প্রেমের পাঁচফোড়ন

প্রেমের পাঁচফোড়ন !! Part- 26

শান্ত তার হাতের ব্যাগটা আহানার হাতে দিয়ে চললো বাজার করতে,নিজেকে আজ সদ্য বিবাহিত মনে হচ্ছে,নতুন বউ বললো এই যে শুনুন বাজার করে আনুন
হাহাহা!!
.
আহানা ব্যাগ এনে বিছানার উপর রেখে চায়ের পানি বসালো চুলায়
চুলে খোঁপা করে এক গ্লাস পানি নিয়ে খেলো,শান্ত যে বিসকিট কিনে দিয়েছিল সেটা বাটিতে করে টেবিলে এনে রাখলো সে,দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো শান্ত এসে গেছে
.
নাও ধরো

আহানা কিছু না বলে সেগুলো নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো
শান্ত একটা বিসকিট খেতে খেতে খাটে বসে ফোন নিয়ে নওশাদকে কল করে বললো বাইক নিয়ে আসতে,রিকসা নাই এদিকে
আহানা চা নিয়ে এসেছে,শান্ত চায়ের কাপটা নিয়ে হেসে আহানার দিকে তাকিয়ে বললো তোমার সাথে চা খেতে খেতে কফির স্বাদই ভুলে গেছি আমি
ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমি একটু শুতে পারি এখানে?আমার মাথার ভেতর টনটন করতেসে
.
ঠিক আছে
.
শান্ত দুম করে বিছানায় শুয়ে পড়লো সোজা হয়ে হাত পা ছড়িয়ে
.
আহানা সব গুছিয়ে নিয়ে ভাত বসালো,আলু ভেজে খাবে সেটা দিয়ে
.
শান্ত গভীর ঘুমে
.
আহানা একবার এসে দেখে গেসে ওকে,আবার দেখতে এসে চলে যাওয়ার সময় দেখলো শান্ত ঘুমের মধ্যে মাথার চুল টানছে
আহানা একটু একটু করে কাছে গিয়ে দেখলো শান্ত এত জোরে টানছে মনে হয় মাথা ছুটিয়ে ফেললো বুঝি এখনই
আহানা হাত দিয়ে শান্তর মাথায় রাখতেই শান্ত নিজের হাতটা সরিয়ে নিলো
.
মাথাটা টিপে দাও না,খুব ব্যাথা করছে
শান্ত ঘুমের ঘোরে বললো কথাটা
আহানা হাত নিয়ে শান্তর মাথায় রেখে আস্তে আস্তে চুল টানতেসে,বেশ সুন্দর করে মাথাটা টেনে দিলো সে,কেন দিলো সে নিজেও জানে না,তবে শান্তর জন্য কেন জানি মায়া হচ্ছিলো
শান্ত আহানার হাত মুঠো করে ধরে ঘুমাচ্ছে
আহানা হাত ছুটাতে পারছে না দেখে একটু নিচু হয়ে হাত সরাতে যেতেই শান্ত চোখ জোড়া খুলে তাকালো ওর দিকে
আহানার কলিজা মনে হয় বের হয়ে আসবে,ভয়ে চোখ বড় করে চেয়ে আছে সে শান্তর দিকে
শান্ত আহানাকে এত কাছে দেখে কিছুটা চমকে পিছিয়ে গেলো
আহানাও সরে দাঁড়ালো

আহানা দরজা খুলো!!আমি নওশাদ
.
আসতেসি ভাইয়া!

আহানা গিয়ে দরজা খুললো নওশাদ পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁত কেলিয়ে উঁকি দিলো রুমের ভেতরের দিকে
.
কিরে শান্ত?এখানেই থাকবি মনে হয় আজীবন,আমি যাই তাহলে
.
আরে না থাক,আসতেসি
.
শান্ত উঠে ব্যাগ হাতে নিয়ে নওশাদের সাথে বেরিয়ে গেলো,বাইকে বসে নওশাদের পিঠে মাথা রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করছে সে,ঘুমের নেশাটা ভালো করে ধরেছে তাকে
.
আহানা ভাত খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লো
পরেরদিন ভোরবেলায় উঠে নামাজটা পড়ে নিয়ে বের হলো বাসা থেকে
মিষ্টিদের বাসায় এসে লিফটটা ভালো করে দেখে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো আহানা,শান্তি লাগতেসে এই ভেবে যে শান্ত লিফটের ভিতরে নেই
৫তলায় এসে ঢোক গিলে লিফট থেকে বের হলো সে,ওমা এখানেও নেই,নিশ্চয় মিষ্টিদের বাসার ভেতরে,হুমমমম
আহানা মিষ্টিদের বাসার দরজার সামনে এসে নক করতেই মিষ্টির আম্মু এসে দরজা খুলে আহানাকে দেখে অবাক হলেন
.
আরে আহানা?এত জলদি?
.
মানে!আপনি তো বলেছিলেন মিষ্টির পরীক্ষা,জলদি করে পড়াতে আসতে
.
কবে কখন বললাম?মিষ্টির তো পরীক্ষা আরও দেরিতে হবে
.
ওহ,(শান্ত কুত্তা আমাকে মিথ্যা কথা বলে আনাইছে!ওরে আমি ছাড়মু না!)
.
সমস্যা নাই আহানা আসো,এসেছো যখন মিষ্টিকে পড়িয়ে যাও,ভালো হয়েছে আজ এসেছো
.
আহানা মনে মনে শান্তকে বকতে বকতে ভিতরে গেলো
পড়ানো শেষ করে বের হয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চলে যেতে নিতেই শান্ত সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো,হাতে তার ব্রাশ,তোয়ালে আর চুলগুলো ভিজা,সেটা থেকে পানি গড়িয়ে পুরো মুখ ভিজিয়ে দিয়েছে
.
আহানা ব্রু কুঁচকে চেয়ে থেকে বললো কি সমস্যা??
.
সরি সরি,আমি আজ তোমাকে লিফট থেকে জ্বালাতে পারিনি,ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছিলো
.
তোহহহ??
.
তোহহ কি আর,চলো তোমাকে গ্র্যান্ড ফ্লোর পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি
.
নো থ্যাংকস!এমনিতেও আপনার সাথে আমার আর কোনো কথা নেই,আপনি আমাকে মিথ্যা বলে আনাইছেন,মিষ্টির মা তো কোনো কলই করে নাই,হুদাই আমি এত তাড়াতাড়ি মোহনগঞ্জ থেকে ফিরে আসছি
.
হেহেহে!!মিষ্টির আম্মু গাঁজা খাইসে,সত্যি বলতেসি উনি আমাকে কল করে বলসে তোমাকে আসতে বলতে
.
আর একটা মিথ্যা কথা বললে চুল ছিঁড়ে ফেলবো আপনার!বেয়াদব ছেলে
.
আহানা হনহনিয়ে চলে গেলো
.
বাপরে বাপ আজ দেখি উনার মেজাজ গরম হয়ে আছে অনেক😲
.
আহানা বাসায় ফিরে শান্তকে বকতে বকতে সব কাজ করতেসে

কিরে ভাই এরকম টেনসড হয়ে আছিস কেন কি হয়েছে তোর?
.
নাহ কিছু না,আচ্ছা একটা কথা বল মেয়েরা রাগ করলে কি দিয়ে রাগ ভাঙ্গাতে হয়?
.
এলিনা রাগ করসে নাকি?
.
উফ নওশাদ! বল না কি করে ভাঙ্গায়?
.
রুপা রাগ করলে ওকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হয়,দামি দামি খাবার খাওয়াতে হয়,এলিনাও সেমই হবে
.
ওহহহ (এসব তো আহানা একদম পছন্দ করবে না,ওর পছন্দই আনকমন,উফ নওশাদরে কি করে বলবো যে এলিনা না আহানা আমার উপর রাগ করেছে!)
.
এলিনাকে নিয়ে আজ ঘুরতে যাবি নাকি?
.
নাহ,চল নাস্তা করি,নাহলে দেরি হয়ে যাবে ভার্সিটিতে যেতে যেতে

আহানা ভার্সিটিতে এসে মুখ গোমড়া করে বসে আছে
হুদাই আনাইসে আমাকে,আশ্রমে থাকলে একটু রেস্ট নিতে পারতাম,সবার সাথে আরেকটু সময় কাটাতে পারতাম,বেয়াদবটা মিথ্যা বলে আমাকে নিয়ে আনলো,অসভ্য ছেলে একটা
.
কিরে চোখ বড় বড় করে কি এত ভাবস?
.
কিছু না,তোর কি খবর?
.
ভালো না,নওশাদকে কোথাও দেখেছিস?আজ মনে হয় আসে নাই,ফোন ধরতেসে না আমার
তুই একটু শান্ত ভাইয়াকে বলবি ওকে বলতে আমার ফোন ধরতে,আমি কাল ওর সাথে ঝগড়া করেছিলাম,এখন নিজেই অনুতপ্ত হয়ে ওকে কল করে যাচ্ছি,আর ও ধরতেছেই না

পারবো না,তুই গিয়ে বল যা,ঐ বেয়াদবটার সাথে আমি আর কোনো কথা বলবো না👿
কথাটা বলে আহানা ক্যানটিনের দিকে চলে গেলো
.
এদের আবার কি হলো??সারাদিন ঝগড়া কেমনে করে এরা,আমি ২মাস পর একবার ঝগড়া করি নওশাদের সাথে তাও আমার কলিজা ফেটে যায় আর এরা কিনা দিনে ৩২বার ঝগড়া করে,আর আমি কিনা ভাবলাম শান্ত ভাই আহানাকে লাইক করে,জীবনেও না,শান্ত ভাই আর আহানা কেরোসিন আর আগুনের মত,একসাথ হলেই ঠুস করে বোমা ফেটে যায়,এদের মিল ইমপসিবল
.
আহানা পানির বোতল নিয়ে ফিল্টার থেকে পানি ভর্তি করে পিছন ফিরতেই দেখলো শান্ত অসহায়ের মত চেয়ে আছে ওর দিকে
.
কি?আমার হাতে আরেকটা চড় খেতে না চাইলে পথ থেকে সরুন
.
শান্ত জ্যাকেট ঠিক করে এদিক ওদিক তাকালো,সবাই না হলেও অনেকজনেই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে
শান্ত মুচকি হেসে আহানার দিকে এগিয়ে আসলো
.
হ্যাঁ মারো আমাকে,দেখি তোমার কত সাহস,এতে করে তোমার রাগ গেলে তো ভালই
.
আহানা রেগে গিয়ে হাত উঠিয়ে শান্তকে এক ধাক্কা মেরে দিলো
.
শান্ত একটু দূরে পিছিয়ে গেলো ধাক্কা খেয়ে
.
চড় মারবে না?
.
গো টু হেল!!
.
আহানা সেখান থেকে চলে গেলো,গিয়ে একদম এলিনার সামনে গিয়ে থামলো,এলিনার চোখে মুখে রাগ দেখে বোঝাই যাচ্ছে সে কি জন্য রেগে আছে,শান্তকে ধাক্কা দেওয়াটা সে মোটেও ভালো চোখে দেখেনি
.
কিছু বলবেন এলিনা আপু?
.
তোমার সাহস হয় কি করে আমার শান্তকে ভরা ক্যামপাসের সামনে ধাক্কা দেওয়ার,টাচ করার!!
.
আপনি না বুঝে কথা বলবেন না,উনি আমাকে!
.
চুপ!
এলিনা এগিয়ে এসে আহানার হাত টেনে নিয়ে গেলো ভার্সিটির বাইরের দিকে
.
ছাড়ুন,এলিনা আপু আপনি এমন করতেসেন কেন?
.
আমাদের ভার্সিটির প্রিন্সিপাল আর স্যার ম্যাডাম কড়া নাহলে তোমাকে ওখানেই ১২টা বাজাইতাম,তাদের সম্মান করি বলে তোমাকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছি
দূর থেকে শান্ত আসতেসে,সে দেখেছে এলিনা আহানার হাত ধরে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে
.
এলিনা আহানাকে এক ধাক্কা দিয়ে রোডের উপর ফেলে দিলো
.
কি হলো?কেমন লাগতেসে তোমার??ভরা ক্যামপাসের সামনে আমার শান্তকে ধাক্কা দিয়েছো আর আমি মানুষ ভরা রোডে তোমাকে ফালাইসি,সমান সমান
.
আহানা কুনুইতে ব্যাথা পেয়েছে,চুপ করে চেয়ে আছে এলিনার দিকে
শান্ত এসে দেখলো আহানা রোডে বসে এলিনা আর ওর দিকে চেয়ে আছে
.
শান্ত?তুমি এই ছেঁসড়া মেয়েটার সাথে কথা বলো কেন?আমি বুঝি না,দেখলে তো তোমাকে আবারও অপমান করলো,একবার চড়!একবার ধাক্কা,আর কিছু বাকি রেখেছে?
আহানা? তুমি ভুলে যাও কেন শান্ত তোমাকে রাঙামাটিতে পানি থেকে তুলে বাঁচিয়েছিলো!
শান্ত চলো এখান থেকে,আর কখনও ওর সাথে কথা বলবা না

শান্ত চুপ করে আহানার দিকে চেয়ে আছে
.
আহানা উঠে দাঁড়িয়ে চলে গেলো শান্তর পাশ দিয়ে
.
এলিনা?তুমি এই মেয়েটার পিছনে এত লাগো কেন?কি দরকার ছিল এত সিনক্রিয়েট করার??কাঁটা দিয়ে সবসময় কাঁটা তুলতে হয় না,আর কখনও এমন কাজ করবা না তুমি,আমি বলি নাই তোমাকে আমার হয়ে তদারকি করো,একবার এক ঝামেলা করো তুমি
.
শান্ত তুমি আমাকে লাভ করে না?
.
না করি না,শুনছো?আর কতবার বললে বিশ্বাস করবা?
কথা শেষ করে শান্ত চলে আসলো সেখান থেকে
তারপর ভার্সিটিতে ঢুকে ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসের দিকে গেলো,আহানাকে কোথাও দেখছে না সে
রুপা এসে বললো আহানা চলে গেছে
.
আহানা চোখ মুছতে মুছতে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচ দিয়ে চলে যাচ্ছে টিউশনিতে
.
আহানা দাঁড়াও প্লিস আহানা!
শান্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে এসে আহানার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো
.
আহানা মাফ করে দাও আমাকে
.
কিসের মাফ?আপনি এবার আপনার জিএফকেও লাগাইসেন আমাকে কথা শুনানোর জন্য?
আমার থেকে দূরে থাকুন প্লিস!তাহলেই আপনার জিএফ আর আমাকে কথা শুনানোর কোনো পথ পাবে না,এসব সহ্য করতে করতে আমি তিক্ত,আর না,আমার সাথে আর কখনও কথা বলবেন না
আহানা চলে গেলো কথাগুলো বলে
শান্ত আর কিছু বলতে পারলো না
পরেরদিন ভোরে আহানা মিষ্টিদের বাসায় ঢুকে লিফটে উঠার সময় দেখলো শান্ত সেখানে দাঁড়িয়ে আছে
আহানা সেখান থেকে চলে গিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো
.
আহানা প্লিস আমার কথা শুনো,আই এম সরি আহানা,এলিনার হয়ে আমি মাফ চাচ্ছি
.
আহানা থেমে গিয়ে বললো এলিনা আপুর দোষ নেই,না আপনি আমার সামনে আসতেন না এত কিছু হতো,এলিনা আপু তার জায়গায় ঠিক আছে,কোনো জিএফই চাইবে না তার বিএফ আরেকজনের সামনে অপমানিত হোক,সো আপনি আর আমার আাশেপাশে কোথাও আসবেন না,নাহলে অপমান করতে বাধ্য হবো
আহানা আরেক সিঁড়িতে পা বাড়াতেই শান্ত টান দিয়ে নামিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো ওকে
.
হ্যাঁ করো অপমান,আমি দেখি কতটা পারো
.
আমি চিৎকার করবো,সামনে থেকে সরুন বলতেসি,আপনি বেশি বেশি করতেসেন আজকাল!
.
শান্ত আরেকটু এগিয়ে গিয়ে হাত আহানার পাশে দেয়ালের উপর রাখলো
.
এলিনা আপু!!
.
কই?কই?
.
আহানা এক দৌড় দিলো
.
আহানা?এটা ঠিক করলে না তুমি,দাঁড়াও বলতেসি
.
শান্ত দৌড়াচ্ছে আর আহানাও,আহানা মিষ্টিদের বাসায় ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো
.
কি হলো মিস??বাইরে থেকে কে আসতেসে?ভূত আসতেসে?মাম্মামকে ডাকি?

