এলাকার বড় ভাই

এলাকার বড় ভাই !! Part- 18

-ছেলেটা কে..তোমার পুরনো বয়ফ্রেন্ড??
.
আমি ঘুরে দেখি..উনি খাটে বসা থেকে উঠে দারালেন??
-নাকি..এখনো প্রেম -নাকি..এখনো প্রেম চলছে !!
.
উনি কথা টা খুব স্বাভাবিকভাবে বললেন..কিন্তু এর মাঝে যে কতটা রাগ আছে.. সেটা আমি এতদিনে বুঝেই ফেলেছি…!!
.
-আপনি কি বলছেন এসব??
-কেন..আমি কি কিছু মিথ্যা বললাম ইরা?
.
উনি আমার দিকে যেভাবে আগে বাড়ছিলেন.. আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম…. চোখ লাল হয়ে গিয়েছে রাগে….. নাকের পাটা ফুলে গেসে… রাগে শরীর কাপছে!!

আর আমার পা কাপছে ভয়ে…. কি বলব আমি তাকে.. কেন আমি রাফির সাথে কথা বলছিলাম???
.
আমি পাশ কাটিয়ে যেতে নিতে তিনি আমার হাত চেপে ধরে টেনে সামনে নিয়ে আসে… আমি আবার ছাড়তে চাইলে আমার কোমরে টান দিয়ে কাছে ধরে…!!
.
-ছাড়ুন আমাকে!!
-কেন…বয়ফেন্ড হাত ধরলে ভাল লাগে…বর ধরলে ভাল লাগে না??
.
-কি যা তা বলছেন আপনি.??
-আমি যা তা বলছি.. আর তুমি যেগুলো করছ সেগুলা??
-আমি কি করেছি??
-কেন তুমি ছেলেটার হাতে ধরে ভালবাসার কথা বলছিলে…. আর এখন এমন ভান করছ যেন কিছুই বুঝ না!!
-মানে কি??
-কেন ও তোমাকে বলেনি.. যে ও তোমাকে ভালবাসে…. আর তুমিও ওকে!!
.
তিনি শুধু অর্ধেক কথাই শুনেছেন….তাহলে!!
.
-এবার বুঝলাম… কেন তুমি আমাকে মানা করেছিলে বিয়ের জন্য…. কেন সেদিন আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছ… কারন তুমি ওকে ভালবাস!!
.
নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পরছে আমার….যে ভালবেসে আমাকে বিয়ে করল..তার এতটুকু বিশ্বাস নেই আমার উপর…!!
-এই চোখের জলের মায়া আর আমাকে দেখিও না ইরা….তুমি আমার বিশ্বাস নস্ট করেছ… আমার তো সন্দেহ হয়… নাকি তুমি ওর সাথে লুকিয়ে কিছু…
-ব্যাস….অনেক -ব্যাস….অনেক বলেছেন….!!
বলেই আমি শরীর এর সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম!!
.
আমি রেগে আগুন তখন..কি করবে বড়জোর মারবে..মারুক….আজ মার কপালে লেখা থাকলে সেটাই হবে… কিন্তু আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলার অধিকার কি করে হল ওনার….স্বামী বলে কি মুখে যা আসবে তাই বলবে আমি সহ্য করব!!
.
-যেটা জানেন না সেটা নিয়ে কেন কথা বলছেন..নিজের রাগ আর পুরুষত্বের জোরে আপনি কি প্রমান করতে চান??
আপনি যা দেখেছেন তা শুধু অর্ধেক সত্যি….হ্যা ও আমার হাত ধরেছিল..কিন্তু আমি এর পর কি করেছি.. আপনি সেটাও দেখেনি..আর জানতেও চাননি!!
হ্যা…. ওর আমার সম্পর্ক ছিল..কিন্তু এটাকে সম্পর্ক বলাও যায় না!!
-মানে??
.
– ৩ বছর আগে.. আমি যখন ইন্টারে পড়তাম…. আমার সাথে ওর ফেসবুকে প্রথম কথা হয়!বন্ধুক্ত কখন ভালবাসা হয়ে যায় বুঝেই উঠতে পারিনি…আমার জীবনের প্রথম ছেলে..যার সাথে আমি এতটা ঘনিষ্ঠ!!
কিছুদিন সব ভালই চলতে থাকে.. ওই আমার সাথে দেখা করতে চায়…. আমিও দেখা করি…!!
সব ঠিকই থাকে ৬ মাসের সম্পর্কে ..আমাদের ফেসবুকে এ টেক্সট ফোন সবই হয় ..কিন্তু হঠাত একদিন আমি ওর নাম্বার বিজি পাই…. আমি ওকে বার বার কল করি কিন্তু সেই বিজি!!
রাতে ওকে কল দিলে বলে ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলছিল… আমি সেই ব্যাপার নিয়ে আর ভাবলাম না..কিন্তু..কিছুদিন পর আবার সেই নাম্বার বিজি….বারবার জিগ্যেস করলে.. ও একই উত্তর দিত… এক্সাম এর জন্য নাকি এত কথা বলে!!
আমি ওকে অনেক বিশ্বাস করতাম.. তাই পাল্টা কোন কিছু জিগ্যেস করতাম না…দ্বিতীয় বার দেখা করতে নিলে ও আমাকে একটু বেশি কাছে আসতে চাইত…জরিয়ে ধরতে চাইত
ছোট ছিলাম.. কিন্তু একটু হলেও বুঝতাম… আমি ওকে কাছে আসতে দিতাম না..আর ও রেগে যেত…. আমি ওকে বুঝানোর চেস্টা করতাম কিন্তু কিছুতেই বুঝতো না!!
সেদিন এর পর রাফি আমার সাথে টেক্সট কথা সব কমিয়ে দিয়েছিল.. আমি কল দিলে ধরত না..আর নিজেও দিত না… সপ্তাহে ১ টা কল দিত.. আর বলত সময় পায় না..আর আমি পাগলের মত সেটাই বিশ্বাস করতাম….
কিছুদিন পর আমার মোবাইলে একটা মেয়ে কল দিল…সে বলল সে নাকি রাফির এক্স girlfriend আদৃতা … আমি বিশ্বাস করলাম না…সে ফেসবুকে আমাকে তাদের ছবি দিল…আমি তো পুরাই শকট….!!
সে নাকি এমনি গার্লফ্রেন্ড পালটায়…যখন তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয় বা হতে পারে না।
আমিও খেয়াল করলাম.. সে আমার সাথেও ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছিল.. কিন্তু যখন আমি দেইনি হতে.. সে আমার সাথে কথা বন্ধই করে ফেলে!!
সব জেনে বুঝেও আমি মানতে পারছিলাম..এত্ত ভালবেসেছিলাম বিশ্বাস করেছিলাম….. ও এমন হতে পারেনা!!
মেয়েটা আমাকে বিকেলে বের হতে বলল.. পায়েল তখন এখানে ছিল..তাই ওকে সাথে নিয়ে আদৃতার সাথে দেখা করললাম..আদৃতা আমাকে একটা রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে গেল…আমি যা দেখলাম.. আমি আর নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না..রাফি একটা মেয়েকে almost জরিয়ে বসে আছে… এক কোনার টেবিলে…. বেকুব হলেও এতটা বুঝার ক্ষমতা আমার মধ্যে আছে!!
সে আমাকে দেখে দাঁড়িয়ে আমার কাছে এসে বুঝাতে চাইল..কিন্তু আমি পায়েলকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম…!!
.
*****ইব্রাহিম এর point of view ***
.
কথা গুলো বলেই ইরা.. মাটিতে বসে পড়ল…আমি তাড়াতাড়ি যেয়ে ওকে ধরলাম!!
-আমার কি দোষ ছিল বলুন…..ওকে ভালবাসা আমার দোষ.. না বিশ্বাস করাটা আমার দোষ?? না এখন আপনার প্রতি loyal থাকা আমার দোষ??
আমি এজন্যই বিয়ের জন্য তৈরী ছিলাম না..কারন আমি আজ অবধি কাউকে বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি…আমি
.
-sssssshhhhh.. আর কিচ্ছু বলতে হবে না..তোমার কোন দোষ নেই জান….আমাকে মাফ করে দাও আমি না বুঝে অনেক উলটা পালটা বলেছি!!
.
ও কিছুই বলছে না শুধু কেদেই চলেছে!!
আমি ওকে উঠে দাড় করালাম..ওকে কোলে তুলে নিলাম..ও শুধু আমার দিকে তাকিয়েই রইল!!
.
আমি ইরাকে খাটে নিয়ে বসিয়ে কাপড় দিয়ে শাড়ি পালটে জামা পরতে বললাম!! ও ওয়াশরুমে চলে গেল!!
আমি বারান্দায় যেয়ে দাড়ালাম.. আকাশ টা মেঘ করছে আজ বোধ হয় বৃস্টি হবে!!
*****
আমি চিত হয়ে শুয়ে আছি..আর ইরা আমার দিকে কাত হয়ে শুয়ে আছে “!
কিন্তু আমর কেউ কিছু বলছি না!!
-ঘুম নেই?? (আমি)
-না আপনার?
-আপাতত নেই!!
.
ইরা চুপচাপ শুয়ে আছে কিন্তু কিছু না কিছু ভাবছে!!
-ইরা.. সব চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুমাও নাহলে অসুস্থ হয়ে পড়বে!!
– আপনি বিশ্বাস করুন আমাদের মধ্যে যা ছিল সব শেষ এখন এমন কিছুই নেই..ওই আমাকে বিয়ের দিন থেকে কল করছিল..আমি ওকে আমাদের বিয়ের ছবিও দিয়েছিলাম আপনার বিশ্বাস না হলে আপনি পায়েল কে জিগ্যেস করেন ও সব জানে.. সায়মা কেও আমি সব বলেছি…ও..
-ইরা.. ইরা…আমি জানি তুমি সত্যি কথা বলছ… আমিই তোমাকে বিশ্বাস করিনি!!
কিন্তু আমি promise করছি.. আমি তোমাকে আর কোনদিন অবিশ্বাস করব না..আর তুমি আমার কাছে আর কিছু লুকাবে না ঠিক আছে??
-হুম!!
.
কথা বলার সাথে সাথে হঠাত মেঘের গর্জন শুনলাম..ইরা ভয়ে চমকে উঠল!!
.
-কি হয়েছে… শব্দে ভয় করছে??
-একটু একটু!!
আবার শব্দে চমকে উঠল!!
.
আমি ঘুরে ওর হাতে হাত দিয়ে দিলাম!!
-সব ঠিক হয়ে যাবে… ভয় পেও না!!
.
হঠাত ও যা করল আমি তা কল্পনাও করতে পারিনি..ও আমার হাত টা ধরে আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরল!!
আমার বুকে মাথা দিয়ে আমার টি শার্ট টাকে এত্ত শক্ত করে জড়িয়ে ধরল মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলে ও কোথা থেকে পড়ে যাবে!!
প্রত্যেকটা শব্দের সাথে ওর জড়িয়ে ধরাটা আরো শক্ত হচ্ছিল!!
কেন জানি আমার পক্ষেও নিজেকে সামলানো কস্ট হচ্ছিল। আমি ওর চিবুক স্পর্শ করে ওর ঠোটের দিকে তাকালাম…ও কিছু বলল না..আমাদের ঠোট পরস্পর স্পর্শ হল..ইরা কোন বিরোধ করল না…কিছুক্ষন পরে আমি সরে গেলাম.. কারন..এখন না থামলে আমি হয়ত আর নিজেকে সামলাতে পারব না!!
.
কিছু ক্ষন পর ইরা ঘুমিয়ে পড়ল..আমিও ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম!!
.
******কিছুদিন পর*****
.
আমরা বৌভাত এর অনুষ্ঠানে আসলাম…!!
বেশ ভালই চলছে..কনে পক্ষরাও চলে এসেছে!!
.
-নীর..তোমা-নীর..তোমার আপু কই??
-বলতে পারি না দুলাভাই .!!
.
কি ব্যাপার… অনেকক্ষন ধরে ইরাকে দেখছি না..গেল কোথায়??
.
আমি খুজতে খুঁজতে দেখলাম..রাফি আবার ইরাকে আটকে ধরেছে… ইরা পাশ কাটিয়ে আসতে নিয়েও পারছে না…তোর আজকে খবর আছে!!

-ইরা আমি জানি তুমি এই বিয়েতে খুশি নও (রাফি)
-তুমি কি করছ এখানে?? (আমি)
.
ইরা আমাকে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ছারল… একটা হাসি দিল!!(উফফ এই মেয়েটা আমাকে পাগল করে দিবে..এমন হাসি দিয়ে)
.
-excuse me আপনি কে??
-আমি কে তা আপনি জিগ্যেস করার কে??
-আমি ইরার হাসবেন্ড..!!
-কোন হাসবেন্ড যার সাথে ইরা খুশিই না!!
-ইরা খুশি কি না..তা আপনি কি করে জানেন??
-কারন ও আমাকে ভালবাসে!
-ভুল বললেন মি.রাফি ভালবাসতো.. এখন আর বাসে না…একজন বিবাহিত মেয়েকে harras করা বন্ধ করুন…আর তুমি যাও তোমার আম্মু ডাকে.. পিচ্চি!!
.
ইরা আমাকে বাচ্চাদের মত রাগ দেখিয়ে চলে গেল!!.
.
-দেখেন ভাই এক কালে আপনার বউ আমার সাথে চলাফেরা করসে.
।উঠসে বইসে….
.
নাহ তুই মার না খেয়ে মানবি না দেখতেসি.. আমি ওর কলার ধরে বাইরে নিয়ে আসলাম!!
.
-ছোটলোকের বাচ্চা….যা বলি মন দিয়ে শুন ঠিক আছে..ভাল হয়ে যা.. ভাল হতে না পয়সা লাগে না… যার বিষয়ে কথা বলছিস.. ও আমার স্ত্রী….মেয়েদের সম্মান করা শিখ ঠিক আছে..তোরও দুইটা বোন আসে…এর পর থেকে ইরার সাথে আর কোন মেয়ের সাথে অসম্মান করে কথা বললে.. তোরে আমি ঢাকা নিয়ে যাব.. তারপরে বুড়িগঙ্গার পানিতে সারাদিন চুবমু বুঝলি??
.
ও কিছু না বলে ভয়ে মাথা ঝাকাল!!আমি ওর কলার ঠিক করে দিতে দিতে বললাম..
.
– যা এখন বোনরে দেখতে আসছিস.. যা ওখানে সময় দে!!
.
ও দ্রুত পায়ে ভিতরে চলে যেতে নিল..
-আর শোন!!
.
ও থেমে গেল!!
.
-ইরার থেকে ১০হাত দূরে ওর আশে পাশে আমি যেন তোকে না দেখি!!.
.
ও ভয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা বলল!!
-যা এখন!!
.
আমি ফিরে গেলাম অনুষ্ঠানে..ইরা আমাকে দেখে সামনে আসল…
.
-ছিলেন কোথায়??
-কেন মিস করছিলে??
-মিস হুহ কোনদিনো না…
-আমার বউ টা ১ মি ও আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না এখন….??(কাধে হাত রেখে বললাম)
-অসভ্য!!!
(চলবে)