অবশেষে তুমি আমার !! Part- 11
অধরার চিৎকার শুনে রাজ, কাজের মেয়ে আর ত্রিযামিনীর মা এসে বলে কি হয়েছে?
– ত্রিযামিনী রাজের হাতে রির্পোটের কাগজটা দিয়ে বলে,’ রাজ তুমি এটা কাকে আশ্রয় দিয়েছো? কার না জানি পাপের সন্তান তার পেটে ধারণ করছে। জানো তোমার হাতের রির্পোটটা কিসের? রির্পোটটা হচ্ছে এ নস্টা মেয়েটার পাপের ফসল। এর পরেও তুমি এটাকে বাড়িতে রাখবা? আর আপনারা দেখছেন? নস্টা মেয়ে বিয়ে ছাড়া সন্তান গর্ভে ধারণ করে নামায পড়ছে।
– ছিঃ ছিঃ রাজ বাবাজি তুমি মানসম্মান আর রাখলে না। এসব মেয়েকেও এ বাসায় জায়গা দিতে হয়?যে সব মেয়ে নিষিদ্ধ পল্লীতে থাকার কথা। তাদের তুমি বাসায় জায়গা দিয়েছো!
– রাজ তার আন্টির কথা শুনে মুচকি হেসে বললো,’ আন্টি তুমিও না না জেনে কিসব বলছো?’
– কি জানবো বল তো? রির্পোট দেখার পরও এসব কি? সমাজে এসব শুনলে মুখ দেখানো যাবে কী? রাজ বাবা তুমি একটু বুঝার চেষ্টা করো, ‘ যে মেয়ে বিয়ের আগে সন্তানের মা হতে যাচ্ছে! এ মেয়ে কতটা খারাপ। আমি আরো এ মেয়েকে নিজের মেয়ে বলি বড়লোক বাড়িতে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম! আল্লাহ বাঁচিয়েছে নয়তো আমার মানসম্মান সব যেত।
– এদিকে অধরা দাঁড়াতে পারছে না ঠিকমত। লাথিটা অনেকটা জুরে লেগেছ! পেটটা বামহাতে ধরে উঠার ট্রায় করছে। অধরার মনে হচ্ছে আজ তার মা থাকলে হয়তো এসব বলতো না। বোনটাও পাশে নেই। বাবা তো সে কবেই মারা গিয়েছে। আল্লাহ ছাড়া যে তার দুনিয়াতে আর কেউ নেই।
– অধরা কষ্ট দেখে ত্রিযামিনী রাজকে বললো,’ দেখছো এখন কি রকম অভিনয় করছে? এমন অভিনয় কেউ সিনেমাতেও করতে পারছে না। তোমাকে আগেই বলেছিলাম এ মেয়েকে বিশ্বাস করো না। সেদিন যে রাত করে বাড়ি ফিরছিল সেদিনই মনে হয় সাথে করে নিয়ে আসছে।
– অধরা রাজের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। অধরা দু’চোখ যেন রাজকে বলতে বলছে,’ সত্যিটা যেন সবার সামনে বলে দেয় সে। অধরার গর্ভের সন্তানটার বাবা অন্য কেউ নয় রাজ নিজেই। ”
– রাজ ত্রিযামিনীকে চুপ করতে বলল। আর বললো,’ জানিস ত্রিযামিনী অধরার পেটে বিদেশী ক্লাইন্টদের বেবী! মেয়েটা বোকামি করেছে । এখন আর কি করার এর্ভারশন করে নিলেই হবে। যাই হোক এসব নিয়ে তোদের ভাবতে হবে না।এসব এখন কমন বিষয়। আর শোন ওকে বকিস না ও হচ্ছে আমার সোনার ডিম দেওয়া সেই হাঁস। ওর জন্যই আমাদের কোম্পানি অনেক বড় একটা কাজ পেয়েছে। আশা করি তোমরা সবাই বুঝতে পারছো?
– রাজ কিন্তু এসব ঠিক না। ‘
– ত্রিযামিনী এসব নিয়ে ভাবিস না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর্ভারশন করে নেওয়াবো।
– রাজের মুখে এসব কথা শুনে অধরার কলিজা ফেটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কলিজাতে কেউ ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। বুকের ভেতরটা দুমড়ে -মুচড়ে উঠছে। মনে হচ্ছে রাজের কথাগুলোর চেয়ে দুনিয়াতে আর কোন নিকৃষ্ট কথা নেই। বারবার রাজের কথাটা কানে বারি খাচ্ছে। অধরার মনের আকাশটা এক মুহূর্তে কালো মেঘে ছেয়ে গেল। আকাশে মেঘের আনা-গোনা। দু’চোখ জলে টইটুম্বুর! অধরা শত চেষ্টা করেও, তার চোখের জল ধরে রাখতে পারছে না। দু’চোখের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।
– রাজের কথাশুনে বাড়ির সবাই চলে গেল। রুমে রাজ আর অধরা!
– অধরা চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,’ জানেন আপনিই আমার জীবনের প্রথম পুরুষ! যে আমার সতিত্বটা ভোগ করেছে। যে আমার সমস্ত শরীর স্পর্শ করেছে! যার কাছে অনিচ্ছাসত্ত্বেও নিজের সবকিছু সর্পে দিয়েছি। শুধু নিজের কলিজার টুকরা বোনটাকে বাঁচাবো বলে। আর আপনি তো সত্যিটা জানেন আমার গর্ভের সন্তানের বাবা কে? সন্তানের বাবাটা তো আপনি নিজেই।
সবটা জেনেও কেন নোংরা কথা বললেন?
– আমি কি তোকে বলছি, যে সন্তান নে তুই? আমি আনন্দ পেয়েছি তুই ও পেয়েছিস? আর এমনিতেই তোর সবকিছু আমাকে দেসনি। বিনিময়ে টাকা নিয়েছিস। দোষটা আমার না কি তোর? তারপরেও বলছি চিন্তা করিস না। আমার পরিচিত ভালো ডাক্তার আছে, এর্ভারশনটা করে নিস!
অধরা কি বলবে বুঝতে পারছে না। রাজের কথা শুনে তার ডিকশনারির সব ভাষা যেন হারিয়ে গেছে। হঠাৎ অধরার চোখ গেল ফলকাটার ছুরির দিকে। অধরা ফল কাটা ছুরিটা রাজের হাতে দিয়ে বললো,’ এই নেন ছুরি। গলায় শোঁ করে চালিয়ে দেন। আমি আর পারছি না। তিলেতিলে মারার চেয়ে একবারে মেরে ফেলেন? তাহলেই হয়তো আপনার শান্তি তাই না? আমাকে মেরে ফেলেন তবুও প্লিজ বললেন না সন্তান এর্ভারশন করার কথা। দোষ যা করছি আমি করছি নিষ্পাপ সন্তানটা তো কিছু করেনি।
– রাজ ছুরিটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে অধরাকে টান দিয়ে কাছে টেনে নিল! রাজের নিঃশ্বাস অধরার মুখে পড়ছে।
-রাজের প্রতি স্পর্শ অধরার শরীর ঘৃণায় ঘ্যানঘ্যান করছে। বমি আসছে।।একটা মানুষ কতটা স্বার্থপর আর খারাপ হতে পারে রাজকে না দেখলে হয়তো জানতে পারতো না সে। ”
– কি হলো? এভাবে ছটফট করছো কেন? তোমার প্রেগন্যান্সির রির্পোটটা তোমার তিয়াসকে দিতে হবে না? আচ্ছা বেবীটা কি সত্যি আমার নাকি ”’ কথাটা শেষ করার আগেই অধরা রাজের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয়।
– তোর কত্তোবড় সাহস আমাকে চড় মারলি?
– মেরেছি তো বেশ করেছি। আমার জন্য আমার গর্ভের সন্তানকে বাজে কথা বলতে পারেন না আপনি? আপনি আমার গর্ভের সন্তানের বাবা। আপনি মানতেও পারেন নাও মানতে পারেন। সেটা আপনার বিষয়। কিন্তু আমার গর্ভের সন্তানকে নিয়ে আরেকটা বাজে কথা বললে আমি সহ্য করবো না।
– বাহ! সুন্দর কথা! এসব তিয়াসের সামনে বলতে পারবে তো?
– অধরা এবার মাথাটা নিচু করে ফেলল।
– কি হলো? মাথা নিচু করলে কেন? তোমার প্রেমিক শুনলে মনে কষ্ট পাবে তাই না? তিয়াসের বাসায় মিষ্টি নিয়ে যাবো। তুমি শাড়ি পরে সুন্দর করে সেজে নাও। সুন্দর দেখাতে হবে তো? এখন তুমি কিন্তু শুধু অধরা নও, তুমি এখন মা হতে যাচ্ছো। তোমার আলাদা একটা বিশেষত্ব তো আছে!
– অধরা কিছু না বলেই শাওয়ার নিতে চলে গেল। শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে অনেকক্ষণ চিৎকার দিয়ে কান্না করলো। তার এ কান্না চার দেয়ালের বাহিরে যাবে না কেউ বলবে না নাটক করছে।।অধরার চোখের সামনে বারবার ইশুর চেহারাটা ভেসে উঠছে।কতদিন থেকে ইশুকে দেখতে পারে না।এদিকে গোসল শেষ হলে রাজের দেওয়া শাড়িটা পরে নেয়। হালকা করে কাজলের রেখা টানতেই রাজ একটা বকুলের মালা নিয়ে অধরার খোঁপায় পরিয়ে দেয়। অধরা আড়চোখে রাজের দিকে তাকায়। রাজ অধরার কপালে কালো রঙের ছোট্ট একটা টিপ বসিয়ে দেয়।
– টিপটা কপালের মাঝ বরাবর বসাতেই অধরা রাজকে বললো,’ রাজ তিয়াসের বাসায় না গেলে হয় না?’ প্লিজ রাজ তুমি যা করতে বলছো তা তো করেছি।
– ওহ্ আচ্ছা তুমি এতো করে যখন বলছো তাহলে যাবো না তিয়াসের বাসায়। চলো আমরা হসপিটালে যাবো। এর্বারশনটা করে নিবে কেমন?
-রাজ এসব কি বলছো?
– কিছু না। তুমি ভেবে দেখ হসপিটাল যাবে নাকি তিয়াসের বাসায়? তোমার ইচ্ছা আমি জোর করবো না।
– অধরা আর কিছু বললো না শুধু বললো,’ মিষ্টি নাকি কিনবে? মিষ্টি কিনে নাও। ‘ রাজ অধরাকে নিয়ে মিষ্টি কিনে নিয়ে তিয়াসের বাসায় চলে গেল। ‘
– রাজ তিয়াসের বাসায় গিয়ে দেখলো, তিয়াস বাসায় নেই। দাঁড়োয়ানকে জিজ্ঞেস করতেই দাঁড়োয়ান বললো,’ সাহেব তো অফিসে। খালাম্মারা গ্রামে গেছে। আপনারা বসেন সাহেব এখনি এসে পড়বে।”
-রাজ অধরাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসে।
– এদিকে তিয়াস অধরাকে কোন ভাবেই ভুলতে পারছে না। বারবার অধরার চেহারাটা তার স্মৃতিপটে ভেসে উঠে। অধরার খোলা কেশ, চোখের কাজল! গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট সবকিছু যেন তিয়াসকে আকর্ষিত করে। অধরাকে কেন যেন দেখার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে ওঠে। ত্রিযামিনীর কাছে শুনেছে রাজ অধরার সাথে জোর করে অসভ্যতামি করেছে। এসব ভাবতে ভাবতে বাসায় ঢুকেই দেখে রাজ আর অধরা বসে আছে। অধরাকে দেখেই তিয়াসের বুকটা ধ্ক করে ওঠে!
– কি হলো তিয়াস বিনা -দাওয়াতে এসে পড়লাম তাই মন অবাক হলে? আসলে খুশির খবর তো তাই দেরী করলাম না। তোমার গার্লফেন্ড অধরা মা হতে যাচ্ছে।
– কি বলছেন এসব? আপনারা কি বিয়ে করেছেন?
– আরে বিয়ে না করলে মা হয় কিভাবে?
– আমার বিশ্বাস হয় না। আপনি জোর করে এসব করেছেন?
– হা হা!
– হাসবেন না আপনি বাসা থেকে প্লিজ বেরিয়ে যান। আর শুনেন অধরার সাথে যা যা করছেন এর পরিণাম ভোগ করবেন। একদিন না একদিন আমি অধরাকে নিজের করেই নিবো। আপনি তো বিয়ে করেননি অধরাকে, যদি বিয়ে করেন তাহলে ম্যারিজ সার্টিফিকেট দেখান?
– তাই বুঝি কাল সকালে তোমার মেসেঞ্জারে পাবে। আর ভুলেও অধরার দিকে হাত বাড়িয়ো না।
– অধরা তুমি কেন এসব সহ্য করো তুমি আমার সাথে, কথাটা শেষ করার আগেই রাজ অধরাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। এবং সোজা কাজি অফিস।
– কাজি অফিস নিয়ে আসলেন কেন? আপনার মতো মানুষকে কোনদিন স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না। আর বিয়ে তো দূরের কথা?
– দেখ তোমার বোনের জীবন আগে না তোমার বিয়ে? আরেকটা কথা তোমার গর্ভের সন্তানের কি পরিচয় দিবে যদি বিয়ে না করো? অাচ্ছা চলো বাসায় চলে যায়।
– রাজের কথা শুনে অধরা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো, ‘ আমি বিয়ে করবো।’
– রাজ মুচকি হাসলো। কাজি অফিসে বিয়ে শেষ করে বাসায় যেতেই দেখলো ত্রিযামিনী দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।’
– কি হলো ত্রিযামিনী এভাবে অগ্নিমূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
– রাজ তুমি পারলে এ নস্টা মেয়েকে বিয়ে করতে? একটিবারো আমার কথা মনে পড়ল না?
– রাজ ত্রিযামিনীর কথা শুনে হা হা হা করে হেসে উঠল!
– এভাবে হাসছো কেন? আমার কান্না দেখে তুমি হাসছো?
– আরে হাসবো না কি করবো? এ মেয়ে কি আমার বউ হবার যোগ্য? আরে বিয়ে করেছি কয়দিন পর তালাক দিয়ে দিবো।
– কি বলছো এসব?
– সত্যি বলছি। এই সেই মেয়ে যার জন্য আমার মা -বাবা হারিয়ে আমি এতিম হয়েছি । যার বাবার জন্য আমার বাবা মা-সুসাইড করেছিল। এখন সেই প্রতিশোধই নিচ্ছি।
চলবে””””””