প্রেমে পড়া বারণ

প্রেমে পড়া বারণ !! Part- 03

তুই যা ভাবছিস তা সম্ভব নয়।
– আমি কি ভাবছি?
আমার এমন প্রশ্নে রেহান ভাই কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেছেন।
– দেখ,আমি কিন্তু সিরিয়াস কিছু কথা বলছি।
– আমিও সিরিয়াসলি শুনছি।
– শুনছিস না।
– আপনি কি সত্যিই বিয়ে করবেন?
– জানি না।
– আচ্ছা, কেন সম্ভব না?
– তুই আমার ১২ বছরের ছোট। বাচ্চা একটা মেয়ে। দুটো পরিবার কখনো আমরা কেউ আলাদা করে দেখিনি। বুঝতে পারছিস মামা,মামি যদি এসব শুনেন, উনারা কি ভাববেন। তাছাড়া…
– তাছাড়া কি?
– তুই ভালো করেই জানিস, আমি এসব নিয়ে কিছু ভাবিনা।তোর মনে কি চলছে সেটা আমি বুঝতে পারছি বলেই তোকে সাবধান করছি।দেখ হিয়া,আমি চাই তুই ভালো থাক। মন ভাঙলে সহ্য করতে পারবি না। তোকে কষ্ট দেয়ার কোনো ইচ্ছেও নেই আমার।
তাই তোকে পরিষ্কার করেই বলে দিচ্ছি- এটা সম্ভব না।
রেহান ভাই এক শ্বাসে কথা গুলো বললেন।
উনার কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে এসেছে।
– অনেক তো কারণ ব্যাখ্যা করলেন। একটা কথা সত্যি করে বলবেন?
– কি?
– আমার জন্য কি আপনার মনে কোনো যায়গা নেই?
– থাকবে না কেন? মাহি,দিয়া, আরিফের যেমন যায়গা আছে, তোর ও আছে।
আমি আফরিনকে ভুলতে পারিনি। ভুলতে পারবো কিনা জানি না।।
উনার কথা শুনে আমার মুখ থেকে একটা কথাও বের হচ্ছে না।
মাথানিচু করে বসে আছি। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমি চেষ্টা করছি সামলে নিতে, কিন্তু পারছিনা।
রেহান ভাই আমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে একটু ঘাবড়ে গেলেন।
– হিয়া কি করছিস? আমি তো জানতাম তুই স্ট্রং একটা মেয়ে। বাচ্চাদের মতো কাঁদছিস!!
আমি নিজেকে সামলে নিলাম। রেহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আমি অনেক জ্বালিয়েছি আপনাকে।আর জ্বালাতন করবো না। আপনি বিয়ে করে নিন।’
রেহান ভাই মৃদু হেসে আলতো করে আমার চোখ মুছে দিলেন।
– চল, এখন যাওয়া যাক।অনেক দেরি হয়ে গেছে।
আমরা বাসায় ফিরছি।আজকে আমার ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। এতো দিন ভাবতাম উনি আমার অনুভূতি বুঝেন না। কিন্তু আজ! আমাকে কিছুই বলতে হয়নি।উনি সবটা জানেন,বুঝেন।আর বুঝেশুনেই উনি ফিরিয়ে দিলেন।।
আমার অনুভূতিগুলো তাকে স্পর্শ করেছে,কিন্তু তার মন স্পর্শ করতে পারেনি।
আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখছি।আকাশে মেঘ জমেছে। বৃষ্টি হবে বোধ হয়।
আমার মনেও মেঘ জমেছে, ঝড় উঠেছে।কিন্তু চোখের বৃষ্টি থেমে গেছে।
দেখতে দেখতে চার-পাঁচ দিন কেটে গেছে। আমার হাতের অবস্থা অনেক টা ভালো। এই কয়দিন কোথাও বের হইনি।আজ নাকি রেহান ভাই অই মেয়েটার সাথে দেখা করার কথা।
সবাই খুব এক্সাইটেড। টানটান উত্তেজনা সবার মধ্যে, ঠিক যেন খেলার শেষ মুহূর্তে, শেষ বলে একটা রান অথবা একটা উইকেট দরকার!
