মিশে আছো আমার অস্তিত্বে

মিশে আছো আমার অস্তিত্বে !! Part-02

সূর্যের আলো চোখে পড়তেই তৃষার ঘুম ভেঙে গেল,,ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সকাল ৭ টা।আড়মোড়া দিয়ে উঠে পাশের সোফার দিকে তাকাতেই আকাশকে দেখতে পেল,, এখনও সে ঘুমাচ্ছে।আর কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।কিছুক্ষণ পর শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে দেখলো আকাশ এখনও ঘুমাচ্ছে তাই তাকে আর না ডেকে নীচে চলে গেল। নতুন ব‌উ এত বেলা পর্যন্ত ঘুমালে লোকেরা পাঁচ কথা শোনাবে আর তাছাড়াও সে এই বাড়ির নতুন ব‌উ।
নীচে নেমে দেখলো তার শাশুড়ি মা রান্নাঘরে সকালের নাস্তা বানাচ্ছে।বিয়েটা যেহেতু ঘরোয়া ভাবে হয়েছে তাই কোনো রিলেটিভসরা আসে নি,,তার শাশুড়ি মা অবশ্যই বলেছিল একটা রিসেপশন পার্টি দেবে কিন্তু আকাশ সরাসরি না করে দিয়েছে তার মতে এইসব জিনিসের পিছনে অযথা সময় নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না,,দু দিন পর এমনিতেই সবাই যেনে যাবে যে সে বিবাহিত।বাড়িতে সদস্য বলতে আকাশ আর তার মা।তিন বছর হয়েছে তার বাবা মারা গিয়েছে তারপর থেকে আকাশ নিজে তার বাবার ব্যবসা সামলিয়েছে।
তৃষাকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আকাশের মা বলে উঠলেন-;
-:আরে তুই বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ভিতরে আয়।
তৃষা এতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল ভেতরে ঢুকতে সাহস পাচ্ছিল না,,,কিন্তু তার শাশুড়ি মায়ের কথায় তার ভয় মুহূর্তেই কমে গেল।তৃষা তো প্রচুর পরিমাণে ভয় পেয়েছিল গতকাল,, আকাশ যখন প্রথম তাকে নিয়ে বাড়িতে আসে তখন তো সে ভেবেই নিয়েছিল যে তার হয়তো এ বাড়িতে কোনো জায়গা হবে না কিন্তু তার ভাবনাকে দূরে ফেলে আকাশের মা নিজে হাতে তাকে বরন করে বাড়িতে তোলে।
রান্নাঘরে ঢুকে শাশুড়ি মার পাশে দাঁড়াতেই তিনি বলে উঠলেন-;
-:কিরে রাতে কোনো অসুবিধা হয় নি তো??
-:না আন্টি।
-:সে কিরে কে তোর আন্টি??ওও বুঝেছি আমাকে মনে হয় এখনও আপন করে নিতে পারিস নি তাই না রে??না কি আমার উপর রাগ করেছিস তোকে আমি তুই বলে সম্বধন করছি বলে??
-:না না মা আপনি আমাকে তুই করেই ডাকুন। আমার খুব ভালো লাগে আপনার মুখে তুই ডাক শুনে।
-:তাই বুঝি তাহলে আমাকে আপনি বলছিস কেন??তুমি করে ডাক ন‌ইলে তোর সাথে কোনো কথা নেই।
তৃষা মুচকি হেসে মা কে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো-;
-:আচ্ছা ঠিক আছে তোমাকে আমি তুমি করেই ডাকবো। এবার তুমি সড়ো তো বাড়ির ব‌উ থাকতে তুমি কেনো রান্না করছো??
-:সে কি রে সবে কাল এলি আর আজ‌ই রান্না করবি??আগে দুদিন রেস্ট নে তারপর থেকে না হয় তুই সব করবি।এখন আপাতত এই কফিটা আকাশকে দিয়ে আয়,, ঘুম থেকে উঠে যদি কফি না পায় তাহলে সারা বাড়ি মাথায় করবে।
তৃষা কিছু একটা বলতে চেয়ে বলতে পারলো না তাই শাশুড়ি মায়ের কথা মতোন কফিটা নিয়ে উপরে চলে গেল।রুমে ঢুকে দেখলো আকাশ অফিসে যাবার জন্য রেডি হচ্ছে‌।তৃষা আকাশের কাছে গিয়ে কফি মাগটা দিয়ে বেরিয়ে আসতে নিলেই আকাশ তাকে ডাকলো।
-:তোমার বাবা সাথে দেখা করতে যাবে??
আকাশের কথা শুনে মুহূর্তেই তৃষার চোখগুলো অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। আকাশের সাথে এইভাবে বিয়ে করে নেওয়াটা তার বাবা মা মেনে নিতে পারে নি।বিয়ে হয়ে যাবার পর তখন সে হসপিটালে যায় আকাশকে নিয়ে তখন তার বাবার অপারেশন হয়েগিয়েছিল এবং তাকে বেডে দেওয়া হয়েছিল।যখন তিনি জানতে পারে যে তৃষা আকাশকে বিয়ে করেছে তখন তিনি প্রচন্ড রেগে যান এবং তাদের চলে যেতে বলেন।তৃষা তার বাবা মাকে অনেক বুঝিয়েছিল কিন্তু তারা বোঝেন নি।উল্টে অতিরিক্ত হাইপার হ‌ওয়ায় তৃষার বাবার শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করে তাই বাধ্য হয়ে তৃষাকে সেখান থেকে চলে আসতে হয়।যদি তার বাবা যানতো যে তাকে বাঁচানোর জন্যই তার মেয়ে নিজের জীবন কুরবানী দিয়েছে,,তাহলে হয়তো তিনি তাকে ক্ষমা করে দিতে পারতেন।
এতক্ষন তৃষা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই কথাগুলোই ভাবছিল আকাশের ডাকে তার ভাবনার ছেদ পড়ে। নিজের চোখের পানিটা ঝটপট মুছে স্বাভাবিক হয়ে বলে উঠলো-;
-:কার সাথে যাবো??
-:যদি যেতে চাও রেডি থেকো বিকালে এসে নিয়ে যাবো??
আকাশের কথা শুনে তৃষা মনে মনে কিছুটা হলেও খুশি হলো বাবা নাই বা তাকে ডাকলো কিন্তু সে যেতেই পারে তার বাবার সাথে দেখা করতেই পারে,,এসব কথা ভাবতেই তার অশান্ত মন কিছুটা হলেও শান্ত হলো। আকাশের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো-;
-:আমি যাবো।
-:ওকে তবে রেডি থেকে।আমি অপেক্ষা করতে পারবো না কারোর জন্য এই বলে আকাশ রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
.
বিকালে তৃষা তার শাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আকাশের সাথে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারলো তার বাবা নাকি হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ নিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছে,,ডাক্তারদের বারণ ও নাকি তিনি শোনেন নি।তৃষা এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলো না,,হু হু করে কেঁদে উঠলো।আকাশ তৃষা নামমাত্র শান্তনা দিয়ে গাড়িতে উঠে অথচ আজ তৃষার এই পরিণতির জন্য এই মানুষটাই একমাত্র দায়ি।আর কিছু ভাবতে পারছে না তৃষা নিজের কান্না কোনোমতে সংবরণ করে গাড়িতে উঠে বসলো।