তোকে চাই

তোকে চাই – Season 2 ! Part- 14

আমি কথা বলতে পারছি না ব্যাপারটা খেয়াল করা মাত্রই একধরনের অস্থিরতা শুরু হয়ে গেলো আমার মাঝে।।মাকে কাছে ডাকার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।কারণ শরীরের কোনো অঙ্গ নড়ানোর শক্তিই আমার নেই।।অনেক চেষ্টা করেও পারছি না।।ছটফট করছি,,জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি।।কি হচ্ছে আমার সাথে?কেনো হচ্ছে?এক সময় ডক্টর এলেন…আমার পাশে এসে বলে উঠলেন…
.
রিলেক্স মামনি!!রিলেক্স। আই নো তুমি কথা বলতে পারছো না,শরীর নাড়াতে পারছো না।।একটু শান্ত হও…আমি তোমাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলছি।ইউ আর আ ইন্টেলিজেন্ট গার্ল।।সবারই একধরনের ফোবিয়া থাকে।কেউ অন্ধকারে ভয় পায়,কেউ পানিতে, কেউ কোনো জীবজন্তুতে।।তোমার ফোবিয়াটা হলো রক্তে।তুমি রক্তে ভয় পাও।।প্রচন্ড রকম ভয় পাও।তুমি যে পরিস্থিতিতে ছিলে তাতে যেকোনো মেয়েই ভয় পেয়ে যাবে এটা স্বাভাবিক বাট তোমার সামনে ঘটা ঘটনাগুলো,,তোমার দেখা রক্ত।। এসব তোমার ব্রেন মেনে নিতে পারে নি।।যার প্রভাব তোমার শরীরে পড়েছে।তুমি তোমার শরীরের কার্যক্ষম হারিয়েছো।সাথে কথা বলার শক্তি।।কিন্তু ব্রেন সচল এবং সম্পূর্ণ সুস্থ।কিন্তু রোদ… তোমার সমস্যাগুলো সাময়িক।২৪ ঘন্টার মধ্যে তোমার শারীরিক কার্যাবলি আবারও শুরু হবে।।নো টেনশন…কিন্তু কথা কবে থেকে বলতে পারবে তা বলতে পারছি না।।তবে খুব শীঘ্রই সব ঠিক হয়ে যাবে।।অতিরিক্ত ভয়ের কারনে তোমার ব্রেনের রক্ত সঞ্চালন প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো তাই এমনটা হয়েছে।।তবু কনফিডেন্স রাখো।।হাইপার হলে এর থেকেও বড় সমস্যায় পড়তে পারো।আমি তোমায় ঘুমের ইনজেকশন দিচ্ছি…আশা রাখছি তুমি ট্রামাটা কাটিয়ে উঠতে পারবে আর শারীরিক কার্যক্ষমতা ফিরে পাবে।।তোমাকে মেন্টালি স্ট্রং থাকতে হবে।।ইউ ক্যান ডু ইট রোদ।।ট্রাই..ওকে??

ডক্টর একটানা বলে গেলেন।আমিও শুনে যাচ্ছি…চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।মায়ের কান্নার আওয়াজ পাচ্ছি।।আমি কি কখনোই সুস্থ হতে পারবো না??কথা বলতে পারবো না??আচ্ছা,সাকিব নামের ছেলেটা সুস্থ আছে তো?এমন ছেলে এখন পাওয়া যায় না….আমাদের সমাজের ছেলেরা দুই শ্রেনীতে ভাগ হয়ে গেছে এখন।এক.পশু শ্রেনী…দুই.কাপুরুষ শ্রেনী। কিন্তু সাকিব এই দুই শ্রেনীর কোনোটারই আওতায় পড়ে না।।ওকে আমাদের এই নষ্ট সমাজে বড্ড প্রয়োজন।।ভাবতে ভাবতেই চোখ ভার হয়ে এলো ঘুম।।এই ঘুম থেকে আর উঠতে পারবো তো??শুভ্র ভাইয়া কোথায়??উনি কি এই ছেলেগুলোকে এমনি ছেড়ে দিবে??
.
🍁
.
গভীর ঘুমেও কপালে কারো ঠোঁটের স্পর্শ পাচ্ছি।।কেউ কপালে বারবার ঠোঁট ছুঁইয়ে চলেছে।।কপালে টপাটপ পানি পড়ছে।আচ্ছা আমার কেবিনের ছাদ কি ফুঁটো করা?বৃষ্টির পানি পড়ছে?না কেউ কাঁদছে?কে মা??নাকি আপু??নাকি অন্যকেউ।।অনেক কষ্টে চোখ মেলে তাকলাম…ঘারটা আস্তে করে ঘুরিয়ে দেখলাম কেউ নেই,,দরজা নড়ছে মাত্রই কেউ বেরিয়ে গেলো।।কে ছিলো ওটা??কপালে হাত রেখে পানির অস্তিত্বও পেলাম।তারমানে হিলোসিনেশন ছিলো না সত্যিই কেউ ছিলো এখানে….কিন্তু কে?হঠাৎ করেই খেয়াল করলাম আমি হাত নাড়াতে পারছি।।কিন্তু পা টা এখনো ভারি।। কথাও বলতে পারছি না।।নিজেকে অসহায় লাগছে…এভাবে শুয়ে থাকার কোনো মানে হয়?একটু পরই ডাক্তার এলো।।আমাকে খাবার খাওয়াতে বলে বেরিয়ে গেলেন।কিছুক্ষণের মধ্যেই দুনিয়ার সব খাবার এনে আমার সামনে রাখলো মামু।এইসব এক্সপেন্সিভ বিশ্রী খাবার দেখেই চোখ মুখ কুঁচকে গেলো আমার।।আমাকে ধরে বসিয়ে রাখা হয়েছে।।অনবরত এটা ওটা খাবার জন্য জোড় করে চলেছে মা।কিন্তু আমিও প্রতীজ্ঞাবদ্ধ এসব কিছুতেই খাবো না।।আমি কথা বলতে পারছি না বলে এরা আমার পছন্দের গুরুত্ব দেবে না??এটা কেমন কথা?একঘন্টা যাবৎ চেষ্টা করে আম্মু তুমুল বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন…
.
না খেলে এভাবেই মুখ বন্ধ হয়ে পড়ে থাকতে হবে।।বুঝতে পারছিস?? মা রে খেয়ে নে না,,জেদ করে না সোনা।।তুই কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস?
.
আমি চুপচাপ মুখ ফুলিয়ো বসো আছি। আমার মধ্যে কোনো হেলদুল নেই।তখনই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেই বলে উঠলো কেউ…
.
ফুপ্পি?তুমি বাসায় গিয়ে রেস্ট নাও।আমি ওকে খাওয়াচ্ছি।
.
মা ঘাড় ঘুরিয়ে শুভ্রকে দেখতে পেয়েই বলে উঠলেন…
.
তুই পারবি? আমি একঘন্টায় মুখটা খুলাতে পারলাম না।।এতো ফাজিল হয়েছে মেয়েটা।।অসুস্থ অবস্থায় ফাজলামো যাবে না।।
.
পারবো ফুপ্পি তুমি যাও তো…(মিষ্টি হেসে)
.
সিউর?
.
হান্ডেট পার্সেন্ট!!
.
আচ্ছা তাহলে তুইই চেষ্টা করে দেখ।।আমি আসছি।।
.
মা চলে যেতেই উনি বেডের সামনে রাখা চেয়ারে বসে পড়লেন।।হাতের ব্যাগটা পাশে রেখে হাত-পা টান টান করে মাথা পিছনের দিকে হেলিয়ে করে বসলেন।।উনার গলার একটা অংশ উচু হয়ে আছে।।বারবার উঠানামা করছে।।অন্যরকম সুন্দর লাগছে উনাকে।।পড়নে সাদা-কালো চ্যাক শার্ট,, ব্রাউন কালার জিন্স।।হাতাটা কনুই পর্যন্ত গুটানো।বাম হাতে ব্যান্ডেজ।।ডান হাতে ঘড়ি।।চোখদুটো লাল হয়ে ফুলে আছে…মনে হচ্ছে সারারাত ঘুমোন নি উনি।সিল্কি চুলগুলো আজ প্রথম অগোছালো।।কেমন পাগল পাগল ভাব চোখে মুখে।।এই পাগল চেহারাটায় অন্য কাউকে পাগল করার জন্য যথেষ্ট।।আমি চুপচাপ উনার দিকে তাকিয়ে আছি।।উনি এবার সোজা হয়ে বসলেন।ডানহাতে চুলগুলোতো হাত চালিয়ে বললেন…
.
খাচ্ছো না কেন??ক্ষুধা পাই নি?

