবে নিয়ে আদনান ঠিক করলো,আশাকে একা পেতে হবে, একা টাইম স্পেন্ড করে আশার মন অন্যদিকে ডাইভার্ট করতে হবে।
একটা কাপে চা ঢালতে ঢালতে আদনান বললো,”দারুণ একটা মুভি দেখবো আশা।তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।দুজন মিলে পুরো মুভিটা এনজয় করবো।”
আশা বললো, “না চলো ঘুরে আসি বাহিরে থেকে।”
আদনান বিরক্ত হলো। বাহিরে গেলে কি আশাকে একান্তভাবে পাওয়া যাবে?গাধী মেয়ে ওর প্ল্যান বানচাল করতে চাচ্ছে!
আদনান মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,”আজকে না আশা,আমার হাঁটুতে একটু ব্যথা করছে। হাঁটতে পারবো না আমি।”
ধ্রুব বের হতে যেতেই আশা জিজ্ঞেস করলো, “কোথায় যাচ্ছো ধ্রুব?”
ধ্রুব জবাব দিলো, “বাহিরে যাচ্ছি, একটু ঘুরে আসি।”
আশা চা শেষ না করে দাঁড়িয়ে আদনানকে বললো, “তুমি তাহলে রেস্ট নাও,মুভি এনজয় করো।তুমি তো হাঁটতে পারবে না।আমি ধ্রুবর সাথে ঘুরে আসি।”
ধ্রুব বের হয়েছে শালুকের স্কুলে যাবার উদ্দেশ্যে, স্কুলের টিচারদের সাথে দেখা করবে আর সেই সাথে শালুককে একটু কড়াকড়ি দেওয়ার জন্য ও বলে আসবে।
আশাকে ধ্রুব বললো, “আমার তো একটু কাজ আছে আশা।আমাদের স্কুলে যেতে হবে,অনেকদিন হলো স্যারেদের সাথে দেখা করি না।”
আশা আগ্রহী হয়ে বললো, “আমার কোনো সমস্যা নেই।আমি ইন্টারেস্টেড তোমাদের স্কুলটা দেখতে।আদনানের কাছে তোমাদের স্কুলের অনেক গল্প শুনেছি। তোমরা সবাই না-কি অনেক ব্রিলিয়ান্ট ছিলে।”
আদনান কিছু বলার আগেই আশা বের হয়ে গেলো ধ্রুবর সাথে।চাইলেও আদনান যেতে পারলো না। গেলে তার মিথ্যে ধরা পড়ে যাবে যে!
একটা খয়েরী রঙের টি-শার্ট আর ট্রাউজার পরে ধ্রুব হাঁটতে লাগলো। আশা কিছুটা পিছন থেকে ধ্রুব কে লক্ষ্য করছে।ধ্রুবর চলাফেরা,কথাবার্তা সবকিছুতে কেমন একটা পুরুষালী ভাব আছে।
সেই তুলনায় আদনানকে আশার ন্যাকা মনে হয়। পুরুষ মানুষ হবে সিংহের ন্যায়,সারাক্ষণ কেনো সে বিড়ালের মতো চলবে!
আদনানকে ব্যাপারটা বলে ও আশা বুঝাতে পারে নি।
আশা থমকে দাঁড়ালো হঠাৎ করে। সে কি ধ্রুবর উপর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে?
এরকম তো কতো ছেলেকেই আশা দেখেছে।আশার তো এরকম কতোগুলো বয়ফ্রেন্ড আছে আমেরিকায়।কই তাদের কারো প্রতি তো আশা এভাবে ইমপ্রেস হয় নি।
তবে ধ্রুবকে নিয়ে আশা ভাবছে কেনো?ধ্রুবর সবকিছু আশার এতো ভালো লাগছে কেনো?
শেষ ক্লাসের স্যার এসে শালুককে বললো, “ধ্রুব এসেছে আজ স্কুলে।ছেলেটা ভীষণ ট্যালেন্ট। তোমার ফ্যামিলির সবাই তো আমাদের হাতেই মানুষ, সবাই তো মেধাবী শালুক,তুমি এমন কেনো পড়ালেখায়? ধ্রুব হেডস্যারসহ আমরা যতোজন তোমার ক্লাস নেই সবাইকে বিশেষ ভাবে বলে গেছে তোমাকে যাতে একটু কড়াকড়ি দেওয়া হয় পড়াশোনার জন্য। ”
শালুক দাঁত কিড়মিড়িয়ে মনে মনে বললো, “তোর মাথায় ১০০ টা কাক হা/গু মুতু করুক তারছিঁড়া ধ্রুব।আজকে যদি তোকে একটা কঠিন শাস্তি না দিছি তবে দেখিস।”
বিকেলে শালুকের টিচার এলো শালুককে পড়াতে।শালুকের মনে হলো কেউ যেনো ওর কলিজাটা কে/টে ফালাফালা করে দিচ্ছে।শালুকের রুমে গিয়ে ধ্রুব পলক কে বসতে বললো। তারপর শালুক ভোঁতা মুখ করে নিজের চেয়ার টেনে পড়তে বসলো।
পলক কুশলাদি জিজ্ঞেস করে বললো, “তোমার সিলেবাস দাও আমাকে।সিলেবাসের কতোটুকু শেষ করেছো তুমি আগে সেটা দেখাও।”
শালুক সিলেবাস বের করে দিলো। ঝকঝকে তকতকে সিলেবাস দেখে পলক শালুকের দিকে তাকালো। তারপর বললো, “সিলেবাস তো একেবারে নতুন দেখছি,মনে হচ্ছে আজকেই ছাপা হয়েছে। তুমি কি এর আগে কখনো সিলেবাস ছুঁয়ে ও দেখো নি?”
শালুক বিরক্ত হয়ে বললো, “এসব ছোঁয়াছুঁয়ির মধ্যে শালুক নেই বুঝলেন স্যার।সিলেবাস ধরে কি করবো আমি?
আমি আজীবন এদিকে সেদিক তাকিয়ে এক্সাম দিয়ে পাশ করে এসেছি। এসব মেহেনত করা আমার পক্ষে সম্ভব না।”
পলক হতভম্ব হলো শালুকের এরকম জবাব শুনে।শালুক ষড়যন্ত্রের ভঙ্গিতে এগিয়ে গিয়ে বললো, “আপনার সাথে একটা ডিল করি স্যার।যেই এক ঘন্টা আপনি আমাকে পড়ানোর কথা,সেই এক ঘন্টা আপনি এসে আপনার মতো সময় কাটাবেন।ফোন টিপেন,চ্যাটিং করেন,কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনেন।কোনো সমস্যা নেই।আমি ও আমার মতো বসে খাতায় আঁকিবুঁকি করি।আপনার ও শান্তি আমার ও শান্তি।কেউ জানবে না কিছু।আমি এমনিতেও পরীক্ষায় খারাপ করবো এটা আমাদের বাসার সবাই জানে।আমাদের ছোট্ট যে নিধি আছে সেও জানে এটা।মতির মা আছে না,সেও আমাকে নিয়ে ভবিষ্যৎ বানী করে রেখেছে।তাই আপনার বদনাম হবার কোনো চান্স নাই।
মাস শেষে আপনি বেতন পেয়ে যাবেন।এরকম সুযোগ কি আর আসবে স্যার?
এরকম অপরচুনিটি আপনাকে আর কেউ দিবে না।বলেন রাজি কি-না? ”
পলক ঘামতে শুরু করলো শালুকের কথা শুনে। এরকম স্টুডেন্ট কেউ কখনো পেয়েছে কি-না পলকের জানা নেই।
চলবে……