তোমারই আছি আমি !! Part- 16
অন্ধকারে মোবাইলের ফ্লাশ অন করতে নিলেই কেউ একজন সারাকে হাত ধরে টেনে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে মুখ চেপে ধরে। শরীরে স্পর্শ লাগতেই অন্ধকারে মুখ না দেখেও সারার তাকে চিনতে অসুবিধা হলো না। প্রবলভাবে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালাতে লাগল।
“ছাড়ুন,,, ছাড়ুন বলছি। আপনি এখানে এসেছেন কেন? আমি কিন্তু চিৎকার করব। এক্ষুনি ছেড়ে দিন নাহলে আপনার ভালো হবে না।”
তার পায়ের ওপর পা দিয়ে লাথির পর লাথি দিতে দিতে ছটফট করে সারা কথাগুলো বলল।
প্রতিউত্তরে লোকটা হাতের মুষ্টিতে সারার চুলগুলো আরো জোরে টেনে ধরেছে। যেন সবগুলো চুল গোড়া থেকে উপড়েই ফেলবে। অসম্ভব ব্যথা সারার চোখে পানি বইয়ে দিল। তারমধ্যে লোকটার নিশ্বাস। উফ,,,মুখের ওপর ঘনঘন ফেলেই যাচ্ছে একের পর এক। এদিকে এতকাছ থেকে লোকটার নিশ্বাস সাথে শরীরের গন্ধ সবকিছু সারাকে অবশ করে দিচ্ছে।
“বল্, ঐ তুরাগের সঙ্গে তোর কি সম্পর্ক? বল্,,,তোর জন্য ওর এত দরদ ওঠে কেন? কি এমন করলি যে তোর জন্য দিওয়ানা হয়ে গেছে। বল্ ,,,উত্তর দে।”
আকাশ এমন করছে যেন সারাকে মেরেই ফেলবে।
– এইসব নোংরা কথা আপনার মুখেই মানায়। আসলে যে যেমন সে তো সবাইকে তেমনই ভাববে,,,তাই না? সেটা যাই হোক আমি আপনাকে উত্তর দিতে বাধ্য নই। আমি কার সঙ্গে কি করেছি,,কে আমার জন্য দিওয়ানা হয়েছে এইসব কৈফিয়ত আপনাকে কেন দিতে যাব? কে আপনি? কেউ না। নিজের লিমিটে থাকুন। আপনার লাইফ নিয়ে আমি যেমন ইন্টারেস্ট দেখাই না আপনিও আমার লাইফে ঢোকার চেষ্টা করবেন না। যান,,দুইদিন পরে না বিয়ে আপনার! এখানে কেন? যান না,,নিজের হবু বৌয়ের কাছে যান।
কথা শেষ হওয়ার আগেই ডানবাহুপাশে তীব্র ব্যথা অনুভব করল।
– এখানে না? তুরাগ তোকে এখানেই ধরে রেখেছিল তখন।
বলেই ধারালো ব্লেডটা ইচ্ছামতো চালিয়ে আচড় কাটতে থাকে। সারা ব্যথায় কুকড়ে কেঁদে ওঠে।
সারার কান্নার শব্দে আকাশ চমকে ওঠে। তাকিয়ে দেখে সারার হাত থেকে গলগল করে রক্তস্রোত বয়ে যাচ্ছে। আর ব্যথায় কাঁদছে সারা। আকাশ এবার নিজের হাতে ধরা ব্লেডের দিকে তাকায়। তারমানে এই কাজটা সে-ই করেছে। রাগে-ক্ষোভে কি করছে সেদিকেও হুশ ছিল না। এক ঝটকায় ব্লেডটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সারার পাশে মাটিতে বসে পড়ে।
– পুতুল!! কতটা কেটে গেছে তোর!! দেখি হাত দে,,,খুব ব্যথা করছে তাই না? এক্ষুনি ঠিক হয়ে যাবে। দাঁড়া আমি দেখছি কি করা যায়। কিছুক্ষণ সহ্য কর্,,,
সারার কাটা জায়গাটা ধরে বারবার চুমু খায়।
– ছাড়ুন আমাকে। আপনি কি মানুষ না জানোয়ার?
আকাশ নিজের গায়ের থেকে শার্টটা ছিঁড়ে সেটা দিয়ে সারা’র হাত বাঁধতে থাকে।
– পুতুল প্লিজ শান্ত হয়ে বোস। তোর হাতটা ব়াঁধতে দে। নাহলে আরো রক্ত পড়বে। তোর যা মন চায় আমাকে করিস,,পরে করিস। এখন চুপ হয়ে বোসে থাক্। প্লিজ পুতুল। অনেক রক্ত পড়ছে তোর।।
আকাশ অস্থিরভাবে সারার হাত বাঁধছে আর সারা পা দিয়ে বারবার আকাশকে আঘাত করছে যাতে ছেড়ে দেয় সারাকে। আকাশের প্রতিটা ছোঁয়া অসহ্য লাগছে ওর।
– এই তো পুতুল আরেকটু লাগবে,,, বাসায় গিয়েই ওষুধ লাগিয়ে নিস। সায়ানকে বলিস ওষুধ দিয়ে দিতে। আবার চুপ করে থাকিস না ওরা টেনশন করবে বলে।
বান্ডেজ বাঁধা শেষ করে আকাশ সারার গালদুটো মুঠোর মধ্যে নেয়
-আমি বুঝতে পারি নি পুতুল,, তুই এতো ব্যথা পাবি। বিশ্বাস কর্,,আমি তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্য করি নি। আমার ভুল হয়ে গেছে পুতুল। আমাকে প্লিজ মাফ করে দে।
– ছাড়ুন। আপনার মতো জঘন্য লোক আমি একটাও দেখি নি। দুইদিন পরে একজনকে বিয়ে করবেন আর আজকে অন্য একটা মেয়ের হাতে ধরে চুমু দিচ্ছেন। লজ্জা নেই আপনার? আপনাকে যেন আমি আর আমার ধারেকাছে না দেখি। আপনার আসল রূপ চেনা হয়ে গেছে। আপনি কাউকেই ভালবাসেন না। আপনি শুধু সবার শরীরটা ভোগ করতে চান। আপনি খুব খারাপ, অসভ্য জঘন্য একটা মানুষ। ছিঃ ছিঃ আপনাকে চিন্তা করলেও এখন আমার ঘিন্না হয়। আমি কিভাবে আপনার মতো মানুষের জন্য এত পাগলামি করেছি,,,সবসময় আপনাকে পাওয়ার জন্য নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছি। আমি কিভাবে নিজেকে এতো নিচে নামালাম। শোনেন, আজকের পর আপনাকে আমি কখনো আমার চোখের সামনে দেখতে চাই না। আপনার মুখ যেন আমি আর দেখতে না পাই।
কথাগুলো বলে সারা সোজা হেঁটে চলে গেল। একবারো পেছনে ফিরে তাকলো না।
—————————————————————————–
যে দিনটায় খানবাড়ির সবার উৎসবে মত্ত থাকার কথা ছিল সেই দিনটায় খানবাড়ির সবার কপালে চিন্তার ছাপ। কারণ বরযাত্রী একটু পরেই রওনা দেবে তার মধ্যে আকাশ কোথায় কেউ জানে না। অনেকক্ষণ ধরে আকাশকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।
বেবিন খান চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছেন। এখন মেধার বাবাকে কি জবাব দেবেন তিনি।
তখনই মেধাদের বাড়ি থেকে ফোন মেধা নাকি পাগলামি শুরু করেছে। বলছে এই বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই।
চলবে