00তোমার আঁচলের উঠোনে

ধর্ষক !! Part- 02 ( Last-Part)

কলিজার মতো মেয়ের এমন হাল করবি যেনো কোথাও
মুখ দেখাতে না পারে ……!!!
তারপর ………!!
তারপর চলে যাচ্ছিল ছেলেটা।। আর অন্য ছেলেগুলোর
চোখের নজরে আগ্রাসী ভাব আমায় বিচলিত করে
তুলেছিলো।। আমি নিজের সম্ভ্রম আর নিজেকে
বাচাতে দৌড়ে ছেলেটার পা জাপটে ধরি।।
— প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন, আর ওদের কে থামতে
বলুন।। আমাকে এভাবে শেষ করবেন না।। আর আমিই কি
ক্ষতি করেছি আপনার?? প্লিজ, প্লিজ ছেড়ে দিন না
আমায়। বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি আমি।।
আর আমাকে অবাক করে ছেলেটি আমার চুলের মুঠি
ধরে দাড় করিয়ে তুললো।। ব্যাথায় চিৎকার করে
ওঠলাম আমি।। ছেলেটি চোখের ইশারায় ছেলেগুলো
কে বাইরে যেতে বললো।। আমার ভয় আরো দ্বিগুন
বেড়ে গেলো।।।
আমি ব্যাথায় কান্না শুরু করে দিলাম।। ছেলেটির
একটুও দয়া হচ্ছে না।। হঠাৎ ই আমাকে দেয়ালে ছুড়ে
মারলো ছেলেটি।।। আমি ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম
মেঝেতে।। তারপর ছেলেটি বিস্ময় করা হাসি দিয়ে
মাটিতে লুটিয়ে পড়তে লাগলো।। তারপর হাসতে
হাসতে আমাকে বলে ওঠলো —
— খুব ভয় পেয়েছো খুকি?? তাই না??
তারপর আবারো আমার কাছে এসে কর্কশ কন্ঠে বলে
ওঠলো —
— এই ভয়টিই তোর চোখে দেখতে চাই আমি।।।
আমি ভয়ে আর কিছু বলছিলাম না।। তারপর ছেলেটি
উঠে দাড়িয়ে জানালার পাশে গিয়ে গ্রিল ধরে
দাড়িয়ে পড়লো।। হঠাৎ ই তার মাঝে এক নিরবতা ভর
করলো।। ও একদম শান্তভাবে বাহিরে তাকিয়ে
ছিলো।। ওর এমন ভাব দেখে আরো ভয় পেয়ে যাই আমি।।
মনে হচ্ছিল নিশ্চিত কোনো সাইকোর হাতে বন্দি
আমি।।
কিন্তু হঠাৎ ই ছেলেটা বাইরের দিকে তাকিয়েই
বলে ওঠলো —
— সত্যিই তোমার কোনো দোষ নেই।। তোমাকে
এমনিতেই তুলে এনেছি।। জানো একটু আগে ছেলেদের
দেখে তুমি যেমন ভয়টা পাচ্ছিলে, যেমন অনুরোধ
করছিলে, তেমন অনুরোধ আমিও একদিন করেছিলাম।।
কিন্তু কাজ হয়নি।। একেবারেই কাজ হয়নি।।
বলেই বড় করে শ্বাস নিলো ছেলেটা। তারপর
জানালার গ্রিল টাকে পেছন রেখে সামনে ফিরে
তাকালো।।।
ওর কথা শুনে আমার মধ্যে অস্বাভাবিক আগ্রহ জেগে
ওঠলো।। কেননা এক বিশাল আবেগমিশ্রিত রূপ তার
ভেতরে দমিয়ে ছিলো।। হঠাৎ ই যেনো হিংস্র বাঘের
আহত রুপ ফুটে ওঠলো।।
আমি তখনও কিছু বলার সাহস পাচ্ছি লাম না।। শুধু
দাড়ানোর চেষ্টা করলাম ওয়াল ঘেষে।।। তারপর
আবারো ছেলেটি বলতে লাগলো —
— দেখো একটু আগে কেমন ঘাবড়ে গেলে, অথচ আমাকে
তুমি একটুও বিশ্বাস করলে না, যে তোমার কিছুই হবে
না। আর কেনই বা করবে?? আমি তো তোমার একদম
অপরিচিত। কিন্তু একবার ভাবো, আমি যদি তোমার
পরিচিত হতাম এতটা ভয় পেতে বলো??
আমি ওর কথায় সায় মেলাতে সংকোচে মাথা নেড়ে
বললাম,,, না পেতাম না।।।
ও একটু হেসে ওঠলো তারপর বললো —
— কিন্তু জানো আমার পরিচিত জনকে দেখেও সেদিন
খুব ভয় পেয়ে ছিলাম।। একটুও শোনেনি আমার কথা।।।
এতটুকু বলেই আবারো কর্কশ কন্ঠে বলে ওঠলো —
— কিন্তু এই ভয় আবারো তোমার বাবা মিঃ
আফজালের চোখে দেখতে চাই আমি।।। দেখতে চাই।।।
আর সেজন্যই তোমাকে এখানে এনেছি আমি।। বলেই
হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।।
আমি তাজ্জবনে গেলাম ওর কথা শুনে।। সাহস নিয়ে
পেছন ফিরে ডাকলামও তাকে, কিন্তু কিছুতেই সাড়া
মিললো না।। অন্যথায় রুমটা বন্ধ হয়ে গেলো।।।
আমি নির্বিকার হয়ে মাটিতে বসে পড়লাম।। আর
ভাবলাম আমার বাবা?? কিন্তু আমার বাবার সাথে এই
ছেলেটার কি সম্পর্ক?? কি সংযোগ তাদের??
কোনো উত্তরই মেলাতে পারছিলাম না।। আমার
ভেতরটা অস্থিরতায় ছেয়ে নিলো।।।
রংধনুর রং

