ঘৃণার মেরিন

ঘৃণার মেরিন !! Part- 09

সকালে…..
মেরিন নীড়ের বুকে ঘুমিয়ে আছে। পরম শান্তিতে। নীড় মেরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেরিনের ঘুম ভাঙলো।
নীড়: good morning honey ……
মেরিন মুচকি হেসে
বলল: morning …।
নীড় : আমার good morning kiss??
মেরিন: নিরার কাছে যান….
নীড় মেরিনের চুল হালকা করে ধরে মাথাটা তুলে
বলল: ভেবে বলছো? 🤨🤨🤨।
মেরিন:হামম।
নীড়: সত্যি সত্যি যাবো কিন্তু….. 😠😠😠।
মেরিন:যান।
নীড়: হ্যা যাবোই তো….. 🤬🤬🤬।
নীড় মেরিনকে নামিয়ে উঠতে গেলে মেরিন নীড়কে টান দিয়ে ফেলে নীড় ওপর উঠে নীড়ের ঠোট জোরা দখল করে নিলো।

একটুপর…..
নীড়: ঠিক না ঠিক না……
মেরিন: আমি জানি……
নীড়: huh….
মেরিন: ১টা ছেলেমানুষ এতো dramabaaz হতে পারে আপনাকে না দেখলে জানতামই না।
নীড়: দেখতে হবেনা জামাইটা কার???

ভালোভাবেই চলতে লাগলো ওদের জীবন। নীড় মুখে ভালোবাসি না বললেও নীড়ের কাজে মেরিন ঠিকই ভালোবাসা খুজে পায়। মেরিনও normal হতে শুরু করেছে। রাগ টা নিয়ন্ত্রনে আসছে। সবটাই হয়েছে নীড়ের ভালোবাসা আর treatment এর জন্য।

.

১মাসপর……
রাত ৩টা।
মেরিন নীড়ের সাদা রঙের শার্টটা পরে বারান্দায় গিয়ে দারালো। আকাশপানে মুখ করে চোখ বন্ধ করে বাতাসটাকে feel করছে। নীড় ঘুমাচ্ছে।

.

কিছুক্ষনপর……
নীড় গিয়ে মেরিনকে পেছন থেকে ১হাত দিয়ে জরিয়ে ধরলো। অন্য হাতে কফির মগ।
নীড়: কফি???
মেরিন: ঘুমাননি…..
নীড়: কি মনে হয়???
মেরিন মিষ্টি ১টা হাসি দিলো।
২জনে মিলে কফিটা শেষ করলো। নীড় rocking chare এ মেরিনকে কোলে নিয়ে বসে আছে। মেরিন নীড়ের বুকে আকিবুকি করছে।

নীড়: কিছু কি বলার ছিলো??
মেরিন: হামম।
নীড়: বলো।
মেরিন: আমাকে ভালোবাসি কবে বলবেন???🙄🙄🙄।
নীড়: ভালোবাসলে তো বলবো…. 🙊🙊🙊
মেরিন: মানে? 😤😤😤
নীড়:তোমাকে কেন ভালোবাসি বলবে বলো তো? তোমাকে কি আমি ভালোবাসি নাকি??? আমি তো নি…..রা কে ভালোবাসি… 😜😜🤭🤭😎😎….

মেরিন নীড়ের বুকে জোরে ১টা কামড় বসিয়ে দিলো।
নীড়: oh মা। vampire বউ। এতো কামরাও কেন? 😒😒😒।
মেরিন: আমার জামাই আমি কামড় মারছি তোর বাপের কিরে???
নীড়:🙊🙊🙊
মেরিন: আর কিছুদিনপর তো আমাদের anniversary …. কি gift দিবেন???
নীড়: কিসের anniversary ?? তুমি কি ভুলে গেছো যে আমি এই বিয়েটা মানিনা।😜😜😜।
মেরিন:তোর বাপ মানে। শালা।
নীড়:🤭🤭🤭। আচ্ছা শোনো বিয়ের দিন i mean anniversary এর দিন আমি তোমাকে gift দিতে পারি তবে তার আগে তোমাকে ১টা কথা দিতে হবে।
মেরিন: আমার কোনো gift চাইনা। আমার শুধু আপনাকেই চাই……
নীড়: ওহ তবে আমাকে আমার পছন্দের কোনো কিছু দিবেনা….
মেরিন: divorce ছারা যা চাইবেন সব দিবো।
নীড়: কথা দিচ্ছো যে সেদিন যা চাইবো তাই দিবে??
মেরিন: কথা দিলাম সেদিন যা চাইবেন তাই দিবো।
নীড়: আমাকে ছুয়ে কথা দাও।
মেরিন: এই আপনাকে ছুয়ে কথা দিলাম।

নীড়: thank u……

মনে মনে: তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা যে সেদিন তোমাকে কি gift দিবো। হামম আমি আমাদের ওই বিয়েটা মানিনা। তাই তো সেদিন আবার তোমাকে বিয়ে করবো। ৭দিন ধরে জমকালো অনুষ্ঠান হবে। ১বছর আগে সারা দেশ তোমার ভালোবাসা দেখেছিলো…… এবার সারা দেশ আমার ভালোবাসা দেখবে। আমিও বলবো যে তোমাকে ভালোবাসি। অনেক বেশি ভালোবাসি। । খুব বেশি ভালোবাসি।
আর সেদিন আমি তোমার কাছে চাইবো যে… তুমি যেন সকল অভিমান ভুলে তোমার মা-বাবাকে মেনে নাও। আমি জানি তুমি ওদের অনেক ভালোবাসো। প্রকাশ করোনা।
সেদিন আরো ১টা উপহার তুমি পাবে। তোমার জীবন থেকে সব অন্ধকার মিটিয়ে দেবো। কেন জানিনা আমার মনে হচ্ছে তোমার সাথে যা যা হয়েছে তার পেছনে নিরার হাত আছে…….
🤣🤣🤣… ভাগ্য কি অদ্ভদ। যাকে ভালোবেসেছিলাম সেই ভুল। আর যাকে ভুল ভেবেছিলাম সেই ফুল হলো।
তুমি ঠিকই বলেছো যে আমি নিরাকে কখনোই ভালোবাসিনি…..
কারন নিরার বিরহ কখনো আমার চোখে অশ্রু আনেনি। কিন্তু তোমার জন্য আমি কেদেছি। তুমি তো সেই মায়া যে মায়াতে সবাই বাধা পরে যায়। তোমার সকল কষ্ট আমি দূর করবো। কথা দিলাম।

.

আরো দেড়মাসপর…….
নীড় ৪-৫দিন ঘরে মেরিনকে কিছু বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু বলতে পারছেনা। কারন মেরিন কেমন যেন খিটখিটে হয়ে গেছে। কারো কোনো কথা শুনতে মন চায়না। কিছু খেতে পারেনা। সবকিছুর গন্ধ লাগে। তার সাথে মাথা ঘুরানি তো আছেই। অকারনেই কান্না করে। রাত ৩টা ৪টা বাজে নীড়কে ঘুম থেকে টেনে তুলে বলে এটা খাবো ওটা খাবো। বেচারা নীড় ঘুমের বলিদান দিয়ে সেগুলো নিয়ে আসে। তখন মেরিন excited হয়ে ১ম বার মুখে তো দেয়। কিন্তু পর মুহুর্তেই মুখ থেকে ফেলে দেয়। বলে খাবোনা। সেই সাথে নীড় জোর করে ধমক দিয়ে খাওয়াতে গেলে কামড়, কিল, ঘুষি এমনকি লাথিও খেতে হয়। সব মিলিয়ে ১৫দিন ধরে নীড়ের অবস্থা কেরোসিন। তাই মেরিনের এমন অবস্থাতে ওকে আর সেই জরুরী কথাটা কথাটা বলা হয়ে ওঠেনি।

মেরিন ওর কি হয়েছে জানার জন্য কিছু test করায়। আর যখন test reportটা হাতে পায় তখন দেখে যে ও pregnant …. খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। ওর মনে হয় যে ও স্বর্গ সুখ পেয়ে গেছে। পাগলের মতো সারা হাসপাতালে নাচতে শুরু করে। কি রেখে কি করবে দিশা পায়না। নীড়কে ফোন করে। নীড় ধরলোনা। মেরিন বারবার call দিলো। নীড় বারবার কেটে দিলো। মেরিন তো রেগে আগুন। আবার ফোন করলো অবশেষে নীড় ধরলো।
মেরিন: hello নীড়……
নীড়: সবসময় ফোন করে জালাও কেন বলো তো? কখনো তো তোমার ফোন কাটিনা। যখন কেটে দিচ্ছি তখন কোনো না কোনো কারন তো আছে….. why don’t you understand ……. 😠😠😠। surgery করছি পরে ফোন করবা।
বলেই নীড় ফোনটা কেটে দিলো।
মেরিন: শালা… আমাকে রাগ দেখায়…. একে তো…. উফফ মেরিন…. নীড় surgery করছে। রাগ তো করবেই। আমিও না। ১টা কাজ করি ১টা surprise plan করি। যার মাধ্যমে আমি নীড়কে বলবো যে we r pregnant … 😇😇😇। খুব তো সেদিন বলেছিলো যে আমি নাকি কখনো উনার বাচ্চার মা হতে পারবোনা। এখন চৌধুরী বাবু কি বলবেন???😎😎😎

মেরিন গাড়ি দিয়ে বাসায় যাচ্ছে। তখন দেখলো যে ১টা পার্কের বাইরে নীড়ের গাড়ি দার করানো।
মেরিন: আরে নীড়ের গাড়ি? উনি যে বলল surgery করছে!! এমা ছিঃ ছিঃ আমি উনার ওপর সন্দেহ করছি? হয়তো অন্য কোনো জরুরী কাজ। তাই। যাই হোক উনার গাড়ি দেখে তো wait করা আর possible না। এখনই গিয়ে বলে দেই।☺️☺️☺️। কিন্তু যদি কোনো দরকারী কাজ হয়??? হোক। আমার আর নির্বনের থেকে তো অন্য কোনো কিছুই বেশি দরকারী নেই।

মেরিন গাড়ি park করে ভেতরে গেলো। আর গিয়ে যা দেখলো তা দেখে মেরিনের পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো। কারন নীড়-নিরা ২জন ২জনকে জরিয়ে ধরে আছে।

নীড়: love u … love u a lot জান……
নিরা:& i love u too জান।
নিরা সরে দারালো।
নিরা: আচ্ছা যদি মেরিন জানতে পারে যে তুমি OT তে নয় আমার সাথে আছো…. তখন কি হবে???
নীড়: come on…. গত ৭দিন ধরেই তো তোমার সাথে meet করছি। ওই সাইকো কি কিছু বুঝতে পেরেছে?? পারেনি। আর পারবেও না। কারন আমি ওর চোখে ভালোবাসার কালো কাপড়ে বেধে দিয়েছি। জান।
নিরা:🤣🤣🤣। সেদিন তোমার ব্যাবহারে তো আমি মনে করেছিলাম যে তুমি সত্যি সত্যি ওকে ভালোবেসে ফেলেছো।
নীড়: 🤣🤣। ওই মেয়েকে ভালোবাসবো আমি??? দাদুভাইয়ের শোকে আহত the মেরিন বন্যা। তাকে support দেয়ার জন্য ১টা ভরসার হাতের দরকার ছিলো। তাই তার কাধে সেই ভরসার হাতটা রাখলাম। ১জন neuroligist হিসেবে ওর brain নিয়ে খেলা আমার কাছে কোনো ব্যাপারই না। মেরিন এখন অন্ধের মতো আমাকে বিশ্বাস করে।
নিরা: এখন ওর তো ১টা ব্যাবস্থা করতে হবে। তোমারই দোষ। ও suicide করতে নিয়েছিলো সেদিন ওকে বাচালে কেন?
নীড়:জান….. ওকে এভাবে কিভাবে মেরে ফেলি তোমাকে খান empire এর মালকিন না বানিয়ে।
নিরা: তু্মি আমাকে এতো ভালোবাসো???😍😍।
নীড়: any doubt ??
নিরা: না জান……
নীড়: ১বার সবটা তোমার নামে করিয়ে নিলেই মেরিনের কাম তামাম।
শেষ করে দিবো #ঘৃণারমেরিন কে…. চিরতরে।
নিরা: কিন্তু কিভাবে?

নীড়: সেটা তখনই দেখতে পাবে…
নিরা: বললে কি হয়?
নীড়: তোমার surprised হওয়া cute face টা দেখবো কি করে???
নিরা: ওকে মারবে কিভাবে ওর ওই জন না নামের লেজটা আছে যে।
নীড়: আর জন। মেরিন নিজে জানলেও কিচ্ছু করতে পারবেনা। আমি এমন plan বানিয়েছি। আমার ভালোবাসার জীবনে আধার নামিয়ে আনার শাস্তি তো ওকে পেতেই হবে। আমাদের বিবাহ বার্ষিকীর দিনই সব হিসাব-নিকাশ হয়ে যাবে। যে যেখানে থাকার সে সেখানেই থাকবে। আমার ভালোবাসার জীবনটাকে আমি আলোয় ভরিয়ে দিবো।
নিরা নীড়কে জরিয়ে ধরলো।
নিরা: তুমি আমাকে এতোটা ভালোবাসো জান???
নীড়: হামম। জান।

এর থেকে বেশি দেখা আর মেরিনের পক্ষে সম্ভব না। কাদতে কাদতে চলে গেলো।

.

নীড়তো মেরিনকে দেখলো না।
নীড় মনে মনে: কালনাগিনী….. তোর জন্য আজ আমার ভালোবাসা…. আমার মেরিনের এই অবস্থা। তোর জন্য আমার মেরিন অন্ধকারে ডুবে গেছে। ভালোবাসার মেরিনকে তুই ঘৃণার মেরিন বানিয়ে দিয়েছিস। তোর আর তোর বাবার তো আমি এমন হাল করবো যে ২য় বার আর কেউ এমন ১টা জঘন্য কাজ করতে হাজারবার ভাববে। তোরা বাপ-বেটি কেবল খুনই করিসনি সেই সাথে ১টা ফুলের মতো জীবনকে তোরা শেষ করে দিয়েছিস। ১টা সন্তানকে তার মা-বাবার থেকে দুরে করে দিয়েছিস। সারা দুনিয়া দেখবে তোদের কি অবস্থা হয়। আর এটাই হবে আমার বউয়ের জন্য সেরা anniversary & wedding gift… সেদিন সারা দুনিয়ার সামনে আমি আমার মেরিনকে আবার ভালোবাসা মেরিন বানাবো। সেই সাথে আবার মেরিনকে বিয়ে করবো। আর তুই….. তুই না বাচতে পারবি না মরতে….. মরার ভিক্ষা চাইবি কিন্তু মৃত্যু তুই পাবিনা…….

.

[হ্যা নীড় নিরার সত্য এবং মেরিনের অতীত জানতে পেরেছে। টানা ২ মাস অনুধাবন করে নীড় সবটা জানতে পেরেছে। আর জেনে মেরিনকে আরো ভালোবেসেছে। কিন্তু তার থেকে হাজারগুন বেশি নিরাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছে। যেদিন নীড় সত্যিটা জানতে পারে সেদিনই চেয়েছিলো নিরা আর ওর বাবাকে জানে মেরে দিতে। পরে ভাবলো কেবল জানে মেরে দিলে ওদের শাস্তি কম হবে ভেবে নীড় plan বানায় যে সব নিরার সাথে অভিনয় করে সব নিরার মুখ দিয়ে স্বীকার করাবে। এরপর ওর এমন হাল করবে যে …… মেরিনের প্রতিটা কষ্টের হিসাব নেবে ওদের কাছ থেকে।
কিন্তু নীড় জানেনা যে আরো ১বার ভাগ্য মেরিনকে নিয়ে পরিহাস করবে। ]

.

রাতে…..
রাতে নীড় বাড়িতে পৌছালো। আজকে ঠিক করেছে যে ও মেরিনকে গিয়ে সব সত্যটা বলে দিবো। যে ও নিরার সত্যটা জেনে গেছে। গতকিছুদিন ধরেই বলতে চেষ্টা করেছে কিন্তু মেরিনের মুড সুইং এর জন্য বলতে চেষ্টা করেও বলতে পারেনি। কিন্তু আজকে নীড় বলবেই। নীড় রুমে গিয়ে অবাক হয়ে গেলো। কারন সারা ঘর এমনভাবে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে যে মনে হচ্ছে এটা ফুলের বাগান। খাটটাকেও খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। খাটের মাঝখানটাতে লাল টুকটুকে শাড়ি পরে ঘোমটা টেনে মেরিন বসে আছে। নীড় মুচকি হাসি দিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে মেরিনের পাশে গিয়ে বসলো। মেরিনের ঘোমটা টা তুলে মুগ্ধ হয়ে গেলো। অস্বাভাবিক সুন্দর লাগছে মেরিনকে। নীড় মেরিনের কপালে চুমু একে দিয়ে মাতাল কন্ঠে
বলল: আজকে এভাবে ঘায়েল করার কারন??? এই কদিন কামড়,কিল, ঘুষি , লাথি দেয়ার পর কি আজ এভাবে মারবে……

মেরিন আজও জবাবে কেবল ১টা হাসি দিলো। যে হাসিটা ও আগে দিতো। ওদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হওয়ার আগে।

নীড়:আজ প্রায় ৬মাস পর তোমার এই রহস্যময় হাসি দেখলাম। কারনটা জানতে পারি এই হাসির??
মেরিন: সব হাসির কারন এবং সব ভালোবাসার মানে খুজতে নেই…..
নীড় মেরিনের নাকে নাকটা ঘষে
বলল: পাগলি…. এর আগে আমি তোমাতে হারিয়ে যাই ১টা অনেক জরুরী কথা তোমাকে জানাতে চাই….. বলতে চাই।
মেরিন নীড়ের ঠোটের ওপর আঙ্গুল রেখে
বলল: shush….. আজকে আমি কিছু জানতে চাইনা….. কিছু শুনতে চাইনা….. আজকে কেবল আপনাকে ভালোবাসতে চাই….. কেবল আপনার ভালোবাসায় হারাতে চাই…… ভালোবাসবেন আমায়…….

সকালে…….
নীড়ের ঘুম ভাঙলো। কিন্তু আজকে বুকের ওপর মেরিনকে পেলোনা। অবাক হলো। নীড় উঠে বসলো। সাইডে ১টা চিঠি পেলো। তাতে লেখা…

” fresh হয়ে ঠিক ১১টায় নিচে আসুন। না ১মিনিট আগে না ১মিনিট পরে। ”

হাতের লেখাটা যে মেরিনের তা বুঝতে একটুও দেরি হলোনা নীড়ের।
নীড়: আরে আমার বউটারে…… কি জানি আজকে আবার কোন পাগলামি করবে… জানটা আমার……..

.

নীড় মেরিনের কথা মতোই ঠিক ১১টায় নিচে গেলো। গিয়ে দেখলো যে সেখানে কবির-কনিকা, নিহাল-নীলিমা, নিরা আর জন দারিয়ে আছে।

নীড়: কি ব্যাপার সবাই ১সাথে জরো হয়ে? সবাই তো আছে কিন্তু মেরিন কোথায়?
নিহাল: জানিনা রে। খালি কালরাতে বলল ১১টা বাজে যেন এখানে থাকি।
কবির: হ্যা… আমাদেরও কাল রাতে বলেছে ১১টায় এখানে থাকার জন্য। আর তারথেকেও বড় কথা
১৫টা বছরপর মেয়ের মুখে বাবা ডাকটা শুনে মনে হয়েছে স্বর্গ পেয়েছি…..
জন: হয়েছে আপনাদের ঘাটিয়া মনের ভাব প্রকাশ করা?
নীড়: কি হলো জন?? তোমার কথায় আজ যুদ্ধের আভাস পাচ্ছি। কাহিনি কি বলো তো??🤔🤔🤔।
জন: আমি আল্লাহর বান্দা , রাসূলের উম্মত। আর মেরিন বন্যার বডিগার্ড। ম্যামের order ছারা আমি অন্য কারো order follow করিনা। করতে বাধ্যও নই। এমনকি আপনারও না। সে যাই হোক। আমার দায়িত্বটা আমি শেষ করি। mr. & mrs. khan এটা আপনাদের চিঠি আপনারাই কেবল এটা পড়ুন…. mr. & mrs. chowdhuri…. এটা আপনাদের চিঠি….. স্যার এটা আপনার চিঠি… mrs. নিরা এটা আপনার চিঠি। সবাই নিজেদের চিঠিটা পড়ে ফেলুন।

কবির-কনিকার চিঠি……
” প্রিয় আম্মু-বাবা,

জানি আমি তোমাদের প্রিয় না। কিন্তু তোমার আমার খুব প্রিয়। আমি জানি আমি তোমাদের মেয়ে হওয়ার যোগ্য নই। কখনোই তোমাদের মেয়ে হতে পারিনি আর কখনো পারবোও না। কিন্তু তোমরা আমার আম্মু-বাবা ছিলে আছো আর সারাজীবন থাকবে। এই চিঠিটার পাশেই ১টা will আছে। property paper… আমি খান empire এর একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞী হয়ে এই খান empire ওই নিরার নামে করতে পারবোনা। কারন ওই নিরা….. থাক কারন টা না হয় তোমরা নাই জানলে। মেনে নিতে পারবেনা। যাই হোক। পুরো খান empire আমি তোমাদের নামে করে দিয়েছি। তোমরা এর যা খুশি করতে পারো। ভালো থেকো।

ইতি তোমাদের
খুনি মেরিন…… ”

.

নিহাল-নীলিমার চিঠি……..
“প্রিয় মামনি-বাবা,
তোমাদের জন্যই আমি নতুন করে মা-বাবা ফিরে পেয়েছিলাম। বাবা হয়তো কখনো মেয়ে বলে ডাকোনি….. কিন্তু তোমার ব্যাবহারে আমি বাবার স্নেহ পেয়েছি। তুমি যেদিন আমার মাথায় হাত রেখেছিলে সেটা আমার জন্য খুব special ছিলো। আমি জানি তুমি আর্শীবাদও করে ছিলে। আর যেদিন আমার হাতের মাংস
পিঠা খেতে চেয়েছিলে সেদিন সত্যিকারের অর্থে আমি বাবা পেয়েছিলাম। আর মামনি… তোমার কথা কি বলবো? তুমি আমাকে ছেলের বউ না মেয়ে বানিয়ে রেখেছিলে। ১৫টা বছর মায়ের যে কোলের জন্য ছটফট করেছি সে কোল তুমি আমাকে দিয়েছো। ৠণি করে দিলে। এখন নিরা নীড়ের বউ হবে। নীড় খুশি থাকবে। এর থেকে আনন্দের আমার আর কিছু নেই। কিন্তু যে সত্যটা তুমি আমি জানি সেটার জন্য বলছি নীড়কে save রাখার দায়িত্বটা তোমার হাতে দিয়ে গেলাম। ভালো থেকো তোমরা।
ইতি তোমাদের
বউমা।”

নিরার চিঠি…..
“প্রিয় খুনি,

কি রে অবাক হলি? কি ভেবেছিস আমি কোনোদিন কিছু জানতে পারবোনা? তুই আমার মামাকে মেরেছিস সেটা কেউ কোনোদিন জানবে না? তুই এখনও কেন বেচে আছিস জানিস??? আমার আম্মু-বাবার জন্য। কারন তোর গায়ে ১টা ফুলের টোকাও ওরা মেনে নিতে পারেনা। তোকে জানে মেরে দিলে তো তাদেরও পাওয়া যাবেনা। তুই এবার নীড়কে পেয়ে যাবি….. কিন্তু যদি কখনো কোনোদিন নীড়ের দিকে তোর খুনী হাত বারাস তবে মনে রাখিস ওই মুহুর্তে তুই নিজের কাল দেখতে পারবি।
ইতি তোর
কাল মেরিন।”

.

নীড়ের চিঠি…….

“প্রিয় নীড়,

যেদিন প্রথম আপনি আমার কাছে এসেছিলেন সেদিন আমি আপনাকে ১টা কথা বলেছিলাম যে আপনার ঘৃণা মেনে নিতে পারবো কিন্তু করুনা না। কিন্তু আপনিতো আমাকে ছলনা করলেন। যাই হোক। আপনি চেয়েছিলেন না আপনার নিরা যেন খান empire এর মালকিন হয়। হয়ে যাবে। আমি mr. & mrs. khan এর নামে সব সম্পত্তি transfer করে দিয়েছি। এটাই তো ছিলো আমাকে বাচিয়ে রাখার কারন….. আসলেই আপনি খুবই ভালো neurologist…… আমি তো আপনার ভালোবাসা কখনোই চাইনি। কারন আপনাকে ভালোবাসার আগে আমি এই শর্ত দিয়ে নেইনি যে আপনিও আমাকে ভালোবাসবেন……. তবে কেন এই ছলনা টা করলেন? যদি স্বামীর অধিকার নিয়ে divorce এমনকি নিরাকে ২য় বিয়ে করতেও চাইতেন তবুও দিয়ে দিতাম। কিন্তু আপনি তো ছলনায় বিশ্বাসী। তবুও আপনার ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। কারন এতে আপনার দোষ নেই। আমার ভাগ্যে হয়তো আমার আল্লাহ সুখই কিছু লিখেননি। mr. & mrs. khan কে একটু দেখে রাখবেন please ….. আমার মা-বাবা হিসেবে নাই দেখলেন অন্তত নিরার খালামনি-খালু হিসেবে দেখে রাখবেন। এই চিঠিটার সাথে divorce paper আছে। নীড়-মেরিনের। আমি sign করে দিয়ে গেলাম। এটা আপনার জন্য উপহার । আমার তরফ থেকে। কারন ছলনার ছলেই আপনি আমাকে যে মিথ্যা ভালোবাসার মুহুর্ত দিয়েছেন সে মুহুর্তগুলোকে সত্যি করে সাজিয়ে রাখবো। যা আমার বাকীটা জীবন চালানোর জন্য যথেষ্ট। আপনার ভালোবাসা হয়তো সত্যি ছিলোনা কিন্তু আপনার হাতের প্রতিটা ছোয়া তো সত্য ছিলো। সেটুকুই আমার জন্য অনেক। আপনার দেয়া ভালোবাসার চিহ্ন হবে আমার বেচে থাকার অবলম্বন। আপনার জীবন থেকে সকল ঘৃণার অবসান ঘটিয়ে চিরতরে চলে গেলো ঘৃণার মেরিন। সে কখনো আপনার সুখের পথের বাধা হবেনা। না সে মরবেনা কারন আপনি তাকে নতুন করে বাচার কারন দিয়েছেন। তারজন্য অসীম ধন্যবাদ। সুখে থাকবেন। & for the last time…
i love u…
ইতি আপনার
ঘৃণারমেরিন।

চিঠিটা পড়ে নিরা ছারা সবার চোখে পানি। নীড় ধাপ করে বসে পরলো।
জন: আশা করি এখন সবাই শান্তি। কারন সবার ঘৃণার অবসান ঘটিয়ে সকলের ঘৃণারমেরিন আজকে চলে গেলো। কেউ কখনো আর মেরিন বন্যাকে খুজে পাবেননা। সে কোথাও নেই। ঘৃণারমেরিনের কাহিনি এই পর্যন্তই ছিলো। জানিনা সে কোথায় আছে? কোথায় যাবে? সকলকে শান্তি দিয়ে নিজেকে শাস্তি দিয়ে চলে গেছে সে। তবে এতোদিন যে জন অশান্তির মেরিনের সাথে থেকেছে সে সবাইকে কি করে এতোটা শান্তি দিতে পারে। মেরিন এখন আমার boss না। তাই তার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই। আর তাই সকলের চিঠিটা পড়েছি। আর সব সত্যটা সবাইকে জানাতে এসেছি। যেটার নিষেধাজ্ঞা ছিলো আমার ওপর। নিরা তুই তোর চিঠিটা পড় তো ১বার জোরে জোরে।
নিরা: জন তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে তুই করে বলার?
জন নিজের gunটা বের করে
বলল: সাহসের দেখেছিস কি? তুই চিঠিটা পড়বি এবং সেই সাথে সব সত্য বলবি …. এখনই। না হলে যে কটা বুলেট আছে সবগুলো ঠিক তোর heart বরাবর লাগাবো।

