ভালোবাসব যে তোকে

ভালোবাসব যে তোকে !! Part- 11

মৌ সবার সাথে কথা বলছিলো এর মধ্য আয়ান তাকে রুমে ডাকলো।
দাদিঃআরে তাড়াতাড়ি যা।আমার নাতিটা তোকে অনেক মিস করছে দেখি।তুই নিচে আসলিই বা কতোক্ষন আগে আর ডাকাডাকি শুরু।
এর মধ্য আবার আয়ান মৌ কে ডাকে।আয়ানের ডাক শুনে অহনা, দাদি আর আয়ানের আম্মু মুখ টিপে হাসে। মৌ এর তো এখন আয়ানের উপর সে রাগ হচ্ছে। এভাবে ডাকার কোনো দরকার আছে!!!
মৌ রুমে গিয়ে দেখলো আয়ান সোফায় বসে আছে।
“এভাবে ডাকার দরকার কি??এতো কিসের প্রয়োজন শুনি??”
আয়ান কিছু না বলে সোফার থেকে উঠে গিয়ে মৌ এর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ করে সে মৌ এর কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে আনে। মৌ তো এমন ঘটনায় রীতিমত শকড।সে ভাবেনি যে আয়ান এভাবে করে তাকে ধরবে।
“তোকে প্রয়োজন।”
“ককিসের এএতে প্রয়োজন??”
“জানিস না স্বামী অফিসে যাওয়ার আগে বউকে তার আশেপাশে থাকতে হয়।কখন কি প্রয়োজন পরে এ জন্য।”
“আচ্ছা সেটা ঠিক আছে।কিন্তু আমাকে আগে ছাড়ো প্লিজ কেমন যেন লাগছে।”
“ঠিক আছে ছেড়ে দিলাম।”
এ বলে আয়ান মৌ কে ছেড়ে দিলো। মৌ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
“এখন শোন,প্রতিদিন আমার অফিসে যাওয়ার আগে রুমে থাকবি।কারন আমাকে মোবাইল, ঘড়ি,ওয়ালেট সব এগিয়ে দিবি।”
“বাহ রে।আমার আর কাজ নেই মনে হয়। এসব কিছু আশেপাশেই থাকে।নিজেই নিয়ে নিও। আমার বাসয় আরো কাজ আছে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।এগুলা না করলে আরেকটা ইজি ওয়ে বলি।”
এ কথা শুনে মৌ বেশ খুশি হলো।কিন্তু আয়ান যা বললো পরক্ষনেই তার মুখের থেকে হাসি চলে গেলো।
“তুই প্রতিদিন আমার অফিসে যাওয়ার আগে আমাকে একটা কিস করবি।”
“এসব কি হ্যা??এটা কোনো কাজ হলো??যত্তসব অকাজ।”
মৌ এর মুখে “অকাজ” কথাটা শুনে আয়ান জোরে করে হেসে দিলো। মৌ ভ্রু উচুঁ করে আয়ানের দিকে তাকালো। সে বুঝার চেষ্টা করছে,এমন কি কথা সে বললো যে এতো হাসতে হবে।
“এতো হাসির কি বললাম শুনি??”
আয়ান হাসতে হাসতে জবাব দিলে,
” এই তুই অকাজ বললি কেনো??”
“অকাজ বলবো না তো কি বলবো হ্যা। এটা কোনো কাজ হলো!!”
“অবশ্যই কাজ হলো। স্বামী স্ত্রীর মধ্য এটা নরমাল।
তো বল কোন কাজটা করবি??”
মৌ রেগে জবাব দিলো,
“আচ্ছা ঠিক আছে আমি প্রতিদিন তোমার অফিসে যাওয়ার আগে সব কিছু এগিয়ে দিবো।”
“এই তো গুড গার্ল। এইটাতে রাজি হওয়ার জন্য কত কাহিনি না করতে হলো।….”
মৌ আস্তে আস্তে বললো,
“মন চাচ্ছে অফিসে যাওয়ার আগে প্রতিদিন একটা জুতা ছুড়ে মারি।এতো অলস মানুষ কেমনে হয়!!”
“কিছু কি বললি তুই??”
“নাহ। আমি আর কি বলবো।”
এরপর মৌ আয়ানকে সব প্রয়োজনীয় জিনিস এগিয়ে দেয়।
আয়ান এর রেডি হওয়া শেষ হলে সে আর মৌ একসাথে রুম থেকে বের হয়।
দাদি সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে তাদের দুজনকে দেখছে।
“আল্লাহ আমার এ দুজনকে অনেক সুখ দিও।এ দুজনের উপর যেনো কারো খারাপ নজর না পরে।”
আয়ান এসে খাবার খেতে বসলো। আয়ানের আব্বু বাসায় নেই। উনি আজকে ভোরেই একটা ডিল এর জন্য শহরের বাইরে গিয়েছেন।সবাই খেতে বসেছে।
অহনা হঠাৎ ভ্রু কুচঁকিয়ে বলে উঠলো,
“আচ্ছা কালকে রাতে এমন কি হলো যে তোদের দুজনের মধ্য সব ঠিক হয়ে গেলো??”
এ কথা শুনে মৌ এর খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো।কালকের কথা মনে আসতেই তার খুব লজ্জা পেলো।
আয়ান মৌ এর বিপরীত দিকে বসে আছে। অহনার এ কথা শুনে সে মৌ এর দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হেসেই যাচ্ছে।
মৌ এর তো এটা দেখে চরম রাগ লাগছে।
অহনাঃকি হলো বল।এমন কি হলো হ্যা।
আয়ানঃ এসব তোর শুনতে হবে না। তোর শুনে লাভ নেই। সব কিছু যে ঠিক হয়েছে এটুকুই জেনে রাখ শুধু।
দাদিঃ আচ্ছা অহনা তোর আর জানতে হবে না কিভাবে ঠিক হয়েছে সব।
কিন্তু আমার একটা চাওয়া আছে।
আয়ানঃ কি দাদি??
দাদিঃআমি খুব তাড়াতাড়ি বড়দাদি হতে চাই ব্যাস।
এ কথা শুনে মৌ বিষম খেলো।আর আয়ান তো শয়তানি হাসি দিচ্ছে তার এর দিকে তাকিয়ে।
আয়ানঃচিন্তা করো না দাদি। আল্লাহ চাইলে তোমার মনের ইচ্ছা খুব শীঘ্রই পূরণ হবে।
দাদিঃএটাই শুনতে চাচ্ছিলাম আমি।
আম্মুঃ হুম।আমারো তো ইচ্ছা করে আমার নাতিপুতি হোক। তাদের সাথে সময় কাটাই।
অহনাঃ আমারো খুব ইচ্ছা কেউ আমাকে কিউট করে ফুপ্পি বলে ডাকবে। আহ মনটাই ভরে যাবে।কিউট কিউট গোলু গোলু ফেস থাকবে।
এগুলা শুনে মৌ বললো,
মৌ ঃশুনো, এখনই এমন কিছু হচ্ছে না বেশ।
অহনাঃ কেনো কেনো??
মৌ ঃকারন আমি এখনো অনেক ছোটো।
অহনাঃআহ মেয়ের কথা দেখো।বিয়ে হয়ে গেলো আর বলে কিনা ছোটো আছে।
আয়ানঃ ঠিক বলছিস তুই।কয়দিন পর দেখা যাবে ২/৩ বাচ্চার মা হয়ে গিয়েছে। আর বলে কিনা বাচ্চা।
মৌ ঃ কি বলে!!!!!২/৩ বাচ্চা!!আমি তো মরেই যাবোনে।
মৌ এর এ কথা শুনে বাকি সবাই হাসলেও আয়ান এর খুব রাগ লাগে। সে মৌ কে ধমকের সুরে বলে।,
“আর যদি এসব মরার কথা বলেছিস তো দেখিস তোর কি করি আমি।”
এটা বলে আয়ান অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে।
মৌ ঃএমন রাগ করার কি আছে হুহ।।।….
সারাদিন মৌ কে অহনা জ্বালিয়ে মেরেছে,এই কথা জিজ্ঞাস করতে করতে যে হঠাৎ করে কি এমন করলো যে মৌ এর রাগ নেমে গেলো।
মৌ তো খুব চেষ্টা করেছে বিষয়টা এভোয়েড করার। কারন যদি মুখ ফসকে সে কিস করার কথা বলে ফেলে তখন কি হবে!!!
রাতের বেলা মৌ বারান্দায় দাঁড়ীয়ে আছে।সে খুব মনোযোগ দিয়ে চাঁদটা দেখছে।আজকে পূর্ণিমার রাত। এজন্য চাঁদটা অসম্ভব রকম সুন্দর লাগছে।কি সুন্দর করে সে চারিদিকে আলো ছড়াচ্ছে। চাঁদের আলো গাছের পাতার উপর পরে রংটাই অন্যরকম দেখা যাচ্ছে।মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে হয়তো গাছের এই রঙটাই বেশি ভালো লাগতো। আবার মনে হচ্ছে নাহ। যা আছে তাই ঠিক।
এই চাঁদটা একদম স্বার্থহীন ভাবে তার আলো ছড়াচ্ছে।কারো কাছে তার কোনো দাবীদাওয়া নেই।মানুষও যদি এমন হতো। একদম স্বার্থহীন। তাহলে হয়তো দুনিয়াটাই অন্যরকম হতো। কোনো ঝগড়া ফ্যাসাদ থাকতো না হয়তো।কিন্তু আফসোস মানুষ এমন না। তারা খুব বেশি স্বার্থপর। খুবই বেশি। এমন কেনো মানুষ??তারা কি প্রকৃতির কাছ থেকে একটু শিক্ষা নিতে পারে না??হয়তো নিতে চায় না তারা।
মৌ এর ভাবনার মাঝে হঠাৎ করে আয়ান তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। এতে সে চমকে উঠলো।
“আরে আমি।ভয় পাচ্ছিস নাকি??”
“নাহ তেমন কিছু না। কখন এলে??”
“১০/১২মিনিট আগে এসেছি। রুমে এসেই দেখলাম তুই বারান্দায়। তাই নিশব্দে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তোর কাছে এলাম। প্রকৃতির সৌন্দর্যে এমনভাবে বিভর ছিলি যে আমি কখন আসলাম তুই খেয়ালই করিসনি।”
“হুম।দেখো না আজকের চাঁদটা। কি সুন্দর লাগছে।”
“হুম। একদম তোর মতো।”
আয়ানের এ কথা শুনে মৌ হালকা লজ্জা পেলো।
কিছুক্ষণ বারান্দায় দাঁড়ীয়ে থেকে রুমে আসলে তারা। মৌ শুকনো কাপড় গুছিয়ে রাখছে। আর আয়ান মোবাইল ঘাটছে। হঠাৎ করে তার আজকে সকলের ঘটনা মনে পরে গেলো।
সে মৌ কে জিজ্ঞাসা করলো,
“আচ্ছা তো বল,আমাদের বেবি কবে আসছে?? ”
আয়ানের এ কথা শুনে মৌ এর কাজ থেমে গেলো। অসম্ভব লজ্জা লাগছে তার। দাদির মুখে বাচ্চার কথা শুনে খুব একটা লজ্জা লাগেনি।কিন্তু আয়ানের মুখে এই কথা শুনে তার মনে হচ্ছে লজ্জায় এ রুম থেকে বের হতে পারলে বাঁচে। সে কিছুক্ষণ চুপ থাকে । এর মধ্য আবার আয়ান বলে উঠে,
“কি হলো বল।”
“কি বলবো হ্যা। এসব কি আমার হাতে নাকি??আল্লাহ যেদিন চাইবে সেদিন হবে।”
এরপর আয়ান গিয়ে আবার মৌ কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
“কিছু তোর হাতে কিছু আল্লাহর হাতে।”
এ বলে আয়ান মৌ এর ঘাড়ে মুখ গুজে দেয়। আয়ানের ছোঁয়ায় সে কেঁপে উঠে।
কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে সে বলে,
“আমি এসবের জন্য এখনই রেডি না।”
মৌ এর এ কথা শুনে আয়ান মুখ উঠায়।
“ঠিক আছে।তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি কিছু করবো না।”
আয়ান মৌ কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলে,
“আমাদের মাঝে যে সব ঠিক হয়ে গিয়েছে এতে আল্লাহর হাজার হাজার শুকরিয়া জানাই।
বুঝতে পারছি যে তোর কিছু টাইমের দরকার।
ঠিক আছে তুই টাইম নে। আমার কোনো সমস্যা নেই।”
মৌ কৃতজ্ঞতাপূর্ণ একটা হাসি দেয়। সে ভেবেছিলো যে আয়ান জোর করবে। কিন্তু আয়ান তা করেনি। বরং তাকে বুঝার চেষ্টা করেছে। আয়ানের এ কাজে তার মনে আয়ানের জন্য মনে হয় আরো বেশি ভালোবাসা বেড়ে গেলো।
“আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞাস করি?”
“হুম করো।”
“তুই কি আমাকে ভালেবাসিস না??”
একথা শুনে মৌ কি জবাব দিবে বুঝতে পারছে না।কি করে তাকে বলবে যে তার এই জীবনসঙ্গীনি তার চেয়েও বেশি ভালোবাসে। মন উজাড় করে ভালোবাসে। কিন্তু আবার বলতেও কেমন যেনো লজ্জা লাগে। মনে হচ্ছে আগের চেয়ে তার লজ্জা আরো বেড়ে গিয়েছে।অনেক বেশিই।
“বলবো তো বললাম একদিন।”
“জানি তো একদিন বলবি। কিন্তু সেই একদিন কবে আসবে??”
“আসবে আসবে। সবুরে মেওয়া মিলে। তাই সবুর করো।
যেকোনো একদিন হুট করেই বলে দিতে পারি।”
“তুই জানিস না তোর মুখে ‘ভালোবাসি’ কথাটা শুনার জন্য আমার মন ছটফট করছে।”
“আরে শুধু এই একটা শব্দ শুনার জন্য এতো উৎসুক!! বলবো তো একদিন।”
“কবে বলবি হ্যা??আমি মরে গেলে তারপর??”
আয়ানের এ কথা শুনে মৌ এর চরম রাগ উঠে গেলো।
“এসব কি বলো হ্যা??মুখে কি লাগাম লাগানো যায়না??”
“কেনো সকালেও তো তুই এই কথা বলছিস।”
“উফ সেটা আমি মজা করে বলছিলাম।”
“তো আমিও মজা করলাম।”
মৌ করুন চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এমন মজা আর করবে না প্লিজ।”
“ঠিক আছে আর করবো না। তুই ও এমন করবি না।”
“হুম।”বলে মৌ একটা মুচকি হাসি দিলো।তার এ হাসিতে যেনো আয়ান হাজার বার ঘায়েল হয়।
এর মধ্য আবার দাদি মৌ কে ডাক দিলো।
আয়ান ভেবেছিলো মৌ এর সআথে আরো কিছু সময় কাটাবে। কিন্তু দাদির এ ডাকটা আয়ানের মন ক্ষুন্ন করে দিলো।সে ঠোট বাকিয়ে বললো,
“যা তুই।নাহলে ডেকে ডেকে হয়রান হয়ে যাবে মে দাদি।”
মৌ কিছু না বলে দরজার দিকে পা বাড়ালো।যাওয়ার পথে সে হঠাৎ থেকে গিয়ে আয়ানের দিকে চেয়ে বললো,
“সালাংঘে।”
“এ্যহ,কি বললি তুই??”
“বলেছি কিছু একটা।পারলে বুঝে নিও।”
“কি যে বললি বুঝবো কিভাবে?””
আবার দাদি ডাকে। দাদির ডাক শুনে মৌ আর কিছু না বলে চলে যায়।
আর আয়ান গভীর চিন্তায় ডুবে যায় যে, মৌ এ মাত্র কি বলে গেলো???
চলবে……

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *