পূর্ব রোদ !! Part- 17
“হ্যালো,মেঘ?”
“হুম।আরে বাহ!আজ তুমি নিজে ফোন করলে?সারপ্রাইজের জন্য মন কী মানছে না?”
“আরে না,সেটা না।আসলে আমি একটু অসুস্থ তাই আজ আসতে পারবো না।”
“অসুস্থ?কী হয়েছে তোমার?”
“জ্বর আর শরীরটা একটু দূর্বল লাগছে।”
“ওহ,মেডিসিন নাও।সুস্থ হও,তারপর এসো।”
“আচ্ছা।”
মেঘের সাথে কথা শেষ করে রোদ নীলকন্ঠ ফুলের দিকে তাকিয়ে আছে।কতো সুন্দর এই ফুল!কিন্তু এর কোনো সুবাশ নেই।কিন্তু তবুও সবাই এর সৌন্দর্যে মরিয়া।কিছুক্ষণ আগে রাফিয়া আর তিহান চলে গেছে।রুমে বসে নাবিলা’র সাথে কথা বলছিলো তখন মেঘ’কে কল করার জন্য বারান্দায় আসে।পূর্ব’কে কী একটা কাজে নাবিলা বাইরে পাঠিয়েছে।রোদ রুমের দিকে যাবে তখন নাবিলা বারান্দায় এসে বললো,
“কথা বলা শেষ?”
“হুম।আসলে মেঘ’কে একটু ইনফর্ম করতে হতো।”
“আচ্ছা।রোদ তুমি কী কাল রাতের ব্যাপারে পূর্বের উপর রেগে আছো?”
“বুঝলাম না।রেগে থাকবো কেনো?”
“রোদ তুমি আমাকে নিজের শুভাকাঙ্খী ভাবতে পারো।তোমার আর পূর্বের মাঝে তৃতীয় ব্যাক্তি আমি।”
নাবিলা’র কথায় রোদ কিছু বললো না।তার কেনো যেনো এখন কাউকে সহ্য হচ্ছে না।ইচ্ছে করছে সব কিছু ছেড়ে বনবাসে চলে যেতে।রোদের কোনো সাড়া না পেয়ে নাবিলা বললো,
“কাল পূর্ব অনেক টেনশেনে ছিলো আর তোমার অবস্থা দেখে তো দিশেহারা।ওর মাথায় তখন একটা জিনিসই ঘুরছিলো তা হলো তোমাকে ভালো করা।তুমি অনন্ত পূর্ব’কে ভূল বুঝোনা রোদ।”
“মরে গেলেও অতোটা কষ্ট হতো না আপু।যতটা এখন হচ্ছে।আমার দূর্বলতার সু্যোগ নিয়ে…..এই বিষয়ে আপু আমি আর কিছু বলতে চাই না।”
রোদের কথা শুনে নাবিলা কিছু বললো না।কারণ তার বিশ্বাস রোদ নিজ থেকেই একদিন সব বুঝতে পারবে।সে বুঝতে পারবে তার মনে পূর্বের জন্য ভালোবাসা নামক চারা রুপন হয়েছে।নাবিলা কিছু না বলে রুম ত্যাগ করলো।
নীলকন্ঠ ফুলের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে রোদ।ভিতরে ভিতরে শরীর কাঁপছে।হয়তো আবারো জ্বর আসবে।জ্বর আসা’টা রোদ নিতে পারে না।সাবধানে থাকার পরও রোদের কেনো যে জ্বর আসে?
“মেঘ তাহলে কী আমি তাকে দেখবো না?”
“মা ও বললো অসুস্থ।দেখি না কাল আসে কি’না।”
“কিন্তু বাবা আমার যে থর সইছে না।তুই মেয়েটার এতো প্রশংসা করেছিস..”
“প্রশংসা না মা।যেটা সত্য সেটা।বাবা কোথায়?”
“অফিস গেলো।”
“আচ্ছা।আমি আসি তাহলে।তুমি দুপুরের খাবার খেয়ে নিবে।”
“হ্যা রে বাবা।”
মিসেস নিনা হাসান তার ছেলে মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।সেদিনের দেখা সাত বছরের ছেলেটা আজ কতো বড় হয়ে গেলো।সে নাকি আবার প্রেমেও পড়েছে।নিনা হাসান হেসে উঠলেন।তার ছেলে কোনো মেয়ের প্রেমে পরেছে মানে মেয়েটা অনেক ভাগ্যবতী।নিনা হাসান নিজের রুমে প্রবেশ করে ছবির এলবাম’টা খুললেন।অনেক পুরাতন এলবাম।কিন্তু এই এলবাম তার প্রাণ ভোমরা!নিনা হাসান এলবাম থেকে একটা ছোট মেয়ের ছবি বের করলো।পরণে তার ছোট্ট লাল সুইটার।নিনা হাসানের চোখ ভিজে এলো।কতো বড় হয়েছে এখন মেয়েটা?কোথায় আছে এখন?নিনা হাসানের মনে এসব প্রশ্ন প্রতিদিনই জাগে।কিন্তু উনার করার কিছু নেই।
।
।
“রোদেলা,ঘুম থেকে উঠো।”
“উহু।”
“উঠো।”
“হু”
ঘুম জড়ানো কন্ঠে রোদ পূর্বের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।তা দেখে পূর্ব হালকা হাসলো।গত এক ঘন্টা ধরে রোদ ঘুমিয়ে আছে।এতো শান্তির ঘুম পূর্বের ভাঙ্গানোর ইচ্ছে ছিলো না কিন্তু মেডিসিন খেতে হবে ভেবে ডাকতে এলো।কিন্তু এতো ডাকার পরও রোদ দিব্যি ঘুমাচ্ছে।হঠাৎ রোদের ঘুম ভেঙ্গে গেলে এক ঝটকায় পূর্বের হাত দূরে সরিয়ে দিলো।রোদের ঘুম ভাঙ্গছে দেখে পূর্ব বললো,
“দুপুরে মেডিসিন খেতে হবে।আসো খেয়ে নিবে।”
“আমি কারো রান্না করা খাবার খাবো না।”
“কারো?”
পূর্বের কথায় জবাব না দিয়ে রোদ বিছানা থেকে নামতে গেলে মাথায় চক্কর এলো।যার ফলে রোদ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।পূর্ব অস্থির হয়ে তার পাশে এসে বললো,
“রোদ ঠিক আছো?কী হয়েছে?মাথা ব্যাথা করছে?”
রোদ পূর্বের হাত সরিয়ে দিয়ে প্রচন্ড তেজ দিয়ে বললো,
“ডোন্ট টাচ মি!যাস্ট লিভ মি এ্যালং।”
“রোদ তোমার মাথা ব্যাথা করছে।তুমি রেডি হয়ে নাও।ডক্টরের কাছে যাবো।”
“নো নিড।পূর্ব প্লিজ আমাকে একা থাকতে দাও।ভালো লাগছে না আমার এসব।”
রোদের করুণ কথা শুনে পূর্ব দাঁড়িয়ে গেলো।সে কোনোমতে চাই না রোদের কষ্ট হোক।তাই কথা মতো রোদের সামনে থেকে সরে গেলো।কিন্তু দরজার পাশে রোদের আড়ালো দাঁড়িয়ে রইলো।পেছন থেকে সে বুঝলো রোদ কাঁদছে।পূর্বের মনটা খা খা করলো।রোদের চোখের অশ্রু যে তার সহ্য হয় না!
রোদ বিছানায় বসে কাঁদতে লাগলো।তার জীবনটা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে?পূর্ব কী সত্যি তার ছায়া হিসাবে পাশে থাকতে চাই?হঠাৎ রোদের ফোন বেজে উঠলো।রোদ চোখের জল মুছে মোবাইল নিয়ে দেখলো রাফিয়া কল করেছে।
“হ্যালো,রোদ?শরীর কেমন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
“কিছু হয়েছে?গলা ভাঙ্গা,কান্না করছিলি?”
“নাহ।বল কোথায় তুই?”
“এই তো তিহানের সাথে ঘুরতে এলাম।”
“কোথায়?”
“ওদের বাড়ি’র পাশেই।”
“ওহ।”
“রোদ জানিস তিহান একটু আগে আমাকে প্রপোজ করেছে।আহ!ফাইনালি।কতো ভালোবাসে ও আমায় আর এতো দিন বলে নিই।পাগল একটা!”
কথা শেষ করে রাফিয়া হুহু করে হেসে উঠলো।রোদের মনে প্রশ্ন জাগলো ভালোবাসা কী?গার্ল’স স্কুল,কলেজে পড়ালেখা করায় রোদের তেমন কোনো ছেলের সাথে পরিচয় হয়নি।ছেলে বলতে তার আশেপাশে শুধু পূর্ব ছিলো।হঠাৎ তার মনে এক অদ্ভুত প্রশ্ন জাগলো।সে কী কাউকে ভালোবাসে?অদ্ভুতভাবে তখন তার সামনে পূর্বের চেহেরা ভেসে উঠলো।তখন রোদের মনে একই প্রশ্ন জাগলো। পূর্ব কী তাকে ভালোবাসে?
।
।
“কোথায় যাচ্ছো রোদেলা?”
“আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নই।”
“আপনি?”
রোদের কথা শুনে পূর্ব ভ্যাচকা খেলো।সন্ধ্যা থেকেই রোদ আপনি-আপনি করছে।যেটা পূর্বের একদম ভালো লাগছে না।আর এখন ঘুমানো জন্য পাশের রুমে যাচ্ছে।পূর্ব বিড়বিড় করে বললো,
“রুমগুলা অপরিষ্কারেই ভালো ছিলো।জাদুমন্ত্রী!”
“কী বললেন?”
“বলছিলাম যে রাতে একা থাকতে ভয় করবে না?”
“ভয় কেনো করবো?যাস্ট তিন মাস একা থাকিনি।তারমানে এই না আমার অভ্যস পরিবর্তন হবে।”
“কিন্তু আমার অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে গেছে।”
পূর্বের কথা শুনার আগেই রোদ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।পূর্ব পেছন পেছন গিয়েও কোনো লাভ হলো না।ঐ রুমে ঢুকার আগেই রোদ দরজা বন্ধ করে দিলো।পূর্বও একরকম জেদ করে দরজা এপাশে দাঁড়িয়ে রইলো।
সারা রাত রোদ এপাশ-ওপাশ করতে করতে সকাল হয়ে গেলো।রোদ বিছানা থেকে নেমে হাই তুলে দরজা খুলতেই তার পায়ে কিছু একটা লাগলো।রোদের দৃষ্টি নিচে যেতে দেখলো পূর্ব চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে।রোদ অবাক হয়ে পূর্বের দিকে তাকিয়ে আছে।সারারাত হয়তো এখানেই বসে ছিলো।রোদ পূর্বকে এড়িয়ে দু’কদম এগিয়ে আবার ফিরে এলো কেনো যেনো পূর্ব’কে এভাবে রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না।আবার ঘুম থেকে ডাকতেও ইচ্ছে করছে না।রোদ ইচ্ছে মতো পূর্বকে বকতে লাগলো।কী দরকার ছিলে রাতে দরজা পাশে ঘুমানো?কী প্রমাণ করতে চাইছে পূর্ব?হঠাৎ পূর্ব নড়েচড়ে উঠলো।রোদ নিষ্পলক ভাবে পূর্বের দিকে তাকিয়ে ছিলো তখনি পূর্ব চোখ খুলে।চোখ খুলে পূর্ব তাড়াতাড়ি উঠে বসলো।রোদ পূর্বের সাথে কথা না বলে চুপচাপ সে স্থান ত্যাগ করলো।
।
।
তোরা মেয়েরা সাজতে কতো সময় নিস ইয়ার।”
“সাজতে সময় নিই বলেই তো তোদের মতো জুতা’র সাথে মুখ মিলিয়ে চলে আসি না।”
“ইন্না-লিল্লাহ!তুই ইনডাইরেক্টলি আমার চেহেরা জুতা’র মতো বলতেছিস?”
“সরি রে!তোর বুঝতে ভূল হয়েছে।আমি ডাইরেক্টলি বলতেছিলাম।”
প্রথমে সরি শুনে তিহান বেলুনের মতো ফুলে উঠলেও পরের কথা শুনে ফুটো বেলুনের মতো চেপে গেলো।তার চেহেরা দেখে নাবিলা ফিক করে হেসে দিলো।দূর থেকে পূর্বকে আসতে দেখে তিহান আর নাবিলা এগিয়ে গেলো।নাবিলা তাড়াহুড়ো করে জিজ্ঞেস করলো,
“কি রে!তোর আর রোদের মধ্যে সব ঠিক হয়েছে?”
“নাহ।”
“চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“তাই যেনো হয়।”
পূর্ব দু’হাতে দিয়ে নিজের চেহেরা মুছে নিলো।নাবিলা পূর্বের অবস্থা দেখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।কারণ নাবিলা জানে ভালোবাসায় কষ্ট কতো রকম পেতে হয়।হয়তো পূর্ব জানে না সে রোদ’কে ভালোবাসে কিন্তু অনুভব তো করে।হঠাৎ পূর্ব বললো,
“আজকে মেঘ রোদের জন্য মে বি সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছে।”
“হুয়াট?”
“ইন্না-লিল্লাহ।”
“রোদের কে হয় মেঘ?আর কী সারপ্রাইজ প্ল্যান করছে?” (নাবিলা)
“চল আমরা তিনজন গিয়ে দেখবো সেটা।”
“ক্লাস না করে?” (তিহান)
“কিছু হবে না।চল!”
রোদ সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কম্পিউটারে কাজ করছিলো।অনেকক্ষণ আগে থেকে মেঘ রোদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।মেঘ চাইলে রোদকে ডাকতে কিন্তু রোদের এমন মনোযোগি চেহেরাই মেঘের ভালো লাগছে।প্রায় আধ ঘন্টা বাদে রোদ নড়েচড়ে পেছনে থাকালো।মেঘ’কে এভাবে এক ধ্যানে তাকাতে দেখে রোদ ফিক করে হেসে দিলো।ঝুনঝুনির মতো হাসির শব্দে মেঘের ধ্যান ভাঙলো।
“হাই!”
“হাহাহাহা।তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক আগে থেকে দাড়িয়ে ছিলে।”
“হুম।তা একটু ছিলাম।”
“যাহ।আমি তো আন্দাজে বললাম।আমাকে ডাকলেই পারতে।”
“তুমি এতো মনোযোগ দিয়ে কাজ করছিলে তাই আর ডাকিনি।”
“ওহ।বাই দ্যা ওয়ে তুমি কী সারপ্রাইজ বলেছিলে?”
“বাইরে আসো এখানে এতো মানুষ!”
“ওকে।চলো।”
মেঘ আর রোদ বাইরে আসতে তাদের দেখা পেলো পূর্ব-নাবিলা-তিহান।আড়াল থেকে তারা ওরা রোদ-মেঘ’কে দেখছে।ওরা দুজন হেসে হেসে কথা বলছে যা দেখে পূর্বের দৃষ্টি বলছে সে মেঘ’কে মারবে।পূর্বের অবস্থা দেখে নাবিলা শান্তনা দিয়ে বললো,
“কন্ট্রোল পূর্ব!এখন রেগে গেলে সব কিছু গোলমাল হয়ে যাবে।”
“ইন্না-লিল্লাহ!দোস্ত ঐ মহিলা কে আবার?”
তিহানের কথা শুনে পূর্ব-নাবিলা সামনে তাকালো।একজন মহিলা তাদের দিকে পিট করে দাঁড়িয়ে আছে।তাদের তিনজনের মনে প্রশ্ন জাগলো মহিলাটি কে?
[চলবে]