তোকে চাই – Season 2 ! Part- 40
গাড়িতে চুপচাপ বসে আছি আমি….আমার ঠিক সামনেই চোখ মুখ লাল করে বসে আছেন শুভ্র।। উনার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতোটা রেগে আছেন উনি…আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি আর ঢোক গিলছি….এই মুহূর্তে রাতুল ভাইয়াকে ধরে ড্রেনে চুবাতে ইচ্ছে করছে আমার…শিশির স্যারের সামনে উল্টা পাল্টা বলে আমার মানসম্মান শেষ করে আবার শুভ্র ভাইয়াকেও জানিয়েছেন সব…এখন যে উনি আমায় ধরে চটকাবেন তার কি হবে শুনি??এর দায় কে নিবে?রাতুল ভাইয়ের অদ্ভুত সব কথাবার্তায় শিশির স্যারের মাথা উল্টে গেছে নির্ঘাত…তাই কোনোরকম আমার হাতে একটা কাগজ গুঁজে দিয়েই উঠে চলে গেছেন উনি।।এদিকে চিত্রারও খবর নেই…কে জানে আমায় খুঁজছে কি না।।শুভ্র ভাইয়ার ধমকে ঘোর কাটলো আমার,,,ভয়ে ভয়ে উনার দিকে তাকাতেই গলা শুকিয়ে কাঠ-
.
কি সমস্যা তোমার?শিশির স্যারের সাথে তোমার কিসের এতো পার্সোনাল কথা??চুপ করে আছো কেন??আন্সার মি!!(চিৎকার করে)
.
আ আপনি ভুল করছেন।উনার সাথে আমার কোনো পার্সোনাল কথা নেই….আমার সাথে উনার পার্সোনাল কথা ছিলো।
তাই থাকবে কেন?আমার বউয়ের সাথে বাইরের লোকের পার্সোনাল কথা কেন থাকবে?কি চায় সে?নিশ্চয় তোমাকে চায়?
.
সেটা আমি কি করে বলব??উনার কি বলার ছিলো সেটা উনিই ভালো বলতে পারবেন। তাছাড়া সবসময় এতো নেগেটিভ কথা ভাবেন কেন শুনি?এই দুনিয়াতে আপনার বউ ছাড়াও অনেক মেয়ে আছে…অনেক টপিক আছে কথা বলার।।এমনও তো হতে পারে অন্যকিছু বলতে চাইছিলেন আমায়….কোনো হেল্প প্রয়োজন ছিলো হয়তো!!
.
হেল্প?? তোমার মাথা।।তুমি কি সমাজসেবিকা যে হেল্প করবা…বাচ্চা একটা মেয়ে।।তোমার কাছে কিসের হেল্প??(রাগী গলায়)
.
আশ্চর্য আবার আমাকে জিগ্যেস করছেন।।আমি কি করে বলবো কিসের হেল্প….তবে যাওয়ার সময় একটা কাগজ দিয়েছিলেন হাতে।।ওটা পড়া হয় নি এখনো…
.
কথাটা বলে আনমনে ব্যাগ থেকে কাগজটা বের করতেই ছিনিয়ে নিলেন উনি।।চরম রেগে কাগজটা খুলে কিছুক্ষণ সেদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেই ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন।। আমিও উচ্ছুক চোখে তাকালাম….কি লেখা আছে ওতে??আমার উঁকিঝুঁকি দেখে চিঠিটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সিটে গা এলিয়ে দিলেন উনি।আমি উনার বিহেভে অবাক হলেও ঝটপট চিঠিটা হাতে নিয়েই চোখের সামনে মেলে ধরলাম-
.
রোদেলা,
কথাটা কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না।চরম অস্বস্তি লাগলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি।চিত্রাকে আমি পছন্দ করি।ওর সাথে প্রায় ৫/৬ মাস আগেই বিয়ে ঠিক হয়েছে আমার।।প্রথম যেদিন ওকে দেখতে গিয়েছিলাম তখন জানতাম না ও এই ভার্সিটিরই স্টুডেন্ট পরবর্তীতে জানতে পারি।আমি ওকে যখন দেখেছিলাম মনে হয়েছিলো ও খুবই লাজুক একটি মেয়ে…আমার দিকে তাকাতেই পারে নি লজ্জায় কিন্তু ভার্সিটিতে অন্য এক চিত্রাকে দেখি আমি।।হাসি মজায় উচ্ছ্বসিত এক তরুনী।। অদ্ভুত এক কারণে ও আমায় ভয় পায়….ভীষন ভয় পায়।আমি ওর সাথে সহজ হওয়ার অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।ও ভয় পায় বলে বিয়েটাও পিছিয়ে দিয়েছি তবু ওর ভয়।আমি ভেবেছিলাম তোমার সাথে যেহেতু ও ফ্রী তাই তোমার সাথে যদি ফ্রী হওয়ার চেষ্টা করি তাহলে হয়তো ওর কাছাকাছি যাওয়া সহজ হবে।।তুমি কি একটু হেল্প করবে আমায়? স্যার হিসেবে নয় বড় ভাই হিসেবে রিকুয়েষ্ট করছি….প্লিজ রোদেলা হেল্প মি….আই নিড চিত্রা….ওর হাসিমাখা মুখ সহই আমি ওকে চাই।।
শিশির
.
.
চিঠিটা পড়ে আমি স্তব্ধ….. এই হারামীটার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর আমি জানি না??চিত্রা আমাকে বলার প্রয়োজনই বোধ করলো না?অসভ্য মাইয়া…এখন বুঝতে পারছি শিশির স্যারকে দেখে তার এতো কাঁপা-কাঁপি ধাপা-ধাপির কারণ কি।।হারামিটাকে একবার পাই কাছে…থাপড়াইয়া গাল ফাটিয়ে ফেলবো….আমার থেকে কথা লুকানো??এবার তো ওর বাসরে সিসি লাগানোর প্ল্যান কনফার্ম হুহ….আমি যখন এসব ভাবতে ব্যস্ত তখনই পাশ থেকে গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলো শুভ্র-
.
তো শালি সাহেবার বিয়ে ঠিক!!আর তুমি আমার বন্ধু টাকে ছ্যাকা খাওয়ানোর প্ল্যান করছিলে….মাই গড রোদ…সাহেল যদি সত্যি রাজি হয়ে যেতো তখন কি হতো বলো তো??(দুষ্টু হেসে)
.
উনার কথায় মুখ গোমরা করে বসে রইলাম আমি।সত্যি তো কি হতো তখন??আমি উনার দিকে করুন চোখে তাকাতেই হেসে উঠলেন উনি…..আমার দিকে ঝুঁকে সিট ব্যাল্ট বাঁধতে বাঁধতে বলে উঠলেন-
হয়েছে আর মুখ ফুলাতে হবে না।এবার চলো..অলরেডি অনেক লেইট হয়ে গেছে…বাবা দুটোর মধ্যে বাড়িতে থাকতে বলেছেন আর এখন অলরেডি ২ টা ১০ বাজে।
.
বাড়িতে থাকতে বলেছেন মানে?কোথাও যাবেন বুঝি আপনারা?
.
জি ম্যাম যাবো।শুধু আমি না আপনিও যাবেন।(মুচকি হেসে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে)
.
আমি?আমি কেন?মাকে বলা হয় নি তো….মা বকবে….
.
বকবে না গো বউ।বাবা বলে রেখেছেন।বাবার আদেশেই নিয়ে যাচ্ছি তোমায়।
.
মামু?কিন্তু হঠাৎ কেনো??
.
আজকে নানাভাইয়ের মৃত্যু বার্ষিকী।বছরের এই দিনটাতে পরিবারের সবাই মিলে এতিমখানায় যাওয়া হয়…..এতিম ছেলেমেয়েদের খাবার ও পোষক দেওয়া হয়।আর এতিম খানার পাশের মসজিদে মিলাত হয়….. এবার যেহেতু বাড়ির দুই ছেলেই বিয়ে করেছে….তাই নানুর ইচ্ছে এতিমদের খাওয়ানোর কাজটা তার দুই নাতবউ করবে….এবার বুঝলেন ম্যাডাম??(নাক টেনে)
.
বুঝলাম কিন্তু আমি কেন?ফ্যামিলির কেউ তো আমাদের বিয়েটা মানেই না….যদি মানতো তাহলে তো আপুর মতো আমিও আপনার সাথেই থাকতাম…তাই না??
.
কাহিনী কি রোদু?আমার সাথে থাকার এতো ইচ্ছে তোমার?কই আগে তো বলো নি…(দুষ্টু হেসে)
.
আরে স..স..সেটা বলেছি নাকি?আমি বলছিলাম যে…আমাদের বিয়েটা তো ফ্যামিলিতে কেউ মানেই নি।মামু তো নিজের মুখেই বলেছে…..তাহলে আমি কেন?
.
আমার কথায় হাসলেন শুভ্র।গালের উপর এসে পড়া চুলগুলো কানে গুঁজে দিতে দিতে বলে উঠলেন –
.
পাগলী!!বিয়ে তো বিয়েই হয়,,সেটা আবার মানা না মানার কি আছে??আর তোমায় কে বললো যে আমাদের বিয়েটা কেউ মানে নি??বাবা তো ওটা এমনি বলেছে….
.
তাহলে আপুর মতো আমি আপনাদের বাসায় থাকি না কেন??
.
কারণ আপনার আপুর হাজবেন্ড সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট….সে চার বছর ধরে ব্যবসার সাথে যুক্ত আপনার বোনের সকল প্রয়োজন সে নিজের উপার্জনে মেটানোর এবিলিটি রাখে।কিন্তু আপনার হাজবেন্ডের আপাতত সে এবিলিটি নেই।।বাবার টাকা আমাদের দুই ভাইয়ের হলেও সেটা বাবারই টাকা আমাদের নয়।।তাই ভাই যেমন স্বাবলম্বী তেমন আমাকেও হতে হবে…..ভার্সিটি জয়েন করেছি একমাসও হয় নি….বিজনেসে যে প্রজেক্টটায় কাজ করছি সেটাও মাঝামাঝি এখনও কমপ্লিট হয় নি।।(একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে) যতদিন না তোমার সকল প্রয়োজন মেটানোর মতো সামর্থ্য আমার হচ্ছে ততদিন তোমার থেকে দূরেই থাকতে হবে আমায়…এটাই বাবার শর্ত….!!তাই তো দিনরাত কাজ করছি….এই প্রজেক্টটা শেষ হলে অনেকটায় সামলে নিতে পারবো আমি….
আমি উনার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি আর উনি সামনের দিকে তাকিয়ে আলতো হাতে ড্রাইভ করছেন….. শার্টের হাতা ফোল্ড করে রাখায় হাতের লোমগুলো স্পষ্ট… আমি খুব মনোযোগ দিয়ে লোমগুলো দেখছি…হাতের লোমও এতো সুন্দর হয় বুঝি?বামহাতের কব্জির খানিকটা উপরে কি চমৎকার একটা তিল!!ওই তিলটাতে ঠোঁট ছোঁয়ালেই বুঝি কেঁপে উঠবে শরীর?উনার হাত থেকে দৃষ্টি সরিয়ে উনার মুখের দিকে তাকালাম….গাড়িতেও সানগ্লাস পড়েছেন উনি….ধপধপে ফর্সা মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি….ঠোঁট দুটো ডার্ক রেড….মাঝে মাঝেই উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরছেন…সাথে সাথেই বামপাশের গালটাতে চমৎকার একটা গর্ত তৈরি হচ্ছে….উনার যে হাসলে বামপাশে টোল পড়ে জানায় ছিলো না আমার!!আমি গাড়ির সিটে ঠেস দিয়ে বসে আবারও উনার দিকে তাকালাম….টাইয়ের নাটটা একটু ঢিলা করে…সাদা শার্টের ওপরের দুটো বোতম খোলা রেখেছেন উনি।।এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে….এই দুটো বোতাম খোলা রাখার কারনেই এতোটা ড্যাশিন লাগছে উনাকে।।বোতাম দুটো লাগিয়ে রাখলে একটুও মানাতো না উনাকে…একটুও না!!আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলতেই দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে উঠলেন উনি-
.
আমাকে স্ক্যান করা শেষ রোদপাখি?তো কি কি দেখলে?
.
#চলবে🍁