অদ্ভুত ভালোবাসা

অদ্ভুত ভালোবাসা ! (অন্তিম পর্ব)


নিন্স কে স্যার বের করে দিয়েছে

কেনো? কি করেছে নিন্স?

নিশি তোমার মনে আছে যে স্যার অসুস্থ হয়ে পরেছিলো আর তুমি
এসেছিলে?

হ্যা। তার সাথে নিন্স এর কি সম্পর্ক?

নিন্স ই ঐদিন অদিতিদের খবর দিয়েছিলো

তাই? কিন্তু নিন্স এর কি লাভ এতে?

তুমি জানো নিন্স কে?

কে?

অদিতির বোন।
ওকে অদিতিই পাঠিয়েছে

কি বলছো তুমি? জানো জেন্স আমি তখনি তোমাদের স্যারকে
বলেছিলাম যে কেউতো আছে যে অদিতিকে সব ইনফরমেশন
দিচ্ছে

হুম। স্যার আমাকে বলেছে
নিশি আমি জানিনা তুমি আমাকে কি ভাবো কিন্তু তোমাকে আমার বোনের
চেয়েও বেশি ভাবি

আমি জানি জেন্স তুমি আমাকে কতোটা ভালোবাসো
আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি বলেই জড়িয়ে ধরলাম

নিশি বোন হিসেবে একটা অনুরোধ করবো রাখবে?

আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো বলো

স্যারকে আর ভুল বুঝোনা প্লিজ বেচারা অনেক কষ্টে আছে একটু
আপন করে নিও

হুম।আমি জানি নীল আমাকে কতটা ভালোবাসে কিন্তু একটা কথা বা ভাবতে
খুব অবাক লাগছে যে নীল আমায় একটু বিশ্বাস করতে পারলোনা?

নিশি স্যার তখন যে সিচুয়েশনে ছিলো স্যারের মাথা খারাপ করে
দিয়েছিলো এই অদিতি প্লিজ আমার এই অনুরোধ টা রেখো

দুপুরে বাসায় আসলাম মহারানী কে খাওয়াতে হবে আর আমিও চাই নিশিকে
সবসময় পাশে রেখে ওকে আগের মতো ফিরে পেতে

কোথায় গেলো মেয়েটা? রুমেও তো নাই ফোন দিলাম

আরে ফোনতো রুমে। চলে গেলো নাকি আবার

জেন্স? জেন্স?

জি স্যার?

মেম কোথায়?

স্যার মেম তো আমার রুমে আমরা কথা বলছিলাম

ওহ খাবার খেয়েছে?

ন্যা স্যার।

ওকে আমাদের খাবারটা রুমে পাঠিয়ে দাও আমি নিশিকে নিয়ে আসছি

কি করছে আমার মহারানী টা

কি হলো? চুপ করে আছে যে আজও নাকি আমার মহারানীর মুখে
হরতাল?

এতো আমাকে খাওয়ানোর জন্য আসছে
জ্বিনা কোনো হরতাল নেই আমি খেয়ে নিবো আপনি জান

ওমা আমার জানটা কতোদিন পর আমাকে জান বললো

আমি আপনাকে জান বলিনি যেতে বলেছি
হুহ

যাই হোকনা কেনো বলেছো তো

ধুর শুধু ঝামেলা পাকাবে সরুন তো

কোথায় সরবো বলোতো

ঐ আপনার লাঞ্চ এর টাইম শেষ হয়ে যাবে খেয়েনিন

হুহ খেতেতো তুমিই দিচ্ছোনা

আমি?

হুম তুমি

কিভাবে?

এইযে আমি বলেছিলাম তোমার সাথে খাবো কিন্তু তুমিই তো পেচাল
মারছো

আমি খাবো পরে আপনি খেয়েনিন

তুমি কি জানোনা তোমাকে ছাড়া আমার খেতে ভালোলাগেনা

ওহ তাই বুঝি?
তা এতোদিন কি না খেয়ে থেকেছেন?

এইরে এতো কামাল করে দিবে হুহ থাকি আর নাই থাকি সেটা বেপার না
এখন থেকে আর পারবোনা বলেই কোলে তুলে নিলাম

এই কি করছেন নামান আমাকে নামান বলছি

নামানোর জন্যতো নেইনি মহারানী
বলেই রুমেত দিকে হাটতে লাগলাম

দেখুন বেশি করছেন কিন্তু আপনি

এখনো তো শুরু করিনি মহারানী শুরুতো করবো রাতে (শুধু নিশিকে
ভয় দেখানোর জন্য)

মমামমানে?

মানেটা হলো অনেক কিছু আচ্ছা যাই হোক চলো এখন খাবে

আমিই,,,,

আমি কোনো বারন শুনবোনা
সো নো কথা বলা

বাবা কি ইংলিশ

তোমার জন্য অনেক কিছুই আছে জান তুমি একবার আমাকে
ভালোবেসে দেখো সব করতে পারবো তোমার জন্য

একটা সুযোগ দাওনা জান

আমি খাবো ক্ষিদে পেয়েছে

এড়িয়ে যাচ্ছো?

খাবার খাবোই না ভাগেন

আচ্ছা আচ্ছা এইতো খাবারটা শেষ করে শাড়ি পরবে ওকে

ভ্রু কুচকে তাকালাম।

বুকে হাত দিয়ে আহ করে শুয়ে পরলাম
একটু পর ওঠে বলেছিলাম না এইভাবে তাকিও না হার্টফেল হয় যে

ধুর সবসময় কিসব মাথায় ঘুরঘুর করে

জিজ্ঞেস করলে না কেনো?

জানি আপনি নিজেই বলবেন

হুম।আন্টি আসবে আজকে
প্লিজ আন্টি কে আমাদের ব্যাপার টা বুঝতে দিওনা

আন্টি এমনিতেই অনেক কষ্ট পেয়েছে

হুম জানি।
কিন্তু আপনিকি ভুলে গেছেন যে আমি শাড়ি পরতে পারিনা

নো প্রবলেম আমি পারি

কি?

আরে ভয় পাচ্ছো কেনো? আমি পরাবোনা জেন্সকে বলো
হেল্প করবে

হুম।

নিশি একটা বার আমাকে চান্স দিও প্লিজ

(নীল আমিও যে চাই সব ভূলে নতুন করে শুরু করতে কিন্তু পারছিনা)

( আমি জানি নীল ভূলতো তোমার ও নেই কিছুটা সময় দাও আমাকে আমি
সব ঠিক করে দিবো)

কি ব্যাপার চুপ করে আছো যে?

নাহ কিছুনা আপনার খাওয়া শেষ?

হুম কেনো? শাড়ি পরিয়ে দেওয়ার জঅঅন্য?

আপনাকে আমি

আচ্ছা আচ্ছা শাড়িটা পরে নিও আর যা বলছি তা যেনো মনে থাকে বলেই
কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে আসলাম

কিছুক্ষন পরেই আন্টি আসলো

কিরে কেমন আছিস?

আমি ভালো আছি তুমি? বলেই জড়িয়ে ধরলাম

আমিও ভালো।

হুম ভালো তো থাকবেই বিদায় করে দিয়ে

নাহ রে মা তেমন কিছুই না আমি জানি নীল তোকে খুব ভালোবাসে
একটা সুযোগ দিস

কিছু বললাম না চুপ করে রইলাম

আচ্ছা নিশি আমাকে আবার একটু বের হতে হবে আজ যাই আবার পরে
আসবো কেমন?

সে কি কেনো আজ তুমি থাকবে আর তাছাড়া এখন যেতে যেতে রাত
হয়ে যাবে

নাহ হবেনা আমিতো রাজশাহী যাবোনা

তো কোথায় যাবে?

এখানের বাসাতে

তুমি ঢাকা চলে আসছো?

হ্যা তুই ঢাকা আর আমি কি করে সেখানে থাকবো বল আচ্ছা আমার দেরি
হয়ে যাচ্ছে তুই নীলকে নিয়ে বাসায় যাবি কিন্তু

আচ্ছা।

এইভাবেই কেটে গেলো পুরো ১কটা মাস

সবসময় নিজে খাইয়ে দিচ্ছে আমার প্রচুর খেয়াল রাখছে আমার কখন কি
চাই তার আগেই নীল আমার সামনে এনে হাজির করে দিচ্ছে

এই একমাসে নীল আবার আমার মনে ভালোবেসে যায়গা করে
নিয়েছে।
এইতো কিছুদিন আগে নীল অফিসের কাজে মালয়েশিয়া গিয়েছিলো
৩দিনের জন্য

আমার কাছে এই তিনটা দিন তিন যুগের চেয়েও বেশি মনে হয়েছে খুব
ভালোবেসে ফেলেছি আগের থেকেও বেশি

সারাক্ষণ ফোন হাতে নিয়ে বসেছিলাম কখন নীল ফোন দিবে কখন
একটু কথা বলবো

এই এক
মাসে নিশির মনে জায়গা করতে পেরেছি কিনা আমি জানিনা কিন্তু নিশি যে
আমার অভ্যাস হয়ে গেছে নিশিকে ছাড়া একমুহুর্ত থাকতে যে খুব কষ্ট
হয়

কোনো ভূল আর আমাদের মধ্যে আসতে দেইনি আর ভবিষ্যতে ও
দিবোনা

কিন্তু কবেযে নিশিকে নিজের করে পাবো আমি কখনো জোড়
করবো না যেদিন নিশি মন থেকে ভালোবেসে আমাকে ধরা দিবে
আমি সেদিনের অপেক্ষায় থাকবো

জেন্স আন্টি সবার কথা গুলো ভেবে দেখলাম আসলেইতো
ভূলতো দুজনেরই তাই শোধরে নেওয়া উচিত

আজ যে নীলের বার্থডে। এই এমনি একবার্থডে তে নীলকে
আমার করে নিয়েছিলাম মাঝখানের কিছু ঝড় এসে সব শেষ করে
দিয়েছিলো আজ আবার নতুন করে সব ফিরে পেতে চাই

আজই তোমাকে আমার মনের কথা জানাবো নীল আর কোনো
অপেক্ষা নয় আমিওযে বড্ড ভালোবাসি তোমায়

আর এইটাই হবে তোমার জন্মদিনের গিফট

খুব সুন্দর করে আজ সাজলাম রুমটা সাজালাম সব কিছু বিয়ের প্রথম রাতের
মতো করে সাজালাম

অপেক্ষা করছি নীলের জন্য কিন্তু মহারাজের কোনো খবর ই নেই

কিন্তু কখনো তো এতো দেরি করে আসেনা কোনো সমস্যা
হয়নিতো আবার

কি ব্যাপার লাইট অফ কেনো সবাই গেলো কোথায়? তখনি মোবাইলটা
বেজে উঠলো।

কাউকে খুজে লাভ নেই বাসায় কেউ নেই তুমিই তো কাল ওদের ছুটি
দিয়েছিলে এতো তারাতাড়ি ভূলে গেলে?

ওহ তাইতো আমি বলেছিলাম যে কিছু সারভেন্ট থেকে যেতে কিন্তু
নিশি রাজি হলোনা
ওদের ও নাকি ছুটি প্রয়োজন

তারমাকে নিশি একা? নিশিতো একা খুব ভয় পায় ওফ আমিও না যে কি?
কাজের মধ্যে দিয়ে ভূলেই গিয়েছিলাম এই ভূল শব্দটাই আমার জীবনে
যতো বাশ এনে দেয়

তবে হ্যা একটা বাশ খুব ভালোই ছিলো নিশিকে পাওয়ার জন্য

ভাবছি আর হাসছি মনে মনে।
ভাবতে ভাবতে কখন যে আমার রুমে চলে আসলাম খেয়াল ই করিনি

রুমের সামনে এসে পুরো অবাক হয়ে গেলাম আমি আমার বাড়িতে
আসছিতো?
নাকি ভূল করে অন্য কারো বাড়িতে ঢুকে পরলাম বেড়িয়ে গিয়ে
দরজাটারর দিকে তাকালাম নাতো ঠিক ইতো আছে আবার দরজার সামনে
গেলাম

পুরো রুম মোম আর ফুল দিয়ে সাজানো কিন্তু নিশি কোথায়? ওকে
যে দেখছিনা

কি ভেতরে আসবেনা?

কথা শুনে চারদিকে তাকালাম নিশি একদম বউয়ের মতো করে সেজে
দাড়ীয়ে আছে

ভেতরে গেলাম ঠিক কিন্তু নিশির দিকে তাকিয়ে যেনো সব কিছু গুলিয়ে
যাচ্ছে

কি হলো এইভাবে হা করে তাকিয়ে আছো কেনো? নাও ফ্রেশ
হয়ে এইড্রেসটা পরে এসো

নিশি তুমি ঠিক আছোতো?

হুম ঠিক আছি তুমি যাওতো

একরকম ধাক্কা দিয়ে পাঠিয়ে দিলো আমাকে

ফ্রেশ হয়ে বের হলাম

নীল অনেক তো হলো মান অভিমান অনেক কিছু আমরা কি পারিনা সব ঠিক
করে নিতে?

সবকিছু ভূলে আর ১০ টা কাপলের মতো আমরাও কি পারিনা সংসার করতে?

অতীতটা ভূলে আমরা কি আবার এক হতে পারিনা?

নিশির কথা গুলো শুনে আমি আমার চোখে পানি চলে এলো কথা বলার
শক্তিও যেনো হারিয়ে গেছে

কিছু বলতে পারছিলাম নিশিকে জড়িয়ে ধরলাম খুব শক্ত করে

নিশি আমিও যে চাই সব নতুন ভাবে শুরু করতে কিন্তু আমার ভূলটা যে তুমি,,

আর অতীত নয় বর্তমান আর ভবিষ্যত নিয়ে ভাবুন মহারাজ

বলেই আমাকে জরিয়ে ধরলো

কিন্তু আমিযে অন্য কিছু ভাবছি

কি ভাবছেন?

ভাবছি কতবছর লাগবে একটা ক্রিকেট টিম আমার ঘরে আনতে

তবেরে দুষ্টু বলেই বুকে কিল ঘুসি মারতে লাগলো

নীলকে ছেড়ে ওকে নিয়ে একটা টেবিলের সামনে দাড় করালাম

হ্যাপি বার্থডে মাই কিউট বর

আজ আমার জন্মদিন? আমি নিজেইতো ভূলে গেছি আমার লাভলি বউটা
এতোকিছু মনে রেখেছে বুঝি

হুম মনে যে রাখতেই হবে আমার বর বলে কথা

আচ্ছা তা আমার জন্মদিনের গিফট কোথায় মহারানী?

এইযে আজকের এইসব কিছু
আজ থেকে যতোদিন বাঁচবো শুধু তোমার হয়েই থাকবো তোমার
ভালোবাসা নিয়ে থাকবো

পছন্দ হয়নি তোমার?

এইটা যে আমার পৃথিবীরর শ্রেষ্ঠ গিফট জান
এমনি হাজার মান অভিমান ভালোবাসা নিয়েই শুরু হলো নীল আর নিশির
ভালোবাসার সংসার
( সমাপ্ত)

এমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূল মানুষ অনেক কিছু করে দেয়
খুব সাবধান

2 thoughts on “অদ্ভুত ভালোবাসা ! (অন্তিম পর্ব)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *