তোকে চাই !! Part- 37
মামানির এই কথায় শুভ্র কতটুকু লজ্জা পেয়েছিলেন জানি না,,তবে কাশতে কাশতে যে যক্ষা রোগীর পদবীটা ছিনিয়ে নিতে চাইছিলেন,, সে বেশ বুঝতে পেরেছিলাম,,,,কিন্তু ছেলের এই করুন অবস্থায় মামানির বিন্দুমাত্র দয়া হলো বলে মনে হলো না,,,উনি দুর্দান্ত গতিতে তার প্রশ্ন ছুঁড়ে চলেছেন,,,
।
শুভ্র??এটা ফ্যামিলি প্ল্যানিং করার টাইম নাকি??রোদ কতো বাচ্চা একটা মেয়ে,,,ওকেই আমায় সামলাতে হয়,,,ওর বাচ্চাকে কে সামলাবে???রোদের এডমিশনের আরো দুইমাস আছে,,সেপ্টেম্বরে এক্সাম আর তুই এই সময় এইসব প্ল্যানিং করছিস??এসব নাই বাদই দিলাম,,আমি যে বাচ্চাদের এক সিট করে ড্রেস কিনে ফেলেছি,,,এবার তো নতুন করে শপিং করতে হবে,,সবাইকে বলতে হবে,,কতো কাজ।।।
।
মামানির কথাগুলো শুনে আমি রীতিমতো “হা”।।উনি কই থেকে কই চলে গেছেন???হায় আল্লাহ দরি ফালাও,,,শুভ্রর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম সেও হাবলার মতো তাকিয়ে আছে,,,মামানি এক নিশ্বাসে কথা বলেই চলেছেন,,,যাকে বলে ননস্টপ টকিং ।।।
তুই যে মার সেইদিনের বাচ্চা বিষয়ক কথা এতো সিরিয়াসলি নিয়ে নিবি আমি ভাবতেই পারি নি,,,,আর রোদ??তুই কিভাবে,,,
।
মা?(চাপা গলায়)
।
রোদ তুই কিভাবে প্রশ্রয় দিলি??কই এডমিশনের পর হানিমুন টানিমুনে যাবি তা না,,,এখনি,,,
।
মা প্লিজজজজ
।
কি হয়ছে??চেঁচাচ্ছিস কেন??
।
মা তুমি একটা কামড় থেকে বাচ্চার জন্য শপিং পর্যন্ত চলে গেছো,,,তাহলে সত্যি সত্যি বাচ্চা পেটে আসলে তো দেখি ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলবে,,,,
।
কি বলতে চাচ্ছিস তুই??(ভ্রু কুচঁকে)
।
মা??এতো ফাস্ট না দৌড়াই একটু স্লো হও,,, তুমি যে আকাশ-পাতাল ভাবছো,,,তা কিছুই নয়।।রোদ আর আমি ঝগড়া করছিলাম,,,,তাই এই কামড়াকামড়ি,,,
।
হোয়াটটট???তোরা কি বাচ্চা যে কামড়া কামড়ি করিস??(অবাক হয়ে)
।
তোমার বউমা তো বাচ্চাই,,(নিরীহ ভঙ্গিতে)
।
বউমা বাচ্চা হলেও তুইতো ধামড়া ছেলে,,,ছি ছি,,এসব কি??বউয়ের সাথে ঝগড়া করে কামড়া কামড়ি,,মানসম্মান সব ধুলোই মিশিয়ে দিবি দেখছি,,,ওসব নয় বাদই দিলাম আমি যে কতো কিছু ভাবলাম,,,শপিং করবো,,দুই বাচ্চাকে একসাথে কোলে নিয়ে পার্কে ঘুরবো,,,সারাবাড়ি ঘুরে ঘুরে দুই নাতনীকে খাওয়াবো,,,,আর তুই সব ভাবনায় পানি ঢেলে দিলি হতচ্ছাড়া,,,,
।
আমি অবাক হয়ে মামানির কথা শুনছি,,,এর মধ্যে উনি এতো কিছু ভেবে ফেলেছেন???এখন আমারও মনে হচ্ছে উনি সত্যিই বেবি আসার আগেই বেবির বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলবেন।।তবে আমাদের কামড়া-কামড়ির ব্যাপারটি মামানির জানা থাকায় একদিকে ভালোই হয়েছে,,উনিই সবার প্রশ্নের হাত থেকে কয়েক দফা বাঁচিয়ে দিয়েছেন।।।
দুদিন যাবৎ কোচিং এ ও যায় না,,,সারাদিন ঘর বন্ধি হয়ে থাকতে কার ভালো লাগে???ভালোবাসা যেমন ভালো,,অতি ভালোবাসা তেমনি খারাপ।।যা এখন আমি প্রকটভাবে বুঝতে পারছি।।। বিছানায় পা উঠিয়ে,,গাল ফুলিয়ে বসে আছি,,,,সব কিছুই বিরক্তিকর লাগছে,,,আর এই বিরক্তি চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েই চলেছে,,,ইচ্ছে করছে কাউকে ইচ্ছেমতো চড়াই,,এটা মন ভালো করার ভালো ট্রিক,,,বাবা মার সাথে কথা বলতে পারলেও হতো,,,ভাইয়া নামক ডাফারটার সাথে কিছুক্ষন বকবক করলেও মন ভালো হয়ে যাওয়ার চান্স ছিলো কিন্তু আমার কাছে ফোন থাকলে তো,,,,হঠাৎই উনি রুমে ঢুকলেন,,আমি এমন একটা ভাব করলাম যেনো উনাকে দেখিই নি,,,,উনি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন,,তার মূল কারন তিনি কয়েকবার আমাকে ডেকেছেন কিন্তু কাঙ্ক্ষিত উত্তর তার মেলে নি।।
।
কি সমস্যা??কথা বলছো না কেন??(একদম সামনে এসে দাঁড়িয়ে)
।
ইচ্ছে করছে না তাই,,,
।
ইচ্ছে কেনো করছে না??(ভ্রু কুচঁকে)
।
মুড সুয়িং করছে,,ব্যাপক বিরক্ত লাগছে,,,(ঠোঁট উল্টিয়ে)
।
তাই??
।
উনার তাই কথাটা শুনে উনার দিকে আড়চোখে তাকালাম,,,উনাকে দেখে মনে হচ্ছে,,আমার মুড সুয়িং এর ব্যাপারটাই উনি চরম খুশি।।।উনার এমন অবাঞ্ছিত খুশি খুশি ভাব দেখে,,অটোমেটিকলি আমার ভ্রু কুঁচকে গেলো,,,,
।
কি ব্যাপার?এতো খুশি খুশি লাগছে কেন আপনাকে??
।
ভাবছি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো,,দেখবে মুড সুয়িং ভাবটা হাওয়া হয়ে গেছে,,,
।
আমি উনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,,,উনার মাথায় কি চলছে,,তাই বুঝার চেষ্টা।।
।
জটপট তৈরি হয়ে নাও,,,
।
আপনার ফোনটা দিবেন প্লিজ??
।
কেনো??(ভ্রু কুচঁকে)
।
আমার কাছে ফোন নেই,,একটা আপনি ভাঙছেন অন্যটা বাসায় ফেলে আসছি,,,,আম্মুর সাথে কথ বলবো(মুখ ফুলিয়ে)
।
ওহ,,,ওকে
।
উনি ফোনটা আমার হাতে দিলেন,,,খুশি খুশি মনে মনে স্ক্রিনটা অন করতেই,,,স্ক্রিন সোজাসাপ্টা ভাবে জানিয়ে দিলো তার পাসওয়ার্ড চায়,,নয়তো সে খুলবে না।।।ব্যাপারটা সে যতো সহজভাবে বললো,,আমার মেজাজ ততো সহজ ভাবে নিলো বলে মনে হলো না,,বিরক্তি আগের থেকে কয়েকধাপ এগিয়ে গেলো,,,এই সাদা বিলাইকে কি করা যায়??ব্যাটা পাসওয়ার্ড না খুলেই ফোন হাতে তুলে দিলো,,আহাম্মক একটা।।।
।
এইযে??আপনার ফোনের পাসওয়ার্ড কি??
।
উনি ল্যাপটপ দেখছিলেন,,আমার কথায় মাথা উঠিয়ে বলে উঠলেন,,,”দাও খুলে দিচ্ছি”
।
না,,আপনি বলুন,,, আমি ইন করছি,,
।
আমি বলছি তো দাও আমি খুলে দিচ্ছি,,
।
আমিও তো বলছি আপনি বলুন,,,,কি এমন জিনিস আছে যে পাসওয়ার্ড শুনে নিলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে,,,(ভ্রু কুচঁকে)
।
আশ্চর্য এমন সিম্পল একটা বিষয়ে তুমি জেদ করছো কেন??(রাগী গলায়)
।
আশ্চর্য এমন সিম্পল একটা বিষয়ে আপনি জেদ কেন করছেন??নাকি কারো সাথে চক্কর চলছে??(সন্দেহের দৃষ্টিতে)তাই এতো ইনসিকিউর ফিল করছেন???(ভ্রু নাচিয়ে)
।
ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল,,,, এতো জেদি কেন তুমি??যত্তোসব,,,ওকে তুমিই ইন করো,,,(রাগী গলায়)
।
হ্যা হ্যা বলুন,,,(উৎহাস নিয়ে নড়েচড়ে বসে)
।
“মাই পুচকি”
উনার কথাটা শুনেই আমার দৃষ্টি সরু হলো,,,পুচকি??ইটস মি??ব্যাপারটা ভাবতেই আমার মুখ “হা” হয়ে যাওয়ার উপক্রম,,,,আমি “থ” মেরে বসে আছি,,,উনি উঠে এসে ফোনটা হাত থেকে নিয়ে লক খুলে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।। যেতে যেতে বলে গেলেন,,,”রেডি হয়ে নাও,,আমরা বেড়োবো”,,,আমি এখনো চুপচাপ বসে আছি,,নিজেই বুঝতে পারছি না আমার ভেতরের অনুভূতিটা আসলে কি???,,,অবাক হয়েছি নাকি খুশি হয়েছি,,,,
।
।
দুজনেই নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি,,এটা সেই জায়গা যেখানে উনি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলেন,,আজও এমন কিছুর প্ল্যান করছেন না তো???আমি উনার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছি কিন্তু উনি আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন,,,ব্যাপারটা ব্যাপক রহস্যজনক,,,
।
#চলবে,,,,