ভালোবেসে তারে

ভালোবেসে তারে !! Part- 08

সে কেমন যেনো মায়া জড়ানো কন্ঠে আমার ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে বলে উঠলো,

“একটু ছাদে যাবে দিশা আমার সাথে?”

তার কথায় আমি অবাক না হয়ে পারলামনা।যে রাফিত দিনরাত আমার উপরে টর্চার করে, আমাকে সহ্য করতে পারেনা,সবসময় আমার উপর নিজের জোর খাটায় সে আমার কাছে রিকুয়েষ্ট করছে।ব্যাপারটা নেহাত হাস্যকর।আমি কেনো যেনো তার কথাটা ফেলতে পারলামনা।এর নামই হয়তো ভালোবাসা।ভালোবাসার মানুষটা কষ্টে থাকলে আমরাও সেটা উপলব্ধি করতে পারি।সত্যিই ভালোবাসাটা কতো অদ্ভুত একটা জিনিস।শত চাইলেও সেটাকে মন থেকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।হোকনা ভালোবাসার মানুষটা খারাপ।তাতে কি।
,
,
,
,
রাফিতের সাথে ছাদের মাঝখানে চাটি পেতে বসে আছি।আর সে সেই কখন থেকে একদৃষ্টে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ও আমি তার দিকে।আকাশের দিকে তাকিয়েই সে বলল,

“আচ্ছা দিশা এমনটাতো না হলেও পারতো তাইনা।এমনটা হওয়াকি খুব জরুরী ছিলো?”

রাফিত কিসের কথা বলছে বোঝতে না পেরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,

“কিসের কথা বলছেন আপনি?”

সে আমার কথার কোনো তোয়াক্কা না করে বলল,

“জানো তো আমাদের পরিবারটা না খুব হাসি-খুশি ছিলো।কিন্তুু হঠাৎ এক দমকা হাওয়ায় সবকিছু তছনছ করে দিয়ে গেলো।শেষ হয়ে গেলো সবকিছু।”

আমি ভাবলাম এটাই সুযোগ রাফিতের কাছ থেকে সব সত্য জানার।আমি বেশ কৌতুহল নিয়ে তাকে আবারও জিজ্ঞেস করলাম,

“কেনো কি হয়েছিলো?প্লিজ বলুননা।”

সে শান্ত গলায় বলল,

“আমার ছোট বোন তাহিয়া।সেবার সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট ছিলো সে।জানো আমি অফিস থেকে বাড়ি ফিরার আগে ও প্রতিদিন আমার কাছে ফোন করে বায়না করতো ভাইয়া আজ এটা নিয়ে আসবি ওটা আনবি এই সেই আরও কতো কথা।যতক্ষন বাসায় থাকতাম জ্বালিয়ে মারতো।যখন খুব বিরক্ত হয়ে বকা দিতাম তখন বলতো কি জানো যখন বিয়ে করে পরের বাড়ী চলে যাবো তখন বোঝবি।তার সে কি রাগ।কিন্তুু দেখো আমার বোনটা পরের বাড়ী যাওয়ার সুযোগটাইতো পেলোনা।জানোয়ারগুলো আমার বোনটাকে ছিড়ে খেয়েছে।হ্যা ধর্ষণের স্বীকার আমার বোন।গ্যাং রেপ হয়েছিল তার।আর আমি ভাই হয়ে কিছুই করতে পারলামনা।পারলামনা আমার বোনটাকে কুকুরগুলোর হাত থেকে বাচাতে।একজন ভাই হয়ে এর থেকে বড় ব্যার্থতা আর কি হতে পারে বলো।”

বলেই সে আমাকে পাশ ফিরে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেদে দিলো।আমি এই প্রথম রাফিতকে কাদতে দেখছি।তার সাথে তাল মিলিয়ে আমার চোখজোড়াও কাদছে।তার মনে যে এতোটা চাপা কষ্ট জমে আছে তা কেউই তাকে দেখলে বোঝতে পারবেনা।তাহিয়ার রেপ হয়েছে কথাটা শুনে আমারও খুব কষ্ট লাগছে।একটা মেয়ের কাছে তার সম্মানের চেয়ে বড় আর দ্বিতীয় কোনো কিছু নেই।কিন্তুু প্রশ্ন হলো তাহিয়া এখন কোথায় ও এর সাথে আমারই বা কি সম্পর্ক?আমি বললাম,

“তাহিয়া এখন কোথায় রাফিত?”

“নেই সে আর নেই এই পৃথিবীতে।”

“নেই মানে!(অবাক হয়ে)”

সে এবার আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,

“প্রায় পুরো একদিন ধরে তার কোনো খোজ পাচ্ছিলামনা আমরা।যেদিন বাড়ি থেকে বের হয়েছিলো সেদিন ছিলো তার কলেজের অফ ডে।মায়ের কাছ থেকে জানতে পারি আমি অফিসে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই সে তার কোন এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়।এরপর থেকেই তার কোনো খোজ পাওয়া যাচ্ছিলোনা।ফোনও অফ।পরে বাধ্য হয়ে পুলিশের কাছে যাই।আমি ভালো বিজনেস ম্যান হওয়ায় আমার ক্ষমতাও ভালো ছিলো। পুরো পুলিশের ফজ লাগিয়ে দিয়েছিলাম তাহিয়াকে খোজার জন্য।এর ছয় ঘন্টা পর পুলিশ একটা পঁচা নর্দমা থেকে একটা মেয়ের অর্ধউলঙ্গ লাশ উদ্ধার করে।লাশটা ছিলো তাহিয়ার।(কথাটা বলে আমার কাঁধে মাথা রাখলো সে)এখন আর কেউ আমাকে বিরক্ত করেনা।ডাক দেয়না কেউ ভাইয়া বলে।কেনো এমন করলে দিশা?কি ক্ষতি করেছিলো আমার বোনটা তোমার?কেনো করলে?(বিরবির করে)

এসবের সাথে আমার কানেকশানটা আমি কিছুতেই মিলাতে পারছিনা।তার দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার কাধের মধ্যেই ঘুমিয়ে পরেছে।তাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেলামনা আমি।এখনতো নেশার ঘোরে যা বলেছে কাল এসবের কিছুই তার মনে থাকবেনা।তবে আমার জন্য এটুকু ইনফরমেশন যথেষ্ট।আমি আমার ক্লু পেয়ে গিয়েছি।যেই লোকটাকে আজ মারলো সেও কি রেপিস্টদের মধ্যে একজন ছিলো?এখন শুধু আমাকে এসবের পেছনের রহস্য খুজে বের করতে হবে ও এসবের সাথে আমি কিভাবে জড়িয়ে আছি সেটাও জানতে হবে।

” চিন্তা করবেন না রাফিত।খুব শীগ্রই আপনার সব ভুল আমি ভাঙবো।কিন্তুু তার আগে আপনি কেনো আমাকে ভুল বোঝছেন তা বের করতে হবে।আমি জানি আপনিও আমাকে ভালোবাসেন।তবে সেই ভালোবাসাটা হয়তো মনের কোথাও ঘৃণার নিচে চাপা পরে আছে।এতোদিনতো আমাকে এতো অত্যাচার করার পরও আপনাকে ভালোবেসেছি।আর এখনতো আপনার কাছ থেকে এসব জানার পর আপনাকে আরও বেশি করে ভালোবাসতে শুরু করেছি আমি।”

তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কপালে একটা আলতো করে চুমু খেলাম।কপালে লেপ্টে থাকা ছোট চুলগুলো সরিয়ে এক হাতে তার মথার চুলগুলো আরও এলোমেলো করে দিলাম।ইসস পুরোই যেনো কিউটনেসের ডিব্বা একটা।ভাবতেই ভালো লাগছে এই কিউট ছেলেটা আমার।হ্যা শুধুই আমার।
,
,
,
,
,
সকালে,,,,,,

চোখ খোলে দেখি আমি এখনও ছাদের মধ্যে রয়েছি।গতকাল রাতে আমি আর রাফিত এখানেই শুয়ে ঘুমিয়ে পরেছিলাম।কিন্তুু এখনতো আমি একা।তাহলে সে বোধহয় আমার আগেই উঠে চলে গেছে।আমিও আর দেরি না করে তারাতারি করে শুয়া থেকে উঠে ছাদ থেকে নেমে আসি।

রুমে এসেও রাফিতকে পেলামনা।গেলো কোথায় এতো সকালে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯.০০ টা বেজে গেছে।আল্লাহগো কতো দেরি হয়ে গেলো আজকে।তবে খাটাস মার্কাটায় আজ কিছু করলোনা না কেনো?

আপাতত এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।কিন্তুু ঐযে একটা প্রবাদ আছেনা ‘অভাগী যেখানে যায় সাগর সেখানে শোকায়’।আমারও ঠিক একই দশা।

ওয়াশরুমে ঢুকতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলাম।পিছনে ফিরে দেখি রাফিত।তাকে দেখে আমার পৃথিবী যেনো পুরো থমকে গেছে।আমি দশ হাত লম্বা হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছি।সে খালি গায়ে শুধু একটা থ্রি কোয়াটার টাউজার পরে শাওারের নিচে দাড়িয়ে আছে।এসবের চক্করে আমি যে এদিকে ভিজে টইটুম্বুর হয়ে গেছি সেদিকে আমার কোনো খেয়ালই নেই।আমি ও সে একদম মুখোমুখি হয়ে দাড়িয়ে আছি।আর শাওয়ারটাও যেনো থামার কোনো নামই নিচ্ছেনা।অনবরত পানি বর্ষণ করেই যাচ্ছে।আমার ধ্যান ভাঙ্গে রাফিতের কথায়।সে আমাকে ধমক দিয়ে বলল,

“এভাবে হুটহাট কেউ ওয়াশরুমে ঢুকে পরে?নক করে আসতে পারোনি।যত্তসব আপদ কোথাকার।”

তার কথা শুনে আমার মেজাজ চরমে উঠে গেলো।নিজেইতো দরজাটা ভেঙ্গেছে।আবার আমাকে ধমকানো হচ্ছে।দেখছো কারবার।আমিও তাকে ডাবল ধমক দিয়ে বললাম,

“তো আপনি দরজা ভেঙেছেন কেনো হে?আমি বলেছিলাম ভাঙতে।এখন আবার নক না করে ঢুকায় ধমকাচ্ছেন।তা নকটা কি আমি আপনার মাথায় করবো?আপনি দরজায় বড় করে একটা সাইনবোর্ড লাগিয়ে রাখতেন, ‘রাফিত ইজ ইনসাইড'(দুই হাত দিয়ে দেখিয়ে) তাহলেইতো আর ঢুকতামনা।আবার আমাকে বলে আপদ হুহহ।”

সে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।হয়তো ভাবছে আমার মাঝে এতো সাহস কোথা থেকে আসলো।ইনফেক্ট আমিও তাই ভাবছি।তবে আজ কেনো জানি রাফিতকে আমার একটুও ভয় লাগছেনা।হয়তো গতকাল তার ঐ কথাগুলো শুনার পর।

তার চোখ-মুখ মুহূর্তের মাঝেই রাগে লাল-নীল হয়ে গেলো।সে আমার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে তার আরও কাছে নিয়ে দাতে দাত পিষে বলল,

“খুব বার বেড়েছো তাইনা।আমাকে ধমকাচ্ছো তুমি হে?আমাকে?”

তার এসব কান্ডেও আমার ভয় লাগছেনা।বরং তার ঐ লাল-পিলা চেহারা দেখে আমার জোকারের কথা মনে পরে গেলো।আচ্ছা রাফিতকে জোকার সাজালে কেমন দেখা যাবে।ভাবতেই আমার সেই লেভেলের হাসি পাচ্ছে।না এই হাসিকে পেটের ভেতর দমিয়ে রাখার শক্তি আমার নেই।তাই এবার বেশ জোরে জোরে শব্দ করেই হুহা করে হেসে দিলাম আমি।হাসতে হাসতে রাফিতের বুকে ঢলে পরছি।আমার হাসিটা মনে হয় আগুনে কেরোসিন ঢালার কাজটা বেশ ভালোমতোই করেছে।সে আমাকে আরও শক্ত করে ধরে জোরে ধমক দিয়ে বলল,

“স্টপ ইট ডেমেট।হাসছো কেনো এভাবে হে?এখানে হাসার কি হলো?”

তার ধমকে আমি কিছুক্ষণ ঠোঁট চেপে হাসি বন্ধ করার ব্যর্থ চেষ্টা করে আবারও জোরে হেসে দিলাম।আমার হাসি যেনো আজ থামতেই চাইছেনা।রাফিত আমার দিকে কিছুক্ষন শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে যা করলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুুত ছিলামনা।সে হুট করে আমার ব্লাউজের ভিতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে আমার খোলা চুলগুলো আকরে ধরলো।তারপর আমার ঠোঁটে নিজের উষ্ণ ঠোঁটজোড়া মিলিয়ে দিলো।আজ আমিও তাকে বাধা দেওয়ার কোনো চেষ্টা করলামনা।বরং……………..

to be continued……………….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *