ক্যাকটাস

ক্যাকটাস !! Part- 12

ছুটির দিন হওয়ায় শপিংমল আজ খুব সরগরম। কাস্টমারের ভীর বেড়েছে প্রসাধনী সামগ্রীর এই কর্ণারটাতে। সাদা-কালো ছাপার কামিজের উপর কোম্পানির ট্যাগ লাগানো নেভি ব্লু টিশার্ট পরেছে নীরা। উপরে হিজাব বাঁধা পরিপাটি করে। অন্যান্য মেয়েরা একটু আকটু সাজগোজ করলেও নীরা একদম সাদামাটা। সাজের বালাই নেই তার মুখশ্রীতে। বিনম্র ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে সে। কাস্টমার এগিয়ে আসলেই হাসি মুখে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করছে,
” হাও ক্যান আই হেল্প ইউ ম্যাডাম/স্যার ?”
যেই প্রোডাক্টটাতে কাস্টমার আগ্রহ দেখাচ্ছে সেটা যথাসাধ্য ধৈর্য্য এবং দক্ষতার সাথে উপস্থাপন করছে নীরা ।মার্কেটিং পেশাটায় এমন। ধৈর্য্য, বাকপটুতা এবং দক্ষতা অপরিহার্য। দ্বিতীয়,তৃতীয়টাতে বড্ড বেশি অভাব নীরার মধ্যে। তথাপি সে আজ বেষ্ট দেখানোর চেষ্টা করছে প্রাণপণে। ম্যানেজার আজ নীরার কর্মচাঞ্চল্য দেখে বেশ অবাক হলো। অন্যদিন কাস্টমারের সাথে কথা বলতে গেলে তার মধ্যে জড়তা লক্ষ্য করা যেত। প্রোডাক্ট সেল করতেও হড়বড়ানি ছিল খুব৷ আজ অনেকটা দক্ষতা দেখাচ্ছে সে। একরাতের ব্যবধানে এতো পরিবর্তন? ম্যানেজার লাঞ্চ টাইমের আগ পর্যন্ত নীরাকে অবজার্ভ করলো। গুরুতর ত্রুটি পাওয়া গেল না অন্যদিনের মতো। ম্যানেজার মনে মনে খুশিই হলো। নীরার এ মাসের পারফরমেন্স যথেষ্ট ভালো না হলে ম্যানেজার তাকে জব থেকে ছাঁটাই করে দেবে বলে মনস্থির করেছিল। তবে এখন কেন যেন ম্যানেজারের মনটা নরম হলো কিছুটা। আরও তো অর্ধেক দিন বাকি মাসের। দেখাযাক কী হয়? ম্যানেজার ভাবনা চিন্তা ভুলে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
লাঞ্চ টাইমে কিছু স্টাফ দোকানের ভেতরের ফ্লোরে বসে লাঞ্চ শেষ করছিল আর কিছু ক্যান্টিন গেল। নীরা সহকর্মী শিলাসহ আরও দু’জন মেয়ের সাথে লাঞ্চ করছিল বসে। ইতিমধ্যে ক্যান্টিন থেকে তিন’টে বার্গার নিয়ে সেখানে যোগ দিল তাদেরই আরেক সহকর্মী আরমান। একটা বার্গার নিজের কাছে রেখে বাকি দু’টো নীরা এবং শিলার টিফিন বক্সের ঢাকনার উপর রাখল। নীরা এবং শিলা অপ্রস্তুত হয়ে সমস্বরে বললো,
” এসব কী?”

” বার্গারও চিনিস না তোরা?” আরমান বার্গারে কামড় দিয়ে হাসল। নীরা শিলা একে অপরের মুখের দিকে তাকালো। শিলা নীরার চাহনী বুঝে কটমট করে চাইল আরমানের মুখের দিকে। বললো,
” তোর চেয়ে ভালো চিনি এসব বুঝলি?”
” তাহলে প্রশ্ন করলি কেন?”
” প্রশ্ন করবো না? তুই এখানে রাখলি কেন?”
” ফটো তুলবো তাই। তোদের খাওয়ার জন্য রেখেছি বলদি। খা চুপচাপ। ” আরমানের ধমকে বলা কথাগুলো শুনে শিলা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ওর বাহুতে ঘুষি দেয়। আরমান আহ! করে ওঠে সাথে সাথে৷ বলে,
” গুন্ডি, মারলি কেন?”
শিলা কিছু বলবে তখনই তাকে থামতে ইশারা করে নীরা। আরমানের দিকে তাকিয়ে বলে,
” এসব কী ঠিক আরমান? ক’টাকা বেতন পাস তুই? মাত্র তো সাত হাজার। তোর কাঁধে সংসারের ভার। এসব আজাইরা খরচ করতে নিষেধ করেছি না তোকে?”
” আরে আজাইরা কই? আজ তোর পারফরমেন্স দেখেই তো ট্রিটটা দিলাম। এক রাতে এতো বদলে গেলি কেমনে রে তুই? গতকালও কাস্টমার দেখলে তোতলাতি আর আজ ফ্লুয়েন্টলি কথা বলছিস। আমি তো অনেক খুশি তোর উন্নতিতে। ”

আরমান দ্বিতীয় কামড় বার্গারে দিয়ে ইয়াম, ইয়াম করে। নীরা নিজের খাবারের অর্ধেক ওর দিকে এগিয়ে বলে,
” তোকে কতোবার বলেছি আমার খাবার কিংবা শিলার খাবার শেয়ার করিস। অযথা খরচ করার প্রয়োজন কী বল? তুই সব বুঝেও অবুঝ কেন আরমান?”
আরমান সেকথা এড়িয়ে যায়। শিলা এবং নীরাকে জোর করে বার্গারটা খাওয়ার জন্য। নীরা কিছুতেই খাবে না। শেষে মুচলেকা স্বরুপ আরমানকে ওয়াদা করতে হয় এমন অপচয় নেক্সট টাইম থেকে সে আর করবে না। যদিও আরমান জানে এসব ওয়াদা ফোয়াদা তার জন্য জাস্ট কথার কথা। শিলা ছাড়া বাকিরা ইশরায় টিপ্পনী করে আরমান এবং নীরাকে নিয়ে। তাদের ধারণা আরমান নীরার মধ্যে গভীর প্রেম। শুধু শিলা জানে সবার ধারণা ভুল। তবে হ্যাঁ কোন একসময় আরমান নীরাকে বলেছিল, সে ভালোবাসে নীরাকে। আরমান এখন নীরার কাছে ওয়াদাবদ্ধ। ফ্রেন্ডশিপ ছাড়া ভিন্ন কিছুই আরমান প্রত্যাশা করবে না আর। শিলা জানে আরমান একসময় কতোটা চাইতো নীরাকে। নীরার কালো অতীত জানার পরও সে নীরাকে অসম্মান করেনি। নীরার খুশির জন্যে ওয়াদা করেছিল নীরাকে ঐ নজরে আর দেখবে না সে। তাদের ফ্রেন্ডশিপটা টিকেই আছে ভালোবাসার নিষেধাজ্ঞা মান্য করে। আরমান এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় না। তাইতো শিলার প্রপোজে সহজে হ্যাঁ করে দিয়েছে। হ্যাঁ এই তিনজন ছাড়া কেউ জানে শিলা এবং আরমান সম্পর্কে আছে। কিছুদিন পর হয়তো বিয়েও করে নেবে তারা। আরমানের মনজুড়ে শিলা বর্তমান তবে নীরাকে সে যথেষ্ট পছন্দ করে, সম্মানের চোখে দেখে। এর ভিন্ন আর কিছু তার মনে এখন আর নেই ভাবলেও ভুল হবে। ভালোবাসা শব্দটা দ্রুতই শেষ হয় না।ঘোর কাটতে কারো বহুবছর লাগে তো কারো চিরজীবন।
নীরা সামান্য একটু ছিঁড়ে খেয়ে বাকিটুকু বার্গার সহকর্মীদের ভাগ করে দেয়। শিলা এবং আরমান অবাক হয় না তাতে। গত তিনমাস ধরে এই মেয়েকে তারা চেনে। চিনলেও ক্ষণে ক্ষণে অচেনা হয়ে পড়ে হঠাৎ নীরা তাদের চোখে। এই যেমন আজ বিস্তর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার মধ্যে। সবার চেয়ে আলাদা নীরা তাদের কাছে। এই খুশি, এই গম্ভীর। কাস্টমার এসে দাঁড়ালে হাসবে তারপর মুখশ্রীতে মেঘের ঘনঘটা। চিন্তায় ডুবে থাকে সর্বক্ষণ। আরমানের এখনও মনে পড়ে প্রথম প্রথম যখন জয়েন করেছিল নীরা তখনকার কথা। বোকা একটা মেয়ে,ভয়ে তটস্থ থাকতো সবসময়৷ কাস্টমারের প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে কেঁদেও ফেলেছে বহুবার। সাথে ম্যানেজারের ধমক আর বাকিদের উপহাসের নজর তো ছিলই তাকে ঘিরে। গতকালও ধমক খেল এতোগুলো কাস্টমার এবং স্টাফের সামনে। বিনাদোষে ক্ষমা চাইতে হলো ঐ বদ, অসভ্য পুরুষ কাস্টমারটার কাছে। নেহাতই আরমানের জব প্রয়োজন ছিল বলে ম্যানেজার এবং ঐ বদ লোকটা পার পেয়ে গেল। আরমান শিলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। শিলাও হাসলো লাজুক মুখে।

যথারীতি কাজ পুরোদমে শুরু হলো আবার ওদের। কেউ কারো দিকে তাকানোর অবসর পাচ্ছে না কাস্টমার সামলাতে গিয়ে। নীরা সবেমাত্র একজন কাস্টমারকে বিদায় করে এলোমেলো আইলিনারগুলো সাজাচ্ছিল। একটা নিতে দশটা এলোমেলো করে কেউ কেউ। নীরাকে ধৈর্য এবং বিনম্রতার সাথে সেটা হ্যান্ডেল করতে হয়। হঠাৎ পেছন থেকে মেহেরের কন্ঠস্বর শুনে চমকিত হলো সে। আইলিনারগুলো হাতের মুঠে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াল। মেহেরকে দেখে যতোটা খুশি হয়েছিল,পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিটিকে দেখামাত্র দ্বিগুন অখুশি হল সে। মুখ থেকে হাসি গায়েব হয়ে সেখানে ফুটে উঠল একরাশ অস্বস্তি। দৃষ্টি অবশ অবশ লাগলো৷ অনিচ্ছা পূর্বক হাসলো মেহেরের দিকে তাকিয়ে। মেহের আশপাশটায় চোখ বুলিয়ে বললো,
” কেমন চলছে তোর জব?”
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো।” নীরা আস্তে করে জবাব দিল।
” রাফসানের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম এদিকটাই। ভাবলাম তোকেও দেখে যায়। তাছাড়া একটু পরই তো তোর ছুটি হবে। একসাথেই যাব তিনজন। তাই এলাম।”
নীরার ঘাম ছুটে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো। ভেতরটা থরথর করে কাঁপছে। রাফসানকে নয় সে যেন আহনাফকে দেখেছে এমনভাবে আতঙ্কিত হলো। নীরা এখন আর আগের মতো অতো দূর্বল নেই। তার মানসিকতা গত দু’বছরে অনেকটাই স্ট্রং হয়েছে। ভেতরের আবেগটা চাপতে তাই তেমন বেগ পেতে হলো না তার। মেহেরের কথা শুনেও রাফসানের দিকে দ্বিতীয়বার তাকালো না সে। কাঁপা হাতে ধরা আইলারগুলো বক্সে রেখে হাত মুঠ করে পেছনে লুকিয়ে মেহেরকে বললো,
” আপু আজ আমার দেরি হতে পারে। এতোক্ষণ অপেক্ষা করবে শুধু শুধু?”
” সমস্যা নেই। আমাদের এখানে কিছু কাজ আছে। তুই নিশ্চিন্তে কাজ শেষ কর। তোকে নিয়েই যাব।” মেহের রাফসানকে এগিয়ে আসতে বলে নীরার আশেপাশে সাজানো প্রোডাক্ট গুলোয় চোখ বুলিয়ে নেয়। নীরার পাশে দাঁড়ানো সেলস গার্লের সাথে কথা বলছে মেহের। মেয়েটির নাম আভা। নীরার চেয়ে বছর দেড়েক বড়। একবছর হলো জবটা করছে সে। নীরার পরিচিত আপু জেনে মেহেরের সাথে বেশ খোশ মেজাজে পরিচিত হলো আভা। মেহের ভালো ব্রান্ডের একসেট মেকাপ ব্রাশ দেখতে চাইলো তার কাছে। মেয়েটি বেশ উৎসাহ নিয়ে সেটা দেখাচ্ছে মেহেরকে।
এদিকে নীরা রাফসানের সাথে একসঙ্গে কিছুতেই যেতে চাচ্ছে না। রাফসানের উপস্থিতিই অপছন্দ করছে সে। হোক রাফসান তার ব্যাপারে মেহেরকে হেল্প করেছিল তবুও অপছন্দ নীরার সে। আহনাফের ভাইকেও নীরা আহনাফের মতোই অপছন্দ করে। শুধু রাফসানকে নয় তার পুরো পরিবারকেই। এদের জন্যেই আজ তার জীবন নরকসম। সে যতোই সব ভোলার চেষ্টা করছে ততই কেন এরা এসে সামনে দাঁড়াচ্ছে? তিক্ততায় ভরে ওঠে নীরার মন। মুখ,চোখে কাঠিন্য চলে আসে।
” কেমন আছো নীরা?” এগিয়ে এসে ভরাট গলায় বললো রাফসান। নীরা গতরাত নির্ঘুম কাটিয়ে মনে মনে নিজেকে শক্ত করেছে,প্রস্তুত করেছিল নিজেকে একা সকল প্রতিকূলতার সম্মুখীন হওয়ার মানসে। এইক্ষণে তার সব পরিশ্রম বিফলে গেল। আবার ফিরে এলো তার মধ্যে জড়তা। আমতা আমতা করে নত দৃষ্টিতে জবাব দিল,
” জি আলহামদুলিল্লাহ।” রাফসানকে এড়িয়ে সে মেহেরকে উদ্দেশ্য করে বললো,
” মেহের আপু, কিছু খুঁজছ তুমি?”

মেহের আভার নিকট থেকে পছন্দসই একসেট ব্রাশ নিল। তারপর আবার এদিক সেদিক দৃষ্টি ঘুরালো। আভা ততক্ষণে অন্য একজন কাস্টমারকে নিয়ে ব্যস্ত। নীরার ডাকে দৃষ্টি ঘোরানো ক্ষান্ত দিয়ে মেহের বললো,
” হ্যাঁ রে! বাট প্রয়োজনীয় জিনিস দেখছি না তো।”
” দেখছ না বলছ? এখানে প্রয়োজনীয় সবই আছে শুধু খুঁজে দেখার মতো দৃষ্টি থাকা চায়। তবে তোমাকে সেই কষ্ট আমি থাকতে করতে হবে না। বলো কী প্রয়োজন আমি এক্ষুণি ব্যবস্থা করছি।”
” বাহ! দারুন বলেছিস তো। শারমিনের সিদ্ধান্ত তাহলে সঠিক ছিল। তুই অনেকটা ইম্প্রুভ করেছিস কথাবার্তায়। এখন আর ভয়ে ভয়ে কথা বলিস না। চলাফেরাতেও জড়তা কম। গুড! এমন নীরাকেই তো চায় আমরা। কী বলো রাফসান?”
