তোমার আঁচলের উঠোনে !! Part- 05
বিভাবরীর নিজেকে আজ বড্ড এলোমেলো লাগছে। মাথাটা খুব করে ঝিমঝিম করছে। দুহাত দিয়ে চেপে ধরে মাথাটা…
নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে। নিচে যায় পানি খাওয়ার জন্য। কিন্তু পানির জাগ হাতে নিতেই পেছন থেকে কারো আওয়াজ শুনতে পায় সে। আওয়াজটা তার পরিচিত। আওয়াজটা রিশাদের। রিশাদ ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,
— বুয়া, এক গ্লাস পানি দাও তো।
বিভাবরীর ইচ্ছে করছে পানিটুকু তার মাথায় ঢেলে দিতে। বিভাবরী কে দেখে কি তার বুয়া মনে হয়? একজন ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েকে সে বুয়া বলছে! কি বিচ্ছিরি ব্যাপার! বিভাবরী মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো, একদিন সুযোগ পেলে সে রিশাদকে তাদের বাড়ির পাশের ডোবায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে। তারপর ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের শ্বাশুড়িদের মতো চোখ লাল করে বলবে, নে, এবার পানি খা!
কিন্তু মনে মনে রাগটা চেপে গেল। ঘুমের ঘোর ভেবে তাকে এক গ্লাস পানিও দিল।
রিশাদ ডগডগ করে পানিটুকু খেয়ে তার দিকে গ্লাস এগিয়ে দেয়। ঢুলু ঢুলু ভাবে বিভাবরীর সামনে আসে। গ্লাসটা হাতে না দিয়ে টেবিলে রাখে। তারপর বিভাবরীর উড়ণা দিয়ে মুখ মুছে আবার ঢুলতে ঢুলতে চলে যায়।
বিভাবরী হতভম্ব হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে। একটা ছেলে তার কাছে পানি চাইল। তাকে পানি দেওয়া হলে, সে পানিটা খেল। শুধু খেলই না, তার উড়ণা টাকে টিসু হিসেবে ব্যবহার অবদি করলো। অথচ তাকে চিনতে পারলো না! আশ্চর্য!
বিভাবরী ভেবেছিল বাকি রাতটুকু তার ঘুম হবে না। কিন্তু তার ঘুম হয়েছে। এবং খুব ভালো ঘুম হয়েছে। এই বাড়িতে সে প্রথমবারের মতো এত ভালো ঘুমিয়েছে। সকালে
ফুরফুরে মেজাজে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়। চোখে লম্বা করে কাজল টানে, মুঠ ভর্তি চুড়ি না পড়লেও হাতে ডিজাইনার ঘড়ি লাগায়। আয়নায় নিজেকে দেখে ভাবলো, ধ্রুব এখন তাকে দেখলে কি নাম দিত? রূপকুমারী??
কিন্তু ধ্রুব তাকে কখনোই কোনো নাম দেয় না। সে তার নাম খুব সুন্দর করে উচ্চারণ করে। ধ্রুবর মুখে বিভাবরীর নাম শুনলে যে কেউ তার নামের প্রেমে পড়ে যাবে। তাকে নাম দেয় রিশাদ। তার মন ধ্রুব কে নিয়ে ভাবলেও মস্তিষ্ক অন্য কারো কথা চিন্তা করছে। বিষয়টা বিভাবরী খেয়াল করেছে। কিন্তু পাত্তা দিতে চাইছে না।
বিভাবরী পাত্তা দিতে না চাইলেও তার মস্তিষ্ক আর মন স্থির হচ্ছে না। যার দরুন একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেছে।
বিভাবরী আনমনে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামছিল। তখন সে কারো সাথে ধাক্কা খায়। ধাক্কা খাওয়ার মানুষটা হলো রিশাদ। রিশাদ বিভাবরী কে দেখে নাক সিটকে বললো,
— এভাবে সেজেগুজে ভার্সিটি যাচ্ছো, বুয়া??
বিভাবরী রিশাদের সম্বোধন শুনে হা হয়ে গেছে। তার মানে কি ছেলেটা তাকে ইচ্ছে করেই বুয়া ডাকছে!
— এভাবে হা করে তাকিয়ে আছো কেন? গিলে ফেলবে আমাকে? হজম করতে পারবে তো?? মানুষের পেটে কিন্তু চুল হজম হয় না। দেখো, আমার মাথায় কত শত চুল!
— আপনি আমায় এভাবে অপমান করতে পারলেন??
— তোমাকে আমি কাল রাতেও বুয়া বলেছি। তখন তো তুমি একসেপ্ট করে নিলে। তাই বুয়া বলা নিয়ে আশা করছি কোনো সমস্যা নেই। আর কি কিছু বলেছি আমি?
বিভাবরী দাঁত চেপে বললো,
— আপনি যে একজন জঘন্য লোক, তা জানেন??
— হু, জানি।
— আপনাকে আমার সহ্য হচ্ছে না, একদম…
— আশ্চর্য! তুমি এভাবে রিয়াক্ট করছো কেন?
— আপনি জানেন না?
— না। প্রথম যখন তোমাকে বুয়া বললাম, তখন আমি না জেনেই বলেছিলাম। কিন্তু তুমি দেখি সত্যি সত্যিই… আবার, তোমার উড়নায় পানি মুছলাম। তখনও কিছু বললে না। আর এমনিতেও, বিভাবরী নামটা খুব বড়। তুমি আধুনিক বিশ্বের অত্যধুনিক মেয়ে। তোমার নাম হবে জেনি, মিমি, ইলা! এই টাইপের। সহজেই যেগুলো উচ্চারণ করা যায়। তা না…
বিভাবরী বাকি কথাটুকু না শুনেই হনহন করে চলে যায়। এখানে থাকলে ভয়াবহ রকমের কিছু হয়ে যেত। হয়তো রিশাদের দাঁত থাকতো না। অথবা দাঁত থাকলো কিন্ত মুন্ডু টাই আলাদা হয়ে যেত।
বিভাবরী অত্যন্ত তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে ভার্সিটি প্রবেশ করে। চোখ বন্ধ করে রিশাদকে কঠিন কঠিন গালি দিচ্ছে। তার রাগ যখন চরম হয়, তখন নিজেকে কন্ট্রোল করার জন্য সে এই টেকনিক অবলম্বন করে। অন্য সময় কাজে দিলেও, এখন এই টেকনিক টা কাজে লাগছে না। বরং বিপরীতে আরেকটা ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে গেছে। সে দ্বিতীয় বারের মতো কারো সাথে ধাক্কা খায়। বিভাবরী চোখ খুলে দেখে বেটে-খাটো একটা ছেলে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে। বিভাবরী ছেলেটা কে কিছু কঠিন শুনাবে। রিশাদের রাগটা সে এর উপরেই ঝারবে।
বিভাবরী একটা ভয়ঙ্কর কথা বলতে যাবে, তখনই ছেলেটা বলে উঠে,
— আছে, আছে!
বিভাবরী কঠিন গালিটা না দিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
— আছে মানে? কি আছে??
— মা আছে। কিন্তু বোন নেই।
— মানে…??
— মানে হলো, এখুনি তো বলতেন বাড়িতে মা-বোন নেই?? সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ধাক্কা দিতে ইচ্ছে করে। তাই আগে থেকেই বললাম, আমার বাড়িতে মা আছে, বোন না থাকলেও।
ছেলেটার কথায় বিভাবরী থ বনে যায়। বলে কি এ!
চলবে…