এলাকার বড় ভাই

এলাকার বড় ভাই !! Part- 05

-ইরা… তোর মাথা টা মনে হয় গেছে..কে বলেছে উনি এলাকার বড় ভাই??
তাহলে উনি কে??
-ঠিক করে বলতো…. তোর ভাই ওনাকে কিভাবে চেনে??
– আমার ভাই আর ইব্রাহিম ভাইয়া পাবলিক ভার্সিটিতে পড়াশুনা করতো…..ভাইয়া যখন থার্ড ইয়ার এ….বাবার ব্যবসায়ে অনেক বড় একটা লস হয়ে যায় … ভাইয়া কোন মতে অনার্স টা কম্পলিট করে খুজতে শুরু করে…. কিন্তু এখানে চাকরি পাওয়া কি সহজ…. তাই এক বন্ধুর ব্যবসায়ে ভাইয়াকে একাউন্টস হিসেবে ভাইয়াকে আব্বু বাইরে পাঠিয়ে দেয়!
-তোর ভাইয়া একে বলেছে এখানে এসে গুন্দামি করতে!!??
– ইরা….এটাকে গুন্দামি বলে না..উচিৎ শিক্ষা দেয়া বলে!! বোনের জন্য যদি ভাই এমন করে…. তাহলে ঢাকার অর্ধেক ছেলেরাই গুন্ডা!!
আমি আর কিছু বললাম….. একদিকে খুশি হলাম…. যে আর এই ছেলেটা আর ওকে জালাতন করবে না!!
-কিন্তু একটা কথা বুঝলাম না…ভাইয়ার এমন অবস্থা হল কেন??
-মানে??
-আমি ভাইয়া কে প্রায় ২- আড়াই বছর পর দেখলাম….ভাইয়ার এমন অবস্থা কেন??? জানিস…ভাইয়া যখন আমাদের এলাকায় আসত…এলাকার মেয়েরা ভাইয়া কে দেখার জন্য কি যে করত??
আমার চাচাত বোন অরিন তো ভাইয়ার জন্য প্রায় পাগল ছিল…..হঠাত এমন চেঞ্জ…. এখন নাকি সিগারেট ও খায়!!?
আমি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম!!
– অংক টা ঠিক মিলছে না….যে মানুষ টা সিগারেট এর গন্ধ সহ্য করতে পারত না….সে আজ সিগারেট খায়!!
-কি???????এই লোকটা সিগারেট এর গন্ধ সহ্য করতে পারত না…..একে আমি যখনই দেখি তখনি হাতে সিগারেট থাকে!!
-আজব ব্যাপার….!!
-তোর ভাই তোকে বলে নি কিছু… কেন উনি এমন হলেন??
-না রে….হয়ত জানে… কিন্তু ভাইয়া আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়…. আমি কোনদিন সাহস করিনি!!
আমরা দুজন খাওয়া কন্টিনুউ করলাম
-তার মানে… ভাইয়া তোকে ভালবাসে!!
-কি??
-আরে তুই এ তো বলেছিলি!! তাই বললাম!!
-আমি কিছুই বলি নি…তুই ই মনে মনে ভেবে রেখেছিস!!
-কিন্তু
-কোন কিন্তু না….ক্লাস এ চল
আমি আর কথা না বাড়িয়ে… ওকে নিয়ে ক্লাস এ চলে গেলাম!!
*******
-ইরা….আর কতক্ষণ লাগবে!!?
-আসছি জুই আপু…. একটু ওয়েট কর!!
-তাড়াতাড়ি কর!!
.
-হয়ে গেছে তোমার ব্যাগ গুছানো। এখন বেরিয়ে পড় নাহলে সাজতে লেট হবে!!
.
রানা ভাইয়ের বিয়ে….. পাত্রী হলেন আমাদের উপরের তলার জুই আপু…..

প্রেম করেই বিয়ে করছেন … তারা দুজন বাদে কেউই নাকি রাজী ছিলনা…

All thanks to গুন্ডা মহাশয়…. তিনি নাকি সকলকে রাজি করিয়েছেন। তাদের নাকি রাজি কম আর হুমকী বেশি দেয়া হয়েছে..

আমি জানলাম কিভাবে … 🙂 ২ দিন আগেই জানতে পারলাম…আমার ছাত্রীর বড় ভাই হলেন এই জনাব!! ছাত্রী আমাকে এলাকার সব আপডেট দেয়!!

যা ই হোক….জুই আপুকে তার বোনদের সাথে পার্লারে পাঠালাম রেডি হতে…আজ গায়ে হলুদ… . আমি ব্যাগ গুছিয়ে দিলাম… শাড়ি… গহনা সবকিছুর!!
.
আমি একটা হালকা গোলাপি রঙ এর সিল্ক শাড়ী পরলাম…. কাচের চুড়ি…. ভাড়ি কানের দুল…চুল ছেড়ে দিলাম… . আর হাল্কা সাজলাম!!
নাহ…. নিজেকে খুব খারাপ লাগলেও আজ ঠিকঠাকই লাগছে!!
রাত ৯ টায় আমরা অনুষ্ঠানে গেলাম….বাবা কাজ থেকে ফিরে ক্লান্ত… তাই সে বিয়েতে একেবারে আসবে…খুব সুন্দর লাগছে সব কিছু….বেশ সাজিয়েছে!!
স্টেজে আপু বসে আছে….আমি আপুকে হলুদ দিলাম…. আর বসে আপুর সাথে কথা বলছিলাম!!
কিছুক্ষণ পর আম্মু আমাকে ডাক দিল!!
-চল.. খেয়ে নিবি… নীর বাবা..তুমিও চল!!
-কিন্তু আম্মু এত তাড়াতাড়ি??
-আরে তোদের আবার বড়পক্ষের ওদিকেও যেতে হবে হলুদ দিতে!!
– আচ্ছা ঠিক আছে!!
আমরা খেয়ে নিলাম…. আয়াত ও তার আম্মু বরপক্ষের হয়ে হলুদ দিতে এসেছে আপুকে!!
আমি লক্ষ করলাম…নীরের খুব ঘুম পাচ্ছে… ওর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে অভ্যাস….আমি আম্মুকে বললাম !!
-ইরা… আমি নীর কে নিয়ে ঘুম পাড়াতে নিয়ে গেলাম…. এমনিতেই ১০ তা বাজে… তোর বাবাকেও খাবার দিতে হবে! (আম্মু)
– আন্টি আপনি যান… আপু আমাদের সাথে যাবে রানা ভাইয়া কে হলুদ দিতে….!!
-মা আমি তো আর আসব না!! ( আম্মু)
-আল্লাহ আন্টি অনুষ্ঠানের তো এখনো কিছুই হইনি… প্লিজ আন্টি আপুকে আসতে দিন…আমরা আপুকে বাসায় দিয়ে আসব…প্লিজ আন্টি..আম্মু বল না আন্টি কে!!
-হ আপা…পুরা মহল্লাই তো সজাগ আজকে…. চিন্তা কইরেন না…আমরা ওরে দিয়া আসমু!!
-আচ্ছা.. আপা ওরে একটু দেখে রাইখেন!!
আম্মু আমাকে সাবধানে থাকতে বলে নীরকে নিয়ে বাসায় চলে গেল!!
আমরা রানা ভাইয়াকে হলুদ দিতে আসলাম…
এখানেও খুব সুন্দর সাজানো হয়েছে…বিয়ের সাজ কাকে বলে…. ঢাকাইয়াদের থেকে শেখা উচিত!!
হটাত আমি লক্ষ্য করলাম…একজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে… কিন্তু দূর থেকে বুঝা যাচ্ছে না!!
একটু কাছে যেয়ে দেখলাম….. কে আবার … যে সবসময় তাকিয়ে ঠাকে…সেই!!
কিন্তু আজ অন্যরকম লাগছে…. মানে একটু সভ্য লাগছে আরকি.. দাড়ি শেভ করে সুন্দর শেপ করেছে…চুল কেটেছে!!
পড়নে একটা কালো রঙ এর কাবলি পাঞ্জাবি..!!
আজ তার তাকানোটা কেন যেন অন্যরকম লাগছে… চোখে অন্যরকম এক চাহনি… কিন্তু আমি বুঝতেই পারছি না কি??
.
-আপু চল.. হলুদ দেই!!
আয়াত আমাকে টেনে স্টেজ এএ নিয়ে গেল…ভাইয়া আমাকে দেখে খুব খুশি হলেন…..আমাকে দুস্টামি করে নাকে হলুদ ও লাগিয়ে দিলেন!!
খুব মজা করলাম আয়াত আর ভাইয়ার সাথে..এরপর ভাইয়ার বন্ধুরা ভাইয়াকে নিয়ে কোথায় যেন চলে গেল.. হটাত করে আয়াত আমআকে হলুদ লাগাতে যেয়ে হলুদ আমার শাড়িতে লেগে গেল!!
-আই এম সরি আপু…আমি আসলে বুঝতে পারিনি…..!!
-ইটস অকে….!!
-আপু তুমি পানি দিয়ে হলুদ টা সরিয়ে নাও… নয়ত দাগ রয়ে যাবে!!
হুম তা অবশ্য ঠিক!!
আমি ওকে বলে বাথরুমে গেলাম….!!
বাথরুম থেকে বের হয়ে যে ই আমি স্টেজে যাব… অমনি কেউ একজন হ্যাচকা টান দিয়ে আমাকে এক রুম এ নিয়ে গেল…
আমাকে পেছন থেকে ধরে আমার মুখ বন্ধ করে দিল যাতে আমি চিৎকার না করতে পারি!!
-ssssssshhhhhh!!আমি…. চিৎকার কর না!!
আবার এই গুন্ডা…. সাহস তো কম না…আমাকে ধরে কোন সাহস এ..আজকে তোর খবর আছে।???
আমি কোন রকম তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বের হতে চাইলে… হটাত সে আমার হাত ধরে টান দেয়….আর দেওয়ালের সাথে আমাকে ধরে দাড় করায়!!
আমি বুঝে উঠতে পারছি না এটা কি হচ্ছে??কি চায় উনি..কেন আমাকে এনেছে??
.
সে কিছু না বলে.. আমার দিকে তাকিয়ে থাকে…. হটাত আমার হাত তার হাতে নিয়ে..আঙুল দিয়ে আমার হাতে আঁকিবুঁকি করতে থাকে…!!
আমার পুরোটা জিবনে আমি এমন ভয় কোনদিনও পাইনি….আল্লাহ.. আমি যা ভাবতেসি… তা যেন না হয়!!
আরেক হাত দিয়ে সে আমার চুড়িগুলো নিয়ে খেলছে!!
সে আমার চুলগুলো কানের পিঠে দিয়ে আমার কাছে আসল…
.
-তোমার চুড়ির শব্দ টা আমার শুনতে খুব ভাল লাগে……!!
.
আমার সামনে আসতেই আমি একটা বিকট গন্ধ পেলাম…উনি কি??
-আপনি নেশা করেছেন??
-হা…করেছি আমি নেশা… .তোমার নেশা হয়েছে আমার!!
(চলবে)