বেশ কিছুসময় পেরিয়ে গেলো।। প্রায় সন্ধে নেমে
আসবে।। এই প্রথমবার বাহিরটা দেখার জন্য জানালাটা
মেলে দিলাম।। বাইরের প্রকৃতি আমাকে মুগ্ধ করলো।।
পাহাড়ে ঘেরা চারপাশ আর বিপুল জলরাশির ঝর্না
হয়ে পড়া খুব কাছ থেকে দেখতে পেলাম।। মাঝে
মাঝে সাঝের বাতাস ছুয়ে যাচ্ছে আমাকে।।হালকা
শীতের অনুভুতি ও কাজ করছে শরীরে।।বোধহয় দূর
পাহাড়ে বৃষ্টি ছুয়ে নিয়েছে।।
,
কিন্তু কোথায় আমি আটকে আছি কিছুই বুজতে
পারছিলাম না।।। হঠাৎ ই সজোরে দরজাটা খুলে
গেলো।। আমি আতকে ফিরে তাকাই সেদিকে।।
একহাতে খাবার আর আরেকহাত দিয়ে চুল মুচতে মুচতে
ছেলেটা ভেতরে প্রবেশ করলো।।। তার চোখমুখে তখন
নিবিড় মায়া।। মনে হচ্ছিল যেনো, সদ্য প্রেমে পড়া
রোমান্টিক সেই বালক।। জানিনা আমার ভেতরের
সেই অজানা ভয়টা আর কেনো কাজ করছিলো না।। সবই
যেনো স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল আমার।।।
ছেলেটি খাবারটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো।।
এবার আর ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে হলো না।। খুব খিদে
পেয়েছিলো।। তাই কিছু না ভেবেই খাওয়া শুরু
করলাম।।
মাঝ পথে একবার মনে হলো, আমি একাই শুধু খেয়ে
যাচ্ছি,, কিন্তু ছেলেটা কোথায়?? ভেবে চোখ
তুলতেই দেখি, ছেলেটা একমনে আমার দিকে
তাকিয়ে আছে।। আমি চোখ তুলে তাকাতেই চোখ
সরিয়ে নিলো সে।। ভীষন অবাক লাগছিলো আমার।।।

কিছুক্ষন চুপ ছিলাম দুজনেই।। তারপর এক ছেলে রুমে ঢ়ুকে
বলল —
— আবির ভাই কেউ ডাকছে আপনায়??
সেই প্রথম ছেলেটার নাম জেনেছিলাম।। আবির।।
তারপর ওর বাইরে জাবার কারনটা জানতে একটু
বিচলিত হয়ে পড়ি।। কিন্তু কে যেনো হলো, ছেলেটা
দ্রুত রুমে ঢ়ুকে আমাকে বললো —
— খুব চিন্তা হচ্ছে তোমার বাবার, তোমার জন্য।। এতদুর
পর্যন্তও খোজ লাগিয়েছে তোমার বাবা।। কিন্তু
জানেনা,,,, এটা আমার এলাকা।। এটা আবিরের
এলাকা, আবিরের ….।
খুব জোরেই বলেছিলো কথাটা।।। এবার আমার বিস্ময়ের
মাত্রা বেড়ে চললো।। তারপর নিজ থেকেই ছেলেটি
বলা শুরু করলো —
— কি শুনবে তুমি বলো??? আর শুনে নিজেকে ঠিক
রাখতে পারবে তো??
আমি বিচলিত হলাম আবারও। জানিনা কি অজানা সত্য
জানতে চলেছি আমি।। কিন্তু যত কঠিনই হোক আমাকে
জানতেই হবে।।।
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাসুচক উত্তর দিলাম।। ছেলেটি
দম নিয়ে বললো —
.
খুব সাদামাটা পরিবার থেকে ভালো মানুষের মুখোশ
পড়ে বড় করার তাগিদে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল
তোমার বাবা।। তখন তুমি পৃথিবীতে আসোনি।।। আমি
তখন ৫-৬ বছরের মতো বয়সের।।।
তোমার বাবা আমাকে নিয়ে গিয়েছিলো ঠিকি,
কিন্তু সময় ও সুযোগের ব্যবহারে আমাকে মাফিয়া
জগতের ডান হাত হিসেবে বড় করে তোলে।।। তোমার
বাবার প্রশয়ে প্রথম দশ বছর বয়সে খুন করি আমি।।।
কিন্তু ……
বলেই ছেলেটা থেমে গেলো।।। আর এদিকে আমার
পায়ের তোলার মাটি সরে যাচ্ছিল, নিজের কান আর
চোখকে, নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।।
আমার বাবার এরূপ গুনকীর্তন স্বপ্নেও ভাবতে পারি
না।। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম মাটিতে।। আর সব মিথ্যা
বলে চিৎকার করতে লাগলাম।।
তারপর ছেলেটিও অশ্রু শিক্ত নয়নে আমাকে স্পর্শ করে
বললো —
বিশ্বাস করো শোভা আমি একটুও মিথ্যে বলছি না।।
আমি মাথা তুলে তাকালাম।।।
আমার উৎসুক চাহনি দেখে আবির বললো —
— হ্যা শোভা আমি তোমাকেও চিনি, ইনফ্যাক্ট
তোমার পুরো পরিবারকে আরো ভালোকরে চিনি।।।
আমি তোমায় বলেছিলাম তো ….
সহ্য করতে হবে তোমায়।।।
আমি কান্নারত অবস্থায় মাথা নাড়ালাম।।।।
— তুমি তখন তোমার মায়ের গর্ভে।। আর আমি তখন প্রায়
৯ – ১০ বছরের ছেলে।। তোমার বাবা যে আমায় দিয়ে শুধু
খুন করিয়েছে তা নয়,, কথাটি অপ্রিয় হলেও সত্য
তোমার বাবা একজন নারী পিপাসু লোকও বটে।।।
ঘৃনায় আমার কান্নার বেগ বেড়ে গেলো।। আর এতবড়
কথাটা কিছুতেই হজম করতে পারছিলাম না।। তাই
ছেলেটির কলার চেপে বললাম —
— দেখুন আপনি কিছুতেই এমন কথা বলতে পারেন না
আমার বাবা সম্পর্কে!!!
আবির এক ঝটকায় আমার হাতটা ছাড়িয়ে হাসি –
কান্নারত অবস্থায় বললো —
— এই মেয়ে কি ভাবো কি তুমি আমাকে???
বলেই আমার বাহু ধরে ঝাকি দিয়ে বললো
— বলো,,, এই মেয়ে বলো আমি পারতাম না তোমাকে
ধর্ষন করতে, পারতাম না তোমার সর্বস্ব কেড়ে
নিতে?? বলো কথার জবাব দাও??
কিন্তু কিছুই করিনি তোমায়।। কিন্তু কেনো করিনি
জানো আমি তোমার বাবার মতো জানোয়ার না।। শুধু
তোমার বাবাকে এটা বোঝাতে যে, অন্যের সাথে
যেটা অন্যায়, সেটা নিজের কলিজার সাথে হলে
কেমন লাগে।।।
আবারো সজোরে ঝাকি দিয়ে একনাগাড়ে বললো —
— এই মেয়ে জানো তুমি জানো তোমার বাবার চরম
সত্য সম্পর্কে??
তুমি তোমার মায়ের পেটে থাকা অবস্থায়, তোমার
বাবা আমার বোনকে …..
বলেই চিৎকার করে কেদে উঠলো ছেলেটা।। আমার
ভেতর দমড়ে মুচড়ে ওঠছিলো।। কাদতে কাদতে
ছেলেটি পাগল প্রায় হয়ে ওঠলো।। আমি তাকে ঝাকি
দিয়ে তখন বলে উঠলাম —প্লিজ বলুন কি হয়েছে আপনার
বোনের,?? প্লিজ বলুন??
ছেলেটি কিছুটা শান্ত হয়ে বলে ওঠলো —
–আমার চোখের সামনে আমার বোনের ওপর নির্যতন
করে তোমার বাবা।। আমি স্পষ্ট শুনছিলাম আমার
বোনের আকুতি – মিনুতি।। আমি খুব করে চিৎকার
করছিলাম সেদিন।। কিন্তু কোনো কথায় তোমার বাবা
কর্নপাত করেনি।। লজ্জায়, ঘৃনায় আমার বোন আত্মহত্যা
করে।।। সেদিন সদ্য গ্রাম থেকে আসা আমার বোনের
লাশটা ও ভালোভাবে দেখতে পারিনি।। তোমার
বাবা আমাকে খুনের আসামি বানিয়ে জেলে ভরে
দেয়।।

একটা রুমের ভেতর তখন কান্নার রোল।। যেন কেউ
কাউকে থামাতে পারছি না আর কেউ কে থামাবার
চেষ্টাও করছি না।। সে এক অবর্ণনীয় মুহুর্ত।।।।
সেদিন নিজের ওপর নিজের ঘৃনা বেড়ে যাচ্ছিল।।
নিজেকে কিছুতেই সংযোত রাখতে পারছিলাম না।।
যে পরিবারকে এত কাছ থেকে দেখেছি, এত কাছ
থেকে দেখেছি যে এই কথাগুলো আমার মাঝে হজম
হচ্ছিল না, আবার একজন বোন হারা ভাইয়ের আর্তনাতও
আমাকে ঠিক থাকতে দিচ্ছিল না।।। এ এক করুন
পরিস্থিতি।।।
পরদিন সকালে ছেলেটি আমার কাছে এসেছিলো।।
আর বলেছিলো —
— তোমাকে বাসায় ফিরিয়ে দিয়ে আসবো, কিন্তু
কখনও যদি তোমার এই সত্যতার প্রমান লাগে, চলে
আসবে আমার কাছে।। তোমার ফিরে আসার অপেক্ষা
করবো আমার এই পাহাড়ের শহরে।।আর পারলে আমাকে
ক্ষমা করে দিও।।
বলেই ছেলেটি আমার সামনে থেকে চলে গেলো।। শত
ডাকেও পেছন ফিরলো না ছেলেটি।।।


হঠাৎ ই দরজায় আবারো কড়া পড়লো। আর সাথে সাথেই
নিজের ভাবনার মুহুর্তে ছেদ ঘটলো আমার।। মায়ের
ডাকে নিজেকে শান্ত করলাম।।চোখের জল মুছে,
মাকে ভেতরে ডাকলাম।।
জড়িয়ে নিলাম মাকে।।। মায়ের কোলেই মাথা দিয়ে
সুয়ে ছিলাম কিছুক্ষন।। হঠাৎ ই মাকে প্রশ্ন করে বসলাম
–বাবা সম্পর্কে …..???
কিন্তু মায়ের চোখেও জলকনার আনাগোনা দেখতে
পেয়েছিলাম।।।
,
তারমানে চিরন্তন সত্যের প্রাচীর আজ চিরন্তনভাবেই
প্রকাশিত হলো আমার চোখে।।। তাইতো নিজেকে আর
এই পুরিতে কিছুতেই আটকে রাখতে পারছিলাম না।।।
তাইতো মাঝরাতেই সেই কুয়াশার চাদরে ঢ়েকেই
রওনা হলাম আমার ২য় প্রশ্নের জবাবের আশায় সেই
পাহাড়ি প্রান্তরে।।। জানি না এই প্রত্যাবর্তন
কিসের, কিসের জন্যই বা এই পথচলা?? শুধু জানি এই
প্রত্যাবর্তন, নিজের আশ্রয়ের, নিজের কল্যানের,
নিজের শেষ মহান আশ্রয়ের।।।
.
.
(সমাপ্ত)
# # রংধনুর_রং

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *