00

পরিণতি !! Part- 10

আপুর ফোন ধরতেই,বলতে লাগলো
– কি রে,কোথায় তুই?সারাদিন কতবার ফোন দিয়েছি হিসেব আছে! বাড়ী থেকে কোথায় চলে গেছিস?সারাদিন মোবাইল টাও বন্ধ করে রেখেছিস।চিন্তায় আমরা সবাই অস্থির হয়ে পড়েছি।সারাটা দিন আমার কিভাবে কেটেছে জানিস?কেনো এমন পাগলামি করিস বলতো!তুই কোথায় এখন?
– ঢাকায়।
– ঢাকায় কেনো?
– বাসায় চলে এসেছি।
– কিন্তূ রিহান বাড়ীতে!
– হুম,মায়ের কাছে শুনলাম।
– তুই যাওয়ার আগে রিহান কে ফোন করে যাসনি কেনো?
– আমি ভেবেছিললাম ও ঢাকাতেই।তাই ফোন করিনি।
– রিহান আজকে সকালে আমার কাছে এসেছিলো,এসেই কি কান্না।জীবনের প্রথম কোনো ছেলে মানুষ কে এভাবে কাঁদতে দেখলাম।তুই রিহানের সাথে এমনটা না করলেও পারতিস।ছেলেটা তোকে অনেক ভালোবাসে,আর তুই!
– আমি চুপ।

– ফারিয়া স্বামীর এমন ভালোবাসা পাওয়া যে কতোটা সৌভাগ্যের জানিস?সবার কপালেই এমন ভালোবাসা থাকেনা রে,তোর কপাল কতো ভালো দেখ রিহানের মতো একজন স্বামী পেয়েছিস।
– ও যদি আমাকে এতোই ভালোবাসে,তাহলে আজকে বাড়ীতে কেনো গিয়েছে,যেহেতু আজকে আমাদের ডিভোর্স হওয়ার কথা।
– সব কিছু মিটমাট করে,তোকে নিয়ে যেতে এসেছিলো।
– বাবা কি আমাকে রিহানের সাথে যেতে দিতো?
– সেটা জানিনা,তবে আমরা সবাই বুঝাতাম বাবাকে।বাবা কে ভালো করে বুঝালে অবশ্যই বুঝতো।
– বাবা কে না হয় বুঝাতে কিন্তূ রিহানের বাবা কে বুঝাতে পারতে কি?ওইদিন যখন ওনারা আমাকে নিতে বাড়ীতে গিয়েছিলো,বাবা একদম কড়াকড়ি ভাবে বলে দিয়েছে, আমাকে ওনাদের বাড়ীতে আর দিবেন না।আমার শ্বশুর, বাবার উপর যথেষ্ট রেগে আছেন,আর আমার মনে হয়না এখন তাদের বুঝালেই তারা বুঝ মেনে নিবেন।তাদের ও তো আত্মসম্মান বলতে কিছু আছে তাইনা?
– তারপর ও বুঝিয়ে দেখতে পারতাম।
– থাক তাদের কাউকেই আর বুঝাতে হবেনা।মানুষ ফ্যামিলির কাছে সাহায্য পাওয়ার আশায় যায়, কিন্তূ আমাদের ফ্যামিলি আমাদের সাহায্য না করে উল্টা ঝামেলা আরো বাড়িয়ে দিলেন।
– তবুও তুই আজকে যদি এখানে থাকতিস,একটা সমাধান হয়ে যেতো। ফ্যামিলি যা খুশি তাই করুক না কেনো, তোরা স্বামী স্ত্রী না চাইলে,কখনোই ডিভোর্স হতো না।
– আপু তুমি যতোটা সহজ ভাবে
বলছো,আমি ওইখানে থাকলে সব কিছু এতোটাও সহজ হতোনা।বাবা যেভাবে রিহানের উপর রেগে আছেন,রিহানের বাবা ও যেভাবে আমাদের উপর রেগে আছেন,অবশেষে ডিভোর্স করিয়েই ছাড়তেন। আমরা না চাইলেও,পরিবারের কথা রাখতে হয়তো করেও ফেলতাম।
– আপু একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলতে লাগলেন, তুই ঢাকা গেলি আর কাউকে না বললেও,আমাকে তো একবার ফোন করে বলতে পারতিস,খুব চিন্তা হচ্ছিলো।
– আমার জন্য চিন্তা করোনা আপু,আমি যদি নিজের সংসার বাঁচাতে পারি বাঁচাবো,আর না হয় গলায় দড়ি দিয়ে মারা যাবো,তবুও আর বাড়ীতে যাবো না।
– এমন কথা বলিস না,সব ঠিক হয়ে যাবে রিহান তোকে অনেক ভালবাসে,ও তোর উপর বেশিদিন রাগ করে থাকতেই পারবেনা।
– আপু রিহান কি আমার সমন্ধে কিছু বলেছে?
– কি আর বলবে,তুই ও কে অনেক কষ্ট দিয়েছিস,এগুলোই বললো।
– রিহান কেমন আছে আপু?
– অনেক শুকিয়ে গেছে, আগের চেয়ে অনেক টা কালো ও হয়ে গেছে।আমি ভাত খেতে দিয়েছিলাম,খেতে চাচ্ছিলো না,পরে জোর করে হাত ধুইয়ে খেতে বাধ্য করেছি।আমি রিহান কে বুঝিয়েছি,তোর দুলাভাই ও অনেক্ষন বুঝিয়েছে,মনে হয় কিছুটা হলেও তোর উপর ওর রাগটা কমেছে।
– ও কি আমার ঢাকা আসার কথাটা জানে?
– কিভাবে জানবে,যেখানে আমরাই জানিনা।
– ও।

– রাতে খেয়েছিস?
– হুম।পাশের বাসার ভাড়াটিয়া খাবার দিয়ে গিয়েছিলো,খেয়েছি।
– রাইমা কই?
– ঘুমাচ্ছে।
– তাহলে তুই ও ঘুমিয়ে পর ।
– আচ্ছা।
– আর শুন রিহান ঢাকায় গেলে ওর কাছে মাফ চেয়েনিস।আমিও চাইনা তোদের সংসারটা ভেঙ্গে যাক। বোন হয়ে এমন টা কখনো চাইবো ও না।রিহানের কাছে ক্ষমা চাইলে,আমার মনে হয় ও তোকে ক্ষমা করে দিবে।সংসার বাঁচাতে হলে,মেয়েদের অনেক কিছুই করা লাগে।
– আচ্ছা আপু।
– আচ্ছা,ভালো থাকিস।এখন রাখছি।
রাতে ঘুম আসছিলো না,কালকে রাতেও ঘুম হয়নি।রিহানের কথা খুব মনে পরছে।অনেক ঘুমানোর চেষ্টা করেও পারছিনা। না ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই আমার শরীরের এই অবস্থা। বাসে ভদ্র মহিলার বলা কথাটা মনে পড়ে গেলো।কালকে একবার একটা কিট এনে টেস্ট করে দেখবো, ভদ্র মহিলার কথাটা সত্যি কি না।যদি পজেটিভ হয় তাহলে কি করবো?এই সময় রিহান ব্যাপারটা কিভাবে নিবে?
রাত বারোটা বাজে,রিহান কে একটা কল দিলে কেমন হয়,নাকি ও ঘুমিয়ে পরেছে!না থাক সকালে দিবো।আবার ভাবছি সকাল হওয়া পর্যন্ত যদি ও কারো কাছ থেকে শুনে যে,আমি ঢাকা এসেছি,তাহলে কষ্ট পাবে।অন্যের কাছ থেকে শুনে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে, নিজের থেকেই রিহান কে ব্যাপারটা জানানো বেশি ভালো হবে।আমি রিহান কে ফোন দিলাম,প্রথম বার রিং হতেই ও ফোনটা ধরলো
– হ্যালো রিহান,ঘুমিয়ে গিয়েছিলে?
– আমার কি ঘুম আছে?
– রিহান একটা কথা বললে তুমি খুব রাগ করবে,তাও তোমাকে বলতেই হচ্ছে।
– কি কথা?
– আমি আজকে,কাউকে না জানিয়ে ঢাকা চলে এসেছি।
– ঢাকা কেনো?
– আমি ভেবেছিলাম তুমি ঢাকাতে, কিন্তূ এখানে এসে জানতে পারলাম তুমি বাড়ীতে চলে গেছো।রিহান আমি সব ছেড়ে তোমার কাছে চলে এসেছি।প্লিজ রিহান তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিয়োনা,তুমি যদি আমাকে ফিরিয়ে দাও,আমার মৃত্যু ছাড়া কোনো পথ থাকবেনা।আমি তোমাকে আর আমাদের মেয়েকে ছাড়া বাঁচতে পারবোনা।
– আমাকে ছাড়া তো বেচেঁই আছো।
– হ্যা বেঁচে আছি,জিন্দা লাশ হয়ে বেঁচে আছি।রিহান বুঝার চেষ্টা করো,আমি তোমাকে ছাড়া দিন দিন ভেতর থেকে মরে যাচ্ছি।।রিহান এই কষ্ট আমার আর সহ্য হচ্ছেনা,আমি আর কষ্টের বোঝা বইতে পারছিনা।প্লিজ তুমি কিছু একটা করো,নাহলে আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো।ভেবেছিলাম ঢাকা আসলে এই কষ্টের অবসান ঘটবে, কিন্তূ এখন দেখছি কষ্টের পরিমাণ হাজার গুণ বেড়ে গেছে।
– কি ভাগ্য আমাদের তাইনা?তুমি ঢাকা গেলে আমার কাছে,আর আমি বাড়ীতে আসলাম তোমাকে নিতে।হয়তো আল্লাহ চান না,আমরা এক হই।
– না রিহান ব্যাপারটা এমন নয়,আল্লাহ ঠিক ই চান আমরা এক হই,তাইতো আজকে এখানে আসতে পেরেছি।কালকে পর্যন্তও তো,আমি এমন সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পেতাম কিন্তূ আজকে সব ছেড়ে আসতে আমার কোনো ভয় হয়নি,তুমি কি মনে করো এগুলো আল্লাহর সাহায্য ছাড়াই করতে পেরেছি?রিহান তোমাকে আমার খুব প্রয়োজন,বেঁচে থাকার জন্য,ভালো থাকার জন্য।তোমাকে ছাড়া আমি একদম ভালো নেই।
– মিথ্যে দিয়ে যে সংসার শুরু হয়েছে,সেখানে কি আধোও ভালোবাসা থাকতে পারে?
– পারে রিহান।মিথ্যে দিয়ে শুরু হলেই যে,মিথ্যে দিয়ে শেষ হবে এটা কেনো ভাবছো?
– তুমিই ভাবতে বাধ্য করেছো।

– না রিহান,হয়তো মিথ্যে দিয়েই শুরু হয়েছিলো আমাদের সংসার কিন্তূ তোমার সত্যি ভালোবাসার কাছে সব মিথ্যে সত্যি হয়ে গেছে।
– আমরা যদি আবার সংসার শুরুও করি,আগের মতো কি ভালোবাসা থাকবে আমাদের সংসারে?
– কেনো থাকবেনা? যেখানে ভালোবাসা বিদ্যমান,সেখানে ভালোবাসা না থেকে পারে কি?
– আমার সব কিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে,আমি হয়তো আর গুছিয়ে সংসারটা করতে পারবোনা।যেই জায়গায় তোমার জন্য ভালোবাসা ছিলো, সেই জায়গাটায় এখন অনেক সন্দেহ জমা হয়ে আছে।অনেক প্রশ্ন জমে আছে, যার উত্তর খুঁজে পেলেও,মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।
– প্লিজ রিহান আমাকে মাফ করে দাও।মানুষ তো খুন করেও ক্ষমা পায়।
– তুমি কি কোনো খুনীর চেয়ে কম?তুমি তো আমার ভালোবাসা কে খুন করেছো, কিন্তূ আফসোস এতকিছুর পর ও আমি তোমাকে ছাড়তে পারছিনা,পারছিনা তোমার উপর রাগ করে থাকতে,কষ্ট হচ্ছে, অনেক কষ্ট হচ্ছে।আমি কেনো জানি তোমাকে আঘাত দিয়ে কথা বলতে পারিনা,তোমাকে আঘাত দিলে,ওই ব্যাথা আমার বুকে এসে লাগে।এইযে দূরে আছি এতে তুমি কতোটা কষ্ট পাচ্ছো জানিনা, কিন্তূ বিশ্বাস করো আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।যেদিন ওই চিঠিটা আমার হাতে এসেছিলো,সেদিন ভেবে ছিলাম,তোমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিবো, কিন্তূ পারলাম না।সময়ের সাথে সাথে রাগটা কেমন যেনো শীতল হয়ে আসলো।তোমাদের বাড়ী থেকে যখন ডিভোর্সের কথা শুনলাম,আমি বলে বুঝাতে পারবোনা কতোটা কষ্ট হয়েছে আমার।বলতে পারো ফারিয়া আমি কেনো তোমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারছিনা?তোমার কাছ থেকে দূরেও থাকতে পারছিনা,আবার ইচ্ছে করলে তোমার কাছেও যেতে পারছিনা,কেমন যেনো একটা গিলটি ফিল হচ্ছে।এখন আমি কি করবো বলতে পারো?
আমি রাতের অন্ধকারে চিৎকার করে কাঁদি,কেনো বলতে পারো?কোন ভুলের অপরাধে এই কষ্টটা আমাকে পেতে হচ্ছে?তোমাকে মন থেকে ভালোবাসার অপরাধে?স্ত্রীকে ভালোবাসাটা কি আমার অপরাধ ছিলো? জানো প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম,নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে হয়েছিলো।তুমি একদম আমার মনের মতো ছিলে,যেমন চেয়েছিলাম ঠিক তেমনই।মনে মনে মা বাবাকে,আর আরিফ কে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম,তোমাকে আমার জন্য নির্বাচন করেছে বলে, কিন্তূ এখন ঘৃণা হচ্ছে আরিফের উপর। কিন্তূ আমি তোমাকে কেনো ঘৃণা করতে পারছিনা?
– রিহান ওইগুলো সব শুধু মাত্র একটা অতীত,প্লিজ ভুলে যাও।
– আমি ভুলতে চাই, কিন্তূ ভুলতে পারছিনা।
– আমি তোমাকে ভালোবাসি রিহান।
– মিথ্যে,তুমি আমাকে কিভাবে ভালোবাসতে পারো,যেখানে বিয়েটা বাধ্য হয়ে করেছিলে!
– যদি বাধ্য হয়েই বিয়ে করতাম তাহলে সেদিন পালিয়েই যেতাম,তোমাকে ভালোবাসি বলেই যেতে পারিনি।
– আমাকে ভালবাসার জন্য যেতে পারোনি এটা বলোনা,বলো মানসম্মানের আর লোকলজ্জার ভয়ে যেতে পারোনি।ফারিয়া,
আমি তোমাকে নিয়ে একটা সুন্দর পৃথিবী,একটা সুন্দর ভালোবাসার গল্পঃ সাজাতে চেয়েছিলখম।যেই গল্পে কোনো কষ্ট থাকবেনা,কোনো অভিযোগ থাকবেনা,শুধু অফুরন্ত ভালোবাসা থাকবে।আমি তো তোমার জীবনের নায়ক হতে চেয়েছিলাম, কিন্তূ বুঝতে পারিনি নায়ক হতে গিয়ে ভিলেন হয়ে যাবো।আমি তো তোমাকে নিয়ে সুখের একটা সংসার পাততে চেয়েছিলাম,আমার চাওয়াতে কি কোনো অপরাধ ছিলো ফারিয়া?
– আমি চুপ করে রিহানের কথা শুনে যাচ্ছিলাম,ও বলুক ওর যা যা বলার ইচ্ছে, এগুলো বলে হয়তো নিজেকে একটু হালকা করতে পারবে।
– ফারিয়া আমি হয়তো তোমার জীবনে এসেছি একটা কষ্ট হয়ে, কিন্তূ তুমি আমার জীবনে প্রথম প্রেম হয়ে এসেছিলে।আমি এখন বুঝতে পারছি,প্রথম প্রেম হারানোর কষ্ট,আমি তো অনেক চেষ্টা করেও তোমাকে ভুলতে পারছিনা,তাহলে তুমি কিভাবে ভুলবে?
– প্লিজ রিহান এমন ভাবে বলো না।আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি।আরিফ সে আমারশুধু মাত্র একটা অতীত।তুমি যেদিন থেকে আমার জীবনে এসেছো,সেদিন থেকেই আমি সব কিছু ওইখানেই মাটিচাপা দিয়ে দিয়েছি।আর যদি ঐ চিঠিটার কথা বলো,ওই গুলো ছিলো আরিফের মনের কথা,আমার নয়।প্লিজ বুঝতে চেষ্টা করো।
– রিহান চুপ হয়ে রইলো।
– রিহান তুমি কবে আসবে ঢাকা?
– ঢাকা এসে কি করবো?
– অফিস করবে না?
– পনেরো দিনের মতো অফিস যাইনা,চাকরি আছে কি না কে জানে!
– এভাবে কি জীবন চলবে?
– চলছেই তো।
– প্লিজ রিহান তুমি চলে এসো,অনেক মিস করছি তোমায়।
ফোনটা কেটে গেলো,দেখলাম ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেছে।
সকালে একটা কিট এনে ইউরিন টেস্ট করে দেখলাম, রেজাল্ট পজেটিভ।মনে কেমন যেনো একটা ভয় কাজ করছে। এতো ঝামেলার মধ্যে,এই ঝামেলাটা হওয়ার কি কোনো দরকার ছিলো!আল্লাহ কেনো আমাকে এতো পরীক্ষায় ফেলছেন।এর মধ্যে ফারহানা নাস্তা নিয়ে এসে ডাকছে।আমি ফারহানা কে বললাম
– আবার নাস্তা আনার কি দরকার ছিলো?
– এনেছি খাবে, এতো কথা বলার কি কোনো দরকার আছে?আর শুনো,আমরা প্রায় সেম বয়সের ই হবো তাই আপনি, আপনি না করে,নিজেদের তুমি করে ডাকি?
– হুম,অবশ্যই।
– আর একজন আরেকজনের নাম ধরেই ডাকবো,ওকে?
– ঠিক আছে।ফারহানা
– বলো।

– থ্যাংকস।
– থ্যাংকস কেনো?আমরা এখন ভালো বান্ধবী হয়ে গেছি,তাই থ্যাংকস এর কোনো দরকার নেই।
– ফারহানা,তুমি জানতে চাইবে না,রিহান আর আমার মধ্যে কি হয়েছে?
– জানতে ইচ্ছে করে কিন্তূ তুমি কষ্ট পাবে বলে জিজ্ঞেস করিনা।
– আসলে রিহান আর আমার মধ্যে অনেক বড়ো একটা ঝামেলা চলছে।
– কি ঝামেলা?
– তারপর আমি ফারহানা কে সবটা খুলে বললাম।ফারহানা সব শুনে বললো
– যদিও তোমার এই চিঠিটা অনেক আগের,তাও রিহান ভাই হঠাৎ করে জানতে পেরেছে তো তাই তার অনেক কষ্ট হচ্ছে।রিহান ভাই এমনিতে অনেক ভদ্র,ভালো।আমার মনে হয় তুমি যদি একটু ধর্য ধরো,সব ঠিক হয়ে যাবে।তবে তোমার পালিয়ে আসার সিদ্ধান্ত টাই ঠিক ছিলো, তা না হলে সংসারটা ভেঙেও যেতে পারতো।ধর্য ধরো,আল্লাহ কে ডাকো,দেখবে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
– আমি জানি একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে,সেই বিশ্বাস আমার আছে।শুধু একটু সময় আর ধর্যের প্রয়োজন। কিন্তূ আমার চিন্তা ওখানেই শেষ না,একটা নতুন ঝামেলা হয়েছে আবার।
– কি ঝামেলা?
– আমি কন্সিভ করেছি।
– এটা কে তুমি ঝামেলা বলছো?
– এখন এটা ঝামেলাই মনে হচ্ছে আমার।এই সময়টায় বাচ্চার জন্য প্রস্তুত নই আমি।
– আরে পাগল,এটা ঝামেলা না বলো আল্লাহর রহমত এইটা। জানো গর্ভকালীন কোনো ডিভোর্স হয়না।
– তাই নাকি, কিন্তুু কেনো?
– সেটা জানিনা,শুধু এইটাই জানি প্রেগনেন্ট থাকাকালীন ডিভোর্স হয়না।তার মানে আল্লাহ তোমার সংসার ভাঙ্গা থেকে বাঁচাতে চাইছেন।
– তাহলে সত্যিই কি এই বাচ্চা আল্লাহর রহমত!
– হ্যা রহমত।আর টেনশন করো না,দেখবে এই বাচ্চার উছিলায় তোমরা আবার সুখের মুখ দেখতে পাবে,ইনশা আল্লাহ।
– আমিন।
গর্ভকালীন ডিভোর্স হয়না,কথাটা শুনে খুব শান্তি লাগছে।আর হয়তো সত্যিই আমরা এই বাচ্চার উছিলায় কাছে আসতে পারবো।
কথাটা কি রিহান কে ফোন করে জানাবো?ফোন করার জন্য মোবাইলটা বের করে আনতেই,কলিংবেল বেজে উঠলো।দরজা খুলতেই দেখলাম,রিহান এসেছে।রিহান কে দেখে আমার খুব খুশি লাগছিলো, কিন্তূ রিহানের মুখটা কেমন শুকিয়ে কালো হয়ে গিয়েছে।
রিহান ঘরে গিয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে।আমি ভাবলাম রিহানের কাছে মাফ চেয়ে নেই,তাহলে যদি আমাকে মাফ করে। ঘরে গিয়ে আমি রিহান কে বললাম
– রিহান আমাকে মাফ করে দাও।চলো আমরা সব কিছু ভুলে আবার সুন্দর করে নিজেদের জীবনটাকে সাজাই।
– সুন্দর করে সাজালেই কি আর‌ সব কিছু সুন্দর হয়? কথায় আছে কয়লা ধুলেও,ময়লা যায়না।তোমার সাথে নতুন করে সংসার সাজালেই কি আরিফ আর তোমার সম্পর্কের কথা আমি ভুলতে পারবো?
-রিহান বার বার তো মাফ চাইছি, আচ্ছা তুমিই বলো কি করলে তুমি আমাকে মাফ করবে,কি করলে তোমার কষ্টটা একটু কমবে? বলো,আমি তাই করবো।
– পারবে আমি যে গুলো বলবো,সে গুলো মানতে?
– অবশ্যই পারবো।
– তাহলে তুমি আমার কথায়,তোমার বাবা মা কে ছাড়তে পারবে?
– বাবা মা কে তো ছেড়ে এসেছিই।
– এই ছাড়া সেই ছাড়া নয়,একবারে ছাড়তে হবে।আর কোনোদিন তুমি তোমার বাবার বাড়ী যেতে পারবেনা।
– আমি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম,আর কি কি করতে হবে?
– আমরা এক ঘরে থেকেও,দুজন আলাদা বিছানায় থাকবো।
– রিহান!
– হুম,এটা আমার দ্বিতীয় শর্ত।
– আর?

– তোমাকে তোমার প্রিয় মোবাইল ফোনটা ছাড়তে হবে।
– ফোন ছাড়তে হবে কেনো?
– কারন তোমার কাছে যতক্ষণ ফোন থাকবে,ততক্ষণ আমার মনে হবে তুমি আরিফের সাথে যোগাযোগ করো।
– কিন্তূ ফোন ছাড়া আমি মা বাবার সাথে,কথা বলবো কিভাবে?
– তাদের সাথে যখন কোনো সম্পর্কই থাকবেনা,কথা বলার কি প্রয়োজন?
– আপুর সাথেও কথা বলতে পারবো না?
– আপুর সাথে বলবে তবে আমার ফোন দিয়ে।
– আর কিছু?
– না, টুকুই।
– আচ্ছা।
– এগুলো মানতে তোমার কষ্ট হবেনা?
– কষ্ট হবেনা যে তা নয়,তবে তোমার থেকে দূরে থাকার চেয়ে এই কষ্ট কেই না হয় আপন করে নিলাম।তোমাকে পাওয়ার জন্য এই কষ্ট টুকু মেনে নিতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
– আলাদা বিছানায় থাকতে তোমার কোনো আপত্তি নেই?
– আপত্তি থাকলেও,তোমার মনের শান্তির জন্য এটুকু তো আমি করতেই পারি।
– আর তোমার প্রিয় ফোনটা?
– তোমার চাইতে কি ফোন আমার কাছে বেশি প্রিয় হতে পারে?তোমার জন্য শুধু ফোন কেনো,পৃথিবী ছাড়তেও রাজি আছি।
– থাক পৃথিবী ছাড়তে হবেনা,এটুকু ছাড়লেই চলবে।
সংসার টা টিকিয়ে রাখতে মুখ বুঝে, রিহানের সব শর্ত মেনে নিলাম।আমি জানি এগুলো সব ও রাগ থেকে করছে।জানিনা এই রাগ ওর কখনো কমবে কি না,তবে আশায় আছ একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি রিহান কে বললাম
– রিহান আমি কন্সিভ করেছি।
– কন্সিভ করেছো?
– হুম।
– বাচ্চাটা কি সত্যিই আমার?
– ছিঃ রিহান,তুমি এতোটা নোংরা মনের মানুষ আমি ভাবতেও পারিনি।তুমি এই কথাটা কিভাবে বললে?
কেনো,তুমি নোংরামি করতে পারো,আমি বললেই দোষ?
– রিহান তুমি এমন কথা বলতে পারলে?কিভাবে বললে কথাটা?এখন তো আমার মনে হচ্ছে তোমার সাথে ডিভোর্স হওয়াটাই আমার জন্য ঠিক ছিলো।
– প্লিজ ফারিয়া তুমি আমার চোখের সামনে থেকে যাও,আমার তোমাকে একদম সহ্য হচ্ছেনা।
– আমি কাঁদতে কাঁদতে অন্য রুমে চলে গেলাম।রিহানের সব কিছু মেনে নিলেও এই কথাটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।রিহান আমাকে এই ভাবে অপমান না করলেও পারতো।সারাদিন শুধু শুয়ে শুয়ে কেঁদেছি,কোনো দিস কুল খুঁজে পাচ্ছিনা।কত বড় মুখ করে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিলাম।ভেবেছিলাম মাফ চেয়ে,সব কিছু ঠিক করে নিবো কিন্তূ এখন বুঝতে পারলাম কোনো কিছুই আর ঠিক হবার নয়।
বিকেলের দিকে রিহান আমার ঘরে আসলো,পাশে এসে বললো
– সরি।

– আমি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম।
– আমাকে মাফ করে দাও,আমি রাগের মাথায় কি বলতে কি বলে বলেছি,বুঝতে পারিনি।
– রিহান এমন কথা কেউ হাজার রাগের মাথায় বললেও,সেটা ক্ষমা করা যায়না।তুমি যেই কথাটা বলেছো,আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে যাবে এমন কথা শুনে।
– আসলে এইটা আমার মনের কথা না,তোমাকে একদম গভির ভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য ওই কথাটা বলেছি, কিন্তূ তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমি আরো বেশি কষ্ট পাচ্ছি।রিহান আমার হাতের উপর ওর হাতটা রাখলো,আমি নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বললাম
– প্লিজ তুমি আমাকে স্পর্শ করবেনা।তোমার ছোঁয়াতে ভালোবাসা নয় ঘৃণা হচ্ছে আমার।
– সরি বললাম তো,মাফ করে দাও।
– চলো ডাক্তারের কাছে যাবো।
– কেনো?
– এবরশন করতে।
– ফারিয়া আমি কিন্তূ তোমার কাছে ক্ষমা চেয়েছি,তুমি কিন্তূ এখন বাড়াবাড়ি করছো।
– তুমি না প্রশ্ন করেছো,এই বাচ্চাটা তোমার কি না?আমি বলবো,না।এই বাচ্চাটা তোমার না,এইটা আমার একার বাচ্চা।আর আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি আমি আর এই বাচ্চা রাখবোনা।
– আমার বাচ্চা নষ্ট করার মতো এতো বড়ো সাহস দেখিও না,তাহলে কিন্তূ…
– কি করবে?
– নিজেকে শেষ করে দিবো।
এই বলে রিহান ঘর থেকে চলে গেলো।আমি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলাম,কেনো এভাবে কষ্ট দিচ্ছো আমাকে রিহান,প্রতিশোধ নিচ্ছো?আমি জানি এগুলো কোনোটাই তোমার মনের কথা নয়,রাগে বলেছো কিন্তূ রিহান রাগ হলেই সব কিছু বলা যায়না।কিছু কথার আঘাত এতোটাই বিষাক্ত হয় যে,বিষ ও তার কাছে দুর্বল হয়ে যায়।
চলবে…