রঙধনু-সিজন

রঙধনু-সিজন-২!! Part- 09

ভাইয়া সত্যি বিয়ে করে ফেলেছে মা?” ফারিহা মুখে হাত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বললো।।

এভ্রিল ফারিহার হাতে একটা গাট্টা মারলো।।

“আউচ!!মা!!” ফারিহা ব্যাথাতুর আওয়াজে বললো।।

“ত কি??ও কাল যেভাবে বের হয়েছিলো আমি সিউর ছিলাম,এই কাজ অটা করবে!!” এভ্রিল জানালো।।

“কিন্তু মা,ভাবী এরকমভাবে চলে না গেলেও পারতো..আমার কত শখ ছিলো ভাইয়ের বিয়েতে ডিজাইনার দিয়ে এটা সেটা পরবো” হতাশসুরে ফারিহা বললো।।

“সব হবে?ওদের বাড়ি আসতে দে?আর ভার্সিটি কখন যাবি??” এভ্রিল তার এপ্রোন হাতে নিয়ে বললো।।

“এইতো এখন যাবো,তুমি ক্যাম্পে যাচ্ছো এখন?গেলে আমাকে ভার্সিটি ড্রপ করে দেও?” ফারিহা দাড়িয়ে বললো।।

“ইউ হ্যাভ টেন মিনিটস.. নাও গো” এভ্রিল চোখে গ্লাসেস পরে বললো।।

“আমার নিয়মানুবর্তিতা মা!!!” বলে দৌড় দিলো ফারিহা।।

এভ্রিল সুলেমানকে কল দিয়ে জানালো,”যেহেতু ওরা বিয়ে করে নিয়েছে?সেহেতু মোহর জন্য অরমমেন্টস গুলা যেন অর্ডার করা হয়েছে সেইগুলো যেন তার অফিসে পৌছে দেয়”।।

ফারিহা আর এভ্রিল বেরিয়ে পরলো গাড়ি নিয়ে,ফারিহাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে এভ্রিল তার মেডিক্যাল ক্যাম্প গেলো পরিদর্শন করতে।।

ফারিহা ভার্সিটি এসে তার ফ্রেন্ডদের কল করে জানলো কোথায় আছে তারা..তারা জানালো নিমের গাছের নিচে সবাই আড্ডা দিচ্ছে,সবাই সেখানে আছে ওখানে ফারিহা রওনা দিলো।।

ফারিহা হাটছে কিন্তু পিছন থেকে খুব জোরে কিসের সাউন্ড আসছে,পিছন ফিরে দেখলো একটা কার ব্রেকফেইল করেছে,আশেপাশের সবাই তাকে সরতে বলছে।।

ফারিহা খেয়াল করলো একটা ব্ল্যাক স্যুট পরা লোক কানে ব্লুটুথ দিয়ে কথা বলছে,এদিকে যে তাকে সরতে বলছে তার কোন হুশ নেয়..ফারিহা দৌড়ে যেয়ে ছেলেটার কব্জিটা টান দিলো।।

ফারিহা ছেলেটাকে নিয়ে সরে যেতেই, ব্রেক ছাড়া গাড়িটা সামনে থাকা পিলারে কাছে ধাক্কা খেলো।।

“ওয়াচ আউট মিস্টার ব্লুটুথ ম্যান” ফারিহা ছেলেটার দিকে না তাকিয়ে কথাগুলো বললো।।

ছেলেটা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে সামনে পরা ফারিহা মুখের দিকে..তার মুখমন্ডলের দিকে..কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘামের,সেইখানে ছোট ছোট চুল গুলো লেপ্টে আছে..ফারিহার গা থেকে কেমন মিস্টি মাতাল করা ঘ্রান আসছে,যা সামনে থাকা ছেলেটার মনটাকে আস্তে আস্তে গ্রাস করে ফেলছে..এই মেয়ে তার জীবন বাঁচিয়েছে।।

ছেলেটাকে বাঁচানোর সময় ফারিহা যখন কব্জি ধরে হ্যাচকা টান দিলো,তখন ছেলেটা হুমড়ি খেয়ে ফারিহার বুকের উপর পরেছে,যার ফলে ছেলেটার দুই হাত ফারিহার কোমরে আর ফারিহা হাত ছেলেটার দুই বাহুতে।।

ফারিহা চোখ তুলে তাকালে তার চোখ কপালে উঠে গেলো সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে।।

“ইউ!!” ফারিহা দাঁতে দাঁত চেপে বললো।।

হ্যা ছেলেটাকে ফারিহার রেগে গেছে,কারন ফারিহার সামনে স্বয়ং উপস্থিত আছে নুহাস চৌধুরি।।

“লিভ মি!” ফারিহার শান্ত জবাব।।

নুহাস মনে হচ্ছে শুনতে পাচ্ছে না,সে ফারিহার ঘ্রান নিতে ব্যস্ত.. দুইজন মুখোমুখি আছে,আর পাবলিক সবাই ওই ব্রেক ফেইল করা গাড়ির লোকের কাছে আছে।।

“চোখের সাথে সাথে কানটাকেও বয়রা করে আসছেন আপনি??নাকি শুধু অহেতুক মানুষকে বিরক্ত করা আর ভাঙাভাঙি করতে জানেন??” ফারিহা রেগে বললো।।

এইবার নুহাসের হুশ আসলো,ফারিহার কথা তার কানে যায় নি এতোক্ষন..ফারিহাকে দেখতে ব্যস্ত ছিলো,এরকম ফিলিং আগে হয় নি তার..আর এই মেয়ে ত ভালো পকপক করে দেখি।।

“ছাড়ুউউউউউন” ফারিহা এইবার চিল্লিয়ে বললো।।

“আই ডোন্ট!” নুহাস এইটা বলে আরো শক্ত করে ফারিহার কোমর ধরলো।।

ফারিহার কাছে এই স্পর্শ নতুন..কোন ছেলে তার কাছে ঘেষার সাহস পায় নি,আর এই ছেলে আরো শক্ত করে কোমর ধরছে??ফারিহা এমন স্পর্শ শিউরে উঠলেও দমে গেলো না।।

“বাপের সম্পত্তি পাইছেন??” ফারিহা চোখ মুখ শক্ত করে বললো।।

“না!!বাট আমার সম্পত্তি করে নিব খুব শীঘ্রই!” নুহাস কথাটা বলেই ফারিহাকে ছেড়ে দিলো কিন্তু ফারিহার নুহাসের কথার আগামাথা কিছু বুঝলো না।।

নুজাস নিজের গাড়ি কাছে যেয়ে চিল্লিয়ে বললো,

“যা করেছো আজ তুমি,আমি সুদে আসলে মিটিয়ে দিব খুব শীঘ্রই ফারিশতা ফারিহা ফাজ…এই নুহাস চৌধুরি কারো উধার রাখে না” বলেই চোখে সানগ্লাস দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।।

ফারিহা তব্দা খেয়ে আছে যে পাগল নাকি?কি বলে গেলো..নুহাসের কথা বুঝতে না পারা আর তার টাচ মনে পরতেই ফারিহা আবারো রেগে আগুন হয়ে গেলো।।

ফারিহা দ্রুত পায়ে গাড়ির লোকটির কাছে গেলো,যেয়ে ওই লোকটিকে গাড়ি থেকে টেনে বের করে দেখলো মদ খেয়ে টলছে।।

“তোর বাপ মা কি রাস্তা কিনে রাখছে যে মদ খাবি আর এক্সিডেন্টে মানুষ মারবি?” বলেই উড়াধুরা থাপ্পড় দিতে লাগলো ফারিহা ছেলেটিকে।।

“তোর জন্য ওই স্যুট পরা বান্দর কে বাঁচাইতে হইছে..তুই জানোস ওর আমার ফোন ভাঙছে আর আমি ওরে বাঁচাইছি!!আর মদ খাবি বল?” বলে আরো কয়েকটা ফারিহার হাতের থাপ্পড় খেলো ছেলেটা।।

“ক্ষেম্যা দেন আম্মা!!জীবনে আর মদ খামু না,পানি খাইলেও আপনারে ফোন করে জিগামু আম্মা আমি কি পানি খাবো?” মদের নেশায় টলতে টলতে মার খেয়ে ছেলেটা ফারিহাকে বলছে।।

“দূর হ” ফারিহা বলে হাত ঝেড়ে ক্যান্টিনে গেলো কোক খেতে,আপাতত মেজাজ ঠান্ডা হওয়া দরকার।।

দুপুরবেলা,

ফারিশ মোহকে এতোক্ষনে ছাড়লো,ছাড়তো না যতক্ষন মোহর কাদো কাদো ফেইস না দেখতো..ফারিশ ছাড়ার পর সে আবারো গোসল করে,জামা পরে বের হলো..ফারিশ আগে থেকে এনে রেখেছিলো নিচে ছিলো তাই দেখতে পায় নি সে।।

ফারিশ ও গোসল সেরে নিচে আসলো,দেখে মোহ ডাইনিং খাবার সাজাচ্ছে..ফার্ম হাউসে বুয়া এসে দুপুরে রান্না করে গেছে..খিদার জন্য দুজনের পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।।

মোহকে টেনে নিয়ে আসলো নিজের কাছে ফারিশ,ভাত মেখে মোহকে খাওয়ালো আর নিজে খেলো…মা মারা যাওয়ার পর তাকে এমন যত্ন করে এইভাবে খাওয়ালো,চোখে পানি জমেছে দেখে ফারিশ চোখ রাঙালো তার দিকে,সাথে সাথে চোখের জল মুছে নিলো সে।।

বারান্দার ইজি চেয়ারে ফারিশ মোহকে কোলে নিয়ে বলছে,

“আমি কি এখন,বর্তমানে তোমার সাথে কেমন আছি,কি করছি সেইটা দেখবা আগে তুমি?আমি জানি আমার ক্যারেক্টরে সমস্যা ছিলো কিন্তু বিলিভ মি,তোমাকে দেখার পর আমার মাথাতে আসেও নাই কারো সাথে রাত আটকানোর..তুমি আমস্র যায় দেখো আগে আমাকে জিজ্ঞেস করবা অন্যকে না..আমি এখন কেমন সেটা বুঝার চেষ্টা করো..কিন্তু অহেতুক কারনে চোখের পানি ফেললে খুন করে দিব” ফারিশ মোহর ঘাড়ে মুখ রেখে কথা বলছে।।

ফারিশের একাধিক মেয়ের সাথে রিলেশন আছে শুনে মোহ মনে অনেক কষ্ট পেলেও,ফারিশের বর্তমান বিহেভিয়ার দেখে নিজেকে আশ্বস্ত করলো যে না ফারিশ তার জন্য শুধু।।

“আমার লাইফে কাওকে ভালোবাসার রাইট আমি নিজেকে দি নাই কিন্তু তোমাকে দেখার পর থেকে আমার নিজেকে করা প্রমিস গুলো সব এলোমেলো হয়ে গেছে..তোমাকে না দেখলে,কাছে না পেলে আমার দম ফুরিয়ে আসে..আর যা আমার ভালো লাগার তাকে কখনো হাত ছাড়া করি না আর সেখানে তোমাকে আমি ভালোবাসি..আমাকে নেক্সট টাইম ছেড়ে যাওয়ার কথস ভাবলে জ্যান্ত পুতে ফেলবো..এন্ড মার্ক মাই ওয়ার্ডস” ফারিশ কথাগুলো বলে মোহকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠোটে ঠোট ডুবালো..মোহ ও খামচে ধরলো ফারিশের গলা..ডুবে যেতে লাগলো তাদের নতুন দুনিয়াতে।।

চলবে🍁

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *