প্রেমে পড়া বারণ !! Part- 13
এখন ওর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
-কৃতজ্ঞ!!কিভাবে?
-কারন ও এমন টা করেছে বলেই আমি তোকে পেয়েছি।তাই।নাহলে ভুল মানুষকেই চাইতাম।
এবার আমি সত্যিই কেঁদে ফেললাম।।
ওকে আঁকড়ে ধরলাম।
-তুমি ওর সঙ্গে কথা বলবা না।বললে আমার কষ্ট লাগে।
– ধুর পাগলি। আফরিনের সাথে কথা বললে তুই যদি কষ্ট পাস, তাহলে আমি কথা বলবো না।
আর তাছাড়া ওর সঙ্গে তো আমার এতো বছর পরে দেখা।ভদ্রতার খাতিরেও কথা বলতে হয়েছে।
– হুমম।।
রেহান আমার চোখ মুছে দেয়।।
– এখন তাড়াতাড়ি ডাইনিং এ আয়। খুব খিদে পেয়েছে।
রেহান এখানে আসার পরে মনে হচ্ছে যে আমার বিয়ে হয়েছে। একটা সংসার আছে। দায়িত্ব আছে। বাসায় থাকতে এতো টা বুঝতে পারিনি।ফুপি বুঝতেও দেয়নি।
আমি যখন রান্না করি রেহান সবজি কেটে দেয়।কখনো ও স্পেশাল ডিস বানায় আর আমি এসিস্ট করি।
রেহান ভালো রান্না করতে পারে সেটা জানতাম না। ও যখন বাইরে ছিলো তখন থেকেই পারে। কিন্তু বাসায় কখনো করতে দেখিনি।
জৌলুসভরা টরন্টো শহরে আমাদের দিনগুলো কেটে যাচ্ছে।
জেরিন ভাবি, আদিল ভাই উনাদের ইনভাইট করলাম।উনাদের সাথে একটা দিন খুব আনন্দে কাটালাম। এর মধ্যে রেহানের কিছু বন্ধুদেরও ইনভাইট করেছিলো।
সব মিলিয়ে বেশ ভালো সময় কাটছে।
আম্মু,ফুপি তো চিন্তা করছেন কিভাবে থাকছি,কি খাচ্ছি। কত বুঝিয়েছি, বুঝেনা।প্রতিবেলায় খোঁজ নিতেন। রেহান আসার পরে উনারা একটু শান্ত হয়েছেন।
এখানে একটা মিনি বাংলাদেশ আছে।বাংলাদেশী মোটামুটি সব কিছুই পাওয়া যায়। বাঙালি খাবার,কাপড়, থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজি এখানে পাওয়া যায়।
কানাডা শীতল দেশ। আমার বেশ ভালো লাগে। রেহানের কুল ঘেঁষে ঘুমাতে আরও বেশি ভালো লাগে।
বেশ বেলা হয়ে গেছে,কিন্তু উঠার কোনো তাড়া ছিলো না। ঘুম হালকা হবার পর আরও গুটিসুটি মেরে রেহানের কাছ ঘেঁষে গেছি।
তখনই দরজায় কেউ এসেছে। উঠতে ইচ্ছে করছে না। রেহান ভাবলো আমি ঘুমে।
ও নিজে গিয়েই দরজা খুললো।
বেশ অনেক সময় হয়ে গেছে, রেহান রুমে আসছে না।নিশ্চয়ই কোনো বব্ধু পেয়ে গল্পে মজে গেছে!!
আমি আরও অনেক সময় পরে রুম থেকে বের হয়ে দেখি আরফিন এসেছে! আমার উপস্থিতি তারা টের পায়নি।
আফরিন রেহান পাশে বসে ওর হাত ধরে কিছু একটা বলছে!
এটা দেখার পর আমার মনে হচ্ছে আমার কলিজ্বা চিড়ে ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে।
ওদের কথাও আমার কানে এলো।
– রেহান আমি একটা ভুল করেছিলাম। কিন্তু আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি। প্লিজ তুমি ফিরে এসো আমার লাইফে।প্লিজ।
– কি বলছো এসব তুমি!? আমি ম্যারিড আমার সংসার আছে! এটা কিভাবে সম্ভব!?
– সম্ভব। তুমি চাইলেই সম্ভব।
– কিভাবে?
