অন্ধপ্রেম

অন্ধপ্রেম !! Part- 52

কয়েক বছর পর….
রাজ ক্লিনিকের একটা ক্যাবিনের বাহিরে বসে আছে জাপানের ….
শীতল ক্যাবিনে প্রসব বেদনায় চিৎকার করছে….রাজ চোখ বন্ধ করে দুই হাত মুঠো করে একটা চেয়ারে বসে আছে…
সে মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে….
রাজ তার লাইফে অনেক বার কষ্ট পেয়েছে…
কষ্টগুলো মৃত্যুর চেয়ে বেশি ছিলো…
তার বাবা মা প্রিয় বোন কে সে হাড়িয়েছে…
শীতলকেও হারাতে বসেছিলো সেই দিন…
রাজ কয়েক বছর আগের সেই দিনের কথা ভাবলো…
যে দিন রাজন নামের শয়তান শীতল সহ শীতলের পরিবারকে কিডন্যাপ করে ছিলো…

রোদকে মেরে ওর দুটো পা ভেঙে দেওয়া হয়েছিলো…
রোদের বাবা মা চিৎকার করছিলো..
তাদেতও বেধে রাখা হয়েছিলো…
রোদ প্রাণ প্রনে শীতলের নাম ধরে চিৎকার করছিলো…
শীতল কিছুতেই রেজিষ্টারে সাইন করছিলো না…
রাজ শীতলের চুল ধরে শীতলকে থাপ্পর দিচ্ছিলো বার…
.
.
.
রাজ সেই সময় সেন্সলেস অবস্থায় মেঝেতে পড়ে ছিলো…
রাজ ওখানে যেতেই রাজের উপর হামলা করেছিলো রাজনের লোকেরা…
রাজন শীতলের মাথায় রিভালবার ধরে রাজকে বলেছিলো থামার জন্য নইলে ওর সামনেই শীতলকে শুট করা হবে…
.
.
.
রাজ নিরুপায় হয়ে রাজনের লোকেদের আঘাত সহ্য করছিলো…
রাজের দুই হাত থেতলে দেওয়া হয়েছিলো যেনো সে কাউকে আঘাত করতে না পারে…
রাজ একসময় সেন্সলেস হয়ে যায়…তবুও সে সবকিছু আন্দাজ করতে পারছিলো কি হচ্ছে …
রোদের রক্তে মেঝেটা ভেসে যাচ্ছিলো…
শীতলের চিতকারও শুনা যাচ্ছিলো…
.
.
.
রোদ জানতে পারে রাজন একটা স্মাগলার…
সে আন্ডার ওয়াল্ডের একটা ডন…
রোদ রাজের উপর রাগ করতে পারে বাট জেনে শুনে সে বোনকে এই লোকের হাতে তোলে দিতে পারেনা…
এজন্য রোদ রাজনের সাথে শীতলের বিয়ে দেওয়া পরিকল্পনা ভেঙে দেয়।
রাজন সেটা মানতে পারেনি তাই রাজন প্ল্যান করে রোদ সহ তার বাবা মা কে তোলে আনে এখানে…
সাথে লোক জন ফিট করে খুব সাবধানে রাজকে ফলো করে…
রাজ যেদিন কাজলের বাড়িতে গিয়েছিলো সেদিন রাজনের সৌভাগ্য বশত রাজকে ট্যাক করতে পেরেছিলো …
.
.
.
রাজ শুধু আল্লাহর নাম নিচ্ছিলো…
যেভাবেই হোক শীতলকে রাজনের হাত থেকে বাচাতে হবে…
রাজ সেন্সলেস অবস্থায় শীতলকে দেখতে পাচ্ছিলো ….
শীতলের জন্য অজস্র ভালোবাসা ফিল করতে পাচ্ছিলো রাজ…
এভাবে রাজের শীতলের প্রতি অন্ধপ্রেম ব্যর্থ হতে পারেনা…
রাজ তার বাবা মা বোন রোজার ডাক শুনতে পাচ্ছিলো…
সবাই বলছিলো রাজকে পারতেই হবে…
কারণ রাজের আপন বলতে শুধু শীতল আছে প্রথিবীতে….
শীতল না থাকলে রাজের অস্তিত্ব থাকবেনা …
.
.
.
রাজন এবার শীতলকে ভয় দেখিয়ে সাইন করানোর জন্য শীতলের শাড়ির আচলে হাত দেয়…রাজন যেই শীতলের শাড়ি খোলার জন্য হাত বাড়ায় ঠিক তখনই রাজ রাজনের হাত ধরে…
রাজন রাজকে দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়…
রাজ শরীর খালি ছিলো…
পুরো শরীরে রক্তের দাগ…
রাজকে ভয়ংকর দেখাচ্ছিলো…
শীতল রাজকে দেখে প্রাণ ফিরে পেলো…
রাজকে শীতল জরিয়ে ধরলো…
রাজ শীতলের মাথায় হাত বুলিয়ে শীতলের চোখের পানি মুছে দিলো…
.
.
.
রাজ শীতলকে একপাশে সরিয়ে রাজনের সাথে যুদ্ধে নেমে পরে…
রাজ রাজনকে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলে…
রাজনের পা দুটো প্রায় আলাদা করে ফেলে….
যেই হাত দিয়ে শীতলকে মেরে ছিলো আর শাড়ির আচল ধরেছিলো সেই হাত ভেঙে গুড়িয়ে দেয় রাজ…
.
.
.
.
রাজ শীতলের বাবা মার হাতের বাধন খোলে দেয়…
শীতল রোদের অবস্থা দেখে চিৎকার করতে থাকে…
রোদের কি হাল করেছে রাজন শয়তান…
রোদের প্রান যায় যায় অবস্থা…
রাজের চোখ থেকে পানি পড়ছে রোদের জন্য…
হাজার হোক রোদ রাজের একমাত্র বন্ধু ছিলো কলিজার কলিজা…

রাজ এম্বোলেসের খবর দিতে চাইলে রোদ রাজকে কাছে টেনে নেয়…
রোদ বলে সে তার ভালোবাসার কাছে যেতে চায়…
তার রোজাে একা থাকতে ভয় করছে…
রোজা রোদকে ডাকছে…
রোদ রোজার সাথে থাকতে চায়…
রোজার কাছে যাওয়ার জন্য সে দুনিয়ার মায়া কাটাতেও প্রস্তুত…
রোদ রাজের পায়ে ধরে মাফ চায়…
সে এতোদিন যা করেছে তার জন্য সে অনুতপ্ত…
রোদ আরো বলে …শীতলের জন্য রাজ পারফেক্ট…
রাজের প্রতি যত অন্যায় করেছে রোদ তার প্রতিবাধ করার সামর্থ্য ছিলো রাজের…
রোদ সব বুঝতে পেরেছিলো রাজ শীতলের জন্য প্রতিবাধ করেনি…
রোদ রাজের পায়ে ধরে বলে…
দোস দেখ যেই পা দিয়ে তোকে আঘাত করেছিলাম সেই পা আর নেই…
যেই হাত দিয়ে আমি তোকে আঘাত করেছি সেই হাতও নেই…
যেই জানের জিগার দোস তোকে আঘাত করেছিলো সেই দোসও একটু পর থাকবেনা…
.
.
.
রাজ রোদের জন্য চিৎকার করে কাদতে থাকে…
সে রোদকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলো বাট এভাবে এতো ভয়ানক শাস্তির কথা সে ভাবেনি…
রাজ রোদকে চুপ করতে বলে…
রোদ হাসতে হাসতে রাজের হাত শীতলের হাতে দেয়
..
রোদ বলে ওর আদরের বোনের চোখে যেনো কখনোই এক ফোটা পানি না পরে…
রাজ শুধু বার বার বলছে…
তোর কিছু হবেনা রে দোস…
শীতল শুধু রোদের কথা শুনে কাদছিলো…
_ভাইয়া এসব বলোনা…
তুমি ভালো হয়ে যাবে…
রোদ শীতলের মাথায় হাত রেখে শীতলের কাছে মাফ চাইলো..
রোদ বললো…
সে ক্ষমার অযোগ্য তবুও যেনো রাজ আর শীতল তাকে ক্ষমা করে দেয়…
.
.
.
রোদের বাবা অনুতপ্ত হয়েছে…
তার জন্যই আজকে একমাত্র ছেলের এই অবস্থা…
রোদের বাবা মা রোদের কাছে মাফ চেয়েছিলো…
রোদের মৃত্যু এতো ভয়ানক হয়েছিলো যা দেখে যে কারও চোখে পানি এসে পড়তো…
রোদ রক্ত শূন্য হয়ে মারা গিয়েছিলো…
রোদ সামনে শুধু রোজাকেই দেখতে পাচ্ছিলো…
রোজার সেই কাজল কালো চোখ…
ঠোটের সেই মিষ্টি হাসির শব্দ…
রোদ প্রথম দেখায় রোজার প্রেমে পড়েছিলো…
কিন্তু রাজের কারণে বলতে পারেনি…
রোজার সাথে সে বাচতে পারেনি অনন্ত সে মরতে তো পারবে…
রোদের একটুও কষ্ট লাগছিলোনা…
সে তো তার ভালোবাসার কাছে যাচ্ছিলো…
তার তো আনন্দের দিন ছিলো ঐ দিন…
রোদ সামনে অনেক কষ্টে হাত বাড়িয়ে হাসতে হাসতে প্রাণ ত্যাগ করেছিলো…
রোদের কথা মতো রোজার পাশে রোদকে কবর দেওয়া হয়…
রোদ রোজা নামের দুই অমর প্রেমের কবরের পাশে রাজ একটা চাইল্ড হোম তৈরি করে…
নামটা ছিলো রোদ আর রোজার নামে…
রাজ যখন কবরের পাশে যায় তখন পরিষ্কার শুনতে পারে রোদ আর রোজার কথা…তারা দুজন একে অপরের সাথে কথা বলছে বর কনের মতো…
.
.
.
রাজ ভাবে প্রথিবীতে তো ওদের বর কনে হওয়া হলো না..
নিষ্ঠুর প্রথিবী বড়ই স্বার্থপর তারা সবার ভালোবাসা স্বার্থক করেনা…
.
.
.
.
কয়েক দিন শীতল তার বাবা মার সাথে ছিলো রোদের মৃত্যুর পর থেকে…
রাজ যেদিন ওদের বাড়ি যায় সেদিন অপরাধির মতো শীতলের বাবা মা রাজের দিকে তাকিয়ে ছিলো…
ফুলি জানায় শীতল তার রুমে বসে আছে..
রাজ শীতলের রুমে যেতেই শীতল রাজের পায়ে ধরে ক্ষমা চায়…
রাজ যতক্ষন শীতলকে ক্ষমা না করে দেয় ততক্ষন শীতল পা ছাড়বেনা…
শীতলকে অবাক করে দিয়ে রাজও শীতলের পায়ে ধরে ক্ষমা চায়…
রাজ বলে শীতল ওর পা না ছাড়লে রাজও ওর পা ছাড়বেনা…
.
.
.
শীতল রাজের কান্ড দেখে হেসে দেয়…
রাজও হেসে দেয়…
.
.
.
রাজ শীতলকে নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় চলে আাসে…
শীতল ঢাকার বাড়িতে তাদের রুমে এসে দেখে রুমটা ফুল দিয়ে সাজানো…
রাজ পেছন থেকে শীতলের কোমর ধরে ঘারে মুখ গুজে বলে …আজকে তোমার আমার ফুলসজ্জ্যা…
শীতল রাজের কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ …
রাজ কিছুটা রেগে বলে…
আমি জানি তুমি কেনো হাসছো..
এর আগে আমাদের অনেক বার ফুলসজ্জ্যা হয়েছে…
কিন্তু তখন তো তোমার মতে হয়নি…আমি জোর করেছি ফুলসজ্জ্যা…
বাট আজকে তোমার অনুমতিতে হবে…
শীতল রাজকে রাগানোর জন্য বললো….
আমি যদি অনুমতি না দেয়…
রাজ বললো…
তাহলে আর কি…আমাকে আগের রাজ হতে হবে…
আর জোর করেই ফুলসজ্জ্যা করতে হবে…
শীতল আর রাজ দুজনেই হেসে দিলো…
রাজ শীতলকে কোলে তোলে বেডে নিয়ে গেলো…
রাজ শীতলের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো…
সে ভাবছে কি আছে শীতলের মাঝে…
যার প্রেমে সে অন্ধ হয়েগিয়েছিলো…
যার জন্য মৃত্যুর থেকেএ বেশি যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে তাকে…
রাজ এবার শীতলকে ভালোবাসায় বেধে রাখবে…
যেনো কখনো শীতল সেখান থেকে যেতে না পারে…
রাজ আগের কথা মনে করেই শীতলকে ভয়ে জরিয়ে ধরলো…
শীতলও রাজকে জরিয়ে ধরে বললো…
_I love you
_I love you too💔💔💔💔💓💓💓💓💓💓💓💔
.
.
.
অতপরঃ সেদিন রাজের আর শীতলের আরো একবার ফুলসজ্জ্যা হলো …
যাকে বলে ভালোবাসার ফুলসজ্জ্যা…

রাজ শীতলকে মন ভরে আদর করলো…
শীতল শুধু রাজের ভালোবাসা টুকু অনুভব করলো…
.
.
.
.
সেদিনের পর থেকে রাজ শীতলকে সব সময় আগলে রাখে…
সব সময় শীতলের আশে পাশে রাজ থাকতো…
অফিসের সময় টুকু কোনো রকম কাটাতো…অফিসে বসেও কিছুক্ষন পর পর সি সি ক্যামেরা ফোন থেকে শীতলকে দেখতো …
.
.
.
রাজ শীতলকে এতো ভালোবাসবে সেটা শীতল কল্পনাও করতে পারেনা…
রাজ শীতলের কেনা গোলামের মতো শীতলের কথার আগেই উঠে বসে…
শীতলকে কিছু বলতেও হয়না…
শীতল কিছু বলার আগেই রাজ শীতলের কথা মেনে চলে…
রাজ প্রতিদিন বাহিরে আসার সময় শীতলের ঠোটের ছোয়া নিয়ে যায়…আবার আসার সময়ও …
রাজ সব সময় শীতলের ঘুম থেকে উঠার আগেই উঠে…
রাজ শীতলকে শাড়ি পরা শিখতে মানা করেছে…
কারণ রাজ সব সময় শীতলকে শাড়ি পরাতে চায়…
তার নাকি অনেক ভালো লাগে…
রাজ শীতলকে ছাড়া এক ফোটা পানিও খায়না মরে গেলেও…
.
.
.
একদিন জরুরি পার্টিতে রাজ আটকে পড়েছিলো…শীতলের জ্বর হয়েছিলো তাই রাজের সাথে যেতে পারেনি…
অথচ রাজের যেতে হবে….বিজনেসের লস হবে বিরাট রাজ না গেলে..
রাজ কিছুতেই যেতে চায়না…
সে শীতলকে ছাড়া যাবেই না…
শীতল অনেক কষ্টে রাজকে পাঠিয়ে ছিলো…
.
.
.
পার্টি টা একটা পাহাড়ি এলাকায় হচ্ছিলো…
সেখানে নেট ছিলোনা…
রাজ সেদিন ঝরে আটকে গিয়েছিলো…
ঢাকা যাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ ছিলো…
রাজ দুই কিলো রাস্তা হেটে গিয়ে একটা বুথ থেকে শীতলকে ফোন করে…
শীতলের খোজঁ নেয়…
সবার সাথে ভদ্রতার খাতিরে রাজকে সবার সাথে ডিনার করতে হবে…
রাজ শীতলকে ছাড়া কিছুতেই ডিনার করবেনা…দরকার পড়লে সে পথের ভিখেরি হয়ে যাবে…
শীতল রাজের কথা শুনে হাসতে শেষ…
শীতল রাজকে নিজের কসম দিয়ে জোর করে খাওয়ার জন্য বললো…
রাজ শীতলের জন্যই সেদিন ওকে ছাড়া খেলো…
.
.
.
.
রাজ এই ঝরে হেটে শীতলকে ফোন করেছে সেটা ভাবতেই রাজের প্রতি আরো বেশি ভালোবাসা জন্মালো …
.
.
.
কয়েক বছর রাজ আর শীতল নির্বিকারে চুটিয়ে প্রেম করলো…
রাজের ইচ্ছে নিজের বুক চিরে শীতলকে রাজের বুকে লুকিয়ে রাখতে…যেনো সব সময় শীতলকে সেখান থেকে বের করে দেখতে পাওয়া যায়…
.
.
.
রাজ এক মুহূর্ত শীতলকে ছাড়া থাকতে পারেনা…
মনে হয় শীতল এই বুঝি রাগ করে কোথাও চলে গেলো…
.
.
.
.
শীতল রাজের বুকে মাথা রেখে বললো…
তার ঘুম আসছেনা…
রাজ দুষ্টুমি করে বললো…
আমার কাছদ একটা ঔষধ আছে…
এসো আমার কাছে তোমাকে ঘু পাড়িয়ে দিই…
রাজ শীতলকে বেডে শুইয়ে আদর করতে লাগলো…
শীতল বললো…
এভাবে ঘুম আসবে ???
.
.
.
রাজ বললো আসবে …খুব আসবে…
শীতল বললো তার সব সময়ের জন্য একটা সাথি চাই…
রাজ হেসে বললো…
ঠিক আছে তোমার সাথি নিয়ে আসবো…
এখন আমার কাছে এসো…
সেদিনের ফল স্বরুপ শীতল প্রেগন্যান্ট হলো…
রাজ সেদিন সব থেকে বেশি খুশি হয়েছিলো….

ডক্টরের ডাকে রাজ বাস্তবে ফিরে এলো…
ডক্টর বললো …আপনার ওয়াইফের সিচুয়েশন ভালো না…
রক্ত ঝরেছে অনেক…
উনার সহ্য ক্ষমতা নেই…
রাজের বুকে একটা মোচর দিলো…
.
.
.
চলবে…….