তোকে চাই !! Part- 31
বেডে আধশোয়া হয়ে বসে আছি,,পাশে আপু আর মামানি।।আপু অনর্গল কথা বলে চলেছে,,আমার চুপচাপ বোনটা আজ এতো বাচাল কিভাবে হয়ে গেলো বুঝতে পারছি না।।হঠাৎই কেউ একজন প্রচন্ড জোড়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো,,,প্রথম দফায় চমকে গেলেও শুভ্রকে দেখে শান্ত হয়ে বসলাম।।উনি একপ্রকার দৌড়ে ভেতরে ঢুকলেও আমাকে বসে থাকতে দেখা মাত্র থেমে গেলেন।। কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে,,,আমার কাছে এসে হাত চেপে ধরলেন,,,
।
রোদ চলো,,,
।
আমি তো অবাকই সাথে আমার পুরো পল্টনও অবাক,,,এর মধ্যেই সবাই রুমে প্রবেশ করেছে।।মামুকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি বিন্দুমাত্রও অবাক হন নি।।শুভ্র যে এমন পাগলামো আবার কন্টিনিউ করবে তা সম্পর্কে তিনি অবগত।।।
কি হলো চলো,,,,ওপপস্ সরি তুমি তো হাঁটতে পারবে না,,,
।
কথাটা বলেই কোলে তুলে নিলেন,,,হাতে স্যালাইন লাগানো ছিলো,,,টান পড়ায় রক্ত উঠে গেলো,,ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম।।।উনি ভ্রু কুচকে আমার হাতের দিকে তাকালেন,,,
।
আমি বলেছিলাম না ওকে এসব না লাগাতে??(রাগী গলায়)কেনো লাগিয়েছেন এগুলো??হোয়াই???(চিৎকার করে)
।
উনার চিৎকারে আমার অন্তরআত্মা কেঁপে উঠলো,,,লোকটা কি আসলেই পাগল টাগল হয়ে গেছে নাকি??।উনি আবার আমাকে সাবধানে বেডে বসিয়ে দিয়ে,, ধীরে ধীরে হাতের স্যালাইনটা খুলে নিলেন,,এমনভাব যেনো সুঁইটাও ব্যাথা পেয়ে যেতে পারে উনার হাতের ছোঁয়ায়।।আমি শুধু উনাকেই দেখছে,,কেমন বাচ্চা বাচ্চা লাগছে উনাকে।।।আচ্ছা?আজ যদি সত্যি মরে টরে যেতাম তাহলে কি সত্যিই উনি পাগল টাগল হয়ে যেতেন নাকি???উনার কাজ শেষ হতেই আবারো কোলে তোলে নিলেন আমায়,,আর সোজা দরজার দিকে হাঁটা দিলেন,,,
।
শুভ্র কই নিয়ে যাচ্ছিস ওকে??
।
বাসায়,,,
।
হোয়াট,,,আল্লাহ আমার ছেলে সত্যিই পাগল হয়ে গেছে,,,আরে বাপ আজই অপারেশন হলো,, আল্লাহর ওয়াস্তে,, দুটো দিন এখানে থাকতে দে ,,
।
এক মিনিটও থাকতে দিচ্ছি না,,,ও আমার সাথেই থাকবে,,,এখানে এই ডাফারদের মাঝে তো কখনোই ওকে রাখবো না আমি,,,,যখন তখন সুঁই ঢুকিয়ে দেই,,,,ম্যানারলেস।।
।
উনার কথা শুনে আমার হাসিতে পেট ফেটে যাচ্ছে,,আল্লাহ আর কি কি দেখাবা??মিষ্টার আবরার শুভ্র কিনা এমন ভিত্তিহীন পাগলামো করছে,,,
।
চুপপ,,,এমন ভাব করছিস,,বউ তোর একার আছে,,,আরে এখানে আমাদের সবারই বউ আছে,,,বউকে নিয়ে চিন্তা আমরাও করি বাট তোর মতো বাড়াবাড়ি না,,,,
।
তোমাদের বউরা বুড়ো বাট আমার টা বাচ্চা,,,,সো ডিফারেন্স তো হবেই,,,
।
উনার এমন একনাম্বারের ফাউল যুক্তির পর মামু বলার মতো আর কিছুই খুঁজে পেলেন না।।।শুভ্র অন্য কারো বর হলে আর নামি হিরোইন না হয়ে অডিয়েন্স হলে এতোক্ষণে হাসিতে গড়াগড়ি খেতাম,,,বাট ব্যাপারটা যেহেতু আমায় ঘিরে তাই এখন বড্ড লজ্জা লাগছে।।।উনার জেদের সামনে সবাইকে হার মানতে হলো,,,অবশেষে বাসায়ই আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলো।।।
।
রাত ১১ঃ৩২ মিনিট,, আমি বিছানায় শুয়ে আছি,,আর উনি আমার পাশে আধশোয়া হয়ে বসে লেপটপে কিছু একটা করছেন,,,,
।
এটা কি হলো??(রাগী চোখে)
।
কি??(ভ্রু কুঁচকে)
।
কি মানে??আপনি এমনটা কেনো করলেন??
।
আমি আবার কি করলাম??(অবাক হয়ে)
।
হসপিটাল থেকে ওভাবে নিয়ে এলেন কেনো??সবাই কি ভাবছে বলুন তো,,,,
।
তুমি ওই উদ্ভট জায়গায় কেন থাকবা??তাছাড়া তুমি তো একদম ঠিক আছো,,,
।
কিহ??লাইক সিরিয়াসলি?? আমার মাথায় ব্যান্ডেজ,,হাতে -পায়ে ব্যান্ডেজ আর আপনার মনে হচ্ছে আমি ঠিক আছি??
।
উনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে উঠলেন,,,,
।
জাস্ট স্যাট আপ রোদ,,,,ওলওয়েজ বেশি কথা বলা ইম্পর্টেন্ট না,,,,চপচপ না করে ঘুমোও(রাগী চোখে)
।
ওহ,,অবশেষে মিষ্টার আবরার শুভ্র নিজের ক্যারেক্টারে ব্যাক করেছেন,,,থ্যাংক গড।।।বিছানায় শুয়ে উনার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,,,,ইচ্ছে করছে উনার গোছিয়ে রাখা চুলগুলো এলোমেলো করে দিই,,,,এত্তো কিউট কেন উনি,,,ইসসস এত্তো কিউট এন্ড হ্যান্ডসাম ছেলেটা আমার হাজব্যান্ড ভাবতেই শরীর শিউরে উঠে,,,,
।
কি ব্যাপার এভাবে তাকিয়ে আছো কেন???(লেপটপের দিকে তাকিয়ে)
আপনি আসলেই অনেক সুন্দর,,,
।
উনি লেপটপ থেকে মুখ তুলে সামনে তাকালেন,,,তারপর একটা মুচকি হাসি দিয়ে লেপটপটা সাইড টেবিলে রেখে আমার দিকে তাকালেন,,,
।
তোহ,,মিসেস নৌশিন আবরার,,,আধা ঘন্টা তাকিয়ে থাকার পর আপনি বুঝতে পারলেন আমি সুন্দর??(বাঁকা হাসি দিয়ে)
।
হুম,,আপনি এতো সুন্দর কেন??ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই,,,সৌন্দর্য তো মেয়েদের জন্য,,,,
।
তাই???তো ছেলেরা সুন্দর হলে কি সমস্যা??
।
অবশ্যই সমস্যা,,,এইযে আপনার বদলে যদি আমি বেশি সুন্দর হতাম তো আপনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকতেন,,,,কিন্তু এখন উল্টো হচ্ছে,,ব্যাপারটা প্রকৃতি মেনে নিতে চাচ্ছে না।।।এটা নিসন্দেহে হাস্যকর,,,কোনো মেয়ে একটা ছেলের দিকে “হা” করে তাকিয়ে আছে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না।।।(ঠোঁট উল্টিয়ে)
।
উনি আমার কথায় হো হো করে হেসে উঠলেন,,,দেখেই বুঝা যাচ্ছে মন খুলে হাসছেন আর আমি মন ভরে দেখছি,,,,মিনিটে হাজারবার আমি এই ছেলেটার প্রেমে পড়তে রাজি।।আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি হাসি থামিয়ে আমার কপালে একটা চুমু এঁকে দিলেন,,,,আমি তো রীতিমতো ফ্রিজড,,এটা কি হলো??উনি নিজে থেকে??কেমনে কি??উনি মুচকি হেসে আমার শরীরে কাঁথা টেনে দিয়ে,, লাইট অফ করে অন্যদিক হয়ে শুয়ে পড়লেন।।হয়তো শান্তির ঘুম ঘুমুচ্ছেন,,কিন্তু আমার ঘুম তো হারাম করে দিলেন।।চোখে তো শুধু স্টার জলসার মতো একটা সীনই চলছে,,,”হি কিসড মি”….
