একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 24
নিভ্র সুইমিংপুলে সাঁতার কাটছে।এ নিয়ে তিন ঘন্টা সে পানিতে একটানা সাঁতার কাটছে।নিজের রাগকে কিছুতেই সে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।রাগ যেনো তাকে ঘিড়ে ধরেছে।মনে একটাই ক্ষব জন্ম নিয়েছে তা হলো সে কোনো ছেড়ে দিলো শাহিনকে??কেনো??তার তাকে মৃত্যু নামক ভয়ঙ্কর শাস্তি দেওয়া উঁচিত ছিলো।যাতে জীবনে আর কখনো কোনো মেয়ের অনুমতি বিহিন তাকে টার্চ না করতে পারে।নিভ্রর রাগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।তিন ঘন্টা ভিঁজেও তার তেমন কোনো পরিবর্তন হলো না।নিভ্র রাগে সুইমিংপুলের পানিতে বারি দেওয়া শুরু করে দু’হাতে। কাটাঁ হাত দিয়ে অতিরিক্ত জোরে বারির দেওয়ার ফলে তা থেকে রক্ত ঝঁড়ছে। সেদিকে নিভ্রর তেমন ভ্রুক্ষেপ নেই বললেই চলে।নিভ্র মনে মনে ঠিক করে এত সহজে তো শাহিনকে ছেড়ে দিবে না সে।এত বড় পাপ করেছে শাস্তি সামান্য হসপিটালে ভর্তি হলেই হবে নাকি??এর জন্য কড়া মাশুল দিতে হবে শাহিন মন্ডল। নিভ্র বাঁকা হাঁসে। আবার সুইমিংপুলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।সারা গায়ে পানির ছেঁটেতে ভড়ে উঠে।পানির ঝাপ্টানিতে নিভ্রর সিল্কি চুলগুলো একবার সামনে আসে তো একবার পিছনে যায়।খালি শরীরে তার শরীর পানিতে ভাসছে।নীলাভ পানিতে লাল গোড়া শরীরটা সাদা হয়েগেছে। অনেক সময় পানিতে থাকার কারনে এটা হয়েছে।সবুজ চোখের দু’পাশে লাল হয়ে গেছে।তবুও সে থামছে না।চোখবুজলেই তার সাফার নিথর রাশ বিহিন ফেকাশে চেহারাটা ভেঁসে উঠে।তখন নিভ্রর মনে হয় তার কলিজায় কেউ ধাড়ালো ছুড়ি দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করছে।কষ্টে তখন নিভ্রর শ্বাস রুদ্ধ হয়।নিভ্র সুইমিং করা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে তখন।শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে বুকে হাত দিয়ে।চোখবুজে ভালো কিছু চিন্তা করতে চায়।
.
—–“হ্যাই চ্যাম্প কি করছো পুলে??উঠে এসো।কাম ফার্স্ট।
মাহবুব চৌধুরীর গলা পেয়ে নিভ্র সামনে তাকায়।দাদার কথা মতো উপড়ে উঠে আসে।মাহবুব চৌধুরী প্যান্টের পাগুলো ভাঁজ করে সুইমিংপুলে পা ভিঁজিয়ে বসে।নিভ্রকেও তারপাশে বসতে ইশারা করে।নিভ্রর মন মেজাজ ভালো না তবুও দাদার কথা ফেলতে পারবে না তাই বসে পড়ে।দু’হাতে নিভ্র নিজের উদাম বুকে পানির ছিটে দেয়।মাহবুব চৌধুরী নিভ্রর বাহু চাপড়ে বললেন……..
—-“তো চ্যাম্পকে এমন দেখাচ্ছে কেনো??রেগে আছ মনে হয়?? তাও প্রবল রাগ।কারন কি যানতে পাড়ি??”
নিভ্র ঘাড় ঘুড়িয়ে দাদার দিকে তাকায়।বাম হাতে সামনে লেপ্টে থাকা চুলগুলো পিছনে ঠেলে দিয়ে শান্ত গলায় বলে সে………..