নাহ,বসো পড়াবো তোমাকে
.
শান্ত ওর বাসার দরজায় হেলান দিয়ে সিগারেট ধরিয়ে খাচ্ছে আর আহানার অপেক্ষা করছে
আহানা পড়ানো শেষে বের হতেই দেখলো শান্ত বাইরের দিকে চেয়ে সিগারেট খাচ্ছে,ওকে এখনও দেখেনি
আহানা এই সুযোগে পা টিপে টিপে বের হয়ে এক দৌড় মারলো
.
আহানা!!
শান্ত সিগারেট ফেলে দৌড়ে গেলো আহানাকে ধরতে
.
আহানা টাইলসের উপর দিয়ে দৌড়াতে গিয়ে স্লিপ খেয়ে দুম করে পড়ে গেলো নিচে
.
হেহে!!আরও পালাও,আমার সাথে দৌড়ে পারবা না কোনোদিন বুঝলা??
.
আপনি!!
.
নাও উঠো,আমার হাত ধরো
.
আহানা শান্তর হাত না ধরেই উঠে গেলো,তারপর আবার হাঁটা ধরতেই শান্ত ওর হাত ধরে টেনে ওর দিকে ফিরালো
সে আহানাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই উপরের তলা থেকে রামিমা আন্টির ফ্ল্যাটের বুয়া এসে পড়লো
বুয়াকে দেখে শান্ত আহানার হাত ছেড়ে দিলো সাথে সাথে
আহানা সুযোগ বুঝে বুয়ার সাথে লিফটে ঢুকে গেছে ততক্ষণে
.
সমস্যা না,ভার্সিটিতে তো আসবা,তখন দেখা যাবে
.
আহানা বাসায় ফিরে ঘর পরিষ্কার করে,ভাত রেঁধে খাওয়া শেষ করে নিলো,তারপর রেডি হয়ে ভার্সিটির জন্য রওনা হলো
আজ এত কাঠ ফাটা রোদ বলে বুঝানো যাবে না,মাথা মনে হয় গলেই যাবে,গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখলো শান্ত রিয়াজ আর সূর্যকে নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে বটতলায়
আহানা মুখ ফিরিয়ে হেঁটে চলে গেলো
.
শান্ত ভাই তোমার শত্রু যাচ্ছে তোমার সামনে দিয়া
.
রিয়াজের কথা শুনে শান্ত আহানার দিকে তাকালো,আহানা আরেকদিকে মুখ নিয়ে হেঁটে ক্লাসের ভেতর ঢুকে গেলো
.
দেখলে তো?এই মেয়ের এত ভাব!!শান্ত ভাই তুমি শুধু অর্ডার করো,ভালো করে টাইট দিয়ে দিব ওকে
.
কোনো দরকার নেই,তোরা তোদের কাজ কর
.
আহানা জানালার পাশে বসে দূরের কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে চেয়ে আছে
মানুষ বড়ই অদ্ভুত,সে কি চায় সে নিজেও জানে না,যেমন আমি
এখন কোন পাল্লায় এসে পড়েছি সেটা আমি জানি না,বলতে পারি না,দিন চলছে তো চলছে,এই মাসের টাকা তো তারেক আঙ্কেল নিবে না,শান্ত দিয়ে দিয়েছে,আমি টিউশনির টাকা পেয়ে উনাকে সেটা ফেরত দিয়ে দিব,কারোর ধার ধারি না আমি
একটা জিনিস বুঝি না!! শান্তর জিএফ আছে,তার সাথে চুইংগামের মত লেগে থাকে সারাদিন তাহলে আমাকে এত ডিস্টার্ব করে কি পায় কে জানে!
চড় একটা দিসিলাম সেটার ঝাঁঝ মনে হয় আদৌ যায়নি,নাহলে একটা চড় মানুষ এতদিন মনে রাখে??
সেদিন কার মুখ দেখে উঠেছিলাম কে জানে,শয়তানটা আজ আবার কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে এসে আমাকে ডিস্টার্ব করবে কি একটা জ্বালাতন,আমার যদি কোনো বড় ভাই থাকতো আচ্ছা করে পিটুনি দিতাম
এলিনাকে নিয়ে নাই বলি,এলিনার সাথে আমার কোনো শত্রুতামি নেই,আপুটা না বুঝেই আমাকে কষ্ট দেয়,সে তো জানে না তার বিএফের চরিত্র কেমন,জানলে আমি তো এক চড় মেরেছিলাম উনি হলে ২০টাই মারতেন
আজ বেশি বাড়াবাড়ি করলে আরেকটা চড় মেরে দিবো শয়তানটার গালে,অতিরিক্ত কোনো কিছুই আমার পছন্দ নাহ
.
এই আহানা!
.
হুম বল

তুই সারাদিন কি এত ভাবিস?
.
বাদ দে আমার কথা,তোর আর নওশাদ ভাইয়ার ঝগড়া মিটমাট হয়েছে তো?
.
আরে সেটাই তো তোর সাথে ডিসকাস করতে এলাম,আমি নওশাদের সাথে একটা জায়গায় যাব
.
তো যা
.
না সেটা না,কথা হলো গিয়ে রিকসায় আমাকে আর নওশাদকে একসাথে কেউ দেখে ফেললে মহা বিপদ,বাবা দেখে ফেললে তো আমি শেষ
তুই আমার সাথে চল না প্লিস,নওশাদ বাইক নিয়ে আসবে
.
আমি গিয়ে কি করবো,তোদের মাঝে গিয়ে কাবাবে হাড্ডি হবো কেন?
.
চল না প্লিস প্লিস
.
ঐ বেয়াদবটা যাবে না তো?
.
নাহ শান্ত ভাই কোথায় যেন গেছে একটা কাজে
.
তাহলে চল
আহানা খুশি খুশি রুপার সাথে সেই জায়গায় গেলো
বেশ ঠাণ্ডা পরিবেশ,দুপাশে ঘাস,বন আর মাঝখান দিয়ে চিকন রাস্তা,এখানে আগে কোনোদিন আসেনি আহানা,তাই হেঁটে হেঁটে সবটা দেখছে সে
দূরে একটা কুটিরে রুপা আর নওশাদ একা টাইম স্পেন্ড করছে
আহানা এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে শান্তর সামনে গিয়ে থেমে গেলো
এই বেয়াদবটা এখানেও!রুপা মিথ্যা বললো আমাকে!!
.
হাই!!
.
বাই

আহানা হাঁটা ধরলো,যেই ভাবা সেই কাজ,শান্ত ও পাশে পাশে আসতেসে
আহানা বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
আপনার কি সমস্যা??এলিনাকে নিয়ে আসতে পারতেন,একা এসেছেন কেন??আমাকে এত ডিস্টার্ব করেন কেন বলেন তো?
.
সবসময় এলিনা এলিনা করো কেন?এলিনা আমার কিছু না,অনলি ফ্রেন্ড,কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও
.
যাই হোক,ফ্রেন্ড তো!ও যদি আবার আমার সাথে আপনাকে দেখে খুন করবে হয় আমাকে নয় আপনাকে,সো দূরে থাকুন
.
আমি কোথায় যাব কি যাব না সেটা আমার ব্যাপার,তোমার পাশ দিয়ে হাঁটবো কি হাঁটবো না সেটাও আমার ব্যাপার,আর তুমি আমার দিকে না তাকালে তুমি জানো কি করে আমি তোমার পাশ দিয়ে হাঁটছি?
.
আজব তো!!সত্যি আপনার মত ভেজাইল্লা ছেলে আমি আর ২টো দেখিনি বিশ্বাস করেন!!
চলবে♥