রাফসান নীরার দিকে স্থির চেয়ে মুচকি হাসল মাথা নাড়িয়ে। নীরার অসহ্য লাগছে এই লোকটাকে চোখের সামনে দেখতে। রাফসানের দৃষ্টির দিকে একপলক চেয়ে চোখ ঘুরিয়ে নিল অবজ্ঞায়। রাফসানের মুখখানা সেই মুহূর্তে আঁধারে ঢেকে গেল। তার উন্মীলিত নয়নে বিষাদের ছায়া। মন ব্যথাতুর হয়ে বলে,
” মনপ্রিয়সী! এতো অবজ্ঞা কিসের লাগি?
কোনসে দোষে করলে দোষী?”
সেসময় কিছু কাস্টমার আসায় তাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে নীরা। রাফসানকে খেয়াল করার অবসর কিংবা ইচ্ছা তার মধ্যে একবিন্দুও নেই। মেহের আশপাশের জিনিস দেখায় মগ্ন। সেদিকে তাকিয়ে ফের বললো,
” এই রাফসান, আন্টির জন্য কী নেওয়া যায় বলো তো? টুসির জন্যেও তো কিছু নিতে হবে।”
রাফসানের কোনো জবাব পেল না মেহের। ভ্রুকুটি করে রাফসানের দিকে তাকিয়ে পিঠে হাত রেখে বললো,
” এই!”
” হুমম!” রাফসান এতোক্ষনে স্বাভাবিক হলো। মেহের চোখ ছোট করে তাকে বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে রাফসান। বুঝতে ব্যর্থ হয়ে মেহের কপাল কুঞ্চিত করে বললো,
” ধ্যান কোথায় তোমার?”

” ওহ! আ’ম এক্সট্রিমলি সরি। একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম। বলো কী বলছিলে?”
কথাটা শেষ করে পকেট থেকে মোবাইল বের করে স্ক্রল করছে। এই মুহূর্তে তার অনুভূতিগুলোর লাগাম টানতে হবে। এখানে আসা তার উচিত হয়নি। বুকের মাঝে চেপে রাখা সেই অদ্ভুদ অনুভূতিটা তাকে দেখামাত্রই যে, হৃদয় সমুদ্রে এমন তরঙবলয় তুলবে কে জানত? রাফসানের নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলা জবাব মেহেরের মন খারাপের কারন হয়। রাফসান মোবাইল মনোযোগ দিয়ে ফের একই কথা জিজ্ঞেস করে। মেহের বলে,
” কিছু না যাও।” মেহের মুখ ভেংচে গাল ফুলায়। সে খেয়ালই করলো না রাফসানের সতর্ক দৃষ্টি বার বার একজনের দিকে গিয়ে ঠেকছে। মেহের ভেবেছিল রাফসান তার অভিমান ভাঙাবে। কিন্তু তার কিছুই হলো না। রাফসান তাকে একপ্রকার উপেক্ষা করে নির্বিকার ভঙ্গিতে ঝুকে মোবাইল টিপছে। মেহের কপট রাগে ফুঁসতে লাগলো। সে ঘূর্ণাক্ষরেও টের পেল না তার পাশের মানুষটির নির্বিকার ভঙ্গির আড়ালে কী অস্থিরতা ছিল।
নীরা আগত কাস্টমারকে বিদায় করে আবার এসে দাঁড়াল মেহেরের সামনে। বললো,
” স্যরি আপু।”
” স্যরি কেন বলছিস পাগলি? এটা তো তোর ডিউটি।” মেহের বললো
” আচ্ছা কী লাগবে বললে না তো?”
” ওহ হ্যাঁ! আন্টি আর টুসির জন্যে গিফট নিবো ভাবছিলাম। এই ধর, শাড়ি, থ্রি পিছ সাথে এই টাইপ কিছু আরকি।”
” বুঝেছি। ওগুলো ঐ ডানদিকের সেকশনে আছে৷ আসলে আমার সেকশনে শুধু বিউটি প্রডাক্টই আছে।ওটা অন্য একজনের দায়িত্বে। ওয়েট আমি ওকে বলছি তোমাকে দেখিয়ে দেবে।” নীরা উঁচু গলায় আরমানকে ডাকলো। আরমানের অভ্যাস নীরা ডাক দিলেই মজা করে হ্যাঁ জানু বলে। তবে সবসময় নয়। আশেপাশে কেউ না থাকলেই এমনটা বলে। সে মেহের এবং রাফসানকে খেয়াল করে নি বলেই ডাকটা দিয়েছিল। একগাল হেঁসে এগিয়ে আসতেই মেহের এবং রাফসানকে দেখল। মেহের বেশ চটে গেল আরমানের ডাকটা শুনে। চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রইল নীরার দিকে। নীরা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল তাতে। আরমানকে পিটাতে ইচ্ছা করলো ওর। কতোবার নিষেধ করেছে এমন বাজে মজা না করতে ওর সাথে। একা পাক তার পর সে আজ কড়া কথা শুনিয়ে দেবে। তাতে বন্ধুত্ব না থাকলেও কিছু করার নেই৷ আরমান জিহ্বা কামড়ে নীরার ক্ষুব্ধ দৃষ্টির দিকে চেয়ে সরি বলে। নীরা দাঁত কামড়ে রাগ দমন করে বললো,
” মেহের আপুকে তোমার সেকশনে নিয়ে যাও তো।”
মেহের নামটা শুনে ঢোক গিললো আরমান। ভালো করে মেহেরের দিকে চেয়ে ভয়ে ভয়ে বললো,
” আসসালামু ওয়ালাইকুম আপু।”

]

” ওয়ালাইকুম আসসালাম! কী বললে তখন নীরাকে?” মেহের ভেতরে জমানো রাগটা আরমানের উপর ঝাড়ল।
” আপু ওটা জাস্ট মজা করে বলেছি। উই আর জাস্ট ফ্রেন্ড। ”
” কোনো জাস্ট ফার্স্ট ফ্রেন্ডশিপ করবে না ওর সাথে। নীরা তোকে কি বলেছিলাম? ” মেহের ধমকে ওঠে
” আপু ও ভালো ছেলে। তুমি,,” নীরাকে থামিয়ে দিয়ে মেহের রাগত স্বরে বলে,
” আমাকে ভালো খারাপ চেনাতে আসবি না একদম।”
আরমান প্রতিবাদ করতে গিয়ে থেমে যায় নীরার ইশারায়। সে এখন ঝামেলা চাচ্ছে না। এমনিতেই তার ভেতর কী চলছে সেই কেবল জানে। মেহের আপুকে বাসায় গিয়ে খুলে বললে সে নিশ্চয়ই বুঝবে। নীরা মনে মনে নিজেকে তারজন্য প্রস্তুত করে নেয়।আরমানকে যেতে বলে শিলাকে ডাকে নীরা। মেহেরকে শিলার সাথে পাঠিয়ে বুকে হাত রেখে দম ছাড়ে অবশেষে সে। নীরা খেয়াল করেনি রাফসান তখনো সেখানে দাঁড়ানো। এদিকটাই ঘুরতে সামনের একজোড়া জ্বলন্ত চোখ দেখে আৎকে ওঠে সে। তাহলে নীরার শব্দ করে দম ফেলাটা রাফসান দেখেছে? নীরা এদিক ওদিকের গোছানো পণ্য সামগ্রী ফের গোছায় রাফসানকে উপেক্ষা করে। বুকটা ঢিপঢিপ করছে তার। রাফসান চোয়াল শক্ত করে দ্রুত পদে মেহেরের ডাক শুনে সেদিকে চলে যায়। নীরা ঘার বাঁকিয়ে ভ্রুকুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করে রাফসানের যাওয়ার পথে চেয়ে।
চলবে,,,