আমি মুখ ফুলিয়ে চুপচাপ বসে গোলগোল চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই মাথা নিচু করে মুচকি হেসে অন্যদিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন।আমি উনার হাসি দেখে ভ্রু কুচঁকে তাকালাম…উনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসি কন্ট্রোল করে বলে উঠলেন…
.
রোদ ইউ নো হোয়াট?তুমি সবসময় এমন মুখ ফুলিয়ে চুপ করে বসে থাকলেও ব্যাপারটা খারাপ হবে না।।ইউ আর লুকিং সো কিউট।।গুলুমুলু গাল..(গাল টেনে)
.
উনার এমন বিহেভ আমার জন্য অপরিচিত।আমি ভ্রু কুঁচকে ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে আছি।উনি আবারও বলে উটলেন..
.
ভ্রু কুঁচকাবে না।এখন বলো খাবে না?খেতে ইচ্ছে করছে না?
.
আমি চুপচাপ উনার দিকে তাকিয়ে আছি।।বাচ্চাদের মতো কুটুরকুটুর চোখে তাকিয়ে আমার অসহায়ত্ব বুঝানোর চেষ্টা করছি।।উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে হালকা গলায় বললেন…” ওওকে!!” নার্স??নার্স??
.
তৎক্ষনাৎ দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলো একটা অল্প বয়সী নার্স।সে ও টুকুরটুকুর চোখে তাকিয়ে আছে শুভ্রর দিকে।।শুভ্র মুচকি হেসে বললো…”এক্সকিউজ মি??এই খাবারগুলো নিয়ে যান” নার্সটা এখনও দাঁড়িয়েই আছে।।মেয়েটাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘাড় ঘুরিয়ে রাগী চোখে তাকিয়েই বলে উঠলেন…”আপনি কি যাবেন???” এবার নার্সটা নড়েচড়ে উঠলো।। খাবারগুলো নিয়ে বেরিয়ে গেলো।।আমি আগের মতোই শান্ত হয়ে বসে আছি।।ক্ষুধা লেগেছে ব্যাপক।এই খাটাসটা যে খাবার পাঠিয়ে দিলো তো আমি খাবো কি?এই সাদা বিলাই কি সুযোগের সৎ ব্যবহার করে আমাকে শাস্তি দেওয়ার পায়তারা করছে নাকি??এবার উনি পাশের ব্যাগ থেকে খাবারের বাটি বের করে প্লেটে সাজাতে লাগলেন।।আমি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছি।।একদম নরমাল খাবার এনেছেন উনি..বেগুন ভাজি,,ছোট মাছের চচ্চড়ি,,শাক পাতা,,ডালের বড়া…খাবারগুলো দেখেই মুখে পানি এসে গেলো আমার।।উনি হাত ধুয়ে প্লেটটা সোফ্টলি হাতে নিলেন।।আমার মুখের সামনে খাবার ধরে বললেন “হা” করো।।আমিও তাড়াতাড়ি মুখে নিয়ে নিলাম।কথায় আছে না?পেট ঠান্ডা তো সব ঠান্ডা।।এই মুহূর্তে উনাকে একটা কিসসি দিয়ে দাওয়া উচিত…উনি কিভাবে জানলেন এসব আমার ভালো লাগবে??হঠাৎই উনার ফোন বেজে উঠলো বামহাতে ফোনটা ধরে লাউডে দিয়ে বেডে রাখলেন….
.
হ্যালো?
.
হ্যা সাহেল বল…
.
দোস্ত সাকিবের তো এখনও জ্ঞান ফিরলো না।।আর দুই ঘন্টা আছে অবজারভেশনের।।এইবার আমার ভয় লাগছে ছেলেটা বাঁচবে তো?
.
উনি আমার দিকে একবার তাকিয়েই বলে উঠলেন…”টেনশন নিস না।।ঠিক হয়ে যাবে।।ঠিক ওকে হতেই হবে।”
.
হুম…আল্লাহ ভরসা।।আর শোন তোর কথা মতো বেশ কিছু মসজিদে সাকিব আর সানশাইনের জন্য জুমার নামাযের পর দোয়া আর কুরআন ক্ষতমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।।আচ্ছা পিচ্চি মেয়েটা কেমন আছে??

হুম ভালো।বকবকানিটা নেই।।তেজ আগের মতোই আছে।
.
হা হা হা হা…তুই ও না।আচ্ছা আর একটা কথা…ফারুককে কি এখন হসপিটালে পাঠাবো??যে পরিমান রক্ত গড়িয়েছে।।আরো পড়লে তো ব্যাটা মরে যাবে…
.
এ নিয়ে তোর সাথে পরে কথা বলছি। বাই..
.
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলেন উনি।।আমি বিস্ময়মাখা চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।।মাথায় চলছে সাকিবের কথা।।ছেলেটা বাঁচবে তো?ওর কিছু হয়ে গেলে নিজেকে ক্ষমা কিভাবে করবো আমি??চোখ দিয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো…উনি পাশের টেবিল থেকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললেন..
.”
“চোখ মুছে।খবরদার চোখের পানি পরছে তো খুন করে ফেলবো।।সারাটা রাত টেনশনে রেখে এখন কাঁদছো।।আরেকটা ফোঁটা পড়লে এখনি খিঁচে দিবো এক চড়।”
.
আমি কাঁদো কাঁদো চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।।দেখো কেমন ফাজিল ছেলে।।আমার এই অবস্থায়ই ও আমায় চড় মারতে চাইছে…খাটাস একটা।।আজ কথা বলতে পারছি না বলে যা ইচ্ছে তাই বলবে নাকি??
.
#চলবে🍁