তুমি আমারই থাকবে

তুমি আমারই থাকবে !! Part- 08

তনয়ের ফোনে মিশার নাম দেখে তানহার মন খারাপ হয়ে গিয়েছে। সে বুঝতে পাচ্ছেনা তনয়ের মনে ঠিক কি চলছে! তাদের সম্পর্ক আসলে কোন দিকে যাচ্ছে সবকিছুই যেন একটা ধোয়াশার মধ্যে আছে..!!
বিকেলে তনয় অফিস থেকে আসে। আশিক বেচারা মুভি দেখার প্ল্যান ক্যান্সেল করেছে কেননা তনয় বড়ই খাটিয়েছে অফিসে তাকে। সে বাসায় এসেই রেস্ট নিতে চলে গেলো। তনয় ফ্রেশ হয়ে আসলে তাকে কফি এগিয়ে দেয় তানহা। তনয় খেয়াল করে যে তানহা আজকে বেশ চুপচাপ। ওর মনে হয় মন খারাপ। তানহা চলে যেতে নিলে ওকে আটকায় তনয় আর বলে,
-কি হয়েছে তোমার বলো তো?
-কই? কিছু হয়নি তো। আমার আবার কি হবে! (অন্যদিক হয়ে)
– ওইদিক তাকিয়ে কথা বলছো কেন? আমার দিকে তাকিয়ে বলো। (হাত ধরে নিজের দিক ফিরিয়ে)
-বললাম তো কিছু হয়নি। যেতে দিন আমায়।
-আচ্ছা যেয়ো। জানো আজ কি হয়েছে?
-নাহ। কি হয়েছে?
-আমি বাসায় ফোন রেখে গিয়েছিলাম আজকে! পরে অফিসে যেয়ে দেখি ফোন নাই, তারপর মনে হলো আরেহ ফোন তো বাসায় রেখে আসছি!
-ওহ আচ্ছা। তাই? আমি রুমে ছিলাম না তো তাই দেখিনি। (মিশার কথা জিজ্ঞেস করবে কিনা ভাবতে ভাবতে মিথ্যা বললো)
বলে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যায় তানহা। আর তনয় ভাবলো যাক,ফোন দেখেনি তার মানে মিশার নামও দেখেনি!! কিন্তু এটা না দেখলে তানহার মন খারাপ কেন? কি হয়েছে ওর??
,
,
,
রাতে খাওয়া শেষে রুমে আসার পর তনয় তানহাকে বলে,
-এই শুনো,তুমি কি বোর ফিল করছো?
-মানে? (ভ্রু কুচকে)
-মানে তুমি কি মুভি দেখতে পাওনি তাই মন খারাপ করেছো? (চোখ ছোট করে)
-আরে ব্যাটা,তোর মাথায় কি ওগুলোই চলে নাকি সারাদিন? দিলো মেজাজটা আরও খারাপ করে। (মনে মনে)
-কি হলো বলো?
-হ্যাঁ। (চিল্লিয়ে) মুভিই দেখবো আমি। ওইজন্যই মন খারাপ আমার। হয়েছে?এখন খুশি আপনি?
-আশ্চর্য! তুমি চিল্লাচ্ছো কেন? (রেগে)
-কিছুনা! আপনার সাথে কথা বলাই বেকার! কিচ্ছু বুঝবেন না আপনি! থাকবোই না আমি আপনার সাথে। (বলে বালিশ নিয়ে যেতে লাগে)
-কোথায় যাচ্ছো শুনি?
-রুমের বাইরে তো আর যেতে পাচ্ছিনা তাই রুমেই থাকবো কিন্তু আপনার সাথে না।
তাই বলে সোফায় বালিশ রেখে আসে।
তনয় উঠে এসে বলে,
-ঠিকাছে, সোফায়ই থেকো তুমি কিন্তু তার আগে আমার সাথে মুভি দেখতে হবে।
-আশ্চর্য! মুভির ভূত মাথায় চেপেছে নাকি আপনার?নিজে নাটক করে আবার তখন থেকে মুভি মুভি করছেন।
-আমি কিসের নাটক করলাম আবার? (ভ্রু কুচকে)
-কিচ্ছুনা। আমার ঘুম ধরেছে আমি ঘুমাবো।
– তা তো হয়না তানহু বেবি, এখন মুভির জন্য তোমার মন খারাপ তাহলে মুভি তো দেখতেই হবে। মুভি দেখে ঘুমাবা। (বাকা হেসে)
-উফফ অসহ্য লোক একটা! (বিরক্ত হয়ে)
তনয় খাটে বসে আছে ল্যাপটপ নিয়ে আর মুভি চালু করলো। মুভিটা ছিলো কনজ্যুরিং ২।
তানহা ওইসময় তনয়ের জন্য কফি আনতে গিয়েছিল তাই সে জানেনা তনয় কোন মুভি দেখাবে তাকে।
তানহা আসতেই তনয়ের পাশে বসলো।যথারীতি মুভি শুরু হলো। বেশ কিছুটা সময় যাওয়ার পর তানহা বুঝতে পারলো যে তনয় তাকে ভূতের মুভি দেখাচ্ছে। তানহার বেশ মেজাজ খারাপ হলো তনয়ের উপর। সে যে ইচ্ছা করে এটা করেছে তাকে বিরক্ত করার জন্য তা বুঝতে বাকি রইলো না তার..!! তানহা উঠতে ধরতেই তনয় এক হাত চেপে ধরলো ওর আর বললো,
-মুভি দেখা শেষ হওয়ার আগে বিছানা থেকে নামলে পা কেটে ফেলবো তোমার। মাঝখান থেকে উঠে যাওয়া রুলস এর বিরুদ্ধে জানোনা তুমি।
-নিকুচি করি আমি আপনার রুলস এর। দেখবোনা আমি কোন মুভি। (দাতে চেপে)
-আমাকে রাগিয়োনা তানহা। আমি রেগে গেলে তোমার কপালেই দুঃখ আছে। (শক্ত গলায়)
তনয়ের রাগ সম্পর্কে কয়দিনে ভালো ধারণা হয়ে গেছে তানহার তাই সে আর কিছু বলল না। আবার বসে পড়লো বেড এ।
,
,
তানহা তো চোখ-মুখ কুচকে মুভি দেখছে আর তনয়ের চোখ বারবার তানহার দিকে যাচ্ছে কেননা সে খেয়াল করেছে যখন থেকে ভূতের সিন আসতে ধরেছে তানহা তার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে আসছে..!!
শেষে যখন অনেক ভয়ংকর এক সিন আসলো তানহা ভয়ে তনয়ের বুকে মুখ লুকালো। তনয় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তানহার সেইদিকে খেয়াল নেই, সে এক চোখ খুলে ভুত দেখছে আবার ভয় লাগলে চোখ বন্ধ করে তনয়ের বুকে মিশে যাচ্ছে..!!
এদিকে তনয়ের মুভির দিকে কোন মনোযোগ ই নেই। সে একমনে তানহাকে দেখতে ব্যস্ত। সে জানেনা কেন কিন্তু তার খুব ইচ্ছে করছিলো সময়টা এখানেই থেমে দিতে। তার মনে হচ্ছিলো তানহাকে এভাবেই বুকে নিয়েই থাকুক সে, যেন এমনটাই হওয়া উচিত!! তনয়ের ভাবনার মাঝে মুভি শেষ হয়ে গেলো আর তানহাও বুঝতে পারলো যে ও এতক্ষণ তনয়কে জড়িয়ে ধরে ছিলো তাই প্রচণ্ড লজ্জা পেয়ে ওকে ছেড়ে দিলো। তনয়ও বাস্তবে ফিরে আসলো যে ও কিসব ভাবছিলো একটু আগে.!!
কিন্তু মুভি দেখে তানহার ভয় বেড়ে গিয়েছে। এখন সে একা কেমনে ঘুমাবে সেই চিন্তায় আছে আর তনয় তানহার মুখ দেখেই বুঝতে পাচ্ছে যে সে কি চিন্তা করছে তাই বাকা হেসে বলল,
-কি ব্যাপার তানহু বেবি? ঘুমাবে না তুমি? সোফা তোমার জন্য ওয়েট করছে যাও! (চোখ টিপে)
যদিও তানহার ভয় করছিলো কিন্তু সে তনয়কে এটা বুঝতে দিবেনা তাই কিছু না বলে সোফায় চলে গেলো ঘুমাতে। তনয়ও বাকা হেসে শুয়ে পড়লো!
*আধা ঘন্টা পর*
তানহা অনেকবার এদিক ওদিক করেও ঘুমাতে পাচ্ছিলো না, চোখ বন্ধ করলেই ভুতের কথা মাথায় আসছিলো। এ অবস্থায় সে একা একা ঘুমাতেই পারবেনা। তাই চুপি চুপি উঠে গিয়ে দেখলো তনয় ঘুমিয়েছে কি না, যখন দেখলো তনয় ঘুমাচ্ছে তখন আস্তে করে বেডে উঠে তনয়ের পাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো সে।
তানহা ঘুমাতেই ওর দিকে ফিরলো তনয়। এতক্ষণ ও তানহার অপেক্ষা করছিলো। তানহার মুখ দেখেই সে বুঝেছিলো কি ভয়টাই না পেয়েছে সে আর একা কিছুতেই ঘুমাতে পারবেনা তাই ইচ্ছা করে ঘুমানোর নাটক করেছে তখন। তানহা গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে দেখে ওকে ঠিকভাবে শুয়ে দিতে গেলো সে আর তানহা ঘুমের ঘোরে তনয়ের হাতে মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরলো..!! একবার সরিয়ে দিতে ধরলো তনয় ওকে কিন্তু তানহা ওর সাথে আরও লেগে গেলো তাই ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে অজানা এক মায়ায় আর সরিয়ে দিতে পারলো না তনয়!
-পাগলী একটা, ভয় পাবে তাও মুখ ফুটে স্বীকার করবে না!
বলে মুচকি হেসে তানহাকে নিয়েই ঘুমিয়ে পড়লো তনয়!
*রাত ৩ টায়*
-এই যে শুনছেন?
-হুম (ঘুমের মধ্যে)
-উঠুন না। (তনয়কে ঠেলে)
-কি হয়েছে? ঠেলছো কেন? (বিরক্ত হয়ে)
-আমি ওয়াশরুমে যাবো।
-তো যাও না। আমি কি কোলে করে নিয়ে যাব নাকি এখন?
-আশ্চর্য, আমি কি তা বলেছি নাকি? আপনি একটু সাথে চলুন না প্লিজ। আমার ভয় লাগছে।
-তানহা, দেখো কিচ্ছু হবেনা। ওয়াশরুম ওইতো ওখানে।যাবে আর আসবে।
-না আমি একা যেতেই পারবো না আজকে। চলুন না। (হাত ধরে টেনে)
-খাইছে রে! এ কোন জ্বালায় পড়লাম রে বাবা। আর যদি কোনদিন তোমাকে ভুতের মুভি দেখাইছি আমি!
অগত্যা বেচারা তনয় নিজেকে গালি দিতে দিতে তানহার সাথে ওয়াশরুম পর্যন্ত গেলো।
,
,
,
পরেরদিন সকালে তানহা তনয়কে বলল যে ওর ভার্সিটি যেতে হবে আজ তাই যাওয়ার সময় যেন ওকে ড্রপ করে দেয়। তাই নাস্তা করে তানহা-তনয় বের হয়ে গেলো।
বিকেলে তানহা ভেবেছিলো তনয় ওকে নিতে আসবে কিন্তু তনয় আসলো না। সে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলো তনয়ের কিন্তু সে না আসায় একাই বাসায় চলে গেলো।
তানহা বাসায় এসে দেখে তনয় এখনও আসেনি। সন্ধ্যার দিকে তনয় আসলো বাসায়। সে ফ্রেশ হয়ে আসার পর তানহা ওকে জিজ্ঞেস করলো,
-আজকে দেরি হলো যে আপনার আসতে?
– একটু কাজ ছিলো।
– ওহ। আমি ভেবেছিলাম আপনি নিতে আসবেন আমাকে।
-তানহা, বাচ্চাদের মতো কথা বলোনা প্লিজ। তুমি যথেষ্ট বড় আছো একা বাসায় আসার জন্য। তোমার পিছে ২৪ ঘন্টা ঘুরতে পারবো কি আমি?
তনয়ের কথা শুনে তানহার চোখে পানি এসে গেলো। সে তো ওইভাবে বলেনি। তনয় কেন এইরকম করে কথা বলছে ওর সাথে??
-আমি সেটা বলিনি। আপনার অফিস তো ওই টাইম এই শেষ হয় তাই ভেবেছিলাম নিতে আসবেন। কি কাজ ছিলো আপনার?
-কোন কাজ থাকতেই পারে আমার।বেশি বউ এর মতো বিহেভ করিও না বুঝেছো? ছয় মাস পর ডিভোর্স হবে আমাদের ভুলে যাওনি তো??
তাই বলে তনয় বের হয়ে গেলো রুম থেকে।
,
,
,
এদিকে তানহার চোখ দিয়ে অঝোরে জলরাশি গড়িয়ে পড়ছে। সে ভেবেছিলো তনয় হয়তো বিয়েটাকে মেনে নিয়েছে। কিন্তু তনয় আজকে তার ভুল ভেঙে দিলো।
কি হতে পারে তনয়ের এমন করার কারণ??
চলবে…🍁