– তুমি হিয়াকে ছেড়ে দাও।ওকে দেশে পাঠিয়ে দাও।
– কি সব বলছো!? এটা অসম্ভব। হিয়া শুনলে কতটা কষ্ট পাবে তোমার ধারণাও নেই।
– প্লিজ রেহান। আমার কথা শুনো।আমার দিকে তাকাও।
আফরিন রেহানের মুখ দু’হাতে ধরে ওর দিকে ফেরায়।
– আমরা একসাথে কত সুন্দর সময় কাটিয়েছি।এই শহরে কত স্মৃতি আছে আমাদের। তোমার মনে নেই?
ভুলে গেছো তুমি?
– না ভুলিনি। মনে আছে আমার। এটাও মনে আছে তুমি কি করেছিলে!
– সরি রেহান।
আমি ভুল করেছিলাম। পরে রিয়ালাইজ করতে পেরেছি আমি কত বড় ভুল করেছি।
আমি তোমাকে হারিয়ে বুঝতে পেরেছি।
– এখন এসব বলে কি হবে রিন?
– রেহান প্লিজ।তুমি জানো আমি সংসার করতে পারিনি। তোমাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে সংসার করা সম্ভব হয়নি।
– দেখো আমার মা আছে,ফ্যামিলি আছে। এসব এখন চিন্তা করে লাভ নেই।
আফরিন কিছু ক্ষণ থমকে থেকে বললো
– তুমি আমাকে ভালোবাসো না?
– জানি না।
– আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো।
রেহান ওর চোখের দিকে তাকায়।।
– বলো।
– জানি না আমি। কেন এসেছো এখানে??
চলে যাও!!
– মিথ্যা বলতে পারবে না জানতাম। কিন্তু সত্যি টা স্বীকার করতে ভয় পাও তুমি?
আমাকে ভালোবাসো। এটাই সত্যি।
রেহান চুপ করে আছে।
রেহানের চুপ হয়ে থাকা যেন নীরব স্বীকারোক্তি।
আমার পায়ের নিচ থেকে যেন আস্তে আস্তে মাটি সরে যাচ্ছে। আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।
রেহান, তুমি যেখানে বলবে আমি যেখানেই থাকবো তোমার সঙ্গে।
– হুমম। কিন্তু কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না। হিয়াকে…
– মাত্র কিছু দিন বাকি।তারপর ও চলে যাবে।তুমি থেকে যাও।ওকে একাই পাঠিয়ে দাও কিছু একটা বলে।।
তারপর যা হবার, সেটা পরে দেখা যাবে।
– হুমম।আচ্ছা। দেখা যাক।
– তোমাকে অনেক ভালোবাসি।আমি জানতাম তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিবেনা
আফরিন রেহানের কাঁধে মাথা রাখে।
রেহান হয়তো ইতস্তত করছে, কিন্তু এক হাতে আফরিনের হাত ধরে আছে।
– আর কোনো দিন ছেড়ে যাবে না,বলো।
– প্রমিস রেহান। কখনোই ছেড়ে যাবো না।
ওরা নিবিড় ভাবে বসে আছে।
এই বাসায় আমিও আছি রেহান বোধহয় সেদিকে তোয়াক্কাই করছে না।
কি করবো এখন আমি? আমার পৃথিবীটা যেন থমকে গেলো।
আমার রেহানকে হারিয়ে ফেলেছি। এখন মনে হচ্ছে ও এইজন্যই আমাকে এখানে পাঠিয়েছে, যাতে ওর আসার পথ হয়।নাহলে ফুপি ওকে আসতে দিতো না।
আমার সংসারটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। রেহান এটা করতে পারে না। ওকে না পেতাম সেটাই এক যন্ত্রণা, এটা নিয়ে বাঁচতে পারতাম।
কিন্তু রেহান এভাবে আমাকে ছেড়ে যাবার পরে আমি মনে হয় না আর বাঁচতে পারবো।
কেন করছো এমন। রেহান!!
এটা তুমি করতে পারো না।
আমার হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা।চোখ ফেঁটে যাচ্ছে। তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে।
মনে হচ্ছে বুকের উপর ভারী একটা পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে কেউ।
গলায় কেউ দু’হাতে চেপে ধরে আছে।
সমস্ত শরীর বেঁয়ে কি যেন একটা অদৃশ্য শক্তি আমাকে বেঁধে রেখেছে। আমি নড়তেও পারছিনা।
আমার সমস্ত শরীর ঘেমে একাকার।
এই মৌসুমে হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যেও ঘেমে সমস্ত শরীর ভিজে গেছে।
রেহান আমার পাশে গভীর ঘুমে।আমি দুঃস্বপ্ন দেখেছি!!
এই স্বপ্ন দেখার পর মনে শান্তি পাচ্ছি না।
একটা অস্বস্তি হচ্ছে। রেহানকে বলছিও না।
এসবের মধ্যে আমার ফাইনাল টার্ম শেষ। কয়েকদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে থিসিস জমা দিলাম। রেহান পুরোটা সময় হেল্প করেছে। কখনো সাথে বসেই নেট সার্চ, কখনো বই ঘেটে ইনফরমেশন নোট করে দিয়েছে। কখনো নিজেই রান্নাটা করে ফেলেছে।
কিন্তু মাথা থেকে সেই স্বপ্ন সরছে না।এটা যেন পিছনে তাড়া করে বেড়াচ্ছে!
তার আরও একটা কারণ আছে। আফরিনের সংসারটা টিকেনি বেশি দিন।সেটা জেরিন ভাবির কাছেই শুনেছিলাম। আর এসব স্বপ্ন দেখে ভেতরের অশান্তি কেবল বাড়ছেই।
রেহান একদিন জিজ্ঞেস করলো
– তোর কি হয়েছে?
– কই কিছু হয়নি তো।।
– কিছু একটা হয়েছে। বেশ কিছু দিন থেকে খেয়াল করছি। তুই অন্যমনস্ক হয়ে থাকিস।
– কিছু হয়নি।
– আমি এখানে এসেছি বলে তোর ভালো লাগছে না, তাই না?
– ধুর, কি যে বলো না তুমি!!
– সত্যিই তো বলছি! এখানে আফরিন আছে আর আমিও এখানে এসেছি। দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে! এটা তোর পছন্দ হচ্ছে না সেটা জানি।
– বাদ দাও এসব কথা।
– বাদ দিব কেন?
– এসব কিছুই না তাই। আর তোমার মাথায় কি সারাক্ষণ আফরিন ই ঘুরে? ওকে নিয়েই কথা বলতে হবে কেন! শুনি?
– তুই বলতে বাধ্য করছিস, তাই।তোর ব্যবহার বদলে গেছে এই কদিনে!.অন্য কোনো কারণ থাকলে বল।।
– কে আফরিন?? ও কি বিশেষ কেউ যাকে নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে? আমি সেটা মনে করছি না। আর যদি তোমার মনে হয় সেখানে আমার কিছু বলার নেই।
– হিয়া..
মনে আছে না তুই একটু বেশিই রিয়েক্ট করছিস?
আমি কিছু না বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম।।
রেহান দীর্ঘ সময় চুপচাপ বসে রইলো।
পরদিন সকালে জেরিন ভাবি, আদিল ভাই আরও একজন পরিচিত বাঙালি ভদ্র মহিলা আসলো।
সব বাঙালিরা মিলে গেট টুগেদার করবে সামনের রবিবার। উনারা সেটার নিমন্ত্রণ করতে এসেছেন।।
রেহান বললো
– আমি শিওর বলতে পারছি না। তবে চেষ্টা করবো।
– এটা একটা কথা বললি? কদিন পরেই চলে যাবি।আবার কখনো আসবি কিনা ঠিক নেই।আসলেও কবে আসবি!.
সবাই একসাথে অনেক ভালো লাগবে।বিদেশে দেশের মানুষজনই পরম আত্নীয়।
আমি বললাম – ভাই, আমরাও যাবো। চিন্তা করবেন না।
রেহান আর কিছু বললো না।
উনারা যাবার পরে রেহান ও বের হয়ে গেলো।
সারাদিন গিয়ে রাত হয়ে গেছে। কিন্তু রেহান এখনো ফিরছে না।
আমি এতো বার কল করলাম ফোন ও রিসিভ করছে না।
খুব টেনশন হচ্ছে।কোথায় গেলো রেহান!!
চলবে….