অবশেষে তুমি আমার

অবশেষে তুমি আমার !! Part- 42

। আমার শত শত কোটি টাকার লোকসান হয়ে যায়। একদম পথে বসে পড়ি। ব্যাংকের টাকার জন্য বাড়িটাও চলে যায়। ত্রিযামিনী আর তার মা। যাকে নিজের খালা বলে চিনতাম বিপদের দিনে তারাও আমাকে ছেড়ে চলে যায়। তবে সেদিন আমার পাশে আনিসা ছিল। সে তার সাথে করে এ দেশে নিয়ে আসে । আমেরিকায় আশার বেশ কিছুদিন পর আনিশার বাবা অসুস্থ হয়ে যায়। আর আনিশার বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল আনিশার বিয়ে দেখে যাবে। সেই জন্য বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে যায়। আমি সেদিন না করতে পারিনি, ‘ আমি জানতাম আনিশা বাংলাদেশের একটা ছেলেকে মনে-প্রাণে ভালোবাসে। আর শুনেছি তাকেই বিয়ে করবে। কিন্তু আঙ্কেলকে কিছু বলতে পারিনি। আনিশাও আর দ্বিমত করেনি। বিয়ের আগের রাতে শুধু বলেছিল,’ রাজ ভেবেছিলাম সারাজীবন ভালোবাসার মানুষটার স্মৃতি নিয়েই কাটিয়ে দিবো। কিন্তু পারলাম না বাবার এ অবস্থায় নিজের ভালোবাসাকে কুরবানি দিলাম। শেষ বয়সে বাবার মুখে একটু হাসি দেখতে চাই আমি ।
– অধরা এসব কি বলছো? তোমার বাবাকে ওই ছেলের কথা বলো!
– রাজ আমি যাকে কলেজ লাইফ থেকে ভালোবাসি। তার ভালোবাসা আমি না অন্য কেউ। তাই বাবাকে আর বলিনি। তার সুখের মাঝেই নিজের সুখ খুঁজে নিয়েছি।
-আনিশা ওই ছেলের পরিচয় দিবে? আমি একটু কথা বলতাম।
– রাজ তার কি দরকার এখন তো কোন কিছুই সম্ভব না। আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তো। জানো রাজ আমার বাবার মুখে যে হাসিটা দেখেছি সেটা মলিন করতে চায় না।
– এদিকে আনিশার বিয়ে ধুমঃধাম করে হয়ে যায়।সবাই আনিশার বাহিরের চাকচিক্য।কষ্ট ঢেকে রাখা হাসিটা দেখলেও আমি তার চোখে লুকানো কষ্টটা ঠিকই দেখতে পেয়েছি। যখন আনিশা তার স্বামীর সাথে চলে যায়। তার শেষ কথা ছিল,’রাজ নিজেকে কখনো একা মনে করো না। তোমার পাশে হয়তো থাকতে পারবো না। তবে আমার এ মন বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে সারাক্ষণ তোমার সাথে থাকবে।
– দেখতে দেখতে বছর খানিক পার হয়ে যায়। আনিশার স্বামী আসফিও অনেক ভালো ছিল। দু’জনের সুখে ছিল। এর মাঝেও মাঝে মধ্য আনিশাকে কাঁদতে দেখতাম। ওকে কিছু বললে কিছু বলতো না।

– এদিকে বেশ কিছুদিন পর আনিশা আর আসফির ঘর আলো করে একটি মেয়ে হয়। নাম রাখা হয় আনিশা তাসনিম অনুত্রি। দিনগুলো বেশ ভালোই কাটতেছিল। একদিন আমি আর একদিনন সকালে বসে কফি খাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসে। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে কেউ একজন বলে হসপিটালে যেতে। যার ফোন সে হসপিটালে আছে। অবস্থা বেশি ভালো না।
– কথাটা শুনার পর বুকটা কেমন ছ্যাঁত করে ওঠে। আঙ্কেলকে নিয়ে হসপিটালে গিয়ে দেখি আনিশার মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো। মুখটা কেমন বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার এসে বললো,’ উনার স্বামীকে বাঁচানো যায়নি। আর উনার অবস্থা আশঙ্কাজনক!
– ডাক্তারের মুখে কথাটা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ ছোট্ট বাচ্চার কান্না শুনে পাশে তাকালাম। পাশে তাকাতেই দেখি অনুত্রি নার্সের কুলে কাঁদছে। নার্সের কুল থেকে আমার কুলে নিতেই অনুত্রি কান্না থামিয়ে দিল। বারবার আমার শার্টের বোতাম ধরে টানতে লাগল।
– নার্স বলল,’ একসিডেন্টে বাবা মারা গেলেও, ছোট্ট মেয়েটা মায়ের কুলে একদম নিরাপদ ছিল। বিষয়টা বিস্ময়জনক।
এদিকে একটু পর ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে বললো,’ আপনাদের মাঝে রাজ কে?
– আমি বললাম,’ ডক্টর আমি রাজ।”
– আপনার সাথে পেশেন্ট কথা বলবে, ‘ ভেতরে যান। ‘
– আমি অনুত্রিকে কুলে নিয়ে ভেতরে যেতেই বুকের ভেতরটা দুমড়ে -মুচড়ে গেল। কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে। আনিশা আমাকে দেখেই ইশারায় পাশে বসতে বললো!
– আমি পাশে বসতেই,’ ছোট্ট বাচ্চার মতো আদো আদো কন্ঠে বললো,’ জানো রাজ কি থেকে যে কি হয়ে গেল, আমারি চোখের সামনে আশফি চলে গেল আমাকে ছেড়ে। কথাটা বলেই কেঁদে দিল।

– আমি আনিশার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,’ কান্না করো না আল্লাহ হয়তো এমনটাই চেয়েছিল। ”
– জানো রাজ আমার মনে হয় আমি আর বাঁচবনা। চোখ মেলে তাকাতে পারছি না।খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি মরে গেলে আমার মেয়েটার কি হবে? বাবাও নেই। আমার মেয়েটা এতিম হয়ে গেল।
– আনিশা কি বলছো এসব? আমি কি মরে গেছি? অনুত্রি আমার মেয়ে হিসেবেই বড় হবে। কোনদিন মাতৃত্বের আর পিতৃত্বের অভাব বুঝতে দিব না। আর তোমার কিছুই হবে না। বাজে কথা একদম বলবে না।
– রাজ আমাকে কথা দাও অনুত্রিকে কখনো কষ্ট দিবে না? তোমার রাইমার মতোই মনে করবে?
– হুম কথা দিলাম। তবুও তুমি কান্না করো না প্লিজ।
– রাজ আমার এখন খুব শান্তি লাগছে। আমার আর কোন অাফসোস নেই। জানো রাজ আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে। এতো কষ্টের মাঝেও এক প্রশান্তির হাওয়া হৃদয়ে বয়ে যাচ্ছে। রাজ আমার মাথায় একটু হাত ভুলিয়ে দিবে? আমার না খুব ঘুম আসছে।
– এই আনিশা এসব কি বলছো? প্লিজ এমন বলো না।
– রাজ দাও না একটু হাত ভুলিয়ে!
– আমি অানিশার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছি। বুকের ভেতরটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।
– এই রাজ, শোন না।
– হ্যাঁ বলো।
-বাবার রুমের পাশে যে রুমটায় আমি থাকতাম। এখন যেটাতে তুমি থাকো। সে রুমের ৪ নং ওয়্যারড্রপে একটা ডায়রি পাবে। প্লিজ ডাইয়িটা একটু পড়ে দেখে নিয়ো। আর হ্যাঁ রাজ আমি বাংলাদেশে একটা ছেলেকে ভালোবাসতাম। সেই কলেজ জীবন থেকেই। সেই ছেলেটা কে জানো?
– কে?
– সেই ছেলেটা তুমি। যাকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু তোমার ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসা অন্তত নগণ্যই ছিল। তাই কোনদিন বলতেও পারিনি। কিন্তু আজ না বললে বড্ড অন্যায় হবে আত্মার সাথে। তাই বলে দিলাম। জানো রাজ আমি বাংলাদেশে কেন গিয়েছিলাম?
– কেনো?

– তোমার জন্য গিয়েছিলাম। আমি তোমাকে ভালোবাসতাম এটা বাবাও জানতো। বাবা আর দ্বিমত করেনি । বলেছিল তোমাকে নিয়ে যেতে। কিন্তু দেশে এসে যা দেখি তা স্বপ্নেও ভাবিনি। তুমি আমাকে নও অধরা আপুকে ভালোবাসো।
– ভেবেছিলাম বাকিটা জীবন তোমার স্মৃতি নিয়েই কাটিয়ে দিবো। কিন্তু বাবার স্টোকের পর তার শেষ অনুরোধটা রাখতেই আসফিকে বিয়ে করা। বিয়ের রাতেই আশফিকে সব বলেছিলাম। আমি চাইনি ওকে ঠকাতে। আর ঠকায়নো নি। যাই হোক মরার আগে একবার বলবে ভালোবাসি? জানি ভালোবাসো না আমায়। তোমার হৃদয়ে শুধু অধরার বসবাস। তবুও বন্ধু হয়েও বলো না,’ ভালোবাসো আমায়।”
– কথাটা বলেই আনিশা ঘুমিয়ে গেল। যে ঘুম থেকে আর কেউ জেগে উঠে না।
– সেই দিনের পর থেকে, ‘ অনুত্রিকে নিজের মেয়ের মতো বড় করছি। যখন তোমাদের কথা মনে হতো তখন খুব কান্না পেত। ইচ্ছা হতো ছোটে যায় তোমার কাছে। কিন্তু যেতে পারেনি, কারণ তুমি তো তিয়াসের সাথে সুখেই ছিলে। তোমাদের বিয়ের কাপল পিক গুলো দেখে ভালোবাসার ইচ্ছাটা মরে গেছে।
– রাজ কি বলছো এসব? আমি কেন তিয়াসকে বিয়ে করবো? আমি তখন ঘৃণা করলেও তোমাকেই ভালোবাসতাম।
চলবে””””’