রেহান ভাইয়ের বিয়েটা এখন এই পর্যায়ে এসে গেছে। এতো দিনে কম মেয়ে দেখেনি।কিন্তু রেহান ভাই কাউকে দেখতেই যায়নি।সব আব্বু,আম্মু আর ফুপি দেখেছে।আজ যখন রেহান ভাই দেখা করতে রাজি হয়েছে তখন সবাই এক্সাইটেড থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।
রেহান বিয়ে না করার পিছনে একটা কারণ আছে। সেটা সবাই জানে। কিন্তু এটা সবাই স্বাভাবিক ভাবে নিলেও রেহান নিতে পারেনি।তাই বিয়ে করবে না বলে জিদ ধরে আছে ।
রেহান যখন বাহিরে ছিলো তখন আফরিন নামে একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়।
তারপর বন্ধুত্ব, বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। প্রায় পাঁচ বছরের রিলেশন। রেহান বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। তার মা প্রথমে রাজি ছিলেন না,কারণ রেহান সেখানেই সেটেল্ড হবার চিন্তা করছিলো। তারপর সবাই বুঝানোর পরে, ছেলের কথা চিন্তা করে রাজি হলেন।
রেহানের মা রাজি হবার পরে রেহান তার সিদ্ধান্ত চেঞ্জ করে; বিয়ে করে দেশে ফিরে আসবে।এনগেজমেন্টের এর আয়োজন হলো। রেহানের কিছু বন্ধু-বান্ধব উপস্থিত ছিলো।
কিন্তু আফরিন আসেনি।
তার ফোন সুইচড অফ। অনেক বার ট্রাই করেও আফরিনের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। সবাই অপেক্ষা করে যখন চলে যাবে তখন আফরিন এলো। এনগেজমেন্ট হলো।
রেহান খুব এক্সাইটেড ছিলো। বিয়ের শপিং শুরু করে দিলো। সেখানে একা,পরিবারের কেউ নেই। তাই সব কিছু ওকে সামলাতে হবে।
এনগেজমেন্টের আট- দশ দিন পরে হঠাৎ একদিন আফরিন এসে উপস্থিত, তাও প্রায় রাত ১১ টায়।
– আরে রিন,তুমি? এই সময় এখানে?
-রেহান, তোমার সাথে জরুরী কিছু কথা বলতে এসেছি।ভেতরে আসতে বলবে না?
– অফকোর্স! এসো,ভেতরে এসো।
কি এমন কথা সন্ধ্যায় তো দেখা হলো, তখন তো কিছু বললে না।
– অনেক ভাবলাম, কি করা উচিত আমি বুঝতে পারছিলাম না।এখন আমি মাইন্ড স্থির করে ফেলেছি।
– কি ব্যাপারে রিন( আফরিন কে সবাই রিন বলেই ডাকে) তুমি কি নিয়ে কথা বলতে চাইছো আমি বুঝতে পারছি না।
– তুমি কি সত্যিই বিয়ের পরে দেশে ফিরে যেতে যাও??
-রিন…এইটা নিয়ে আমরা আগেই কথা বলেছি, তাই না? আমার আম্মু একা সেখানে, উনি কিছুতেই এখানে আসতে রাজি হচ্ছেন না।মাহির বিয়ে হয়ে গেলে উনি একদম একা হয়ে পড়বেন।উনি আমাদের বিয়েতে মত দিয়েছেন। এখন ছেলে হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করবো না?
– ওকে! তাহলে আজ ফাইনাল ডিসিশন হোক।
– এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে, এখন আর কি ডিসিশন বাকি?
– বিয়ে তো হয়ে যায়নি।
– কি বলতে চাইছো, রিন?
– রেহান! কাম অন! বিয়ে ছোট খাটো কোনো বিষয় না।সারাজীবনের ব্যাপার। আমি যদি হ্যাপি না-ই থাকতে পারলাম, সেই বিয়ের কোনো মানে আছে?
– তুমি আমার সাথে হ্যাপি নও?
– অফকোর্স হ্যাপি। বাট, তুমি জানো আমি সেই ছোট্টবেলা থেকে এখানে। আমার পুরো পরিবার এখানে। ইনফ্যাক্ট দেশে আমাদের খুব কম আত্নীয় স্বজনই আছে।এখন আমি তোমার সাথে দেশে ফিরে কম্ফোর্ট ফিল করবো? আমি এখানে অভ্যস্ত, তুমিও বলেছিলে এখানেই থাকবে,কিন্তু এখন চাইছো ফিরে যেতে।
– আমার দিকটা কি তোমার important মনে হচ্ছে না?
– মনে হচ্ছে, তোমার দিকটাও,আমার দিকটাও।এখানে আমি এতো ভালো একটা জব করি,সেটাও ছাড়তে হবে। ফ্যামিলি ছেড়ে যেতে হবে। রেহান, প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড, আমি এখানেই থাকতে চাই।
– হয়তো কয়েক বছর থাকবো এখানে, কিন্তু আমার পক্ষে সারাজীবন এখানে থাকা সম্ভব না।
– এটাই ফাইনাল কথা?
– হা।এবার তুমি ঠিক করো তুমি কি করবে। এমন তো নয় তুমি দেশে গেলে আর পরিবারের সাথে দেখা করতে পারবে না। যখন ইচ্ছে আসতে পারবে।
– সরি, রেহান। আমার পক্ষে দেশে থাকা সম্ভব না।
– অহহ।তাহলে তো তুমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছো।
– তুমিই এর সমাধান দিতে পারো।তুমি এখানে থেকে গেলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। প্লিজ রেহান।
– আসলেই। আমিই সমাধান দিবো।
এনগেজমেন্ট রিং খুলে আফরিনের হাতে দিয়ে বললো – এই নাও।
– তুমি এনগেজমেন্ট ভেঙে দিচ্ছো??
বড় বড় চোখ করে আফরিন চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
– ভেঙে দিচ্ছিনা।সমাধান দিচ্ছি। তোমার সিদ্ধান্তে বহাল থাকলে এই রিং নিয়ে চলে যাও।আর যদি মনে করো তুমি আমার সাথেই থাকবে যেকোনো পরিস্থিতিতে, তাহলে ফিরে এসো।আমি অপেক্ষা করবো।
– এতো বছরের রিলেশন ভেঙে দিবে?
– আমি ভাঙতে চাইছিনা, রিন। তুমি চাইছো।এখন সিদ্ধান্ত তোমার।
রিন কিছু অনেক সময় মাথা নিচু করে, দুইহাতে মুখ ঢেকে বসে থাকে। তারপর উঠে বললো –
‘ ঠিক আছে রেহান,সারাজীবন অশান্তি করার চেয়ে, সাময়িক কষ্ট সহ্য করাই আমার কাছে বেটার মনে হচ্ছে। ‘
আফরিন নিজের হাতের রিং টা খুলে রেহানের হাতে দিলো।
– ভালো থেকো রেহান।
আফরিন চলে যায়। রেহান তাকে ফেরায়নি।রেহান ভেবেছিলো কিছুদিন পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে রিন ঠিক ফিরে আসবে।
কিন্তু রেহানকে ভুল প্রমাণ করে দুইমাসের মাথায় রিন বিয়ে করে ফেলে। রেহান ভাবতেই পারেনি পাঁচ বছরের রিলেশন এভাবে শেষ করে দিলো! আর রিন সত্যিই বিয়ে করে ফেলবে এটাও চিন্তাই করেনি।অভিমানে যোগাযোগ করেনি ঠিক,কিন্তু সারাক্ষণ আফরিনের কথায় ভেবেছে।
এই ঘটনার পরে রেহান খুব আপসেট হয়ে পড়ে।
দিন দিন আরও খারাপ হতে থাকে রেহানের অবস্থা। ওর মা তখন চিন্তায় চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন,আর রেহানও বাধ্য হয়ে ফিরে আসে মায়ের জন্য। কিন্তু বিয়ে টা আর করেনি।
রেহান ভাই মেয়েটার সাথে দেখা করতে গিয়েছেন বিকালবেলা।
সন্ধ্যায় দেখি আব্বু,ফুপি,আম্মু মুখ কালো করে বসে আছেন।
– আপা,তোমার ছেলের বিয়ের আশা এই জন্মের মতো ছেড়ে দাও।আমি আর কোনো মেয়ে দেখবো না ওর জন্য।
– রেহানের কি দোষ? মেয়েই তো রাজি হয়নি।তার নাকি বিয়েতে মত নেই।
আম্মুর কথা শুনে ফুপি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন।
– মেয়ে রাজি হয়নি? মেয়ের রেহানকে পছন্দ হয়নি? এটাও আমাকে বিশ্বাস করতে বলো?
আমার ছেলেকে চিনো না , এর পিছনে সব কলকাঠি নেড়েছে সে।আমি সব বুঝতে পারছি।
যাহ বাবা! এই বিয়ে এতো কৌশলে ভেঙে দিলো!?অবশ্য তাতে আমি কিছু টা খুশি হইনি বললে মিথ্যা বলা হবে।
রাতে সবাই যার যার রুমে চলে গেছে ঘুমাতে।আরিফের রুমে যাচ্ছিলাম একটা কাজে। আরিফের রুমে আব্বু- আম্মুর রুমের সামনে দিয়ে যেতে হয়।।
হঠাৎ কানে আসলো আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে। রেহান ভাইয়ের নামও শুনতে পেলাম।
কি কথা হচ্ছে শোনার জন্য আরেকটু এগিয়ে দরজার কাছে দাঁড়ালাম। দরজা সামান্য খোলা ছিলো। কথাগুলো স্পষ্টই শুনতে পেলাম।
চলবে…..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *