তুমি আমারই থাকবে

তুমি আমারই থাকবে !! Part- 16

তানহাকে কোলে নিয়ে নিজের মতো হেটে যাচ্ছে তনয়। এদিকে তানহা ছটফট করছে নামার জন্য।
-ছাড়ুন আমাকে। যাবোনা আমি আপনার সাথে!
-(চুপ)
-কি হলো? নামান চলছি।
তনয় এবার তানহাকে ফেলে দেওয়ার মতো করলে সে ভয়ে ওর শার্টের কলার আকড়ে ধরে আর তনয় বাকা হাসি আবার হাটতে শুরু করে।
যেখান থেকে ওরা চলে এসেছিলো ওখানে এসে তনয় তানহাকে নামিয়ে দেয়। আর তানহা তাকিয়ে দেখে মিশা এখনও যায়নি। তা দেখে সে তনয়ের দিক তাকায় আর তনয় মিশাকে বলে,
-মিশা, তুমি এখনো যাওনি? আমি না তোমাকে যেতে বলেছিলাম।
তনয় মিশাকে যেতে বলেছে শুনে তানহার মন খুশিতে ভরে উঠলো!
মিশা বলল,
-কিন্তু কি সমস্যা তোমার সাথে দেখা করলে?কয় মাস পর তো আমরা একসাথেই হবো তাইনা?
-কখন কি হয় তা তো বলা যায়না মিশা। তুমি নিজেই ভেবে দেখো, এখন যদি আমি তোমার সাথে দেখা করি তাহলে বিষয়টা খারাপ দেখাবে। বাবা জানলে কি মনে করবে তুমি জানো? তখন আমাদের ছয় মাস পরেও কিছু হওয়া সম্ভব হবেনা।
-কিন্তু তনয়..
-এটাই ঠিক মিশা। আমিও ভেবে দেখেছি। এখন আমাদের না দেখা করাই ভালো।যদি আমি তোমার কপালে থাকি তাহলে অবশ্যই পাবে আমাকে। থিংক প্র্যাকটিকালি!
মিশা বুঝতে পারে এখন তনয়কে বুঝিয়ে লাভ নেই। সে তানহার কথা মেনে নিয়েছে। নিশ্চয়ই তানহা এসব বলেছে ওকে! মনে মনে ভাবলো মিশা। তাই সে মাথা নাড়িয়ে বলল,
-ওকে ফাইন কিন্তু ছয় মাস পর আমার কথা ভুলে যেয়ো না। আসি তাহলে।
-থ্যাংকস মিশা ফর আন্ডারস্ট্যান্ডিং!
মিশা চলে গেলে তানহা ভাবতে থাকে তনয় আর ওর কি ডিভোর্স সত্যিই হবে? তনয় কি সত্যিই ওকে রেখে মিশার কাছে চলে যাবে? এই কয়দিনে ও বুঝেছে যে তনয় ওর প্রতি একটু হলেও দুর্বল হয়েছে, ওর কেয়ার করে সে। নাহলে ওর কথা শুনতো না! কিন্তু এই দুর্বলতা কি আদৌ ভালোবাসায় পরিণতি পাবে?
তানহার এসব ভাবনার মধ্যে তনয় অনেকবার ওকে ডেকেছে কিন্তু সে শুনতে পায়নি তাই বিরক্ত হয়ে তনয় চলে যেতে নিলেই তানহা হঠাৎ করেই ওকে জড়িয়ে ধরে। তনয় কয়েক মুহুর্তের জন্য জমে যায়। এটা প্রথম না, এর আগেও হয়েছে ওর সাথে যখন তানহা ওর কাছাকাছি আসে! ওর আলাদা এক অনুভুতি হয় যা অন্য কারও ক্ষেত্রে কখনো হয়নি ওর! এই অনুভুতির নাম তনয়ের জানা নেই কিন্তু নামহীন এই অনুভুতিটা বড্ড ভালো লাগে ওর কাছে!
-থ্যাংক ইউ! আপনি আমার কথা শুনেছেন।
-ইটস ওকে। তুমি আমার সব কথা শুনো আমি না হয় তোমার একটা কথা শুনতেই পারি!
-আপনি তখন বললেন না কেন যে আপনি মিশা আপুকে যেতে বলেছেন?
-তুমি কথা শুনতে আমার?কখন থেকে শুধু নামাতে বলছিলে!
এবার তানহার মনে পড়লো তনয় ওকে কোলে করে নিয়ে এসেছিলো এতক্ষণ আর ও তনয়কে জড়িয়ে ধরে আছে এখনো! তাই হুট করে তনয়কে ছেড়ে দিয়ে মুখ অন্যদিক করলো লজ্জায়। তনয় বলে,
-বাহ! ধরার সময় লজ্জা লাগলো না আর এখন লজ্জায় গলে যাচ্ছো! (বাকা হেসে)
তানহা যেন আরও বেশি লজ্জা পেলো ওর কথা শুনে। এই ছেলে পারেও বটে লাগামছাড়া কথা বলতে!
