অবশেষে তুমি আমার

অবশেষে তুমি আমার !! Part- 26

ইশু তোকে ছাড়া আমারো কষ্ট হয়েছে। আমাদের সাইবার স্পের্শাল টিম এসেছে?
– হ্যাঁ আপু!
-এই যে ত্রিযামিনী ফোনটা দাও! ত্রিযামিনীর হাত কাঁপছে।
– এই কি বলছি ফোন দাও!
– অধরা ফোনটা নিয়ে ইশুর হাতে দিয়ে বললো,’ এখানে একটা ভিডিও আছে। এটার রিয়েল ক্রিপটা চায় আমি তাও দশমিনিটের মাঝে।
– আপু ছোট্ট কাজ হয়ে যাবে। তুমি কি আজই লন্ডন চলে যাবে?
– না কালকের টিকেট কনফার্ম করতে বলো।
– আচ্ছা আপু। তোমার ঠোঁট থেকে ব্লাড বের হচ্ছে তো!
– বের হোক এটা আমার ভালোবাসার প্রতিদান। আমার ভালোবাসা আমার রক্ততেই খুশি!

– বাসায় সবাই অধরার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। অধরাকে দেখে মনে হচ্ছে কালকের অধরা আর আজকের অধরার মাঝে হাজারগুণ তফাত! কতগুলো মেয়ে অধরার পাশে সাড়ি বেধে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে একটা মাছিও অধরাকে স্পর্শ করতে দিবে না তারা। রাজ অধরার দিকে অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
– অধরা নিরবতা ভেঙে বললো,’ রাজ আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি পারলে ক্ষমা করবেন।
– অধরা এসব কি? তুমি কি ড্রামা করছো আমার সাথে? তোমার বোন না হসপিটালে? তাহলে এটা কে? আর তোমার বোন কোথায়?
– সরি রাজ তোমাকে মিথ্যা বলার জন্য! এছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না। আমি জানতাম তুমি আমাকে এতটা ঘৃণা করো। তবে এতটা ঘৃণা করো জানা ছিল না। জানো রাজ তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসতাম বলতে পারো নিজের থেকেও বেশি। বছর তিনেক আগে তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম। তুমি দেখাটাও করোনি। বলেছিলে মা-বাবার খুনির সাথে তুমি দেখা করবে না। তাই ইশুর অসুস্থতার কথা বলে মিথ্যে নাটক সাজিয়ে তোমার বাসায় আশ্রয় নিয়েছি। চেয়েছি ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে আপন করে নিতে। কিন্তু পারিনি। আমি ব্যর্থ রাজ!
-জানো রাজ আমি সেদিন যা করেছি সব আমার ভালোবাসাকে বাঁচাতেই করেছিলাম। তবুও আমি অপরাধী তোমার চোখে। বিশ্বাস করবে না জানি তবুও বলছি, যেদিন তোমার মা -আর বাবা আমাকে নিতে আসছিলো বাসায় তার আগে বাবা আর কাকা প্ল্যান করেছিল তোমার মা-বাবাকে মেরে ফেলবে আমি যদি তাদের সাথে যাই। আর সাথে তোমাকেও মেরে ফেলবে।
তখন বাবার পা ধরে বলেছিলাম, ‘ বাবা, রাজ আর তার বাবা -মাকে মেরো না। রাজ না আমার স্বামী? তুমি কি চাও তোমার মেয়ে বিধবা হোক?”
– আরে তুই চিন্তা করিস না। তুই বড় হলে অনেক ধনী ঘরে বিয়ে দিবো। ওদের তো কিচ্ছু নেই।”
– বাবা আমি রাজকে ছাড়া বাঁচবো না। রাজ যে আমার জীবন। ওকে বড্ডবেশি ভালোবাসি। ”
– চুপ কর। তোর চোখের সামনেই রাজ আর তার বাবা মাকে মারবো। তাদের জন্য রিসানের বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। তারা বেঁচে থাকলে কোনদিনই রিসান আমার বন্ধুর মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না। আমাদের কোটিটাকার ব্যবসা হাত ছাড়া হয়ে যাবে।
– বাবা প্লিজ ওদের মেরো না। রাজকে ছাড়া আমি মরে যাবো।”
– ছেড়ে দিতে পারি এক শর্তে। ”
– হুম বলো কি করতে হবে?”
– তুই বলবি তুই ছোটবেলার বিয়ে মানিস না। আর রাজের মায়ের চরিত্রের দোষ আছে। এসব বলে অপমান করে তাড়িয়ে দিবি। যেন তোকে স্বপ্নেও তাদের ছেলের বউ মনে না করে।
– বাবা কি বলছো এসব? আমার মায়ের মতো উনাকে কিভাবে বলবো এসব। প্লিজ আমাকে মেরে ফেলো তবুও ওদের কিছু করো না।
– আরে পাগলী তোকে মারবো কেন? প্লিজ বুঝিস না কেন রাজের বাবার আরো কিছু নেই। রাস্তায় নেমে গেছে।
– বাবা ছিহ! রাজের বাবার জন্যই না তোমার আজ এত সম্পদ। আর তুমি বিপদের দিনে।
– টাকা থাকলে ওমন বন্ধু অনেক পাওয়া যায়। রিসান আমার বন্ধুকটা বের কর। বাসায় আসলে মেরে রেলস্টেশনে ফেলে রাখবো। এখনো ভেবে দেখ অধরা তুই ইচ্ছা করলেই বাঁচাতে পারিস তাদের।
– বাবা প্লিজ ওনাদের ছেড়ে দাও। তুমি যেভাবে বলবে ওভাবেই করবো। জানো রাজ সেদিন মায়ের চরিত্র নিয়ে বাজে কথা বলেছি। সব মা -বাবা আর আমার কলিজা তোমাকে বাঁচাতে। কিন্তু বাবা নামক নরপশুটা তাদের ছাড়েননি। শুনেছিলাম তুমিও নাকি মরে গেছো?
– জানো খুব কান্না করেছিলাম। আমার বিশ্বাস ছিল তুমি বেঁচে আছো। পরে কয়েক বছর পর ফেন্ডের মাধ্যমে খবর পেয়েছি তুমি বেঁচে আছো। বাবার মতোই সৎ ব্যবসায়ী হয়েছে। জানো রাজ আমি লন্ডনে থেকে প্রতিটা মুহূর্ত তোমাকে মিস করেছি কতটা পাগলী ছিলাম এই ফেসবুক, whatsapp, ইমোর যুগে সারারাত তোমার দেওয়া পুতুলটার সাথে কথা বলে কাটাতাম। ওটা বুকে নিয়ে ঘুমাতাম। ছোটবেলা থেকেই নিজেকে বিবাহিত বলে পরিচয় দিতাম। যে বয়সে একটা মেয়ে প্রেম করে বেড়ায়। বয়ফেন্ডের সাথে টাইম স্পেন্ড করে। সে বয়সে আমি তোমার প্রতিটা স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রাত পার করেছি। যে অধরাকে পাওয়ার জন্য লন্ডনের বড়বড় সেলিব্রেটিরা পাগল আর সেই অধরা শুধু তোমার জন্য পাগল ছিল। এমন একটা রাত বাদ যায়নি মাঝরাতে নামায পড়ে মোনাজাতে তোমাকে চায়নি!
জানি না কিভাবে ভালোবাসতে হয়। বাবা-মা বছর চায়েক আগে মারা -যায় এক কার একসিডেন্টে। তারপর বাবার লন্ডনে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রপারটি সামলানোর দায়িত্ব আমার আর ইসুর কাঁধে পড়ে। জানো রাজ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ফেলে কেন তোমার রক্ষিতা হয়েছিলাম ? তোমাকে ভালোবাসতাম বলে। যার খাবার টেবিলের সামনে হাজার আইটেম থাকতো সে আমি তোমার জন্য পান্তা ভাত পর্যন্ত খেয়েছি। এমনও রাত চলে গিয়েছে আমি খায়নি। বাড়ির সব কাজ একা করেছি। অথচ আমার বাড়িতে কফির মগটা দিয়ে যাওয়ার জন্য একটা নিয়ে যাওয়ার জন্য আরেকটা মানুষ ছিল। তুমি প্রতিরাতে স্বামীত্ব ফলিয়েছে বাধা দেয়নি বরং সারারাত তোমার মাথাটা বুকে রেখে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি। ভালোবেসেছি তোমাকে। সবার ফুলশর্য্যা রাত হয় কত মধুর। আে তোমার সাথে আমার যা হয়েছিল তা মনে হলে ভয়ে হাত-পা জড়োসরু হয়ে আসে।

– জানি না কিভাবে ভালোবাসতে হয়। কিভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয়! তুমি যখন অফিসে থাকতে তোমার শার্ট পরে তোমার গায়ের গন্ধ নিয়েছি। তুমি যে গ্লাসের যে অংশে মুখ লাগিয়ে পানি খেতে আমিও সে অংশে মুখ লাগিয়ে খেতাম। আচ্ছা রাজ আমি কি সত্যিই পতিতার কাজ করেছি? নিজের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য? তুমি ছাড়া কোন পুরুষ আমার সতীত্বে স্পর্শ করতে পারেনি। দেখবে তোমাকে পাওয়ার জন্য কত অগ্নি পরীক্ষা দিতে হয়েছে? এই বলে শাড়ির আঁচল টান দিতেই রাজ আতকে উঠলো!
– নাভির সাইটে অনেকটা অংশে পুড়া দাগ!
– কি ভয় পেলে? তোমাকে ভালোবাসার জন্য নামাযের মোনাজাতে তোমার বোন গরম চা ছুড়ে মেরেছিল। আমি খারাপ তাই জায়নামাযে শুয়ে কারো লাথি খেয়েছি। পতিতাদের নাকি নামায পড়তে হয় না। সত্যিই কি আমি পতিতা? আমি তো আমার স্বামীর কাছেই নিজের অসিত্ব বিলীন করেছি।
রাজ একটা মানুষকে মানুষিক, শারীরিক সব রকমের টর্চার তোমরা করেছো? তবুও কিছু বলিনি। শুধু তোমাকে ভালোবাসি বলে। শুধু তোমার বুকে যাবো বলে। শুধু তোমার পায়ের নিচে একটু আশ্রয়ের জন্য নিজের ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে এসেছি।
– জানো ২১ এপ্রিল যেদিন বেবি কন্সিভ করি। সেদিন এক পৃথিবী সমান খুশি হয়েছিলাম। তোমার ভালোবাসার ফসল আমার গর্ভে। আমার চেয়ে বেশি খুশি কে হতে পারে? কিন্তু যখন বাচ্চার বাবাই বললো, ‘ বেবি এর্বারশন করতে হবে। এর চেয়ে কষ্টের কথা দু’টি হতে পারে না জগতে। তোমাকে পাওয়ার জন্য নিজের আত্মসম্মান তোমার চরণে নুইয়ে দিয়েছিলাম!
রাজ আমার কোন দোষ ছিল না। তুমি যেমন তোমার মা -বাবাকে ভালোবাসতে তেমনি আমিও তোমার মা -বাবাকে ভালোবেসেছি। সন্তান হয়ে মাকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টাও করেছি । তুমি আমাকে যা ইচ্ছা ভাবতে পারো! তবে নিজের থেকেও তোমাকে বেশি ভালোবেসেছি। তোমার পায়ে পর্যন্ত পড়েছি। কিন্তু তুমি বিনিময়ে কষ্টই দিয়েছো? রাজ আমি যেমন ভালোবাসা না পেয়ে কষ্ট পেয়েছি। তুমি তার চেয়ে আরো বেশি পাবে। আর হ্যাঁ বলছো না সম্পদের জন্য তোমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করছি?
– আরে লন্ডনে যে আমাদের সাতটি বাড়ি আছে। তোমার সব সম্পত্তি মিলিয়ে একটি বাড়ি বানাতে পারবে না। শোন ভালোবাসা টাকা দিয়ে হয় না। ভালোবাসতে মন লাগে। যে নিজের স্ত্রীকে ব্যবসার জন্য ক্লাইন্টদের হাতে তুলে দেয় তার কাছে ভালোবাসা চাওয়াটা বোকামি। যেদিন কক্সবাজার নিয়ে যাও সেদিনের রাতটা স্বপ্নের মতো ছিলো। মনে করেছিলাম পেয়েছি আমি তোমাকে। কিন্তু তোমার ভালোবাসাটা মরিচীকার মতো ছিল। তোমার কাছে যেতেই হারিয়ে গেছে। আচ্ছা রাজ কোন মেয়ে কি পারবে তার স্বামীকে অন্য মেয়ের সাথে রেখে ঘুমাতে? আমিও পারিনি। তাই নিজের শত কষ্ট চাপা দিয়ে তোমার দরজায় নক করেছিলাম। তুমি আর আনিশা সেদিন কি ব্যবহারটাই না করেছো!

– আর হ্যাঁ ইশু সমপূর্ণ সুস্থ। ইশুর মিথ্যা অসুস্থতার কথা বলে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এ ছাড়া তোমার কাছাকাছি থাকার অন্য কোন উপায় ছিলো না। মিথ্যা বলার জন্য সরি। আর হ্যাঁ তুমি যে টাকাগুলো ইশুর জন্য দিয়েছিলে তার বিনিময়ে চেকটা দিয়ে গেলাম। যত ইচ্ছা এমাউন্ট বসিয়ে নিয়ো। আর বললে না ডির্ভোস? ডির্ভোস আজ আমিই দিতাম। তুমি দিয়ে দিয়ে ভালোই করছো। আজ থেকে আমার প্রতি তোমার কোন অধিকার রইলো না। আর হ্যাঁ রাজ ভালোবাসলে তিয়াসের মতো ভালোবাসবে যে একটিবারের জন্য আমাকে ছুঁয়ে দেখারো চেষ্টা করেনি। দূর থেকেই ভালোবেসেছে।তিয়াসের শুদ্ধতম ভালোবাসা আমাকে অভিভূত করেছে। তিয়াসের কাছে আজীবন ঋণী হয়ে থাকবো। ঋণী হয়ে থাকবো তার ভালোবাসার কাছে।
– আর এই যে ত্রিযামিনী! আপনি তো মেয়ে তাই না? একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের মাতৃত্ব থেকে বঞ্চিত করতে লজ্জা করে না? আর আপনি? আপনাকে তো মা বলে ডেকেছিলাম। আফসোস মা নামটাই কলঙ্কিত করেছেন। পৃথিবীর কোন মা তারর সন্তানকে আদর করে বিষ মুখে তুলে দিতে চায় না। আপনি সেটাই করেছেন। তারপরেও আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ। এতদিন আশ্রয় দেওয়ার জন্য।
– রাজের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। অধরা মা-বাবার খুনি না আমাদের বাঁচানোর জন্যই এমন করছে। রাজ অনেকটা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,’ সত্যিই কি তোমার প্রতি আমার কোন অধিকার নেই?”
– অধরা মুচকি হাসলো আর কিছু বললো না।
– রাজের দু’চোখ বেয়ে নোনা জল আসতে লাগলো। অধরা চলে গেলে যে তার পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ থাকবে না।
– আপু চলতো। তোর সাথে কতদিন খায় না। লাঞ্চের টাইম হয়ে যাচ্ছে।
– আচ্ছা চল।
– একটা মেয়ে এসে অধরার চোখে সাইনগ্লাস পরিয়ে দিলো। আরেকজনে একসেট জুতো এনে পায়ের গুলো খুলে পরিয়ে দিলো। অধরাকে চেনাই যাচ্ছে না।
– এমন সময় একটা মেয়ে বললো,’ ম্যাম আপনি যে ভিডিওটা দিছেন সেটার অরজিনাল ভিডিওটা আপনি চাইলেই দেখতে পারেন।
– আচ্ছা দাও!
-অধরা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে রাজের হাতে ফোনটা দিয়ে বললো, ‘ আচ্ছা রাজ ভালো থেকো আসি। ”
– কথাটা বলে রুম থেকে বের হতেই রাজ ভিডিওটা পড়ক করে দেখে চমকে ওঠলো! রাজের হাত কাঁপছে। রাজ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি এমন কিছু হবে। না সে এমন করতে পারে না। পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। কারণ ‘ ভিডিওতে তুর্যয় আর ”’
চলবে””””’

Comments
Write a comment…