।
।
সকালে ঘুম ভেঙে নিজেকে উনার দুই হাতের বাঁধনে খুজে পেলাম।।।খুব শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছেন আমায়,,যেনো এখনি ছুটে পালাবো।।আমি একটু নড়েচড়ে উঠতেই উনি আরো শক্ত করে চেপে ধরলেন ,,,উনার গায়ের একদম অন্যরকম স্মেলটা আমার নাকে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে বার বার,,,নিজেকে উনার এতো কাছে ফিল করার সুযোগ করে দিচ্ছে যেনো।।।আমি শুধু উনাকেই দেখছি,,,,বুজে থাকা দুটো চোখে ঘন লম্বা পাপড়ি,,হালকা বাদামি এলোমেলো চুল,,,,ডার্ক রেড একজোড়া ঠোঁট,,খাড়া নাক,,,থুতনির কাছে একটা টকটকে কালো তিল আর টকটকে ফরসা চামড়া,,,,উনার গায়ের প্রতিটা লোমও যেনো একেকটা কিউটের ডিব্বা,,,, ইসসসস,,,এতোটা সুন্দর না হলেও তো চলতো,,,,
।
।
সময়গুলো থেমে থাকে না,,,কেমন অবিরাম ছুটে চলে,,,দেখতে দেখতে আরো দুটো সপ্তাহ চলে গেলো।।।আমি এখন একদম সুস্থ।।রাত ৮ টা বাজে,,খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছি,,,কিছুদিন পরই এডমিশন টেস্ট,,,,কিছুই যেনো পড়া হয় নি।।।উফফ টেনশন।। হঠাৎই উনি এসে চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিলেন,,,
।
আরেহ,,,এটা কি হলো??আমি পড়ছি তো,,চশমা দেন।।
।
চশমা পড়ো কেন??(ভ্রু কুঁচকে)আগে তো পড়তে না।।
।
মাথা ব্যাথা করলে মাঝেমাঝে পড়ি,,এখন দেন তো।।
।
মাথাব্যথা করলে মাথায় তেল দিতে হয়,,,তুমি তো জীবনেও তেল দেও না,,,আমি তেল লাগিয়ে দিচ্ছি ওয়েট,,,
।
হোয়াট??নো ওয়ে,,,আমি তেল দিচ্ছি না।।।তেল দিলে কেমন চিপচিপে লাগে,,তারউপর পেত্নী পেত্নী লাগে।।।কাল আমার কোচিং আছে,,,আজ তো কোনোভাবেই তেল লাগাবো না,,,
।
তেলের সাথে কোচিং-এর কি সম্পর্ক?? (ভ্রু কুঁচকে)
।
অবশ্যই সম্পর্ক আছে,,তেল দিয়ে ভূত সেজে যাবো,,মানুষ কি বলবে??
।
ঠাডায় দিবো একটা,, কোচিং এ চেহারা দেখাতে যাও??এখন তো আরো বেশি করে দিয়ে দিবো,,,
।
নোওওওওওওও
।
ইয়য়য়য়য়েসসসসস
।
উনার জেদের সামনে কোনো দিনই পেরে উঠি নি,, আজ যে পারবো সে আশা রাখাটাও নিরাশা।।উনি আমার মাথায় বেশ যত্ন করে তেল লাগিয়ে দিচ্ছেন,,প্রতিটি চুলকে এমন ভাবে নাড়াচাড়া করছেন,,যেনো চুলগুলোকে উনি ঘুম পাড়ানোর চেষ্টায় আছেন,,,,তেল লাগানো শেষ করে,,,চিরুনি নিয়ে আচড়াতে বসলেন,,,
।
বাহ,,তোমার চুল তো অনেক বড়,,আগে খেয়ালই করি নি,,,
।
হুমম,,কোমরের নিচ পর্যন্ত পড়ে,,,
।
জানো,,আমি ভেবে রেখেছিলাম আমার মেয়ের এত্তোবড় চুল রেখে দিবো,,,সবাই অবাক চোখে দেখবে,,,
।
তাই??কিন্তু আপনি তো বাবাই হতে চান না,,,
হুমম,,এখন আর ইচ্ছে নেই।।
।
কেনো??স্বপ্নগুলো নীলি আপুর সাথে দেখেছিলেন তাই??নাকি হারানোর ভয় পান??
।
উনি আমার কথার উত্তর না দিয়ে দুই কাঁধে দুটো বেনী ঝুলিয়ে দিয়ে বললেন,,,
।
একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে,,,ইসসস,,,,তুমি এতো পিচ্চি কেন???আমি তো ভেবেই পাচ্ছি না,,সামনে বসে থাকা গুলুমুলু বাচ্চাটা আমার বউ,,,,
।
#চলবে,,,,,