তুমি আমার ভালোবাসা

শারীরিক সম্পর্ক- তুমি আমার ভালোবাসা !! Part- 04

মা বিছানায় বসে কাঁদছিল। প্রিয়া মায়ের কাছে গিয়ে বললো,
“মা কিছু কথা ছিল।”
প্রিয়াকে দেখে মা তাড়াতাড়ি চোখ মুছে বললো,
“হ্যাঁ বল।”
“মা, আমি আর এখানে থাকতে চাই না। ভাইয়াকে বলো না অন্য কোথাও বাড়ির ব্যবস্থা করতে। চলো না মা, আমরা এখান থেকে একেবারে চলে যাই।”
মা প্রিয়াকে বুকে জড়িয়ে কেঁদে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“বলবো মা। আজই তোর ভাইয়াকে বলবো।”
রাতে খাওয়ার টেবিলে বসে মা দুই ভাইয়াকে বাড়ি ছাড়ার বিষয়ে জানায়। সবাই প্রিয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে রাজি হয়ে যায়।
ছাদে বসে বসে গান শুনছিল প্রিয়া। ভাবছিল, জীবন কি অদ্ভুত গতিতে চলে! সুখ ধরা দিয়েও দেয়না ধরা। ছাদে হাঁটতে হাঁটতে রেলিং এর কাছে যায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে আজ চাঁদ উঠেছে। বড় থালার মত সম্পূর্ণ একটা চাঁদ। প্রিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কেমন আছো তুমি আব্বু? তুমি কি আমায় মিস করো না একটুও? জানো আব্বু, আমি সত্যিই অলক্ষী! না হলে কেন বারবার আমার সাথেই এমন হবে বলো তো? আমার অপরাধটা কি? তোমায় খুব মিস করছি আব্বু। একবার তোমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। তুমি একটিবার আসবে? ও আব্বু বলো না একটিবার আসবে?”
নিজে নিজে কথা বলতে বলতে একটা সময় ডুকরে কেঁদে উঠে প্রিয়া। বেশ কিছুক্ষণ পর চোখের পানি মুছে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি কেন কষ্ট পাচ্ছি? আল্লাহ্ তুমি সব দেখছো তো? অন্যের জন্য কেন নিজে কষ্ট পাচ্ছি আমি? সাথে পরিবারের মানুষগুলোকেও কষ্ট দিচ্ছি। অনেক হয়েছে। আর না। আজ, এখন থেকে নিজের কাছে নিজেই প্রমিস করছি, কারো জন্য আর কষ্ট পাবো না। নিজেকে এভাবে গুটিয়ে রাখবো না। থেমে থাকবো না আমি। সফলতাকে ছিনিয়ে আনবো।”
.
.
এক মাসের মধ্যেই বাড়ি চেঞ্জ করার সব ব্যবস্থা করে ফেলে প্রিয়ার দুই ভাই। আজ ওরা বাড়ি চেঞ্জ করে নতুন বাড়িতে উঠেছে। সম্পূর্ণ নতুন একটি এলাকা। নতুন পরিবেশ, নতুন প্রতিবেশি। মানিয়ে নিতে একটু সমস্যা হলেও কষ্টগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। আগের থেকে অনেকটাই পরিবর্তন করেছে নিজেকে। এরমধ্যে বেশ কয়েকটা চাকরীর ইন্টার্ভিউও দিয়েছে। শেষে যেই অফিসে ইন্টার্ভিউ দিয়েছে সেই অফিস থেকেই ফোন আসে। ভাগ্য ভালো থাকায় চাকরীটাও হয়ে যায়। প্রিয়ার যে চাকরী করাটা খুব বেশিই দরকার বিষয়টা এমন নয়। নিজেকে ব্যস্ত রাখলে অতীত থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যাবে এটা ভেবেই বাড়ির লোকজন আর বাঁধা দেয়নি। ভার্সিটিতে প্রতিদিন ক্লাসও করা লাগেনা বিধায় কারোরই কোনো সমস্যা নেই।
অফিসে প্রথম জয়েনের দিন প্রিয়া একটা সুতি থ্রি-পিছ পড়ে। অফ-হোয়াইট কালার একটা থ্রি পিছ সাথে ব্লাক কালার হিজাব। ঠোঁটে একদমই হালকা গোলাপি লিপস্টিক দেয়। খাবার খাওয়ার সময় ছোট ভাইয়া বললো,
“কিরে প্রিয়ু তুই লিপস্টিক দিয়ে খাচ্ছিস যে?”
খাবার মুখে নিয়েই প্রিয়া বললো,
“তো কি হয়েছে?”
“পেট খারাপ হলে বুঝবি।”
“লিপস্টিক খেলে পেট খারাপ হয় তুমি কি করে জানলে?”
আমার কথা শুনে ছোট ভাবী বিষম খেলো। ছোট ভাইয়া একটু কেশে বললো,
“জানিনা তো। আন্দাজে বললাম আরকি! জানিসই তো লিপস্টিকে কত কেমিক্যাল থাকে। তাছাড়া লিপস্টিক ঠোঁটে দিয়ে খেয়ে লাভ কি? লিপস্টিক তো উঠেই যাবে।”
“উঠলে উঠুক! আমারটা শেষ হলে ভাবীরটা দিবো।”
খাওয়া শেষে প্রিয়া উঠে দাঁড়ায়। মাকে উদ্দেশ্যে করে বলে,
“মা, আমি আসি কেমন।”
মা প্রিয়ার কপালে চুমু খেয়ে বললো,
“সাবধানে যাবি। মন দিয়ে কাজ করবি।”
ছোট ভাইয়া ডাক দিয়ে বললো,
“এদিকে আয় তো প্রিয়ু।”
“কি হয়েছে?”
“আরে আয় তো।”
প্রিয়া ছোট ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললো,
“কি?”
“শার্টের পকেটে কি আছে দেখতো।”
“এটার জন্য তুমি আমায় ডেকে আনলে?”
“দেখছিস তো আমি খাচ্ছি।”
ছোট ভাবী হাসতে হাসতে বললো,
“তোমার ভাইয়ার এই স্বভাব কি আজ নতুন নাকি। অলসের ঢেঁকি একটা।”
প্রিয়া আর কথা না বাড়িয়ে ছোট ভাইয়ার পকেটে হাত দিলো। একটা পাঁচশো টাকার নোট।
টাকাটা ভাইয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“এই ধরো।”
“আমাকে দিচ্ছিস কেন?”
“তো কাকে দিবো?”
“তুই নিবি।”
“আমার লাগবেনা। বড় ভাইয়া অফিসে যাওয়ার আগে পাঁচশো টাকা দিয়ে গেছে।”
“বলিস কিরে! ভাইয়া তোরে টাকা দিলো অথচ আমায় দিলো না। আচ্ছা ওটা আমি পরে বুঝে নিবো। এখন এই টাকাও তুই নিয়ে যা। রাস্তাঘাট বলা তো যায় না কখন কোথায় টাকা লাগে।”
“আমার লাগবেনা ভাইয়া।”
“লাগবেনা মানে কি রে? আর আমি কি তোকে এমনি এমনিই দিচ্ছি নাকি? বেতন পেয়ে এটার ডাবল টাকা মানে সুদসমেত এক হাজার টাকা ফেরত দিবি।”
ছোট ভাইয়ার কথা শুনে প্রিয়া হেসে দিলো। টাকা নিয়ে বললো,
“তোমার সাথে ঝগরা করতে থাকলে আমার অফিস টাইম পাড় হয়ে যাবে। আমি এখন আসি।”
“সাবধানে যাস।”
“আচ্ছা।”
প্রিয়া চলে যাওয়ার পর ছোট ভাবী বললো,
“মা, প্রিয়া কিন্তু আগের থেকে পরিবর্তন হচ্ছে। কি সুন্দর হাসিখুশি থাকে দেখেছেন।”
“হ্যাঁ রে মা। আল্লাহ্ যেন আবারও ওকে আগের মত হাসিখুশি করে দেয়।”
বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়াতেই সাথে সাথে একটা বাস আসে। প্রিয়া বাসে উঠে জানালার পাশে একটা সিট দেখে বসে পড়ে। বাসে আরো যাত্রীরা উঠছিলো। হুট করে একটা ছেলে বাসে উঠে ধপাস করে প্রিয়ার পাশের সিটে বসে পড়ে। প্রিয়া একবার তাকিয়ে দেখলো রীতিমত ছেলেটা রাগে কাঁপছে। চোখ দুইটা লাল হয়ে আছে। প্রিয়া আর সেদিকে না তাকিয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো। বাস অলরেডি ছেড়ে দিয়েছে। পাশে বসা ছেলেটা ফোনে কল আসতেই রাগ ঝাড়া শুরু করে দেয় সে। ঐপাশ থেকে কি বলছে শোনা যাচ্ছেনা। কিন্তু ছেলেটা বলছে,
“এখন আমি গাড়ি দিয়ে কি করবো? এতক্ষণে গাড়ি পাঠানোর সময় হলো তোমাদের? এদিকে যে, আমার মিটিং এর সময় পেড়িয়ে যাচ্ছে সেটা কি তোমাদের মাথায় নেই। ননসেন্স একেকটা। সব কয়টাকে যদি কঠিন শাস্তি না দেই তো আমার নামও ফাহাদ নয় বলে দিলাম।”
এতটুকু বলেই তিনি ফোন কেটে দিলেন।
এরপর সব চুপচাপ। হেল্পার ভাড়া নিতে আসার সময় প্রিয়াকে উল্লেখ করে বললো,
“আপা ভাড়াটা দেন।”
প্রিয়া ভাড়া মিটিয়ে দিলো। ফাহাদ নামক ছেলেটা হেল্পারের দিকে পাঁচশো টাকার নোট’টা এগিয়ে দিলো। হেল্পার বললো,
“ভাইজান পাঁচশো টাকা তো ভাংতি নাই।”
ফাহাদ রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
“ভাংতি নেই কেন? কেন নেই? ভাংতি কেন রাখেন না আপনারা?”
হুটহাট এমন আচরণে হেল্পারসহ বাসের অনেকেই বেশ অবাক হয়। বিষয়টাকে থামাতে প্রিয়া তার ভাড়াটা দিয়ে হেল্পারকে বললো,
“আপনি যান।”
হেল্পার চলে যাওয়ার পর ফাহাদ প্রিয়ার দিকে ঘুরে বললো,
“আপনি কে?”
“স্যরি?”
“কে আপনি?”
“আমি প্রিয়া।”
“আপনার নাম জানতে চাইনি আমি। আমি জানতে চেয়েছি আপনি আমার কে?”
“কিছুইনা।”
“তাহলে আপনি কেন দিবেন আমার ভাড়া?”
“আশ্চর্য লোক তো আপনি! কারো উপকার করলেও দোষ।”
“কে বলেছে আপনাকে আমার উপকার করতে? ১০ টাকার ভাড়া দিয়ে আমায় উদ্ধার করেছেন।”
“পায়ে পা দিয়ে এমন ঝগরা করছেন কেন?”
“কি মিথ্যুক মহিলা। পায়ে পা দিলাম কখন?”
“ঐটা কথার কথা ছিল। আর কালো সানগ্লাসটা চোখ থেকে খুলেন তো। একটা ছোট বাচ্চা মেয়েকে বলে মহিলা। বলি, চোখে কি ছানি পড়েছে?”
“কিহ্? এত্ত বড় কথা? আমার চোখে ছানি? আমি কি আপনার মত কানি?”
প্রিয়া কিছু বলতে যাবে তখনই হেল্পার বললো,
“আপা নামেন। আইসা পড়ছেন।”
প্রিয়া রাগে দাঁত কটমট করতে করতে বাস থেকে নেমে পড়লো। প্রিয়ার সাথে সাথে ফাহাদও নেমে পড়লো। কিছুদূর যেতেই প্রিয়া পেছন ঘুরে দাঁড়ালো। এক হাত কোমড়ে গুঁজে বললো,
“সমস্যা কি? পেছন পেছন আসছেন কেন? ঝগরা করে স্বাদ মিটেনি?”
“ঐ হ্যালো, আমি! আমি আপনার পিছন পিছন আসছি? এই ফাহাদ? আয়মান চৌধুরী ফাহাদ কারো পিছন পিছন যায় না ওকে?”
প্রিয়ার মেজাজ চরমে উঠে গেলো। এদিকে বেশিকিছু বলতে গেলে অফিসে লেট হয়ে যাবে। আর প্রথমদিনই লেট হলে দেখা যাবে কর্পূরের মত চাকরীটাও উধাও হয়ে যাবে। তাই আর কিছু না বলে হাঁটা শুরু করলো আর মনে মনে বললো,
“কোথা থেকে যে এই পাগলের উদয় হলো আল্লাহ্! এত ঝগরুটে হয় ছেলেরা।”
চলবে…..