,
,
,
কন্সার্ট শুরু হলো। সবাই গান উপভোগ করছে! বিভিন্ন কাপল রীতিমত নাচ শুরু করে দিয়েছে ওখানে! ধীরে ধীরে সবাই নাচতে লাগলো তাই দেখে তনয় তানহাকে বলল,
-তুমি নাচবে আমার সাথে?
-আপনি নাচতে পারেন?(অবাক হয়ে)
-আমাকে কি মনে কর তুমি? আমি কেন পারব না? (ভ্রু কুচকে)
-না মানে, জানতাম না তো তাই বলছিলাম।
-মে আই? (তানহার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে)
-হেসে হাত বাড়িয়ে দেয়।
haan hasi ban gaye..
haan nami ban gaye…
tum meri asma meri jami ban gaye…
Haan hum badalne lage
Girne samhalne lage
Jab se hai jana tumhe
Teri oor chalne lage…
গানের তালে তালে নাচছে তনয় আর তানহা। গানটাকে ফিল করছে দুইজনে, তনয় নাচের মধ্যে তানহাকে কাছে টেনে আনলো। তানহার সাথে থাকতে কেন জানি খুব ভালো লাগছে তার!
গান শেষ হলে খাওয়ার পালা। এতক্ষণ মিশা লুকিয়ে থেকে ওদের দেখছিলো। তনয়ের হাবভাব দেখে তার মনে হচ্ছে তনয় তানহার প্রেমে পড়েছে। কিন্তু তনয়কে এটা সরাসরি জিজ্ঞেস করলে সে কিছুতেই বলবে না মিশা জানে! তাই ও ভাবতে লাগলো কিভাবে তনয়ের থেকে সত্যি কথা শুনা যায়।
হঠাৎ করে মিশার মাথায় বুদ্ধি এলো যে খাওয়ার পর তো সফট ড্রিঙ্কস খাবে ওরা। তখন তনয়ের সফট ড্রিঙ্কসে এলকোহল মিশিয়ে দিলে ওর থেকে সত্যিটা জানতে পারবে সে। কারণ নেশায় মানুষ সত্যি কথা বলে! যা ভাবা তাই কাজ। মিশা খোজ নিয়ে একটা ওয়েটারকে টাকা দিয়ে তনয়ের ড্রিঙ্ক এ এলকোহল মিশিয়ে ওটা তনয়কে দিতে বলে ড্রিঙ্ক পাঠালো ওদের কাছে। মিশা এবার অপেক্ষা করছে তনয় কখন ড্রিঙ্কটি খাবে সেইজন্য।
ওয়েটার ড্রিঙ্ক দিয়ে গেলে তনয় তানহাকে একটা দিয়ে নিজে একটা নেয়। ওরটা খেতে নিবে এমন সময় তানহা বলে,
-আচ্ছা আপনি কোন চালাকি করছেন না তো? (ভ্রু কুচকে)
-আশ্চর্য! চালাকি মানে? (অবাক হয়ে)
-মানে এগুলো সফট ড্রিঙ্কস ই তো নাকি আমাকে অন্যকিছু খাইয়ে ঘুমিয়ে দিয়ে আপনি মিশা আপুর সাথে দেখা করতে যাবেন? (চোখ ছোট করে)
তনয় যেন আকাশ থেকে পড়লো তানহার কথা শুনে। তাই সে মাথায় হাত রেখে বলল,
-মেয়ে মানুষ সন্দেহ করে এটা জানা ছিলো কিন্তু আজ স্বচক্ষে দেখলাম!
-ও সব বুঝিনা আমি। আপনি সত্যিই কিছু প্ল্যান করছেন না তাইনা?
-না রে মা, তুমি এক কাজ কর, তুমি আমারটা খাও, আমি তোমারটা খাচ্ছি তখন বিশ্বাস করবে তো?
-না দরকার নেই। থাক!
-এখন দরকার আছে। সন্দেহ যখন করেছো তখন আমারটাই খাবে তুমি। যাতে এরপর আর এধরনের কথা না বলতে পারো।
এরপর তানহাকে ওর ড্রিঙ্ক খাইতে দিয়ে নিজে তানহারটা খেলো তনয়! আর মিশা ওইদিকে এটা দেখে বলল,
-ওহ শিট!! এটা তুমি কি করলে তনয়? তানহাকে এলকোহল যুক্ত ড্রিঙ্ক খাওয়ালে! আমার কক্সবাজার আসাই উচিত হয়নি। সব প্ল্যানই ফ্লপ এখানে এসে ড্যাম ইট!
বলে মিশা চলে গেলো ওখান থেকে।
এদিকে তানহা ড্রিঙ্ক খেয়ে বলল,
-এটার টেস্ট এমন কেন? (ভ্রু কুচকে)
-কেমন আবার?ঠিকি তো আছে!
-নাহ তো, একটু তেতো তেতো লাগলো আমার কাছে! (ঢুলুঢুলু চোখে)
আর তনয় ভাবছে তানহার ড্রিঙ্ক এ সত্যিই কিছু ছিলো না তো?
চলবে…🍁