তুমি আমারই থাকবে

তুমি আমারই থাকবে !! Part- 10

পরেরদিন তনয় ঘুম থেকে উঠে পাশে তাকিয়ে দেখে তানহা নেই। ও ভাবলো সে কোন কাজ করছে হয়তো।তাই ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসে সে। নাস্তা করার সময় দেখে তানহা সেখানেও নেই তাই তনয় ওর মাকে জিজ্ঞেস করে,
-তানহা কোথায় মা? ওকে দেখছি না যে!
-ও তো একটু আগেই বের হয়ে গিয়েছে বাবা। ওর নাকি বান্ধবী ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছিলো কিছু কাজ আছে তাই। তুই ঘুমাচ্ছিলি দেখে তোকে ডাকেনি!
-ওহ তাই বলো।
তনয় ভাবলো তানহাকে সকালে উঠে মিশার কথা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু আজকেই ওর তাড়াতাড়ি যাওয়া লাগলো ধুর!!
এসব ভাবতে ভাবতে নিজের অফিসের জন্য বের হলো সে।
তানহা ভার্সিটি থেকে বের হচ্ছে। আজকে ওর আগেই ক্লাস শেষ হয়েছে তাই বাসায় যাচ্ছে তাড়াতাড়ি। বের হওয়ার সময় রিকশা নেওয়ার জন্য যেতেই একটি গাড়ির সামনে পড়ে যায় সে। আর গাড়ি থেকে বের হয় একটি মেয়ে চোখে সানগ্লাস পড়া আর তানহাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-হেই ইউ, তোমার কি মরার জন্য দেখে শুনে আমার গাড়ির সামনেই পড়তে হলো? (আংগুল তুলে জিজ্ঞেস করল)
তানহা মেয়েটার কথায় ভীষণ মেজাজ খারাপ হলো। একেতো নিজে রাস্তার সাইডে গাড়ি নিয়ে উড়ে এসেছে তার মধ্যে আবার ওকেই কথা শুনাচ্ছে। তাই সে বলল,
-এক্সকিউজ মি, প্রথমত আমার কোন মরার কোন শখ নেই। দ্বিতীয়ত আমি আপনার গাড়ির সামনে আসিনি বরং আপনিই ভুল সাইডে গাড়ি পার্ক করছেন।
-হু দ্যা হেল আর ইউ? আমাকে এইসব বলছো তুমি? আমাকে?
-জি। আমি তো আপনাকেই বলছি। এখানে তো অন্য কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা আপনি ছাড়া! (আশেপাশে তাকিয়ে) এরপর থেকে দেখেশুনে গাড়ি চালাবেন, ঠিকাছে?
বলে তানহা চলে যেতে লাগলো। আর মেয়েটি বলল,
-গড! ফালতু মেয়ে কোথাকার।
তারপর তানহাকে চলে যেতে দেখে ডাকে আর বলে,
-এক মিনিট দাড়াও। তুমি এই ভার্সিটিতে পড় তাইনা?
তানহা থেমে গেলো ওর কথা শুনে।
-জি পড়ি তো।
-তুমি কি আমার একটা হেল্প করতে পারবে?
-কেমন হেল্প? (ভ্রু কুচকে)
-একচুয়ালি আমি একজনকে খুজছিলাম বাট তাকে চিনিনা। তুমি যদি চিনো তাহলে বলো একটু।
-কাকে খুজছেন আপনি? আমি হয়তো নাও চিনতে পারি। তাও বলেন শুনি!
-ওয়েট,কি যেন নাম বলেছিলো..উম তানহা। ইয়েস। তুমি কি তানহাকে চিনো? (ভ্রু উঠিয়ে)
এদিকে অচেনা এক মেয়ের মুখে নিজের নাম শুনে তানহা পুরো থ মেরে গেলো। সে চোখ বড় বড় করে বলল,
-তানহার সাথে আপনার কি কাজ?(অবাক হয়ে)
-তোমার অত না জানলেও হবে। জাস্ট টেল মি তুমি ওকে চিনো কি না? (দাত চেপে)
-আজব পাব্লিক তো আপনি। আমার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন আর আমাকেই বলছেন আমার না জানলেও হবে?(বিরক্ত হয়ে)
মেয়েটি অবাক হয়ে সানগ্লাস খুলে কয়েক ধাপ পিছিয়ে গেলো তারপর তানহাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত বিশ্লেষণ করে প্রায় চিল্লিয়ে উঠে বলল,
-তুমিই তানহা?