—-“রাগ হওয়ার মত ঘটনা হয়েছে কিনা আগে বলেন দাদাজান?? তারপর না হয় আমি নিজের রাগের কথা বলব।”
—-“অবশ্যই রাগ হওয়ার মত ঘটনাই হয়েছে।আমি জানি।মেয়েদের গায়ে বিনা অনুমতিতে হাত দেওয়া ছেলেদের হাত ভেঙে নয় মাথা কেটেঁ নেওয়া উচিত হিসেবে আমি মনে করি।”
নিভ্র শান্ত চাহনিতে তার দাদার দিকে তাকিয়ে বলল…..
—-“তাহলে আমাকে আটকানোর কারন যানতে পারি??”
—-“প্রাপ্যের অতিরিক্ত পাওয়া যেমন উঁচিত না দেওয়াও উঁচিত না।যদিও এখানে প্রাপ্যের বা অপ্রাপ্যের কথা আসছেনা। এখানে আসছে রক্ষক হওয়ার ব্যাপার।”
নিভ্রর চেহারায় বিচলিতের রেশ ফুটে উঠেছে।হাঁসফাঁস করতে করতে এদিক ওদিক তাকিয়ে সে ভারী অবাক হওয়ার কন্ঠে বলল…….
—-“মানে??
মাহবুব চৌধুরী হাসলেন। তারপর বললেন…….
—-“বিচলিত হওয়ার মত বিষয় না।বিষয়টা সহজ।তুমি যাকে প্রটেক্ট করার জন্য এসব করতে চাইছো তাকে একটা জানোয়ার থেকে প্রটেক্ট করেই তুমি নিজে শেষ হেয়েগেলে বাকিদের থেকে কে করবে।আল্লাহ মানুষকে সরাসরি কমই সাহায্য করে তিনি একটা মাধ্য খুঁজেন আর সেই মাধ্যমেই মানুষের কাছে সাহায্য পাঠান।সাফার জন্যও তুমি একটা সাহায্যর মাধ্যম।শাহিনের ব্যাপারে সম্পূর্ন এভিডেন্স নেই তোমার আমার কারো কাছেই।তাই তুমি তাকে মেরে দিলে তোমার জেল হয়ে যেতো তখন সাফার কি হতো বলতে পারো তুমি??
নিভ্র এবার যেনো আকাশ থেকে পড়লো।সে ভারী অবাক দাদার কথায়।নিভ্রর সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। মাহবুব চৌধুরীর দিকে বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে প্রশ্ন করে……….
—-“আমি জেলে গেলে সাফার কি হবে মানে কি??ওর সাথে আমার ব্যাপারটা আসছে কিভাবে??ও তো ওর জায়গায় আমি আমার জায়গায়।এখানে ও আসার প্রশ্নই আসে না।এটা বলার মানে কি দাদাজান?? ”
নিভ্রর এমন কথায় মাহবুব হেঁসে ফেলে উচ্চশব্দে। তারপর আবার নিভ্রর বাহু চাপড়ায়।নিভ্র দাদার এমন কাজে বিস্মেয়ে বিমোহিত। তার দাদা আসলে কি বলতে চায় এটাই তার মাথায় আসছেনা।মাহবুব এবার শান্ত চোখে সুইমিংপুলের পানির দিকে তাকায়।দৃষ্টি জোড়া সেদিকে স্থাই রেখে তিনি বলে………
—-“ভালোবাসা মস্তিষ্কের ব্যাপারনা দাদুভাই এটা মনের ব্যাপার।তাই এটা বুঝতে হলে মনকে প্রশ্ন করো। মস্তিষ্ককে নয়।ভালোবাসা সবার জীবনেই হয়।কারো একটু আগে আর কারো একটু পরে।যেমন আমারটা বলি তোমার দাদুর সাথে যখন আমার বিয়ে হয় সময়টা আগের যুগ ছিলো।ওল্ড ফ্যাশনের যুগও বলতে পারো। এখনকার ডিজিটাল যুগ না।তখন বিয়ে হতো না দেখে। আমি তোমার দাদুকে দেখি নি।বিয়ের দিন রাতে আমাদের প্রথম দেখা।আর প্রথম দেখায় প্রেম হয় ভালোবাসা হয় এগুলো ফাউ কথা এটা কিন্তু না।তখন সত্যিই আমি প্রেমে পড়েছি।তোমার দাদু শ্যামলতা ছিলো।প্রেমে পড়তে হলে একটা মেয়ের মাঝে ইম্পোর্ট্যান্ট কি লাগে যানো??তার মায়ায় বাঁধানো দুটি চোখ। ঘন কালো চুল আর একটা বিলিন হতে পারবে এমন হাসি।তার চোখেই তোমার মরন হবে। তার চুলে তুমি নিজেকে লুকাবে আর তার হাসিতে তুমি হারবে।হারিয়ে যাবে নিজেকে বিলিন করবে।এটাই ভালোবাসা।
.
নিভ্র এবার বিস্ময়ের চরম সীমান্তে আছে।দাদার দিকে চোখ বড় বড় করে এক অদ্ভুত প্রশ্ন করে সে……..
—-“তাহলে আমি কি কাউকে ভালোবাসি??”
মাহবুব হেসেঁ জবাব দেয়……..
—-“প্রশ্ন করো মনকে।কার চোখের গভীরতায় তুমি আঁটকে গেছো??কার চুলে নিজেকে লুকাতে চেয়েছো আর কার হাঁসিতে তুমি প্রথমবার হার শিকার করেছো।ভালোবাসা সাধারন বিষয় মনে হলেও এটা সাধারন না।এটা সাধারনের মাঝে এক অসাধারণ জিনিস।তুমি চাইলেই যে কাউকে পছন্দ করতে পারো কিন্তু চাইলে ভালোবাসাতে পারোনা।এটা লেনদেন বা পাওয়ার আসায় হয় না।হঠাৎ হয়।তুমি বুঝে উঠার আগেই তোমার মনের প্রান্ত সে দখল করে নিবে।ভালোবাসার ব্যাপারটা অন্তরের কাজ।মস্তিষ্ক দিয়ে একে যতভাবতে যাবে এটা তত কঠিন হবে কিন্তু অন্তরে হাত দিয়ে যানতে চাইলে সহজেই উত্তর পেয়ে যাবে।ভালো লাগা আর ভালোবাসার মাঝে বিশাল ব্যবধান আছে।ভালোলাগা সৌন্দর্যের ব্যাপার।তোমার অনেক কিছুই সুন্দর লাগতে পারে।এই যেমন তোমার কোনো জামা পছন্দ হয়েছে এটা ভালো লাগা।নতুন জামা পেলে এটা আর ভালো নাও লাগতে পারে।ভালো লাগায় প্রান থাকে না।এটা টেবিল চেয়ারের মতই নিষ্প্রাণ হয়।ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা হয় এটা ভুল।দুটি দুই প্রান্তের ব্যাপার।তুমি চাইলেই ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়তে পারোনা।এটাতে তোমার বিন্দু মাত্র নিয়ন্ত্রন থাকে না।এটা হঠাৎ বৃষ্টির মতো।হঠাৎ বৃষ্টি যেমন তোমাকে আগমন বার্তা না দিয়েই ভিঁজিয়ে দেয় ভালোবাসাও ঠিক তেমনই।এটা তোমাকে বলে আসবে না।তুমি যতই এর থেকে দূরে থাকতে চাও তার যদি আসারই হয় সে আপনা আপনি আসবে।তুমি চলেও আঁটকে রাখতে পারবে না।উপরে যিনি বসে আছে এই হৃদপিন্ড তার দৃষ্টি তাই তার নিয়ন্ত্রণেই চলে।এতে তোমার আমার হাত নেই।
.
.
মাহবুব থামলো।নিভ্রর দিকে একবার তাকায় তিনি।নিভ্র ভাবছে।মনকে প্রশ্ন করছে।কানকে খোলা রেখেছে।মাহবুব হাসলো। আবার বলা শুরু করে তিনি…….
—–“ভালোবাসা মানে নিজেকে ভেঙে তুমি অন্য এক তুমিকে তৈরি করবে।ভালোবাসার ধরন ভিন্ন হলেও ভালোবাসার রং একুই হয়।যেমন তোমার বাবা তোমার জন্মের পরে নিজেকে ভেঙে এক বাবাকে জন্ম দিয়েছে।তোমার মা নিজেকে ভেঙে এক মায়ের জন্ম দিয়েছে।তোমার দাদা নিজেকে ভেঙে বাবা থেকে এক দাদার জন্ম দিয়েছে।তুমি যখন নিজেকে ভেঙে আর এক তুমিকে জন্ম দিবে তবেই তুমি ভালোবাসতে পারবে।এটাই ভালোবাসা।আমি সেই প্রথম রাতে নিজেকে ভেঙে স্বামীকে জন্ম দিয়েছি।এটাই ছিলো ভালোবাসার প্রথম লক্ষন।যখন তুমি নিজের বাইরে কারো কষ্টকে নিজের করবে, তার কষ্টে নিজে কাঁদবে, কষ্টে জ্বলবে তোমার হৃদপিন্ড, কলিজায় দাগ হবে সেটাই ভালোবাসা।একটা জামা পছন্দ হয়েছে বা কারো রূপে তুমি কিছুদিন ঘুড়েছো সেটা ভালোবাসা না।সেটা পছন্দ। যদি তুমি হাজার সৌন্দর্যের মাঝেও সুন্দরকে নির্বাচন করতে পারো সেটাই ভালোবাসা।হাজারের ভিড়ে খুঁজে পাওয়াই আসল অনুভুতি মিশ্রিত ভালোবাসা।যাতে পছন্দ, ভালো লাগার কাজ নেই আছে শুধু অনুভুতির ক্ষমতা।যখন কারো বর্ননা তুমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না। কারো জন্য চোখের কোটারে খুশির চাইতে অশ্রু বেশি জন্মাবে।তার ব্যাথায় নিজের ব্যাথা লাগবে তার সুখের সাথে তার দুঃখকেও নিজের করবে সেটাই ভালোবাসা।সেটাই অনুভুতি।অনুভুতির ব্যাপারে মস্তিষ্ক জবাব দিতে পারেনা।এটা জ্ঞানের আদান প্রদান না।এটা হৃদপিন্ডের শব্দের আদানপ্রদান। এটা একটা নিছক শব্দে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া।ভালোবাসায় তুমি তার সামান্য জিনিসে মুগ্ধ হবে তার রূপে রংয়ে নয়।তার তুচ্ছ জিনিসকেও তোমার চোখে অনেক আলাদা অনেক সুন্দর সব কিছুর ঊর্ধ্বে মনে হবে।এটাই ভালোবাসা।ভালোবাসা সুপ্ততা খুঁজে বেড়ায়।দৃশ্য মানে ভালোবাসা নেই।আছে পছন্দ।
.
নিভ্র দাদার দিকে তাকিয়ে আছে।ভালোবাসা কি সত্যিই এমন।তবে সেকি ভালোবাসে কারোকে??তার মনে কেনো এই কথাগুলো এত জায়গা পাচ্ছে।কেনো প্রতি কথায় সাফাকে খুঁজে পাচ্ছে।তার অনুপস্থিতিতেও তার গায়ের মিষ্টি গন্ধ তার গায়ে লেগে আছে।এত পানির জাপ্টায়ও সে ঘ্রাণ ছেড়ে যায়নি তাকে।এটাই কি ভালোবাসা।তার হাঁসিতে সত্যিই কি সে বিলিন হয়েছে??সত্যিই ওই নীলাভ চোখের মায়ায় পড়ে গেছে সে??নিভ্র দাদার মুখামুখি হয়ে বসে।তারপর প্রশ্ন ছুঁড়ে……….
—–“আমি তো ভালোবাসায় জড়িয়ে যাইনি তবে আমাকে কেনো এসব বলছ তুমি??
মাহবুব এবার হু হা করে হেঁসে দেয়।তারপর হাসতে হাসতেই বলে………
—–“বলেছিলাম না ভালোবাসা বলে কয়ে আসেনা।হঠাৎ রোদে বৃষ্টি নামার মত করে আসে।ভালোবাসায় ব্যাথা আছে। ভালোবাসা বুঝার একটা মাধ্যম হচ্ছে ব্যাথা। তোমার কি ব্যাথা হয় না??কারো কষ্টে অধিক থেকে অধিক ব্যাথা হওয়াই ভালোবাসা।ভালোবাসা না থাকলে তার জন্য তোমার খারাপ লাগবে।কষ্ট কখনোই হবে না।হুমায়ূন ফরীদি বলেছে কি যানো??ভালোবাসায় নামতে হলে এক বুক কষ্ট নিয়ে নামতে হয়।তা না হলে তুমি সফল হতে পারবে না।এটাই প্রমান। ভালোবাসায় ব্যাথার জায়গা বেশি।হারানোর ভয় বেশি।কষ্ট বেশি।
.
নিভ্র এবার শান্ত চোখে ভাবে।দাদাকে আনমনেই প্রশ্ন করে………..
—–“তবে আমি কাকে ভালোবাসী দাদাজান???
—-“আমাকে নয় নিজেকে প্রশ্ন করো। মস্তিষ্ককে নয় মনকে প্রশ্ন করো।উত্তর চোখের পর্দায় পাবে।ভালোবাসায় সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো রক্ষা।স্বাধীনতা অর্জন করা যতটা কঠিন তা রক্ষা করা তারচাইতে হাজার গুন বেশি কঠিন।ঠিক একুই ভাবে ভালোবাসাটা যতটা কঠিন তারচাইতে বেশি কঠিন ভালোবাসার সম্মান রাখা।ভালোবাসাকে রক্ষা করা।ভালোবাসাকে নিজের মাঝে বাঁচিয়ে রাখা।ভালোবাসা কিন্তু একটা প্রান।এর আলাদা ভাষা আছে, আলাদা শ্বাস আছে,আলাদা আচরন আছে।আছে আলাদা অনুভুতি।তাই একে বাঁচিয়ে রাখা মানুষের জীবন বাচানোর মতই কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ।ভালোবাসায় তুমি নিজেকে হারিয়ে তাকে জিতিয়ে দিবে এটাই ভালোবাসা।নিজের অনুভুতি চাপিয়ে দেওয়া ভালোবাসা না।সেটা জুলুম।আর ভালোবাসায় জুলুমের জায়গা নেই।আছে অনুভুতিতে সিক্ত হওয়া।আছে তাকে ভালো রাখার ক্ষমতা।আছে তার মাঝে নিজেকে তৈরি করা।তার কাছে নিজের আর এক রূপ প্রদান করাই ভালোবাসা।এটাকে বাঁচিয়ে রাখাই প্রেমিকের কাজ।প্রেম করলেই প্রেমিক হওয়া যায় না।মেয়েদের গায়ে হাত দিতে পারলেই যেমন পুুরুষ হওয়া যায় না তেমন প্রেম করলেই সবার দ্বারা প্রেমিক হওয়া যায় না। বুঝলে মাই চ্যাম্প।
.
.
মাহবুব উঠে দাঁড়ায়। মনে মনে খুব করে হাসে।যা করতে এসেছে তা হয়েগেছে ভেবে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকায় তিনি।চাদঁটা মনে হচ্ছে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।হয় তো ভালোবাসার মানুষ হয়ে তাকে দেখছে।তিনি আকাশে হাজার তারার মাঝে তার নিজের নামের তারাকে খুজে কিছুক্ষণ। তারপর বুকে হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বলে…….
—–“ওও তুমি তো এখানেই আছো।আমার মাঝে আমায় ভালোবাসে।”
ভালোবাসা ফুড়ায় না। রং পরিবর্তন করে না।নাম খুঁজে বেড়ায় না।দেহের গন্ধে ভাসে না।জুলুমে বিশ্বাসী না।পবিত্রতায় এর জন্ম।একে পবিত্র রাখাই ভালোবাসার মানুষের কাজ।ভালোবাসাকে রক্ষা করা প্রয়োজন। এর নাম করে দেহ বিলিয়ে নয় নিজেদের অনুভুতি বিলিয়ে দেওয়ার নামই ভালোবাসা।নিভ্র চাঁদের দিকে তাকিয়ে চোখবুজে।মনকে প্রশ্ন করে।হৃদয়কে ভাবায়। ভালোবাসার মানে খুঁজে।সব মিলিয়ে তার কাছে জবাব আশে হ্যাঁ তুমি ভালোবাসায় সিক্ত। হ্যাঁ তুমি ভালোবাসায় দায়িত্ব প্রাপ্ত।হ্যাঁ তোমার ভালোবাসার নাম সাফা।যার কষ্টে তুমি বিভক্ত হও।কলিজায় ফাটল ধরে।তার হাসিতে তুমি নিজেকে বিলিয়ে দেও।যার টোলে তুমি হার মানো।যার চোখে নিজের আর এক অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াও।যার জন্য নিভ্রনীলকে ভেঙে গুঁড়িয়ে তুমি প্রেমিক হতে পা বাড়িয়েছো।তুমি প্রেমে পড়েছো।নিভ্রর চোখে সাফার টোল পড়া মুখ খিঁচা হাসি ফুটে উঠে।যেনো সাফার প্রতিটি জিনিসে প্রান লুকিয়ে। আর নিভ্র সে প্রানের সন্ধানে নেমেছে।নিভ্র চোখ খুলে প্রান ভরে হাসে।এই হাসি নতুন দায়িত্বের হাসি।নতুন জীবন বাচাঁনোর হাসি।এই হাসি ভালোবাসার হাসি।
.
.
অভ্র নিজের রুমের দরজার সাথে ঠেসস দিয়ে বসে আছে। ভালোবাসায় কষ্টের জায়গাটা না থাকলেই ভালো হতো হয় তো।ভালোবাসা মানেই ভালোতে বাস করার সাথে কষ্টে ভাসা কেনো হলো??কেনো ভালোবাসা আসে জীবনে??কেনো সুপ্ত অনুভুতি বলতে কিছু হয়??চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে অভ্রর।তবুও ঠোঁটে হাসি।এটাই ভালোবাসা।ভালোবাসার মানুষকে ভালো রাখাই ভালোবাসা।তার ভালো থাকায় নিজেকে ভালো রাখাই ভালোবাসা।থাক না কিছু অনুভুতি লুকানো।একটাই তো জীবন। একজন ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসাকে বাঁচাতে পারলেই হবে।সে নাহয় ভাই নামক ভালোবাসাটাই বাঁচিয়ে রাখুক।
.
.
ফজরের আজান কানে ভেসে আসে নিভ্রর।এখনো সে বসে আছে সুইমিংপুলের পাশে।গা এখনো খালি।চোখ শূন্যে। আকাশ বাতাস সব তার কাছে এক অদ্ভুত অনুভুতির কথা যানিয়ে দিচ্ছে। সব কিছুই তার ভালো লাগছে।নিজের জীবনে নতুন সূর্যকে খুঁজে পেয়েছে সে।নিভ্র দাঁড়িয়ে পড়ে।নামাজ পড়তে হবে।তারপর ভালোবাসা বাচাঁনোর লড়াইয়ে নামতে হবে।
.
.
সাফা আদো আদো চোখ খুলে চারদিকে তাকায়।রুমে হালকা হালকা আলো ডুকছে।সাফার হঠাৎ করেই মন খারাপ হয়।রাতের কথা মনে পড়ে যায়।মনে বিষন্নতা জাগে।মনে জাগে ভয়।সাফা উঠতে পারছে না।তার হাতে ব্যাথা হচ্ছে খুব।রাফা তার সাথে অনেক রাত পর্যন্ত ছিলো কিন্তু পরে চলেগেছে।সাফা বিছানার মাঝে ঘুমিয়ে ছিলো তাই রাফার জায়গা হতো না।আর রাফা নাড়াচাড়া বেশি করে যদি সাফা ব্যাথা পায় তাই চলে গেছে।অনেক রাতে ঘুম হয়েছে তাই সে এখনো উঠেনি।সাফা উঠতে চায়।মনে হয় ফজরের সময় হয়েছে।তার বিষন্ন হৃদয় আল্লাহর কাছেই শান্ত হবে।তাই নামাজ পড়া উঁচিত। বিষন্নতা/ডিপ্রেশন কখনো ধার্মিক মানুষকে আঁকড়ে ধরতে পারেনা।অনেকেই বলে দিন শেষে সবাই একা কথাটা ভুল।দিন শেষে আমরা কেউ একা না।মানুষ প্রকৃত পক্ষে কখনো একা হয় না।ধর্মভীরু মানুষ তো একা হওয়ার প্রশ্নই আসেনা।কারন তারা জানে দিন শেষে তাদের মালিক তাদের রবের সাথে তাদের আলাদা ভাবে আলাপ হয়।মানুষ একা না।আল্লাহ সব সময় তার সাথে থাকে।তাই বিষন্ন হওয়া উঁচিত না।যেটাকে আমরা বিষন্নতা বলি তা মন খারাপ।আর এই মন খাপারের সময় নিজের মালিকের কথা শরণ করাই উঁচিত। তখন আর জেল খানায় বা গভীর রাতেও একা লাগবে না।
.
.
সাফা আবার উঠতে চায়।কিন্তু ব্যাথা পায় হাতে।তার সারা শরীর ব্যাথা হয়ে আছে।হঠাৎ করেই লাইট জ্বলে উঠে।সাফা চমকায়।ভয়াত্নক চোখে সামনে তাকায়।নিভ্র দাঁড়িয়ে আছে পিছনে মুখ ঘুড়ে। সাফা নিজের উড়না টেনে নেয় কষ্টের সাথে।নিভ্রকে পিছন ঘুরে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাফা হাঁসে। তার উড়না আগেই ঠিক ছিলো।শুধু একটু এলোমেলো।সাফা অবাক হয় নিভ্রকে নিজের রুমে এভাবে এত সকালে দেখে।বিস্ময়ের সাথে সে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর শান্ত গলায় প্রশ্ন করে………..
—–“আপনি এখানে??
নিভ্র ঘুড়ে দাড়ায়।সাফা থমকায়।মুগ্ধ হয়ে নিভ্রর ভেঁজা চুল লেপ্টে থাকা দেখে।সবুজ চোখ গুলো সতেজ।চোখেমুখে হাসি।এক অদ্ভুত অনুভুতি মিশ্রিতো হাসি।যা আগে কখনো দেখেনি সাফা।নিভ্র হাসি মুখে সাফার সামনে এগিয়ে এসে বলে…………..
—–“কেনো তোমার রুমে আসা কি নিষিদ্ধ নাকি?? ”
—-“তা হবে কেনো???কিন্তু আপনি তো কখনো আসেন না।তাই জিজ্ঞেস করলাম।
—–“এখন থেকে মাঝে মাঝে আসবো।
—-“মানে??
—-“আরে তুমি অসুস্থ না।তাই দেখা শুনা করতে আসবো এই আর কি।প্রশ্ন বন্ধ করা যায় না।সব সময় এত প্রশ্ন পাও কোই তুমি??
সাফা অবাক।এই লোক এত কথা বলছে তাও নিজে নিজে।হলোটা কি??তাও এত হেঁসে হেঁসে মিষ্টি মধুর সুরে।সাফার মনে শিরশিরে অনুভুতি হয়।এত সুন্দর লোকটার গলার শব্দ।কোই আগে তো কখনো এত সুন্দর শুনায়নি??তবে আজ কেনো।নিভ্র তুড়ি বাজায় সাফার চোখের সামনে।সাফা আরো অবাক।ভারী অবাক হওয়া গলায় প্রশ্ন করে সে………..
——“আপনি কি অসুস্থ নাকি??এত হাসেন কেনো??তাও নিজে নিজে??কি হয়েছে আপনার??
নিভ্র অবার হাঁসে। টাউজারের পকেটে হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাড়ায় সে।সাফার দিকে স্নিগ্ধ চোখে তাকিয়ে নিভ্র বলে………
—–“এক অদ্ভুত অনুভুতি হঠাৎ এসে ভিঁজিয়ে দিয়ে গেছে। হঠাৎ বৃষ্টি হয়ে গায়ে জোনাকির আলো মাখিয়ে দিয়েছে।
সাফা চোখ বড় বড় করে বলে………..
—–“কি…………🙄
.
.
#চলবে___________________________🍁