নিরা ভয়ের চোটে সব ভরভর করে বলে দিলো। সব শুনে সবাই স্তব্ধ।

জন: আমার আর কিছুই বলার নেই। নীলিমা ম্যাম…. এই নিন recorder ……. mr. khan…. এই নিন gun…. এটা আপনাদের টাকার ছিলো।
জন চলে গেলো।

নিরা মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে। কনিকা কবিরের হাত থেকে gunটা নিয়ে দুমদুম করে নিরার দিকে গুলি করতে লাগলো। কিন্তু কনিকা shoot করতে না পারায় আর ১টা shocked এ থাকার কারনে এবং সেই সাথে নিরা সরে যাওয়ায় নিরার কেবল হাতে আর shoulder এ গুলি লাগলো। নিহাল নিরাকে পুলিশের হাতে তুলে দিলো। নীড় এখনও একইভাবে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। নীলিমা নীড়ের কাধে হাত রাখলো। নীড় বলে ধাক্কা দিলো। আর সাথে সাথে নীড় কান্নায় ভেঙে পরলো।

নীড়: ও মামনি… ও মামনি…. আমার মেরিন চলে গেলো কেন?? ওকে বলোনা ফিরে আসতে। ও তোমার কথা ঠিকই শুনবে। বলোনা মামনি। ও মামনি ওকে বলোনা আমার ভালোবাসাও ছলনা ছিলোনা। ওকে যে আমি সত্যি সত্যি ভালোবেসেছিলাম। আমি তো ওর সকল দুঃখ দুর করার জন্য, কেবল নিরাকে ধংব্স করার জন্য ওসব করছিলাম। ততুমি তো জজানো মামনি। ওকে বলোনা মামনি ও আমার ঘৃণারমেরিন না…. ভালোবাসার মেরিন….. খুব ভালোবাসি ওকে। খুব। ওকে ছারা বাচতে পারবোনা…..

.

সেদিন নীড়ের আর্তনাদ সকলের দুঃখকে ছাপিয়ে যায়। কিন্তু তার সেই হৃদয়ভাঙা চিৎকার শোনার জন্য তার ভালোবাসার মেরিন ছিলোনা। কারন সে চলে গেছে অজানার পথে। হায়রে অভাগী যদি সবটা জানতে পারতো। তাহলে হয়তো গল্পটা আজকে এখানেই শেষ হয়ে যেতো। কিন্তু কিছু করার নেই। সব মা ই চায় তার সন্তানের সুরক্ষা। তাই মেরিনও চেয়েছিলো তার অনাগত সন্তানের সুস্থতা, সুরক্ষা। যদি anniversary এর দিন নীড় মেরিনের জীবন টা চায় মেরিনযে দিতে বাধ্য। কারন সে যে নীড়কে ছুয়ে কথা দিয়েছে। সেদিন নীড় যা চাইবে সেটাই দিবে। অন্য সময় হলে হাসতে হাসতে জীবন দিতে পারতো। কিন্তু এখন যে ওর ভেতর আরো ১টা জীবন আছে। ও নিজেকে শেষ করতে পারবে না। কিন্তু অভাগী তো জানেনা যে নীড়ের ভালোবাসা অভিনয় ছিলোনা। ওর উদ্দেশ্য যে অন্যকিছু ছিলো। ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন। তাই মেরিন ফুলকে ভুল ভেবে নিজের সুখের জীবন ভাসিয়ে দিলো। আসলে মেয়েটা হারাতে হারাতে এতোটাই দুর্বল হয়ে গেছে যে ওর কাছে আর হারানোর শক্তি নেই। নিজের সন্তানকে ও হারাতে পারবেনা। তাই সন্তানকে নিয়ে নিজেই সকলের থেকে হারিয়ে গেল। আর নিরা? নিরার ভয়াবহ পরিনতির কথা যদি আজই বলে দেই তবে part বারাবো কিভাবে????

চলবে…