-জি। কেন কোন সমস্যা? আমার কি তানহা হওয়া যাবেনা? (হাতের উপর হাত ভাজ করে)
এদিকে মিশা তানহাকে দেখে বলল,
-আমাকে নিশ্চয়ই চেনোনা তুমি। (শান্ত গলায়)
-কি তখন থেকে এক কথা বলে যাচ্ছেন! চিনিনা আমি আপনাকে! কে আপনি আর কি কাজ আপনার আমার সাথে বলুন? (বিরক্ত হয়ে)
-আমি মিশা..!! জানো আমি কে?
ব্যস, তানহার সকল বিরক্তিভাব উড়ে গিয়ে মনের মধ্যে বাস করলো এক অজানা ভয়। এই ভয় অন্যকিছুর না, এটা তনয়কে হারানোর ভয়! কারণ এই সেই মেয়ে যার জন্য তনয় আর ওর সম্পর্ক স্বাভাবিক হচ্ছেনা।
তানহা গলার স্বর স্বাভাবিক রাখার চেস্টা করে বলল,
-হ্যাঁ জানি। কিন্তু আপনি কিভাবে জানলেন আমার নাম আর আমি এই ভার্সিটিতে পড়ি সেটা? (অবাক হয়ে)
-মিশা যেটা চায়, সেটা খুজে বের করেই নেয়। তনয় কি তোমাকে বলেনি যে আমার সাথে ও কাল দেখা করেছিলো?
তনয় মিশার সাথে দেখা করেছিলো এটা শুনে তানহার খুব খারাপ লাগে, তার চেয়েও বেশি খারাপ লাগে ওকে বলেনি এইজন্য! তাও মিথ্যা কথা বলে মিশাকে,
-বলেছেন। জানি আমি!
-তাহলে তো এটাও নিশ্চয়ই জানো যে তুমি শুধু ছয় মাসের মেহমান মাত্র!
-কপালে কি আছে তা তো আর আপনি আমি বলতে পারব না তাইনা?
-হোয়াট ননসেন্স। তুমি কি বলতে চাইছো?
-মানে এই যে আমার জায়গায় তো আপনার থাকার কথা ছিলো কিন্তু ভাগ্য আমাকে আর তনয়কে একসাথে চেয়েছিলো এইজন্য দেখেন আপনার জায়গায় আজ আমি দাঁড়িয়ে! (হেসে)
-খুব খুশি তাইনা? তনয় একটু ফ্রেন্ডলি বিহেভ কি করেছে তুমি তো দেখছি আকাশে উড়তে শুরু করেছো!
-আমি মাটিতেই আছি এবং যা বাস্তব তাই বলছি। আপনিই শুধু কল্পনায় আছেন। তাই সময় থাকতে বাস্তবে ফিরে আসেন। (চোখ টিপ মেরে)
-ইউউ,,, এই সব কথার জালেই ফাসিয়েছো আমার তনয়কে,তাইনা?
-তনয় আপনার কবে হলো? উনি তো আমার আছেন আর আমারই থাকবেন!
-বড্ড বেশি কথা বলো তুমি।তোমাকে আমি দেখছি শীঘ্রই। মাইন্ড ইট! (আংগুল দেখিয়ে)
বলে মিশা চলে গেলো আর তানহা এতক্ষণ মিশার সামনে কনফিডেন্স নিয়ে কথা বললেও এখন তার মনের ভিতর ভয় ডানা মেলে দিয়েছে। তার খুব চিন্তা হচ্ছে মিশা তাকে আর তনয়কে আলাদা করার জন্য কি করবে এটা ভেবে..!!
মন খারাপ করে রাস্তায় হাটছিলো তানহা। সে দেখে এক বৃদ্ধ ফকির রাস্তায় বসে আছে অথচ কেউ ভিক্ষা দিচ্ছেনা তাকে। তানহা ব্যাগ চেক করে দেখলো তার কাছে ১০০ এর মত টাকা আছে। সে শুনেছিলো গোপনে দান করলে আল্লাহ মনের ইচ্ছা পূরণ করেন। তাই ওর কাছে যে টাকা ছিলো তা ফকিরটাকে দিয়ে দিলো।
-আল্লাহ আপনার ভালো করবে মা।
-দোয়া করবেন চাচা। অনেক ঝামেলায় মধ্যে আছি।
-আল্লাহ আপনার মনের আশা পূরণ করুক দোয়া করি!
অতঃপর তানহা হেটে হেটে বাসায় চলে আসলো।বাসায় পৌঁছাতেই দেখলো সার্ভেন্ট জামিল একটা লিস্ট নিয়ে দৌড়ে বাইরে যাচ্ছে। তানহা জিজ্ঞেস করলো,
-এটা কিসের লিস্ট জামিল ভাই?
-ছোট ম্যাডাম আসছে বাসায় ভাবী। এই লিস্ট ধরায় দিয়ে কইছে তাড়াতাড়ি আনতে।
তাই বলে দ্রুত বের হয়ে চলে গেলো। আর তানহা ভাবতে লাগলো ছোট ম্যাডামটা আবার কে?
ভিতরে প্রবেশ করতেই সে দেখলো প্রায় তার বয়সী এক মেয়ে সোফায় বসে আছে আর মায়ের সাথে গল্প করছে। তানহাকে দেখে সে বলল,
-তুমি কি এই বাড়ির বউ?
-জি। কিন্তু আপনাকে তো চিনলাম না?
-কেমন বউ এনেছো বাসায় যে আমাকে চিনেনা? (মা কে উদ্দেশ্য করে)
তানহার এবার বেশিই মেজাজ খারাপ হলো। একেতো মিশার কথাগুলো মাথায় ঘুরছে তার মধ্যে এই মেয়ে আবার উলটাপালটা কথা বলছে!
তানহাকে রেগে থাকতে দেখে মেয়েটি হেসে বলল,
-আরে ভাবী, রাগলে তো তোমাকে খুবই কিউট লাগে!
-মেয়েটা বাসায় আসতে না আসতেই কি শুরু করেছিস তুই ওর সাথে,শ্রেয়া? (মা বললেন)
-ভাবী? (তানহা অবাক হয়ে বলল)
-হ্যাঁ। আমি তোমার ওয়ান এন্ড অনলি ননদ। তনয় ভাইয়ার একমাত্র বোন! (হেসে)
তনয়ের বোনও আছে সেটা তানহা জানতো না। তাই সে বলে,
-স্যরি। আমি আসলে জানতাম না উনার বোন আছে তাই চিনতে পারিনি।
-উনি? ওয়াও। ভাইয়া তো সেই একটা বউ পেয়েছে! “ওগো শুনছো” বলে ডাকো নাকি তুমি ভাইয়াকে, ভাবী? (চোখ টিপ মেরে)
তনয়ের বোন যে ওর মতোই দুস্টু তা বেশ বুঝতে পারলো তানহা। তাই হেসে বলল,
-না গো ননদিনী। তে তুমি হঠাৎ করে কোথায় থেকে এলে? বিয়েতে আসোনি কেন?
-আর বলোনা ভাবী। আমার কলেজে টেস্ট এক্সাম চলছিলো। বাবারা তো আগের মাসে এখানে শিফট হয়েছে তাই আমার পরীক্ষা চলাকালীন আমি আসতে পারিনি এখানে। খালামনির বাসায় থেকে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। বাবাকে এত বললাম ভাইয়ার বিয়ে পরে করায় দিতে কিন্তু বাবা বলল এখনি করা নাকি জরুরি।পরে অনুষ্ঠান করে বিয়ে করাবে আবার। তাই আমি আসতে পারিনি তখন!
তানহাও বুঝতে পারলো কেন তখন বিয়ে করানো জরুরি ছিলো ইকবাল সাহেবের কাছে। তারপর গল্প শুরু করলো ওরা আর এই অল্প সময়েই ননদ-ভাবীর খুব খাতির জমে গেলো।
কথার মাঝে তানহার মন খারাপ দেখে শ্রেয়া জিজ্ঞেস করলো,
-ভাবী, কি হয়েছে তোমার? মন খারাপ লাগছে যে?
-কই? কিছুই না তো!
-দেখো ভাবি,আমি তোমার প্রায় সমবয়সী আর ননদ-ভাবীর আগে আমরা বন্ধু! তাই না বলো?
-হ্যা। তা ঠিক বলেছো!
-তাহলে বলো আমাকে কি হয়েছে প্লিজ। হয়তো আমি কোন হেল্প করতে পারব?
-এই সমস্যায় তুমি হেল্প করবে কিভাবে শ্রেয়া? আমিই বুঝতে পাচ্ছিনা কি করব!
-ওহ হো, তুমি বলো তো আগে!
তারপর তানহা শ্রেয়াকে মিশা, তনয় আর ওর কাহিনি বলল। আজ মিশার সাথে দেখা হয়েছে সেটাও বলল। সব শুনে শ্রেয়া বলল,
-তাহলে তো বাবা একদম ঠিক করেছে ভাইয়াকে আগে বিয়ে দিয়ে! ওই শাকচুন্নির সাথে বিয়ে হতে দেওয়া যেতো না।
-কিন্তু তোমার ভাই ছয় মাস পরে আমাকে ডিভোর্স দিবে। আমি কিছু করতে পারব কি না জানিনা!
-তুমি টেনশন নিয়োনা ভাবী। আমি ভাইয়াকে যতদূর জানি ও এইসব প্রেম-ভালোবাসায় বিশ্বাস করেনা। এসব ওর কাছে শুধুই দায়িত্ব মাত্র। আমি তো আছিই তোমার হেল্প করার জন্য! তাই এখন তোমার কাজ হচ্ছে ভাইয়াকে প্রেমের জলে হাবুডুবু খাওয়ানো! (চোখ টিপে)
শ্রেয়ার কথা শুনে তানহা বেশ লজ্জা পেলো।সে কিছু বলবে তার আগেই তনয় বাসায় এলো এবং চিল্লিয়ে বলল,
-মা?? বাসার জানালা-দরজা কি সব বন্ধ করেছিলেনা ভালোমতো?
মা অবাক হয়ে বলল,
-এসব কি বলছিস তুই তনয়?
-বাসায় পেত্নী উড়ে এসেছে যে তাই বলছিলাম আর কি!
শ্রেয়া চিল্লিয়ে উঠে বলল,
-ভাইয়ায়ায়ায়া..!!
তানহা বসে থেকে ওদের ভাইবোনের খুনসুটি দেখছিলো। তনয় তানহার দিকে তাকাতেই তার মনে পড়ে সে মিশার সাথে দেখা করেছিলো এবং ওকে বলেনি তাই রেগে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তনয় অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে তাকায়। কিন্তু তানহা সেদিকে পাত্তা দেয়না।
ওদের জন্য কফি নিয়ে এসে তানহা যখন তনয়কে দিলো তখন তনয় ভ্রু উঠিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে তাকে,”কি?”
কিন্তু তানহা কিছু না বলেই চলে গেলো। আর তনয় মনে মনে ভাবলো,
-হয়েছেটা কি এই ঝালমরিচের?
-রাগ করেছে তোর উপর। (শ্রেয়া বলল)
তনয় অবাক হয়ে বলল,
-তুই কিভাবে জানলি?
-আমি সব জানি ব্রো। এখন যা রাগ ভাংগা তোর বউয়ের।
-আমি অতকিছু করতে পারব না। জানিই না কি জন্যে রাগ করেছে আর আমি নাকি রাগ ভাংগাবো!
-আরে ভাইয়া আমার, বিয়ে যখন করেছিস, তোর এগুলোর অভ্যাস থাকতে হবে।তাই ভাবীর কাছে গিয়ে শোন কি জন্যে রাগ করেছে আর রাগ ভাংগা যা।
বলে শ্রেয়া তনয়কে ঠেলে পাঠালো তানহার পিছনে!
চলবে…