আরাধ্য প্রেম (Adorable Love) !! Part- 09
কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুললেন আফসানা চৌধুরী। খুলেই দেখলেন নোভা বেশ শাড়ি পরে সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে। নোভা হাসি মুখে বললো,
—-” আন্টি…ঈশি কোথায়?”
—-” সে তো ঘরে…তা তুমি এতো সেজেগুজে যে? কোথাও কোনো প্রোগ্রাম আছে নাকি? ”
—-” হ্যাঁ… কেনো ঈশি বলেনি? আজকে তো রিমির বার্থডে।”
—-” না তো…আচ্ছা ভেতরে এসো।”
নোভা ভেতরে ঢুকেই বললো,
—–” ও ফোন ধরছে না কেনো আন্টি? কতোবার ফোন দিলাম!”
—–” তাই নাকি? কিজানি…মেয়ের কি হলো! সেই পরশু ভার্সিটি থেকে আসলেই দেখলাম মনমরা। কাল রাতেও না খেয়ে শুয়ে পরলো। আমি, ওর বাবা কতো ডাকলাম উঠলো না। আবার দুপুরেও দেই মেই করে খেয়ে সেই যে ঘরে বসে আছে। যাও তো মা…দেখো তো কি হলো মেয়ের। আমি জিজ্ঞেস করলে তো কিছুই বললো না।”
নোভা আর কিছু না বলে ঈশিকার ঘরের দিকে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো ঈশিকা জানালার গ্রিলে দুই হাত রেখে বাইরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
—-” ঈশি…ঈশিই..”
নোভার ডাকে চমকে পেছনে তাকালো ঈশিকা।
—-” কিরে..?এখনো রেডি হসনি কেনো?” ঈশিকার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো নোভা।
—-” কেনো?” মলিন গলায় বললো ঈশিকা।
—-” কেনো মানে! আজকে রিমির বার্থডে ভুলে গেছিস? আমি, তৌসিফ, শোয়েব কতোবার ফোন দিয়েছি তোকে দেখেছিস? ধরলি না কেনো? আজকে তোর খবর করবে রিমি দেখিস। কিরে? বসে পরলি কেনো? ওঠ…রেডি হ।”
—-” না গেলে হয়না?” নোভার দিকে তাকিয়ে করুন চোখে বললো ঈশিকা।
—-” মানে কি? দেখ এমনি কালকে রাতে তুই রিমিকে কল করে উইশ করসনি। আবার এখনো পর্যন্ত ফেসবুকে একটা টাইমলাইন ও করিসনি বলে ক্ষেপে আছে তোর ওপর। তাই রাগে আর নিজে থেকে কল করেনি তোকে। এখন তুই না গেলে কিন্তু ওর রাগ ভাঙানো খুব কঠিন হয়ে যাবে।”
ঈশিকা শব্দ করে একটা কাঁপা শ্বাস ফেলে বললো,
—-” ভালো লাগছে না দোস্ত! তুই যা। আমি রিমিকে পরে বুঝিয়ে বলবো।” বলেই নিচের দিকে তাকালো ঈশিকা।
—-” ঈশি? কি হয়েছে তোর? এতো ডেস্পারেট লাগছে কেনো? বল কি হয়েছে?” ঈশিকার পাশে বিছানায় বসে বললো নোভা। ঈশিকা নোভার দিকে তাকিয়ে ভেজা কন্ঠে বললো,
—-” দুবাই গেছে সে বিজনেসের জন্য৷ পরশু থেকে এখন অবধি একটা কল ও করেনি। একটা বার ও আমার খোঁজ নেয় নি।”
—-” মানে? কার কথা বলছিস?”
—-” আমান…” ক্ষীন কন্ঠে বললো ঈশিকা।
নোভা কিছুক্ষণ ঈশিকার দিকে তাকিয়ে থেকে মুখে হাসি এনে বললো,
—-” আরে…হতেই পারে কাজের ব্যস্ততার জন্য করে উঠতে পারেনি। তো তুই কল কর। কল করে খুব ঝেড়ে দে।”
ঈশিকা অভিমানী কন্ঠে বললো,
—-” কেনো? আমি কেনো করবো? তার কি হয়েছে? এমনি তো রাত দিন সমানে কল করে মাথা খারাপ করিয়ে দেয়। এখন বিদেশ গিয়ে কি এমন কাজ করছে সে? যে একবেলা ফোন করার সময় ও তার কাছে নেই। ”
নোভা ঈশিকার কথা শুনে ফিচেল হাসি দিয়ে বললো,
—-” বাব্বা! কি অভিমান! কি প্রেম! আচ্ছা না করলি। কিন্তু তুই ই তো বললি ভাইয়া বিজনেসের জন্য দেশের বাইরে গেছে। দেখ এতবড় বিজনেস কিন্তু ভাইয়া একাই সবটা সামলায়। তাই হয়তো কাজের চাপে সময় হয়নি খোঁজ নেওয়ার। এমনি তো কত কেয়ার করে তর বল? ”
ঈশিকাকে চুপ থাকতে দেখে নোভা ঈশিকার হাত ধরে বললো,
—-” দেখ একা ঘরে বসে থাকলে এখন আরো মন খারাপ হবে। ভাইয়া আসলেই খুব করে বকে দিস। দরকার হলে ধরে মারিস। তাও আর বসে না থেকে এখন চল। ওখানে গেলে সবার সাথে দেখা হলে মন ভালো হয়ে যাবে।”
ঈশিকা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নোভা বাধা দিয়ে বললো,
—-” কোনো কথা না…যদি এখন না করিস তাহলে ভাব্বো বর পেয়ে এখন বন্ধুদের কোনো ভ্যালু নেই তোমার কাছে।” মুখ গোমড়া করে বললো নোভা। ঈশিকা নোভার হাতে থাপ্পর দিয়ে বললো,
—-” ফাজিল! পারিস তো খালি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে না?”
নোভা দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,
—-” হুম পারিতো! এখন কথা না বারিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হ।”
—-” কিন্তু রিমির জন্য তো কোনো গিফট কেনা হয়নি!” চিন্তিত হয়ে বললো ঈশিকা।
—-” আমিও তো এখনো কিনি নি। যাওয়ার সময় একাবারে কিনে নিয়ে যাবো। তো কোন শাড়ি পরছিস?”
—-” শাড়ি পরতেই হবে?” করুন মুখ করে বললো ঈশিকা।
—-” ইয়েস! আমি পরেছি সো তোমারও পরতে হবে। এখন কথা কম বলে তৈরি হও। সন্ধ্যা হতে কিন্তু বেশি দেরি নেই। নে নে ওঠ!” তাড়া দিয়ে বললো নোভা।
ঈশিকা কিছুটা অনিচ্ছা থাকা সত্বেও তৈরি হলো। আর মনে মনে ভাবলো, ” শয়তান টাকে তো আর ধরে মারা যাবে না। সেই সাহস বা ক্ষমতা কোনোটাই নেই তার। তবে এর থেকেও মোক্ষম কাজ সে করবে৷ সামনে আসলে একটা কথাও বলবে না সে। উহ! বিয়ে করে এখন সব পাট চুকে গেছে না? আসুক কথা বলতে…খুব রাগ দেখাবে খুউব!
.
.
__________________________________________________
ঈশিকাদের রিমিদের বাসায় যেতে যেতে সন্ধ্যা লেগে গেলো প্রায়। গিয়ে দেখলো শহরের কিছু বেশ নামি দামি বিজনেসম্যানরা ইনভাইটেড আছে সেখানে। কারণ রিমির বাবাও সেই তালিকারই একজন।
রিমির রাগ ভাঙাতে হাজারবার সরি বলে কান পর্যন্ত ধরতে হলো ঈশিকার৷ শোয়েব আর তৌসিফ ওদের আগেই চলে গিয়েছিলো। ঈশিকা যাওয়ার পর থেকে শোয়েবের দৃষ্টি শুধু ঈশিকার দিকেই ছিলো। এই দিয়ে দুইবার ঈশিকাকে শাড়িতে দেখলো সে। এর আগে দেখেছিলো ভার্সিটির একটা অনুষ্ঠানে। আজ লাল আর কালো কম্বিনেশন এর জর্জেট শাড়িতে ঈশিকাকে ভীষন সুন্দর লাগছে। এই মেয়েকে যতবারই দেখে ততবারই অদ্ভুত মায়ায় পরে যায় সে।
বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে কথা বলে ঈশিকার মন খারাপটা একদম চলে গেছে৷ নোভা ঈশিকাকে নিয়ে সেল্ফি তুলছিলো এমন সময় শোয়েব এগিয়ে আসলো ঈশিকার কাছে।
—-” ঈশি?”
শোয়েবের দিকে ঘুরে তাকিয়ে ঈশিকা বললো,
—-” হ্যাঁ? কিছু বলবি?”
—-” তোকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে শাড়িতে।”
ঈশিকা হেসে বললো,
—-” থ্যাংক ইউ দোস্ত!”
শোয়েব হেসে বললো,
—-” শুধু থ্যাংকস এ কাজ হবে না।”
—-” তো আর কি? প্লিজ এখন এটা বলিস না যে একটু প্রশংসা করার জন্য আবার ট্রিট চাই তোর।” বলেই হাসলো ঈশিকা।
শোয়েব হেসে বললো,
—-” না ট্রিট চাই না। একটা ছোট্ট গিফট চাই। তবে কথা দিতে হবে যা চাইবো তাই দিবি।”
ঈশিকা কিছু ভেবে বললো,
—-” উম…আচ্ছা। বল কি চাই?”
—-” এখন না। সবকিছুরই উপযুক্ত সময় আছে। সময় হলে চেয়ে নেবো আমি।” মৃদু হেসে বললো শোয়েব। ঈশিকা শোয়েবের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না। কনফিউজড মুখে তাকিয়ে থাকতে দেখে শোয়েব হেসে দিয়ে বললো,
—-” আরে এমন কিছু চাইবো না যা দিতে তোর ফকির হওয়া লাগে। সো প্যারা নিস না।”
শোয়েবের কথা শুনে হেসে ফেললো ঈশিকা। তারপর হঠাৎ ঈশিকা শুনতে পায় চিরচেনা একজনের গলার আওয়াজ৷ বা সাইডে তাকিয়ে তার চোখ আটকে যায় মানুষটার ওপর। ঈশিকা অস্ফুটস্বরে বললো,
—-” আমান!”
আমানও এতোক্ষন আড়চোখে ঈশিকাকেই দেখছিলো আর রিমির বাবার সাথে ড্রিংক হাতে দাঁড়িয়ে আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিলো। ঈশিকা তাকাতেই আমান কথার মাঝেই তার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলো। ঠিক তখনই নোভা আমানকে দেখে ঈশিকার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে আস্তে করে বললো,
—-” ভাইয়া এখানে কিভাবে? তুই না বললি দেশের বাইরে?”
ঈশিকা নোভার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে রিমিকে ডাক দিলো। রিমি বাকি সবার সাথে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলো। ঈশিকার ডাকে এগিয়ে আসলে ঈশিকা আমানকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো,
—-” উনি এখানে কেনো? তুই ইনভাইট করেছিস?”
রিমি ঈশিকার দৃষ্টি অনুসরণ করে বললো,
—-” কে?”
তখন নোভা ফোড়ন কেটে বললো,
—-” আরে…আমান ভাইয়া মানে আমান আহমেদ।”
রিমি আমানের দিকে তাকিয়ে তারপর বললো,
—-” আরে উনিই তো সেই না? যার সাথে তুই সেল্ফি তুলেছিলি বাজি ধরে? কিন্তু আমিতো করিনি…হয়তো বাবা করেছে। বিজনেস ক্লায়েন্ট হবে হয়তো। কেনো?”
ইশিকা রিমির দিকে তাকিয়ে বললো,
—-” না কিছুনা…এমনি।”
ঈশিকা আর আমানের দিকে তাকালো না। নোভা বলেছিলো একবার আমানের সাথে কথা বলতে কিন্তু সে ” প্রয়োজন নেই” বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। এখন সে আমানকে ইগনোর করবে। উচিত শিক্ষা দেবে তাকে কথা না বলে। শোয়েব এতোক্ষন ওদের কথা চুপচাপ শুনছিলো কিছু বলছিলো না। কিন্তু আমানকে দেখেই ওর মুখের হাসি উড়ে গেলো।
.
.
চলবে…