1. নতুন গল্পঃ4. রোমান্টিক উপন্যাস গুলোঃঅজানা সম্পর্কলেখাঃ নিশিতা নীশু

অজানা সম্পর্ক !! লেখাঃ নিশিতা নীশু

মাম্মাম…মাম্মাম…কোথায় তিলে।। জানো পাপ্পা বলতিল তুমি নাতি লাগ কলেছ।।তল না তল।।পাপ্পাও আতে আমার সাতে ওদিকটায়….
অনেকদিন পর বান্ধবীর সাথে একটু বের হয়েছিলাম। শপিংমলে অন্যমনষ্ক হয়ে হাটছিলাম হঠাৎ বাচ্চাটা এসে হাঁটু জড়িয়ে ধরল।।।অবাক হয়ে বাচ্চাটার দিকে তাকালাম।।
হাঁটু গেড়ে বসে বললাম -কি নাম বাবা তোমার?
বাচ্চাটাঃমাম্মাম তুমি আমাল নাম জানো না।।মাম্মাম আমি তুমার বাবু আয়ান।।।
পৃথাঃবাবু আমি তো তোমার মা নই।।।তুমি কার সাথে আসছ এখানে? তোমার বাবা-মা কোথায়?
আয়ানঃনা।।তুমি আমাল মাম্মাম।।।(কান্না করে) পাপ্পা বলতিল তুমি নাতি লাগ কলে তলে গেতিলা।।আমি তত বলতি পাপ্পাকে তুমাল কাতে দিয়ে আততে।।আমাল কতা কেউ তুনে নাই(আমার গলা জড়িয়ে)
কেন যেন খুব মায়া লাগছে।। কোনো অজানা অনুভূতি হচ্ছে।। মনে হয় ও কত আপন একজন।।।মনকে বুঝিয়ে ভাবলাম ছোট বাচ্চা হয়ত ভূল ভাবছে।। হয়ত বাবা-মা থেকে হারিয়ে গেছে।।। তাই ভাবলাম আদর করে একটু কোনো ইনফরমেশন পাই কিনা বাবা-মা সম্পর্কে…
পৃথাঃতোহ আয়ান।।তুমি তো অনেক কিউট একটা বাচ্চা।।
আয়ানঃআমি তো তুমাল বাততা।।তুমাল মতো কিউত।।পাপ্পা তবতময় তাই বলে(গালে দুইহাত দিয়ে হেসে)
পৃথাঃওমা তাই নাকি।।।তো তুমি এখানে কার সাথে আসছ? কেউ তো তোমাকে অবশ্যই খুঁজছে
আয়ানঃ আমি তো দাদুনের তাতে খেলতে আততিলাম।।তালপল আমি আততিলিম খাব তাই দাদুন আনতে গেতে।।।।তুমাকে দেকে আমি তুমাল কাতে দৌল দিয়ে আততি(হেসে)
পৃথাঃএটা তো খারাপ কথা বাবা।।তোমার দাদু তো তোমাকে খুঁজছে।। চল তোমাকে তোমার দাদুর কাছেই দিয়ে আসি
আয়ানঃনাহহহহহহহ।।তুমিও যাবে।।তুমি আমাল তাতে যাবে(গলা জড়িয়ে)
‌পৃথাঃআমি তো তোমার সাথে যেতে পারবনা বাবা।।।
‌আয়ানঃতাইলে আমি যাব তুমাল তাতে।।বাবুলা তো তবাই মাম্মামের কাতেই তাকে।।
‌(বাচ্চাটার কথা গুলো শুনে খুবই খারাপ লাগছে।। কিন্তু ও তো কেউ না আমার।।তাও মনে হয় পরিচয় অনেক আগের।।কি মায়া ওর মুখে।।)। হঠাৎ আমার বান্ধবী রিয়া আমাকে ডাকতে ডাকতে কাছে আসল।।
‌রিয়াঃআরে তুই এখানে।। তোকেই খুজতে ছিলাম।। চল বাসায় যাই।।শপিং শেষ।। এই ছেলেটা কে???
‌আমি উত্তর দেয়ার আগেই আয়ান বলে উঠল..
‌আয়ানঃআমি আমাল মাম্মামের বাবু।।তাই না মাম্মাম।। (কত মায়াভরা কন্ঠে কান্নাভেজা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল)
‌আমি কিছু বলার আগেই রিয়া বলল,
‌রিয়াঃপৃথা কে ও?তোকে আবার মাম্মাম বলছে কেন?
‌পৃথাঃরিয়া একটু এদিকে আয় তো কথা আছে।।আয়ান বাবা একটু দাঁড়াও আমি আসছি।। (ওর চোখের পানি মুছে)
‌রিয়াকে একটু পাশে এনে সব বললাম।।তারপর ভাবলাম কিভাবে আয়ানকে ওর দাদুর কাছে দিয়ে আসি।।ওর কথায় যা বুঝলাম ও আমাকে এই মুহূর্তে ছেড়ে যাবে না।।কিন্তু এখন আমার কোনো ঝামেলা করার শক্তি নেই কেন যেন মাথাটা ভো ভো করছে।।। তাই প্লান করলাম রিয়াকে দিয়ে ওকে ওর দাদুর কাছে দিয়ে আসব……..
‌আয়ানের কছে গেলাম।।ও আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল মায়াভরা চোখে যেন চোখের পলকে ও আমাকে হারিয়ে ফেলবে…..
‌পৃথাঃআয়ান। বাবা শুনো…তুমি এই আন্টির সাথে এখন তোমার দাদুর কাছে যাও…
আয়ানঃনাহহহ।।আমি যাব নাহহহহহহহহহহহহ(আমার গলা জড়িয়ে.. কেন যেন আমার বুকেও ব্যথা করছে)
পৃথাঃআহ।।বাবা।।আমার কথা শোনো।।তুমি না আইসক্রিম খাবে?তো আমি অনেক গুলো আইসক্রিম কিনে তোমার কাছে যাব।। তুমি চলে যাও।।।তুমি না তোমার মাম্মামের ভালো ছেলে???
আয়ান খুশি হয়ে আমার গালে চুমু দিয়ে বলে..
আয়ানঃহা আয়ান তাল মাম্মামেল লততি তেলে।।।তাইলে আমি আগে যাই তুমি এততো গুলা আইততিলিম নিয়ে বাতায় আইতো।।বায় বায় মাম্মাম…..
আমিও ওর গালে চুমো খেয়ে বিদায় জানালাম..হঠাৎ চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরল।।। এ কেমন অনুভূতি????????

.
.পৃথা বাসয় ফিরে আসে।। যখন রিয়ার কাছে শুনল যে আয়ান নাকি অনেক কান্নাকাটি করেছে।। ওকে কোনো মত বুঝিয়ে রিয়া চলে আসে।।পৃথার প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে।। এসেই রুমের দরজা আটকিয়ে শুয়ে পরে।।। বারবার আয়ানের কান্না মিশ্রিত চেহারা ভেসে উঠছে।। কত মায়াভরা কন্ঠে ও পৃথাকে মাম্মাম বলছে।। নাহ পৃথা আর ভাবতে পারল না।।।ঘুমানো দরকার।।। প্রায় ঘন্টা খানিক ঘুমানোর পর দরজায় ধাক্কানোর আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়।। পৃথা দরজা খুলে দেখে ওর মা মিসেস শেখর চিন্তিত মুখে।।
মিসেস শেখর ঃপৃথা মা সেই এসে দরজা আটকিয়ে শুয়ে আছিস।।দুপুরে খাবি না।।।তোর মেডিসিন গুলোও নিতে হবে।। রাজ কতবার বলল মেডিসিন যেন বাদ না যায়।।।রাজ নাকি তোকে কতবার ফোন দিল।।তোর ফোন নাকি অফ।। খেতে আয় খেয়ে রাজকে ফোন দে।।ছেলেটা তোকে নিয়ে অনেক টেনশনে থাকে।।আয় মা।…
পৃথাঃআসছি মা।।মুখটা ধুয়ে আসি।। তুমি যাও….
পৃথা হাতমুখ ধুয়ে খেতে যায়।।ততক্ষণে আয়ানের কথা ভুলে গেছে…
খেয়ে এসে রাজকে ফোন দেয়….
রাজঃহ্যালো পৃথা। তোকে সেই কখন থেকে ফোন দিছি।। Can’t you imagine? কই ছিলি? কত টেনশনে ফেলে দিছিস জানিস????
পৃথাঃ ঘুমিয়ে ছিলাম রাজ।।বল কেন ফোন দিচ্ছিস।।।(শান্ত ভাবে)
রাজঃ কেন?তোকে কি কারণ ছাড়া ফোন দিতে পারিনা।।।আমার কি কোনো অধিকার নেই।।সবচেয়ে বেশি অধিকার আমার তোর উপর।।এই রাজ তোকে যেকোনো সময় ফোন দিতে পারবে।। কেউ আটকাতে পারবেনা।।কেউনা(রেগে)
পৃথাঃএসব কি রাজ? এতো হাইপার কেন হচ্ছিস।। তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড ফোন দিতেই পারিস।। বল কি বলবি।।।
রাজঃখেয়েছিস?
পৃথাঃহ্যা।।।
রাজঃমেডিসিন?ঠিকমত খাচ্ছিস? মনেকরে রোজ খাবি কিন্তু।। আর আজ বিকেলে আমার চেম্বারে আসবি।।।কিছু টেস্ট করতে হবে
পৃথাঃওকে।।ভাল্লাগছে না।।বিকেলে দেখা হবে।। রাখি বায়।।।
রাজঃবাই।।
পৃথা ফোন রেখে বারান্দায় গেল।।। একমনে আকাশটার দিকে তাকিয়ে আছে।।। হঠাৎ চোখের কোনে পানি জমে।আসে।।। এই আকাশে তাকালেই ওর কথা মনে পরে।।।পৃথা হঠাৎ করে কেঁদে ওঠে
পৃথাঃকেন আকাশ? কেন? এমন কেন করলে আমার সাথে?ভালোইতো ছিলাম আমরা।।।কত স্বপ্ন ছিল।। সব ভেঙে দিলে।।যখন এক্সিডেন্ট হল কেন ছিলে না আমার পাশে? চোখের পানি মুছে রুমে এসে আলমারি থেকে কিছু ছবি বের করে।।আকাশ আর ওর ছবি।।কত সুন্দর মুহূর্ত এই ছবিতে ফুটে উঠেছে।।হঠাৎ ওর অতীতে ডুব দেয়……….
৫ বছর আগে…….
আমি সিদরাতুল মুনতাহা পৃথা।।এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ছাত্রী।। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে।। আকাশও একই মেডিকেলের ইনটার্ন।। কাকতালীয় ভাবে এক ক্যাম্পেই ওদের দেখা।। সেখান থেকে সম্পর্কের শুরু।।। রাজ ছিল পৃথার বেস্টফ্রেন্ড।।রাজও পৃথাকে পছন্দ করত তবে কিছু বলার আগেই আকাশের সাথে পৃথার রিলেশন হয়ে যায়….রিলেশনশিপের ১ম এনিভার্সারিতে আকাশ পৃথাকে বিয়ের জন্য প্রপোজ করে।। আকাশের যেহেতু পজিশন ভালো ছিল তাই পৃথার পরিবার ও রাজি হয়ে যায়।। অনেক ধুমধামের সাথেই আকাশের সাথে পৃথার বিয়ে হয়ে যায়।। আকাশের সাথে পৃথার এক সুন্দর গুছানো সংসার ছিল।।।বিয়ের তিনমাস পরই পৃথা কনসিভ করে।।আকাশ পৃথার অনেক খেয়াল রাখত।।।কিন্তু পৃথার ডেলিভারির দিন আকাশের কিছু কাজের কারণে ফোন আসে আর ও পৃথাকে ওর বাবা মার বাসায় রেখে চলে যায়।। বিকেলে পৃথার পেইন উঠলে ওর বাবা-মা ওকে মেডিকেলে নিয়ে যায় ।। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত ডাক্তার জানায় পৃথা নাকি এক মৃত বাচ্চার জন্ম দিয়েছিল।।এই খবর পেয়ে পৃথা অনেক ভেঙে পরে।।বারবার আকাশকে মনে করতে ছিল।।আকাশের কোনো খবর পাচ্ছিল না।।হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করে পৃথাকে ওর বাবা মার বাসায় নিয়ে আসা হয়।।সাতদিন ধরে পৃথার কোনো খবর পায় না পৃথা।।যখন ওর আকাশের সবচেয়ে প্রয়োজন ছিল তখনই ও আকাশকে খুজে পায়নি পাশে।।। একদিন সকালবেলা পৃথার কাছে একটা পার্সেল আসে।। পার্সেল দেখে পৃথা থ মেরে যায়।।।। ডিবোর্স পেপার আর একটা বিয়ের কার্ড।।। আকাশের বিয়ের কার্ড।। আকাশের খালাতো বোন ডায়নার সাথে।।।পৃথা অনেক ভেঙে পরে।। আকাশকে অনেক ফোন দেয় কিন্তু আকাশের ফোন অফ।।।রাজ সকালে পৃথার সাথে দেখা করতে আসে তখন ও পৃথাকে সামাল দেয়।।।পৃথাকে দিয়ে ডিভোর্স পেপারে সাইন করায়।।। তারপর কেটে যায় অনেক দিন।।পৃথা অনেক ডিপ্রেশনে পরে যায়।।। রাতে ওর বাচ্চাকে আর আকাশকে নিয়া স্বপ্ন দেখত।।।। ডিপ্রেশন থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য অনেক কাউন্সিলিং করানো হয়।।।।এসব সময়ে রাজই ওর পাশে ছিল।।। রাজ পৃথাকে অনেকবার বিয়ের প্রস্তাবও দেয় কিন্তু পৃথা রাজি হয়নি।।।পৃথা সবমসময় আকাশ আর ওর বাচ্চাকে নিয়ে ভাবত।।।।আকাশের খবর পাঁচ বছরেও পায়নি…


বর্তমানে….
এসব ভাবতে ভাবতে বিকেল হয়ে যায়।।।পৃথা চোখের পানি মুছে রেডি হয়ে হসপিটালের জন্য বের হয়…..।
হসপিটালে গিয়ে জানতে পারে রাজ কোনো ইমার্জেন্সি কাজে হসপিটালের বাহিরে গেছে।। পৃথা রাজকে ফোন দেয়…..
পৃথাঃহ্যালো রাজ তুই কই? আমি তো তোর ক্যাবিনে…
রাজঃএকটু ওয়েট কর পৃথু।।।আমি আধা ঘন্টার মধ্যে আসছি।।।
পৃথাঃসমস্যা নেই।।। আস্তে আস্তে আয়।।।।আমি ওয়েট করছি।।।বায়।।।।
কথা শেষ করে চলে যাওয়া ধরে তখনই ওড়নায় টান খায় আর শুনতে পায় কেউ মাম্মাম বলে ডাক দেয়..
পিছনে ফিরে দেখে আয়ান কান্না করে চোখ মুখ লাল করে ওর ওড়না ধরে দাঁড়িয়ে আর বলছে………
আয়ানঃমাম্মাম।। মাম্মাম।।।(জড়িয়ে ধরে)কেন তুমি আমাল কাতে আত নাই।।জানো আমি কত কানলা কলছি।।পাপ্পাকে কত বলতে তুমাল কাতে দিয়ে আত্তে।। আমি লাগ কলছি।।আমি না তুমাল বাবু। তাইলে আমাল কাতে কেন আত না।।।আমাকে দেকতে কেন আত না।।।(কান্না করতে করতে)…
আমি ওর এসব কিছুই বুঝতে পারছি না। ও কেন আমাকে মা বলে।।ওর মা বলাতে কেন এই বুকে এত শান্তি লাগে যেন আমার আপন কেউ……..





চলবে…….🙂

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *