ভূতের গল্প

দানব এর রহস্য !! লেখাঃ নাঈম ইসলাম নাহিদ।

দানব এর রহস্য

দানব (ইংরেজি: Monster) হলো এক ধরনের বিচিত্র জীব, যার চেহারা ভয়ঙ্কর এবং যার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা মানব বিশ্বের সামাজিক বা নৈতিকতার জন্য হুমকি স্বরূপ।

একটি দানব বা দৈত্য মানুষও হতে পারে, কিন্তু লোককাহিনীতে সাধারণত এটি নিচুশ্রেণীর, রূপান্তরিত, বিকৃত, অতিপ্রাকৃত এবং পারলৌকিক হিসেবে বর্ণীত হয়।

দানব পশু নৈতিক আদেশের বাইরে, কিন্তু কখনও কখনও তাদের নৈতিক নিয়মের মানবিক লঙ্ঘন ঘটে (যেমন, গ্রীক পৌরানিক কাহিনীতে বর্ণীত আছে, ক্রিটের রাজা মিনোস সমুদ্র দেবতা সাদা ষাড় পসেইডনকে বলিদান না করায় মিনোসকে ইশ্বরের কাছে পাঠান। ফলস্বরূপ, পসেইডন মিনোসের স্ত্রী পাসিফাইকে শাস্তি দেন। পাসিফাই ষাড়ের প্রতি প্রেমাসক্ত হয়ে পড়ে এবং পশুর সহিত মিলিত হয়। পসিফাই ষাড়ের মাথাওয়ালা মানব সন্তান মাইনোটোর জন্ম দেয়)। মানব দানব হলো যারা কখনই সম্পূর্ণ মানব হিসেবে জন্ম নেয়নি (মেডুসা এবং তার বোন) অথবা যারা কিছুটা অতিপ্রাকৃতিক বা অস্বাভাবিক কারণে তাদের মানবিকতা হারিয়েছে (ওয়্যারওলভস, ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দৈত্য) এবং যারা মানব সমাজের নিয়মনীতি মেনে চলতে পারে না।

দানবদের নিয়ে প্রাচীন ইতিহাস এবং দানবদের সম্বন্ধে সমাজের ভিতরে বিশেষ সাংস্কৃতিক বিশ্বাস নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা মনস্ট্রোফি হিসেবে পরিচিত।

সাহিত্যে, পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে দানবের উপস্থিতি আছে। উপন্যাসের সুপরিচিত দানবগুলোর মধ্যে কাউন্ট ড্রাকুলা, ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দৈত্য, ওয়্যারওলভস, মমি এবং জম্বি বিখ্যাত।

ব্যুতপত্তি:

দানব শব্দটি ল্যাটিন monstrum থেকে উদ্ভূত। এটি ক্রিয়াবাচক শব্দ moneo থেকে উদ্ভূত (যার অর্থ স্মরণ, সতর্কতা, নির্দেশনা, বা ভবিষ্যদ্বাণী করা), এবং অনেক সময় “অদ্ভুত বা একক, প্রকৃতির স্বাভাবিক পদ্ধতির বিপরীতে, যার দ্বারা স্রষ্টা শয়তানের উল্লেখ করেন” “একটি অদ্ভুত, অপ্রাকৃত, ভয়ঙ্কর ব্যক্তি, পশু, বা জিনিস,” অথবা কোন “দৈত্য বা অস্বাভাবিক জিনিস, ঘটনা, বা দু:সাহসিক কাজ” বুঝানো হয়।

 

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য:

ওয়েক ফরেস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যযুগীয় জার্মান সাহিত্যের সহকারী অধ্যাপক টিনা মেরি বযয়ারের ভাষায়, “দানবগুলি সাংস্কৃতিক দৈন্যতা থেকে উদ্ভূত হয়নি; তাদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে।”

প্রাচীন গ্রীক ও রোমানদের ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে দানবকে “ঈশ্বরের অভিশাপ” হিসাবে দেখা হতো এবং এটিকে বিশেষভাবে অশুভ কারণে জন্মগত ত্রুটি মনে করা হতো, এটি “অস্বাভাবিক ঘটনা” বা “প্রকৃতির অস্বাভাবিক কাজ ছিল” ছিল।

তা সত্ত্বেও দানব অকাট্টভাবে ঘৃণীত নয়। উদাহরণস্বরূপ, রোমান ইতিহাসবিদ সুইটনিয়াস পা বিহীন সাপের বা পাখির বিকটাকৃতির হয়ে উড়ে যাওয়ার ক্ষমতাকে বর্ণনা করেছেন, উভয়ই ”প্রাকৃতিকভাবে অস্বাভাবিক”। তবুও শব্দটির নেতিবাচক দিকগুলো দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। নাট্যকার এবং দার্শনিক সেনেকা’র সময়ে শব্দটি এর দার্শনিক অর্থ “সত্যের চাক্ষুষ ও ভয়ঙ্কর উন্মোচন” দ্বারা সম্প্রসারিত হয়।

এতদ সত্ত্বেও হাইড্রা এবং মেডুসার মতো পৌরানিক দানবরা প্রকৃতির প্রাণী নয়, ঐশ্বরিক সত্ত্বা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় এটি প্রটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান ধর্মসমূহ এবং অন্যান্য ধর্ম বিশ্বাসে নিষিদ্ধ বিষয়, যেখানে “আত্মা”, ”দানব” এবং “দেবতা” এর মধ্যে বিভাজন কম স্পষ্ট।

দানব কি সত্যিকারেই আছে তা আজও রহস্যময় হয়ে আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *