আমার বউ- পর্ব–০৩
সপ্তাহ খানেক পরে ভোর ছয়টার দিকে পুষ্পিতার
সাথে আবার দেখা হলো কালাম চাচার দোকানে।
সেইদিনও একই অবস্থা। চামচে চা নিয়ে ফুঁ দিয়ে
দিয়ে চা খাচ্ছে।ওর চামচ দিয়ে চা খাওয়ার দৃশ্যটা আমার
এতটা ভালো লেগে যাবে বুঝতেই পারিনি।পুষ্পিতা
এর মধ্যে কালাম চাচাকে টাকা দিয়ে আমার সামনে
এসে দাঁড়িয়েছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম-
“কিছু বলবেন?
“হ্যা ওই যে সেইদিন কিছু জিজ্ঞেস করবেন
বলেছিলেন?
“হ্যা আসলে..
“আপনার কাজ শেষ হলে চলুন হাটতে হাটতে কথা
বলা যাক।
“চলুন….
পুস্পিতা হাটতে লাগলো এইখানকার বড় মাঠটার দিকে।
আমিও পাশাপাশি হাটতে লাগলাম।পুষ্পিতা বললো-
“কি জিজ্ঞেস করবেন.??
“না মানে আসলে আমার খুব কৌতূহল হচ্ছে। আপনি
ওইভাবে চামচ দিয়ে চা…. এটাই জানতে চাইছিলাম আর
কি…
আমার কথা শুনে পুষ্পিতা শব্দ করে হেসে
উঠলো।ওর হাসির শব্দটা শুনে বুকের মধ্যে
কেমন জানি একটা লাগলো।ও হাসি থামিয়ে বললো-
“আসলে ছোট বেলায় একবার চায়ের কাপে মুখ
লাগিয়ে চা খাওয়ার সময় ঠোট আর জিহ্বা পুড়ে
গেছিলো।তারপর থেকে কাপে মুখ লাগিয়ে
খেতে ভয় করে।এই জন্যে চামচ দিয়ে খাই।কালাম
চাচার বানানো চা খুব টেস্টি।সব সময় আসিনা কালাম চাচার
দোকানে।কোন মেয়ে চায়ের দোকানে
বসে চা খাবে এইটা বেশ বেমানান দেখাই।তাই যখন
সকালের দিকে যখন কেউ থাকেনা তখন আসি। মন
খারাপ থাকলে এই চা আমার মন ভালো করার ঔষধ।
“তার মানে আজকে আপনার মন খারাপ?
ও আমার কথার জবাব দিলো না।
“সমস্যা না থাকলে শেয়ার করতে পারেন।
পুষ্পিতা আমাকে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো।হঠাতই
একটা বাইক আমাদের সামনে এসে থামলো।
ছেলেটা যখন হেলমেটটা খুললো তখন
ছেলেটাকেও চিনলাম।এই ছেলেটাকেই সেদিন
পুষ্পিতা থাপ্পড় মেরে ছিলো।
ছেলেটা বাইকটা স্ট্যান্ড করে পুষ্পিতার সামনে
দাঁড়িয়ে বললো-
“সেদিন তো আমাকে খুব বড় বড় লেকচার
দিয়েছিলি।ব্রেকাপ হলো কি না হলো সকাল সকাল
আরেকটা প্রেমিক নিয়ে বেড়িয়ে পরেছিস।এখন
কোথায় গেলো তোর সতীত্ব?একচুয়্যালি ইউ
আর দ্য ব্লাডি বি…
ছেলেটার কথা শেষ না হতেই ডান গালে
জোরসে একটা থাপ্পড় পরলো। আমি ছেলেটার
গালের দিকে একটু ভালো করে তাকালাম।ফর্সা গাল
হাতের পাঁচ আঙুল বসে গেছে।বাপরে মেয়ের
হাতে জোর কত!!
ছেলেটা চড় খেয়ে ফুঁসতে ফুঁসতে বাইক নিয়ে
চলে গেলো…
আর পুষ্পিতা হাটতে হাটতে মাঠের পাশে যে পুকুরটা
আছে সেইখানে গিয়ে দুহাত বুকের সাথে
জড়ো করে দাঁড়ালো। আমি কি মনে করে করে
ওর পিছুপিছু গেলাম।এটা বুঝতে পারলাম ছেলেটা
পুষ্পিতার বয়ফ্রেন্ড ছিলো। এখন আর নেই.. আমি
পুষ্পিতার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই বললো-
“একটা ছেলের ভাবনা চিন্তা ভাবনা এতটা খারাপ কিভাবে
হয়।তিনবছরের রিলেশনশিপ ছিলো আমাদের।
সেদিন রেস্টুরেন্টে ইনিয়েবিনিয়ে আমাকে ওর
সাথে রুমডেটে যেতে বলে নয়তো সম্পর্ক
রাখবেনা বলে জানিয়ে দেয়।নিজের শারীরিক চাহিদা
মেটানোর জন্য তাহলে আমার পিছনে কেন তিনটা
বছর নষ্ট করলো।প্রস্টিটিউট এর কাছে গেলেই
পারতো।আমার ফ্রেন্ডরা বার বার বলেছিলো
ওকে বিশ্বাস না করতে কিন্তু আমি সব সময় ওকে
ডিফেন্ড করেছি।আর ও আমার বিশ্বাসের এই মূল্য
দিলো…
” ওর মুখে এরকম কথা শুনার পরেই কেন জানিনা
আমার রাগ উঠতে লাগলো ছেলেটার উপরে।
ওকে পুকুরপাড়ে রেখেই আমি চলে আসলাম…
আচ্ছা আমার কেন রাগ হচ্ছে? ছেলেটা ওকে
ঠকিয়েছে সেইজন্য নাকি মেয়েটার কান্না আমার
সহ্য হচ্ছেনা এইজন্য?
জানিনা আমি…. মেসে গিয়ে শুয়ে পরলাম।কিন্তু শুধু
পুষ্পিতার কথাই মনে হচ্ছে।ও কান্না করছে
ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার।জানিনা কেন
এমন হচ্ছে। এমনটা আমার সাথে কখনো হয়নি।
সারাদিনে এমনকি রাতেও পুস্পিতা নিয়ে ভেবেছি।
ওইভাবে আমার পুকুরপাড় থেকে চলে আসা উচিৎ
হয়নি।নিজের মধ্যেই কেমন একটা গিলটি ফিল
হচ্ছে….
চলবে,,,