তারে আমি চোখে দেখিনি !! Part- 02
মোবাইল ফোনের রিংটোনের শব্দে মাহিরের ঘুম ভাঙে।ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখে স্নিগ্ধার ৭ মিসড কল। মাহির ঝটপট করে উঠে স্নিগ্ধাকে ফোন করতে থাকে আর স্নিগ্ধা বারবার কেটে দেয়।
মাহিরঃ এই রে,, খুব রেগে গেছে বোধহয়। এবার কি যে করি?
একা একা বলছে মাহির।
মায়াঃ কি ব্যাপার,, কাকে ফোন করা হচ্ছে, গালফ্রেন্ড নাকি?
মাহির পিছনে তাকিয়ে দেখে মায়া দরজার সাথে হেলান দিয়ে খুব ভাব নিয়ে কথাটা বলছে।
।
মাহির রেগে মায়ার মুখোমুখি গিয়ে দাড়ায়।
মাহিরঃ সব তোমার জন্য হয়েছে! একইতো সারা রাত মশার কামড় আর ঠান্ডার মধ্যে বাইরে শুইয়ে রেখেছো।তারপর এসেছো কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে?
মায়াঃ ওহহ প্লিজ এখন বলবেন না যে সব দোষ আমার। ওটা তো আপনার শাস্তি ছিল।
কথাটা বিনিয়ে বিনিয়ে বলে মায়া।
মাহিরঃ শাস্তি?
মায়াঃ হ্যাঁ, শাস্তি। আপনি কিভাবে টাকা দিয়ে চার-পাঁচজন ছেলের কাছে ছেড়ে আসতে পারেন আমাকে ধর্ষণ করতে? আপনি না আমায় বিয়ে করেছেন? আরে বউ না মানেন,, আপনার পরিবারের সম্মানের কথাটা’তো ভাবতে পারতেন!
।
মায়ার কথার কোনো উত্তর দেয় না মাহির। চুপচাপ মায়ার পাশ কেটে চলে যেতে লাগে।
আর মায়া মাহিরের হাতটা টেনে ধরে বলে,
মায়াঃ একি কোথায় যাচ্ছেন?
মাহিরঃ ওয়াশরুমে।ফ্রেশ হবো।
মায়াঃ এই নিন (মাহিরের হাতে একটা পলিথিনের ব্যাগ ভর্তি অনেকগুলো কয়লার টুকরো ধরিয়ে দিলো)
মাহিরঃ কি করবো এটা দিয়ে?
মায়াঃ দাঁত মাজবেন!
মাহিরঃ মানে?
মায়াঃ মানে আপনার ব্রাস, টুথপেষ্ট সব ফেলেদিয়েছি ডাস্টবিনে। এখন থেকে কয়লা দিয়েই আপনাকে দাঁত মাজতে হবে।
মাহিরঃ তুমি বললেই তাই করবো ভেবেছো?
মায়াঃ ঠিকাছে তাহলে আমি বাড়ির সবাইকে বলে দিয় কাল কি করতে চাইছিলেন আপনি?
মাহিরঃ তোমার এই ফালতু হুমকিতে আমি ভয় পাবো ভেবেছো? যা করবে করে দেখাও। আমিও দেখি কে বিশ্বাস করে তোমার কথা।
মায়াঃ ঠিকাছে!
কে কোথায় আছো গো, “মরে গেলাম তারাতাড়ি এসো”।
আহ আর মারবেন না প্লিজ।
বলেই মায়া মেঝেতে বসে চিৎকার জুড়ে দেয়। মায়ার চিৎকার শুনে মুহূর্তেই বাড়ি ভর্তি সবাই চলে আসে।
।
মাহিরঃ আরে আরে চিৎকার কেন করছো?
মায়া আরও জোড়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।
মায়াঃ আল্লাহ গো আমার জীবনে এই ছিল?
রাইশাঃ কি হলো বউমা এভাবে মেঝেতে কেনও পরে আছো?
মায়া মাহিরের দিকে আঙুল দেখিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,
মায়াঃ কাল সারারাত উনি আমাকে বেলকনিতে রেখে নিজে রুমে ঘুমিয়েছে।আর যানেন মা!উনি আমাকে একটা বালিশ আর কম্বলও পর্যন্ত দেয় নি।কত্ত মশা আর ঠান্ডা ছিলো বাইরে।তবুও আমি মেনে নিয়েছি।সকালে যখন বলেছি কাল থেকে অন্তত একটা বালিশ আর কম্বল দিয়েন তখন বলেছে হবে না।এই দেখুন,,আমার হাতে পলিথিনের ব্যাগ ভর্তি কয়লা ধরিয়ে দিয়েছে। বলছে আমার ব্রাস, টুথপেষ্ট সব ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। এই দিয়েই এখন থেকে দাঁত মাজতে হবে।আমি পারবো না বলেছি তাই ধাক্কা দিয়ে এমন ভাবে ফেললো যে পরে গিয়ে কোমড়ে আর পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা পেয়ে চিৎকার করছি।আমি বোধহয় আর হাটতে পারবো না।
মাহিরঃ এই মেয়ে এই আমি কখন এসব করেছি তুমিই তো…
মায়া আরও জোড়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।আর বলে,
মায়াঃ আমি আর এখানে থাকবো না।প্লিজ কেউ আমার বাবাকে খবর দেন আমি চলে যায়।
মাহিরঃ চলে যাবে? যাও চলে! যত্তসব নেকামি।
মাহির কথাটা বলতেই রাইসূল(মাহিরের বাবা) মাহিরের গালে ঠাসসসস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।মাহির গালে হাত দিয়ে রাইসূলের দিকে তাকায়।
।
রাইসূলঃ ছি: মাহির ছি: এতো নিচে নেমে গেছিস তুই? তোকে আমার ছেলে ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে।
মাহিরঃ বিশ্বাস করো বাবা ও সব মিথ্যা বলছে।এসব ও আমার সাথে করেছে।
।
মায়াঃ তাই?
মাহিরঃ আচ্ছা দাড়াও প্রমাণ দেখাচ্ছি। ওয়াশরুমে আমার ব্রাস, টুথপেষ্ট কিছুই নেই।সব ও ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে।এসো দেখবো চলো।
।
মাহির সবাইকে নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। দেখে ব্রাস, টুথপেষ্ট সব যেখানেরটা সেখানেই আছে।
মাহিরঃ এটা কি হলো?
রাইসূলঃ আই আমার সাথে
মাহিরের হাত ধরে টেনে মায়ার সামনে নিয়ে যায়।
মায়াঃ দেখেছেন বাবা উনি কতো মিথ্যা বলে!
মিরাঃ কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না মাহির এমনটা কেন করবে?
মায়াঃ কারণ উনি অন্য কাউকে ভালোবাসে।
রুসাঃ কি বলছো ভাবি ভাইয়া অন্য কাউকে ভালোবাসে?
মায়াঃ হুমম।একটু আগেই তাকে ফোন করছিলো।
সবাই মাহিরের দিকে তাকায়।
মাহিরঃ নাহ নাহ ও মিথ্যা বলছে!
মায়াঃ ও তাই! আমি মিথ্যা বলছি? বলুন আপনার মায়ের মাথায় হাত রেখে যে আপনার গালফ্রেন্ডকে সকালে ফোন দিচ্ছিলেন না!
।
রাইশা এসে মাহিরের হাতটা নিয়ে নিজের মাথায় রাখে।
রাইশাঃ এবার বল, বউমা যা বলছে তাকি সত্যি?
মাহিরঃ মা ওর কথা তুমি শুনো না।
রাইশাঃ আমি শুধু যানতে চাই হ্যাঁ কি না?
মাহির আস্তে করে রাইশার মাথা থেকে হাতটা নামিয়ে নেয়।মাহিরের নিরাবতা রাইশাকে বুঝিয়ে দেয় মায়া যা বলেছে সব সত্যি।
।
সোহাগ মির্জা বিজনেসের কাজে বাইরে ছিলো।এই মাত্র বাড়িতে ফিরেছে।নিচে বারবার কলিংবেল বাজিয়েই চলেছে কিন্তু কেউ খুলছে না।না পেরে মিরাকে সোহাগ ফোন করলো।মিরা ফোনটা রিসিভ করে।
।
মিরাঃ আসসালামু আলাইকুম। এখন কথা বলতে পারছি না গো খুব বিজি আছি।
সোহাগঃ আর আমি নিচে দাড়িয়ে আছি।তোমরা বাড়িতে সবাই কি করছো বলো তো?
মিরাঃ কিচ্ছু না তুমি দাড়াও আমি আসছি।
সোহাগঃ তারাতাড়ি আসো। কতোদিন দেখিনি তোমায়।তোমাদের সবাইকে খুব মিস করছি।
।
।
।
।
।
ওদিকে,,,
স্নিগ্ধাঃ একটা কাজও ঠিক মতো করতে পারে না এই মাহির।বলেছিলাম মেয়েটাকে মেরে ফেলতে।বলে না ভয় দেখাবে।তাহলে নাকি ভয় পেয়ে পালিত বাবার বাড়িতে চলে যাবে।ধূর,, ভাল লাগে না।নিজের ভালোবাসা কিনা অন্যের স্বামী। ভাবা যায় এগুলা? জীবনডায় বেদনা আমার!! কি যে দেখলো মাহিরের মামা ওই পরিচয়হীন বস্তির মেয়েটার মধ্যে যার জন্য আমি আমার মাহিরের পর হয়ে গেলাম।
বিছানায় হাত মেলিয়ে আঙুলে নেলপলিশ দিচ্ছে। আর কথাগুলো নিজে নিজে বলছে স্নিগ্ধা।
,
,
,
চলবে,,