রাগী বস – পর্ব- ১৯ (last part)
সিনহাঃএকা একা বসে আছি হাটুর মধ্যে মুখ গুজে।
সিফাতের কথা ভাবছি আমি ওর কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য কতো কি করলাম ততদিনে সময় শেষ,আমি নেই আর ও অন্য জন কে বেছে নিয়েছে জীবন সাথি হিসেবে।আমায় ভুলেই গেছে সে আর ভুলে যাবে কি নিশাত তো ওর জীবনে আগে থেকেই ছিলো শুধু কয়েকদিন আমি ওদের মাঝখানে চলে এসেছিলাম।ফোন টা বেজে উঠলো,স্কিনে তাকিয়ে বুক টা ধক করে উঠলো সিফাত ফোন করেছে,এতো রাতে,কেনো এইসব ভাবতে ভাবতে ফোন টা কেটে গেলো।আবার বাজতে লাগলো এইবার হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সেই চিরচেনা কন্ঠস্বর ভেসে আসলো।খানিকটা সময় চুপ করে কথা শুনতে লাগলাম।
.
সিফাতঃহ্যালো মিসেস মাহমুদ ভালো আছেন নিশ্চয়,অবশ্য ভালো থাকারই কথা ২য় স্বামী বলে কথা।
.
সিনহাঃসেট আপ,বাজে কথা মুখ দিয়ে বের হয় শুধু সবসময় তাই না,এতো রাতে এই বাজে বক বক শোনানোর জন্য কল করেছেন?
.
সিফাতঃআপনাকে ইনভাইট করার জন্য কল করেছি।
.
সিনহাঃকিসের ইনভাইট??
.
সিফাতঃবিয়ের,আমার আর নিশাতের,হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া আগামীকাল আমাদের বিয়ে তাই বাড়ি গিয়ে কার্ড দিয়ে দাওয়াত দেওয়ার সময় নাই।তাই ফোনেই বললাম আপনি আর মি.রায়ান মাহমুদ আসবেন প্লিজ।
.
সিনহাঃওকে,,আসবো।
.
সিফাতঃওকে বাই বলে ফোন টা কেটে দিলাম।
.
সিনহাঃফোন টা কেটে দাওয়ার সাথেই ফোনটাকে দিলাম একটা আছাড়।জোড়ে শব্দ করে কেঁদে উঠলাম।রুমের সব জিনিস ছুড়ে ফেলতে লাগলাম
.
রায়ানঃসিনহার রুম থেকে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে ওর রুমে গেলাম, গিয়ে দেখি ফ্লরে বসে কাঁদছে, পাশে গিয়ে বসলাম, মাথায় হাত রাখতেই আমায় জরিয়ে ধরে কেদে দিলো।
.
সিনহাঃভাইয়া কাছে আসতেই ভাইয়া বলে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।
.
রায়ানঃআরে পাগলী কি হয়েছে কাঁদছিস কেনো দেখি দেখি মুখ তোল,আমার মিষ্টি বোন টা কাঁদছে কেনো রে?
.
সিনহাঃভাইয়া সিফাত,বলে আরো জোড়ে কাঁদতে লাগলাম।
.
রায়ানঃহ্যাঁ সিফাত বল কি বলেছে?মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম।
.
সিনহাঃভাইয়া সিফাত নিশাত কে বিয়ে করেছে।
.
রায়ানঃকবে?
.
সিনহাঃআগামীকাল।
.
রায়ানঃকরুক এতে কাদার কি আছে ও বিয়ে করছে তোর কি,তুই তো ওকে ছেড়ে এসেছিস ওর কথা ভেবেছিস ওরো একটা জীবন আছে,সারাজিবন তো আর দেবদাস হয়ে থাকবে না।সে বিয়ে করছে আর কি করবি তুইও বিয়ে করে নে,শোন আমি আর কোনো বারন শুনবো না, কাল তোকেও বিয়ে দিবো।
.
সিনহাঃকিন্তু ভাইয়া?
.
রায়ানঃআর কেনো কিন্তু না কাল তোর বিয়ে দ্যাটস ফাইনাল এখন ঘুমা গুড নাইট বলে চলে এলাম সিনহার রুম থেকে।
.
সিনহাঃভাইয়দ আমি বিয়ে করবো না রে আমি যে সিফাত কে ভালবাসি কেন তোরা বুঝিস না।এইসব ভেবে ভেবে কাঁদতে লাগলাম।
.
আপনারা কিছু বুঝতে পারছেন না তাই তো একটু পিছন থেকে আসি চলুন ফ্ল্যাশ ব্যাক,,সেদিন সিনহা সিফাতের অফিস থেকে বেরিয়ে ঠিক কেথায় গিয়ে ছিলো।
.
সিনহাঃসেদিন সিফাতে করা অপমান সহ্য করতে না পেরে ওর বাড়ি থেকে সোজা মায়ের কবরে গিয়েছিলাম,অনেকটা সময় কান্না করার পর বাড়ি ফিরতেই দেখি বাড়ির সামনে মস্ত বড় একটা গাড়ি দাড় করানো,গাড়িতে ছিলো রায়ান মাহমুদ,যাকে দেখা মাত্রই আমি ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নেই।
.
রায়ানঃসিনহা মা কোথায়?
.
সিনহাঃকে না কার মায়ের খোজ নিতে আসছেন আপনি?
.
রায়ানঃআমার মা তোর মা আমাদের মা।
.
সিনহাঃমা শুধু আমার আপনার তো সৎ মা,আমার মা কে তো আপনি কখনো মা বলেই স্বীকার করেন নি বাবা মারা যাওয়ার সাথেই আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন এগুলো মনে আছে আপনার রায়ান মাহমুদ?
.
রায়ানঃসিনহা প্লিজ আমায় মাফ করে দে, আমি আমার মামাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করতে,মায়ের পর মামা কেই আপন ভেবে ছিলাম তাই ছোট মা কে আমি কখনোই মা বলে মেনে নিতে পারিনি,কিন্তু আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি তোদের ফিরিয়ে নিতে এসেছি,মা কে ডাক চল আমার সাথে।
.
সিনহাঃআপনি অনেক দেরী করে ফেলেছেন মা আর নেই।
.
রায়ানঃকি বলছিস তুই এগুলো,কবে হলো এগুলো কি করে তুই একা থাকিস?
.
সিনহাঃহুম সেদিন আরো অনেক কথা দুই ভাইবোনের ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে ভাইয়ার সাথে নিজের বাড়ি চলে আসি আর উত্তরাধিকার সুত্রে বাবার সম্পদের অর্ধেক মালিকানা পাই।
.
সকালে,
.
আজ দুই বাড়িতে বিয়ের অনুষ্টান চলছে,সিফাতের সাথে নিশাতের আর সিনহার সাথে কার সেটা পরে জানতে পারবেন।
.
সিনহার দরজায় নক
.
সিনহাঃঘুমাতেও দেবে না শান্তি মতো কে রে দরজায় নক করে,, আসছি।দরজা খুলেই দেখি পাশের বাড়ির ভাবীরা হাজির দরজা খোলার সাথেই তাড়াহুড়ো করে ভিতরে ঢুকে পড়লো।
.
কি হয়েছে কি এভাবে তারাহুরো করে ঢুকছে কেনো?
.
ভাবিরাঃবিয়ের কনে আজ না তোমার বিয়ে,বিয়ের দিন মানুষ এতো বেলা করে ঘুমাই?
.
সিনহাঃঘুমাবো না তো কি করবো শুনি?
.
ভাবিরাঃশোনো বিয়ের কনের কথা শুনো,বিয়ের দিন কি করবে সেটা জানে না জানতে হবে না তোাময় আর চলো গায়ে হলুদ দিবো।
.
সিনহাঃকি আমি ঐসব হলুদ টলুদ দেবো না
.
ভাবিরাঃনা বললে হবে না দিতেই হবে বলেই সিনহা কে জোড় করে নিয়ে গেলাম হলুদ লাগাতে।
.
সিনহাঃহলুদ গুলো জোড় করেই লাগালো, এখন বউ সেজে বসে রেখে দিয়ে গেলো ধুররর ভালোই লাগে না,যার বিয়ে তার মন নাই পাড়া পড়শির ঘুম নাই এদের অবস্থা এমন।আমার তো মন নাই এই বিয়েতে,একদিকে আমার সিফাত অন্য কাউকে বউ করে ঘরে তুলছে আর আমি অন্যের ঘরে যাচ্ছি বউ হয়ে,আমরা কেউ কারো হয়ে থাকতে পারলাম না, আমার সাথেই শুধু কেনো এমন হয়,সব কষ্ট শুধু আমার ভাগ্যেই লেখা আছে মনে হয়,সব কাছের মানুষরা চলে যায় আমায় ছেড়ে।
বাহিরে হই চই শোনা যাচ্ছে পিচ্চিরা বর এসেছে বলে চেচাঁমেচি করছে,হয়তো বর এসেছে জানি না বর কে একনজর চোখের দেখাও দেখিনি,বিয়েতেই তো মন নেই আর তো বর দেখবো।
.
ভালভাবেই বিয়ে টা সম্পুর্ন হয়ে গেলো,আমি এখন বাসর ঘরের খাটে মাথায় ইয়া বড় লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছি।দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম মনে হয় আমার বর এসেছে।
.
সিফাতঃবাসর ঘরে গিয়ে নিশাত কে বলতে লাগলাম শোনো নিশাত আমি কিন্তু তোমায় ভালবেসে বিয়ে করিনি,আমি সিনহা কে ভালবাসি তোমার সাথে আমার যে চুক্তি হয়েছে আশা করি সে চুক্তি অনুযায়ী একবছর পর তুমি চলে যাবে।
.
সিনহাঃকন্ঠটা খুব চেনা চেনা লাগছে কে উনি ঘোমটস তুলে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলাম,
জোড়ে করে বললাম আপনি এখানে?🙄
.
সিফাতঃএকি তুমি এখানে তাহলে নিশাত কেথায়?
.
সিনহাঃকেন আমি এখানে আপনার পছন্দ হচ্ছে না নিশাত কে এনে দিবো কোমড়ে দু হাত দিয়ে বললাম।
.
সিফাতঃহ্যা তাইতো আমার সাথে নিশাতের বিয়ে হয়েছে নিশাত থাকবে বাসর ঘরে তুমি কেন কথাটি বলতেই দরজায় নক?.
দরজা খুলে দিয়ে দেখি রায়ান,সিয়াম,নিশাত তিনজন মুখ টিপে হাসতে হাসতে ভিতরে প্রবেশ করলো।
.
কি রে সিয়াম কি এইসব তোরা হাসছিস কে
.
সিয়ামঃভাবি আগেই সরি বাসর ঘরে বিরক্ত করার জন্য, সিয়াম তোকেও বলছি কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার জনয়,আসতেই হলো তা না হলে তোরা দুজনে আবার ঝগড়া করে ছিটকে৷ বের হয়ে যে তি।
সিফাত সিনহার সাথে তোর আজ আবার বিয়ে হয়েছে,
.
সিফাতঃমানে তাহলে নিশাতের সাথে কার৷ বিয়ে হয়েছে, আর রায়ান মাহমুদ তো সিনহার৷ বর।
.
সিয়ামঃচুপ শালা রায়ান সিনহার বড় ভাই আর আমার বোনের বর,আজ তোদের সাথে ওদেরও বিয়ে দিয়ে দিয়েছি, রায়ান অনেক দিন থেকে নিশাত কে পছন্দ করতো আমাকে একবারে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে তাই আমরা তিন জনে প্ল্যান করে একদিনে তোদের৷৷ বিয়ে টাও আবার দিয়ে দিলাম।থাক তোরা আর বিরক্ত করবো না আসি।বলেই তিনজনে চলে গেলাম।দরজার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে সিফাত দরজা টা বন্ধ কর ভাই আবার কখন কে চলে আসে।বলেই চলে এলাম।
.
সিফাতঃসিয়ামের ওভাবে বলে যাওয়াই সিনহা লজ্জা য় মাথা নিচু করে আছে আহারে আমার বউ টা লজ্জা পেয়েছে,লজ্জা পেলে যে তাকে আরো সুন্দর দেখায় যেটা আমায় আরো কাছে টানে, আমি ওর দিকে এগোতে লাগলাম।আর ও সেই আগের মতো পিছতে লাগলো,ধুরর ছাতা এখনো পিছাই কেরে এখন তো আমি ওর বর এখনো কিসের ভয়।
.
পিছাচ্ছো কেনো?
.
সিনহাঃআপনি এগোচ্ছেন তাই।
.
সিফাতঃআমিতো এগোবোই।
.
সিনহাঃআমিও পিছাবো।
.
সিফাতঃপিছিয়ে কতোদুর যাবে ধরে ফেলবো আর পালাতে দিবো না।বলেই ওকে নিজের সাথে মিশে নিলাম।
.
সিনহাঃঐ ছারুন বলছি ছাড়ুন আমাকে?
.
সিফাতঃকেনো?
.
সিনহাঃসরি বলেন আগে আমার সাথে যতো অত্যাচার করেছেন সবকিছুর জন্য সরি বলেন।
.
সিফাতঃসরি আমার চশমিস আর কখনো এমন ভুল বুঝবো না আর তুমিও দুরে সরে যেওয়ো না,জানো তুমি আমার কতো লছ করছো,?
.
সিনহাঃকতো লছ করেছি?
.
সিফাতঃঅনেক টা লছ করেছো বাবা ডাক থেকে বঞ্চিত করেছো,এতোদিনে আমি তোমার বেবির বাবা হইতাম সেখানে এখনো বাসরই করতে পারি নাই সব তোমার জন্য।
.
সিনহাঃএখনো পারবেন না।
.
সিফাতঃইহ বললেই হলো,মামার বাড়ি আবদার?
.
সিনহাঃহ্যা তাই।
.
সিফাতঃবস কে আমি না তুমি?
.
সিনহাঃ কে আবার আপনি আমার # Angry_Boss.
.
সিফাতঃতাহলে কার হুকুম চলবে?
.
সিনহাঃআপনার।
.
সিফাতঃতাহলে এবার শুরু করা যাক?
.
সিনহাঃকি?
.
সিফাতঃফিউচার প্ল্যান।
.
সিনহাঃযাহ বলেই ওর বুকে মুখ লুকাইলাম।
.
সিফাতঃসিনহার কপালে একটা চুমু দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে গেলাম ছাদে।চাঁদের আলোয় ওকে অপরুপ লাগছে,দুজনে পাশাপাশি বসে ও আমার কাধে মাথা হাতে হাত রেখে জোছনা বিলাশ করতে লাগলাম,শুধু একটাই চাওয়া জিবনের শেষ দিন পর্যন্ত দুজনে যেনো এভাবেই থাকতে পারি।
.
সমাপ্ত
.
ভালোবেসে কাছে থাকুক সেসব ভালবাসা পুর্ন মানুষগুলো,সব মান-অভিমান ভুলে আবার ফিরে আসুক চেনা মনের টানে।যা চুম্বুকের ন্যায় আকর্ষণ করে।
.
আহা কি আনন্দ আকাশে, বাতাশে। আজ থেকে গল্প শেষ প্যারাও শেষ,আমি এহন ফ্রি একদন কি যে শান্তি লাগছে না।আপাতত লেখা লেখি অফ কারন সামনে পরিক্ষা, ভাইয়া ও বনুরা আমারে দোয়া করিও যাতে পরিক্ষা ভালো হয়,ভালো না হইলে আমার লেখালেখি একবারে অফ করে দিবে,ভালো থাকো সবাই আর পরবর্তী গল্পের জন্য সাথেই থাকো।আল্লাহ হাফেজ
জীবনে সাফল্য আসুক