এলাকার বড় ভাই

এলাকার বড় ভাই !! Part- 07

তিনি আমাকে বাড়ি পৌছে দিলে আমি ব্যাগ নিয়ে তাড়াতাড়ি নেমে যাই…..
তখনই পেছন থেকে ডাক আসে!!
i
-ইরা!!
আর আমি থেমে গেলাম…এই প্রথম বার আমার নাম ধরে সে ডেকেছে!!
ইরা তুই এত কিছু কেন ভাবছিস বলত??? প্রথম বার হাসল..তোর নাম ধরে ডাকল.. তাতে এত অবাক হওয়ার কি হ্যা??চুপ চাপ বাসায় যা!
আমি না ফিরে আবার হাটতে নিলে সে আমার হাত ধরে… রাতের মত কি আবার নেশা করেছে নাকি??
‘তোমার নেশা হয়েছে আমার!!’ বার বার কথাটা মাথায় ঘুরছে!!!
“এই মেয়ে বললাম না দাড়াতে!! ” উফ.. আবার গুন্ডা টা চলে এসেছে…. তারপর ও গত রাতের অভদ্রের থেকে এই গুন্ডাটা অনেকটাই ভাল!!
“কথা কানে যায়না??! ”
আমি ঘুরলাম… “ভাইয়া…. আমার হাত ছাড়ুন!! “সে কিছু না বলেই আমার হাত ছেড়ে দিল!!
উলি আমার ভদ্রতা রে!!
“কি বলবেন??! ” সে নিচে তাকিয়ে আছে!!
“I’m sorry!! ”
“জি??!” আমার চোখ বড় হয়ে গেল… ইনি আর সরি!!
“দেখো আমি কাউকে ওই সরি টরি বলি না…কিন্তু আমি জানি.. কালকে রাতে আমি তোমার সাথে বেয়াদবি করেছি…আম্মুও রেগে আছে আমার উপর…যে আমি নেশা করেছি!! ”
“তাহলে আপনি নেশা কেন করেন??!” আমার মুখ ফস্কে কথাটা বেরিয়ে গেল!!
“আমি নেশা করি না..আমি শুধু সিগারেট খাই এতেই আম্মু রাগারাগি করে..রাতে ওরাই জোর করে খাইয়ে দিয়েছে…!!
আমি কিছু বললাম না….ভেবে দেখলাম।। .আসলে ভাইয়ারই বা কি দোষ… তিনি তো কখনো আমার সাথে বেয়াদবি করেননি…আর এখন তো ক্ষমাও চাইছে!!
-কিছু বল??
-it’s ok ভাইয়া…..!!
-হুম.. বাসায় যাও….!!
-আল্লাহ হাফিজ!!
-আল্লাহ হাফিজ!!
ভাইয়া বাইক নিয়ে চলে গেল..আর আমি বাসায় চলে আসলাম!!
**
-কার সাথে কথা বলছ আপু? (আমি)
-তোমার ভাইয়ার (রানা) সাথে….. ঝগড়া করছিলাম…!! জুই আপু অভিমানি কণ্ঠে বলল
-ঝগড়া??? বিয়ের দিনই…এখনি এমন.. বিয়ের পরে কি করবা?
– বিয়েই করব না..ধুর!!
-কি বলছ??কি হয়েছে….?
-কেন… তুমি তো কাল ওখানেই ছিলা!! তুমি জানো না..ওরা মদ খেয়ে কি অবস্থা করেছে.. আবার আমাকে ফোন করে বলছে… জান….তোমারে হেব্বি লাগতাছিল আজকে…ছবি দেখলাম..আমি তো টাস্কি খায়া গেছি . আর সেদিন দেখা করস.. পুরো পেত্নী লাগসে!!”
কথা টা শুনেই আমি হাসতে হাসতে বিছানায় পরে গেলাম!!
-তুমি হাসছ??
-আপু ভাইয়া সত্যি এটা বলেছে তোমাকে??
সে মাথা নাড়াল।আহারে!!
-আচ্ছা তুমি মন খারাপ করো না..বিয়ের পর ভালমতো টাইট দিবা… যাতে এগুলা আর না করে..তাছাড়া . ভাইয়া তো নেশায় ছিল… আর ওই অবস্থায় মানুষ অনেক কিছুই বলে উলটা পালটা!!
-নেশায় মানুষ সত্যি কথাই বলে ইরা!!
-কি??
-হ্যা…. নেশায় শুধু সত্যি কথাটাই আসে!!
“তোমার চুড়ির শব্দ টা শুন্তে খুব ভাল লাগে আমার!! “”তোমার নেশা হয়েছে আমার! ”
তাহলে কি ওই কথাগুলো…না না…এমন কিছুই না!!
-এই কি ভাবছ….??
-কিছু না আপু…চল… তোমাকে সবাই ডাকছে…. রেডি হবা!!
-চলো!!
**
-আপু আর কতক্ষন??
-৫ মি. নীর!!
আমি আজ গাঢ় সবুজ রঙের শাড়ী পরেছি…..আমার শাড়ী খুব ভাল লাগে.. তাই সুযোগ খুজি পরার জন্য … হাতের মেহেদীর সাথে ভালই জাচ্ছে!!
সাথে সাদা পাথরের গলার নেকলেস…আর ম্যাচিং কানের দুল..পায়ে মোটা পায়েল… চুল গুলো নিচু খোপা করে বেলি ফুল লাগালাম!!
হাতে মোট ভর্তি চুড়ি পরলাম। “তোমার চুড়ির শব্দটা শুনতে আমার খুব ভাল লাগে!! ” না…আরো বেশি করে চুড়ি পরলাম দুহাতে…না এবার কোন শব্দ আসবে না!!
জুই আপুও রেডি…. তাকে নিয়ে আমরা সবাই অনুষ্ঠানে গেলাম!!
…….
বরযাত্রীও চলে এসেছে….. গেট ধরার পালা… সবাই খুব মজা করছে…!!
রানা ভাইয়া সাদা শেরওয়ানি পরে রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে আছে… ‘আজ মুখ দিয়া..কথা বাইর হয় না কেলা?!”
নিজেই মনে মনে ভেবে হাসছি…. ১০,০০১ টাকা দেয়ার পর গেট ছাড়া হল!!
আমি আয়াত কে ডাকলাম….
-আপু খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে!!
-তোমাকেও…আন্টি কই??
– আম্মু রানা ভাইয়ের আম্মুর সাথে গয়না দিতে গেসে রুম এ!!আপু চল ছবি তুলি!!
আমি ফোন বের করতে নিলাম!!
-আপু সেল্ফি পরে তূলবো…ফুল পিক তুলি DSLR এ.. দাড়াও..ভাইয়া.. এদিকে আস!!
আবার!!! হায় আল্লাহ….দেখলাম ভাইয়া ক্যামেরা হাতে করে আমাদের দিকে আসছে… আজ সে নীল রঙের হাল্কা কাজের শেরওয়ানি পরেছে…. মাথার উল্টো দিকে চুল আচড়ে জেল লাগিয়েছে..আজ একটু ম্যাচুওর লাগছে!!
-আমাদের কয়েক টা ছবি তুল!!
সে আমার দিকে তাকালে আমি মাথা নিচু করে ফেলি….
-পাশাপাশি দাঁড়াও…স্ম-পাশাপাশি দাঁড়াও…স্মাইল !! (সে)
আমরা কয়েকটা ছবি তুললাম…তারপর সে চলে গেল!!
আমি দাঁড়িয়ে আপুর কিছু কাজিনদের সাথে কথা বলছিলাম!!
-এই নিলা না??
আমার পাশে একটা ছেলে এসে দাড়াল…আমার চেয়ে বড়ই হবে… বুঝতে বাকি নেই flirt করতে এসেছে… বিয়ে বাড়িতে তো এটা কমন!!
-nice try…বাট আমি নীলা না!!
-নীলা নামটা আপনাকে খুব মানাবে!
-দেখুন আমি আজ নীল পরিনি… যে এই নামে আমাকে ডাকলেন… এমন জায়গায় flirt করুন যেখানে চান্স আছে!!
এই বলে আমি তাকে পাশ কাটিয়ে গেলাম
খেয়াল করলাম.. ভাইয়া দূর থেকে দাড়িয়ে আমাদের দেখছেন….মনে হচ্ছে রাগে ফুঁসছেন… কিন্তু কেন??
আমি জায়গাতেই জমে গেলাম…. এক গ্লাস পানি নিয়ে এক চুমুকে সবটা শেষ করলাম….তিনি হেটে আমার পাশে এসে দাড়ালেন…!!
“ওর সাথে আর যেন কথা বলতে না দেখি!!” বলে তিনি চলে গেলেন
কি???এখন কি আমাকে তার সবটা শুনতে হবে… কেন উনি হ্যা!! রাগ লাগছে!!
.
বিয়েটা ভালমতই হয়ে গেল…. আপু খুব কান্নাকাটি করল…সাথে তার আব্বু আম্মুও…আমি যে কিভাবে এই মূহূর্তটাকে পার করব.. তা একমাত্র আল্লাহ তা’আলাই জানে!!
-মেয়েদেরই সব ত্যাগ স্বীকার করতে হয়.. তাইনা!!
-আপনি আবার??
-সরি.. আমি আসলে কোন খারাপ উদ্দেশ্য তখন আসি নি…আমি জুই আপুর কাজিন…!!
-আপুর কাজিন??তাহলে হলুদে আসেননি কেন?
-আমি দেশের বাইরে থাকি.. ভিসা নিয়ে সমস্যা হয়েছিল তাই!!
-ওহ!!
-আচ্ছা আমরা বন্ধুতো হতেই পারি তাইন..আমি ফারাবি.. আপনি??
-ইরা!!
সে আমার দিকে হাত বাড়ায়…আমি handshake করতে যেয়ে থেমে যাই!!
‘ ওর সাথে আর যেন কথা বলতে না দেখি!’….. কথাটা মাথায় আসল!! কি করব…
আমি হাত না দেওয়াতে সে আমার হাত টেনে handshake করল!!
তার ফোন আসলে সে চলে যায়!!
-Sorry bro….দেখি নি..ভুলে ধাক্কা লাগসে !!
কার সাথে কথা বলছে… আমি ঘুরে দেখি…. ইব্রাহিম ভাইয়া ফারাবির কলার ধুরে রাখসে… ইয়া আল্লাহ!!
ভাইয়ার হাত দিয়ে রক্তও পড়তেসে!!
ভাইয়া ফারাবির চেয়ে অনেক লম্বা আর ভাইয়া তো জিমও করে…. আর ফারাবি হল ছিপছিপে…চিকন স্বাস্থ্য….একটা থাপ্পড় দিলে তো ফারাবি উঠে দাড়াতে পারবে না!!
কিছু বুঝে উঠার আগেই ভাইয়া ফারাবিকে মারা শুরু করে…. একের পর ঘুষি…. মাটিতে ফেলে কিছুক্ষনের মধ্যেই রক্তারক্তি কান্ড!!
আমি দাঁড়িয়ে দেখছিলাম এসব..কাছে যাওয়ার সাহস ছিল না.. কারন তার রাগকে আমি ভীষন ভয় পাই…!!
ভাইয়ার বন্ধুরা মিলেও তাকে থামাতে পারছে না….আয়াত এগুলা দেখে আংকেলকে ডেকে নিয়ে আসে… তিনি ভাইয়া কে থামানোর চেষ্টা করে.. না থামলে ভাইয়া কে চড় মারে..এর পর ভাইয়াকে ধরে বাসায় নিয়ে যায়!!
এসব…শুধু সামান্য ধাক্কা লাগার জন্য… নাহ.. ভাইয়ার রাগ অনেক কিন্তু এতটাও না যে সামান্য ধাক্কা লাগাতে উনি এতোটাই রেগে যাবেন…. যে মারা শুরু করে দিবেন!!
তবে কি আমার জন্য??
-ইরা চল….বিদায় হচ্ছে!! (আম্মু)
-আসছি!!
***
ইব্রাহিম এর (point of view) :
আব্বু আমাকে টেনে বাসায় নিয়ে আসে। আমাকে এনে সোফাতে বসায়…. আর আমার দিকে রাগে তাকিয়ে থাকে!!
কিছুক্ষণ পরে আম্মু আর আয়াতও চলে আসে!!
-কি হইচে….?? (আম্মু)
-কি আর হইব… তোমার সুপুত্র রে জিগাও… আমার মান সম্মান কি কিছু রাখব না??
-আহা বলবা তো কি হইছে??
-আমার জিগাইতচো…ওরে জিগাও না…জুই এর ভাই রে কেন মারছে??
-ইবু… কিরে… তোর আব্বায় এসব কি কয়??
আমি চুপ করে থাকি… কিছু বলি না…. এলাকায় যতই দাপট হোক না কেন..আমি আব্বু আম্মুকে খুব সম্মান করি!
-ও আর কি কইব…. আমার মান সম্মান যা আছিল.. সব সেস করতে হইব না।নাইলে ওর দিন কাটব কেমতে!! ওই নবাবের বেটা… কেন মারছত ওরে??
-ওই আমারে ইচ্ছা করে ধাক্কা মারছে!!
-বাহ..এতেই তোমার মটকা গরম হইয়া গেল বাবা!!
– উফ… এখন চুপ থাক তো…দেখতেসোনা.. ওর হাত কাটছে…!!
-আমি first Aid নিয়ে আসি!! (আয়াত)
– হ….ওই মাথায় তুলো দুইটায় মিল্লা ওরে… আমি কইতাছি…তোমার আস্কারায় ওই বাড়ছে…. মার্স্টাস পাশ করল. কি সুন্দর নাম্বার নিয়া… লোকের কাছে গর্ব করতাম..আমার মত অশিক্ষিত এর পোলা….গেরাজুয়
েট (গ্রেজুয়েট)..আর এখন…. মানুষের কাছে এই পোলার লেগাই লজ্জা পাওন লাগে!!
-আমি তো তোমারে আগেও কইছি…ওরে ভাল একখান মাইয়া দেইখা বিয়া দিয়া দেও…. কান্ধে (কাঁধে) দায়িত্ব আইলে…এমনি ঠিক হইয়া যাইব!!
-ওর মত অমানুষের লগে কে মাইয়া বিয়া দিব?? শুন ইব্রাহিম এর মা…অর লেগা মাইয়া আইনা আমি কোন বাপের কাছে পাপী হমু না…অর পছন্দ থাকলে কইতে কও!!
-বাবা তোর কোন পছন্দ থাকলে বল!!
আম্মু এবার আমাকে জিগ্যেস করল!!
-ইরা!!
-কে??
-আমি ইরা কে বিয়ে করতে চাই!!
(চলবে)