তুমি আমার ভালোবাসা

শারীরিক সম্পর্ক- তুমি আমার ভালোবাসা !! Part- 23

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দুলাভাই ফাহাদকে বলে,
“বুঝলা ফাহাদ, বিড়ালের মত ম্যাউ ম্যাউ করার আগেই বাসরঘরে বিড়াল মেরে ফেলো।”
ফাহাদ কি বললো শোনা গেলো না। প্রিয়া আড়ি পেতে শোনার চেষ্টা করছে। দুলাভাই আবার বলে,
“হাইসো না মিয়া। আমার শালিকারে তো চিনো না। এমন নাকানিচুবানি খাওয়াইবো টেরও পাইবা না।”
দুলাভাইর সাথে সাথে আকাশসহ আরো অনেকেই হোহো করে হেসে দিলো। শুধুমাত্র মৃন্ময়ই চুপ করে আছে। ওর এসবের ভেতর একদম থাকার ইচ্ছে ছিলনা। সবার জোড়াজুড়িতেই বাসরঘরের সামনে আসা। মৃন্ময়কে বেশ ভালো করেই দেখছে ফাহাদ। ফাহাদ ভাবে, কষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। সবাই চলে যাওয়ার পর ফাহাদ রুমে ঢোকে। প্রিয়া তখন দরজার আড়ালে ছিল। আচমকা প্রিয়াকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।
“ওমা গোওওও!”
প্রিয়া ফাহাদের মুখ চেপে ধরে বলে,
“চুপ! এভাবে চেঁচাচ্ছো কেন? আমি কি চোর না ডাকাত?”
প্রিয়ার হাত সরিয়ে ফাহাদ বলে,
“তুমি এখানে কেন?”
“শুনছিলাম।”
“কি?”
“তোমাদের কথা। দুলাভাই বিড়াল মারার কথা বললো কেন? নিরীহ বিড়ালের দোষ কি?”
ফাহাদ মিটমিট করে হাসছে।
“উত্তর না দিয়ে এমন চোরের মত হাসছো কেন?”
“চোররা এভাবে হাসে?”
“এটাকে চোরামি হাসিই বলে।”
“আর কত রকম হাসি আছে?”
“কথা ঘুরাচ্ছো কেন?”
“কখন কথা ঘুরালাম?”
“বিড়াল মারার কথায় ছিলাম আমরা।”
“ওহ আচ্ছা। বিড়ালের তো অনেক দোষ। কোনটা রেখে কোনটা বলবো?”
“যেগুলো মেইন সেগুলোই বলো।”
“আচ্ছা বলছি। আসো।”
ফাহাদ প্রিয়াকে টেনে ড্রেসিংটেবিলের সামনে নিয়ে যায়। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“জানো বিড়ালটাকে না আমার মারতে ইচ্ছে করেনা।”
“তাহলে মেরো না।”
“মারবোই তো না। এত কিউট বিড়াল কেউ মারতে নাকি?”
“কোথায় সেই বিড়াল? আমিও দেখবো।”
“দেখবে?”
“হ্যাঁ।”
“শিওর?”
“পাক্কা শিওর।”
“আচ্ছা। আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখো লাল লেহেঙ্গা পড়া মেয়েটাই বিড়াল।”
প্রিয়া চোখগুলো বড় বড় করে বলে,
“কিহ্? আমি বিড়াল?”
ফাহাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েই পিঠে কয়েক দফা কিল বসিয়ে দিলো। ফাহাদ মার খেয়ে বলে,
“দুলাভাই ঠিকই বলেছিল। এজন্যই বাসর রাতে আগে বিড়াল মারা উচিত। এখন বিড়ালের হাতেই আমায় মার খেতে হচ্ছে?”
“আরো মার খাওয়ার ইচ্ছে আছে?”
“না, না। আমি আর তোমার ধারেকাছেও ঘেষছি না। আমি শুতে গেলাম।”
ফাহাদ বিছানার একপাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। পিছু পিছু প্রিয়াও গেলো। প্রিয়াকে দেখে ফাহাদ অন্যপাশে ঘুরে শুলো। আর মিটিমিটি হাসে। পেছন থেকে প্রিয়া বলে,
“তোমার কি খুব লেগেছে?”
ফাহাদ চুপ।
“কথা বলছো না কেন?”
ফাহাদ কথা বলছে না দেখে প্রিয়াও বিছানায় উঠে গেলো। ফাহাদের দুই হাতের মাঝখান দিয়ে একদম মুখোমুখি বালিশে মাথা রাখলো প্রিয়া। ফাহাদ একবার তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। প্রিয়া ফাহাদের গালে হাত রেখে বলে,
“রাগ করেছো?”
“আমি রাগ করলেই কার কি আসে যায় তাতে?”
“অনেক কিছু আসে যায়।”
“সরো।”
“না সরবো না।”
প্রিয়া এক হাত-পা ফাহাদের ওপর দিয়ে জাপটে ধরে শুয়ে রইলো। ফাহাদ আর তখন রাগের অভিনয় করে থাকতে পারলো না। চট করে প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে হেসে দিলো।
“রাগ শেষ?”
“আমি কি সত্যি রাগ করেছিলাম নাকি?”
“তাহলে কি মিথ্যা রাগ করেছিলে?”
“হ্যাঁ। যাতে তুমি নিজ থেকেই কাছে আসো।”
“কি ফাজিল!!”
ফাহাদ প্রিয়াকে ধরে উঠে বসায়।
“আচ্ছা প্রিয়া একটা জিনিস খেয়াল করেছো?”
“কি?”
“তোমাকে এত এত গয়না দিয়েছি। কিন্তু একটা জিনিস দেইনি।”
“কি?”
“ভেবে দেখো তো কি!”
“আমি তো কোনো কিছুর কমতি দেখছি না।”
“পা দাও।”
“মানে?”
“আরে দাও না।”
প্রিয়া পা এগিয়ে দিলো।
“এখন দেখেছো কিসের কমতি?”
“নূপুর!!”
“হ্যাঁ।
ফাহাদ বিছানা থেকে নেমে হাঁটু গেড়ে বসে। প্রিয়ার পা ফাহাদের হাঁটুর ওপর রাখে। খুব যত্নসহকারে নূপুরগুলো পড়িয়ে দেয়। নূপুরের সৌন্দর্যে প্রিয়া বিষ্মিত হয়। ফাহাদ আলতো করে প্রিয়ার পায়ে চুমু খায়। প্রিয়া শিউরে উঠে পা সরিয়ে নেয়। ফাহাদ প্রিয়ার পাশে বসে। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে প্রিয়ার ঘাড়ে মুখ ডোবায়।
“ফাহাদ!”
“হু।”
“আমার না আনইজি লাগছে।”
সাথে সাথে ফাহাদ প্রিয়াকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
“স্যরি।”
“স্যরি কেন?”
“তোমার আনইজি লাগবে এমন কিছু করা ঠিক হবেনা।”
“আরে আমি বলতে চেয়েছি, এই ভারী ড্রেসে আমার আনইজি লাগছে। ড্রেসটা চেঞ্জ করা দরকার।”
“তোমার লাগেজ তো ফুলের ঘরে মেবি। দাঁড়াও আমি নিয়ে আসি।”
“না, না। লাগবে না।”
“তোমার না আনইজি লাগছে?”
“হ্যাঁ। তো?”
“তো ড্রেস চেঞ্জ করবে না?”
“করবো তো। তোমার কোনো ড্রেস দাও।”
“আমার ড্রেস তোমার গায়ে লাগবে।”
“না তো! তুমি যেই মোটা।”
“আমি একটুও মোটা নই। আমি একদম ফিট।”
“কচু। এখন তোমার একটা লুঙ্গি আর শার্ট দাও।”
“তুমি লুঙ্গি পড়বে?”
“হ্যাঁ পড়বো। দাও।”
ফাহাদ একটা লুঙ্গি আর শার্ট এগিয়ে দেয় প্রিয়ার দিকে।
“এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমার চেঞ্জ করা দেখবে?”
“দেখলে কি হয়েছে?”
প্রিয়া চোখ গরম করে তাকায়। ফাহাদ,
“যাচ্ছি যাচ্ছি।”
বলে ব্যালকোনিতে চলে যায়।
প্রিয়া লাইট নিভিয়ে দিয়ে ডিম লাইট জ্বালিয়ে দেয়। শার্ট পড়তে পারলেও লুঙ্গিটা কিছুতেই পড়তে পারছেনা। অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পড়ে।
ফাহাদ ব্যালকোনি থেকে বলে,
“হয়েছে তোমার?”
“না, ফাহাদ।”
“আমি কি রুমে আসবো?”
“আসো।”
ফাহাদ রুমে এসে দেখে লুঙ্গি হাতে নিয়ে প্রিয়া বসে আছে হতাশ মুখে। শার্ট’টা হাঁটুর এক ইঞ্চি উপরে ছুঁই ছুঁই করছে। এভাবে দেখে ফাহাদের ঘোর লেগে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
“লুঙ্গি পড়ছো না কেন?”
“পারছিনা তো। এত প্যাঁচের জিনিস পড়ো কিভাবে তোমরা?”
ফাহাদ হো হো করে হেসে দিলো। প্রিয়া বিরক্ত নিয়ে বললো,
“এত হেসো না তো। পারলে লুঙ্গিটা পড়িয়ে দাও।”
“আমি পড়িয়ে দিবো?”
“এমন একটা ভাব ধরছো যেন আমি পরপুরুষকে বলেছি। দাও দাও পড়িয়ে দাও।”
“আচ্ছা উঠে দাঁড়াও।”
প্রিয়াকে এমন অবস্থায় দেখে ফাহাদের মাথা ঘুরে ওঠে। কত স্বপ্নই দেখেছে প্রিয়াকে বউ করার। কিন্তু এত কাছে এসেও ফাহাদের সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। লুঙ্গি পড়ানো শেষে প্রিয়া ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখছে। ফাহাদের দৃষ্টি তখন প্রিয়ার ওপর। কত হাসিখুশি একটা মেয়ে। ফাহাদ আস্তে আস্তে প্রিয়ার দিকে এগিয়ে যায়। প্রিয়া ফাহাদের দিকে ঘুরে বলে,
“দেখো তো আমায় কেমন লাগছে!”
ফাহাদ প্রিয়ার মুখের ওপর আলতো করে হাত রাখলো। পাজকোলে করে বিছানায় নিয়ে যায়। প্রিয়ার তখন দম যায় যায় অবস্থা। ফাহাদ যতই কাছে যাচ্ছে প্রিয়ার নিঃশ্বাস ততই ভারী হচ্ছে। একটা সময় এতটা কাছাকাছি এসে পড়ে যে দুজনের নিঃশ্বাস একত্রে মিসে যাচ্ছে। প্রিয়ার চুলগুলো হাতখোঁপা করা ছিল। বাম হাতে খোঁপাটা খুলে দেয় ফাহাদ। চুলে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিতে থাকে। মাতাল করা ঘ্রাণ। বাম হাত প্রিয়ার ঘাড়ে রেখে কপালে, গালে, ঠোঁটে, গলায় আলতো করে চুমু খায়। এরপর ঘাড়ে গভীর চুমু এঁকে দেয়। প্রিয়ার অবাধ্য হাত তখন ফাহাদের শার্ট আঁকড়ে ধরে। ফাহাদ এক হাতে প্রিয়ার শার্টের বোঁতামগুলো খুলে ফেলে।
একটা সময় দুজনই হারিয়ে যায় ভালোবাসার অসীম সীমায়। যেখানে কেউ আটকানোর নেই, কেউ বাঁধা দেওয়ার নেই। একটি ভালোবাসা সম্পূর্ণ পূর্ণতা পেতে মোহিত হয়ে ওঠেছে একে অপরের ভালোবাসায়।
.
.
সকাল সকাল গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নেয় প্রিয়া। ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখে সবাই কাজে ব্যস্ত। বৌভাতের আয়োজনের ব্যবস্থা করছে। প্রিয়া শ্বাশুরীর দিকে এগিয়ে যায়। শ্বাশুরী মা তখন মৃন্ময়ের সাথে কথা বলছো। কিছু একটা নিয়ে শ্বাশুরী-মা খুব বকছে মৃন্ময়কে। মৃন্ময় প্রিয়াকে দেখে থমকে যায়। কালো জর্জেট একটা শাড়ি পড়েছে প্রিয়া। হাতে ম্যাচিং করা কালো চুড়ি। নাকে সাদা পাথরের ছোট্ট একটা নাকফুল। লম্বা চুলগুলো থেকে পানির ফোঁটা পড়ছে। পায়ের নূপুরগুলোর শব্দ কানে বাজছে। মাথায় কাপড় দেওয়া। একদম স্নিগ্ধ লাগছে। মৃন্ময়ের কষ্ট যেন বহুগুণ বেড়ে যায়। প্রিয়া এগিয়ে গিয়ে শ্বাশুরীকে সালাম করে। তিনি বলেন,
“আরে তুমি এত সকালে ঘুম থেকে ওঠেছো কেন?”
“আমি তাড়াতাড়িই ঘুম থেকে ওঠি সবসময়।”
“এখন থেকে এত তাড়াতাড়ি ওঠার দরকার নেই। বাড়ির সব কাজ করার জন্য মানুষ আছে।”
“আচ্ছা আমি তাহলে ফুলের কাছে যাই?”
“দেখো গিয়ে ঘুমাচ্ছে হয়তো। পারলে একটু ওকেই ঘুম থেকে তোলো। খুব ঘুমকাতুরে হয়েছে।”
মৃন্ময় প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ সরছেনা। প্রিয়া এখন সম্পূর্ণই অন্য একজনের। সেই অন্য একজনটা আর কেউ নয়। নিজেরই ভাই ফাহাদ। মৃন্ময় আজই এখান থেকে চলে যেতে চাইছে। এভাবে প্রিয়াকে দেখতে পারছেনা। নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়েই সকাল সকাল খালামনির সাথে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। মৃন্ময়ের মা এসে তার বোনকে বোঝায় যাতে মৃন্ময়কে যেতে দেয়। কারণ তিনি তো মা। নিজের ছেলের কষ্টটা তিনি বুঝতে পারছেন।
প্রিয়া ফুলের রুমে গিয়ে দেখে ফুল ঘুমাচ্ছে। দুই/তিন বার ডাকতেই ফুল ঘুম থেকে ওঠে যায়। প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“ভাবী তুমি!!! তাই তো বলি এত তাড়াতাড়ি আমার ঘুম ভাঙ্গলো কিভাবে।”
“আমি ডেকেছি বলে ঘুম ভেঙ্গেছে?”
“হুম। কারণ তুমি তো যাদু জানো।”
ফাহাদ শার্টের হাত ফোল্ড করতে করতে ফুলের রুমে ঢুকে বলে,
“এখানে ননোদকে আদর করে ঘুম ভাঙ্গানো হচ্ছে! অথচ আমার বেলায় আদর নেই?”
ফুল বলে,
“ভাইয়া তুমি এত হিংসুটে কেন বলো তো?”
“সত্যি বললে তো হিংসুক হবোই। আমাকে একটু চুমুটুমু দিয়ে ঘুম ভাঙ্গালে তোর ভাবীর মহাভারত কি অশুদ্ধ হয়ে যেত রে?”
“তুমি না দিনদিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছো ভাইয়া।”
“তোর ভাবীও তাই বলে। তুই তো দেখছি তোর ভাবীর মত হবি।”
“তাও ভালো। তোমার মত তো হবো না।”
“কি বললি?”
ফুল প্রিয়াকে ছেড়ে দিয়ে দৌঁড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। প্রিয়া আড়চোখে ফাহাদকে দেখছে। লজ্জায় ভালো করে তাকাতে পারছেনা। ফাহাদও কালো কালার শার্ট পড়েছে। চুলগুলো স্পাই করেছে। দেয়ালের সাথে এক পা তুলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়া লাজুক লাজুক মুখে বলে,
“ওভাবে কি দেখছো?”
“আমার লজ্জাবতী বউকে দেখছি। কালকে কি ডোজ বেশি হয়ে গেছিল?”
“ফাজিল, কুত্তা।”
প্রিয়া দৌঁড় দিতে নিলেই ফাহাদ হাত ধরে ফেলে। জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে থাকে। ফুল তখন ওয়াশরুম থেকে বের হয়।
“এহেম!! এহেম!!”
প্রিয়া ফাহাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌঁড়ে চলে যায়……
চলবে….